spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাদেশপ্রেমের ১০ কবিতা : কাজী জহিরুল ইসলাম

দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : কাজী জহিরুল ইসলাম

১. 

সার্বভৌমত্ব  

[ভাত দে হারামজাদা-খ্যাত কবি রফিক আজাদকে] 

ধ্বংসের রাতে তাণ্ডবনৃত্য করলে নটরাজ হয় না সকলে, 

যখন দেবীর নৃত্যরত পায়ের কম্পনে ভেঙে পড়ে ব্যাংকের ভল্ট, 

দৃষ্টির আগুনে দাউ দাউ জ্বলে নিত্যপণ্য, 

খিস্তি-ধ্বনির ভেতর  

অদ্ভুত জমাট বাঁধে মৃত্যুশোক, 

ডুবে যেতে থাকে উজ্জ্বল নগর এক অনিশ্চিত অন্ধকারে, 

তখন দেবীর মুখ থেকে খসে পড়ে স্বর্গের লাবণ্য, 

দৃশ্যমান দাঁতাল রাক্ষস এক  

মঞ্চের নির্দিষ্ট স্পটলাইটের নিচে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। 

যখন মানুষ নিজের কণ্ঠস্বরকে ঘোষণা করেছে সার্বভৌমত্ব, তখন 

মানচিত্রের দোহাই অর্থহীন, দেশ কোনো 

ভৌগলিক সীমারেখা নয়, 

ক্ষুধার্ত মানুষ মানচিত্র খেতে শিখেছে অনেক আগে, 

কৈবর্ত-জালে সম্ভ্রম ঢাকে যদি আবারও বাসন্তী এই জনপদে, 

আমন্ত্রিত এক নতুন দুর্ভিক্ষে, 

মানুষ চিবিয়ে খাবে তার প্রাণের পতাকা। 

বিভক্তির দেয়াল ক্রমশ ধ্বসে যাচ্ছে,  

হুড়মুড় করে তা ভেঙে পড়বে সহসাই প্রবল পায়ের কাছে, 

এবং তা ভেসে যাবে মানুষের স্রোতে।  

মানুষের চেয়ে স্পষ্ট আর কোনো দেশ নেই, 

কণ্ঠস্বরের চাইতে সুনির্দিষ্ট  

আছে বুঝি পৃথিবীতে আর কোনো সার্বভৌমত্বের সুতীব্র আকাঙ্খা?  

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৭ নভেম্বর ২০২২। 

২. 

এল সালভাদর 

ক. 

মাঝরাতে খাড়া হয় এল সালভাদর 

চিলের সঙ্গীত চেতন সত্তার ছেনালি শৃঙ্গার 

ঘাটের মাস্তুল ডুবে যেতে যেতে আঁড়চোখে চায় 

একজোড়া লক্ষ্মীপেঁচা চেপে ধরে জেটির নাবিক 

কালচে পন্টুন দুলে ওঠে আলফ্রেডো আলফ্রেডো বলে… 

এপার-ওপার। হাত সাফাই চলে রাতভর। য়্যুনিফর্ম  সহচর। 

ঘাটের টানেই চিরকাল ছুটে যায় দূরের শহর 

বুক দিয়ে রাত্রি ঢাকে এ শহর, উন্মাসিক 

মাঝরাতে মালিভুর জলে ডুবে যেতে যেতে 

সটান দাঁড়িয়ে পড়ে এল সালভাদর… 

খ. 

রোজ রাতে মেঘ করে দূরের আকাশে 

বৃষ্টির তাপে পোড়ে এল সালভাদর 

কোর্তার পকেটে শীতল বাতাশ নিয়ে হাঁটে হোসে নেপোলিয়ন 

তবু বৃষ্টির উত্তাপ, হোসে, ও হোসে নেপোলিয়ন… 

জামার বোতাম খুলে ডাকে নগ্নবক্ষ তাপাক্রান্ত সালভাদরিয়ান তরুণীদল 

বাঁচাও, বাঁচাও, দাও এক পশলা শীতল বাতাশ…একটি চুমু .. 

সান সালভাদরে ঢং ঢং ঘণ্টা বাজায় ভোরের ক্যাথিড্রাল 

সকালের রোদে মুছে যায় তাপের প্রদাহ। 

গ. 

হন্ডুরাস হামাগুড়ি দিয়ে নেমে আসে, অন্ধকারে 

বুকে ফুটবল ফুটিয়ে হাঁটেন সালভাদরিয়ান তরুণীরা 

কেড়ে নেবে? হন্ডুরাস? 

সালভাদরিয়ান রক্তের স্রোত নেমে যায় পশ্চিমে, প্রশান্ত নীল জলে 

বিজয়, একটি দীর্ঘ  চুমু… 

মাঝরাতে ফের জেগে ওঠে এল সালভাদর। 

আবিদজান, আইভরিকোস্ট। ১৯ মে ২০০৭। 

৩. 

দিব্য মানুষ 

জলরঙে আঁকা দিব্য মানুষ হাঁটে 

নির্জনতার বিষণ্ন তল্লাটে 

নির্বাক নীল মৌন মিছিল ধীরে 

লক্ষ্যে স্থির দেখে না পেছন ফিরে 

মুখে কথা নেই দুপায়ে ঘোষণা দৃঢ় 

চিত্ত অনড় উচ্ছ্বাসে অস্থিরও। 

জ্যামিতিক হারে পায়ের সংখ্যা বাড়ে 

মৃদু নিঃশ্বাস পড়ে মানুষের ঘাড়ে 

অনড় পাহাড় পদভারে কম্পিত 

মানুষের ভয়ে দৈত্যেরা আজ ভীত। 

পথে নামলেই পথের লক্ষ্য পাবে 

পাথুরে দেয়াল একদিন ভেঙে যাবে। 

ঝকঝকে আলো এমন রোদেলা দিন 

ঘরে বসে থাকা আজ নয় সমীচীন। 

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৩ ডিসেম্বর ২০২২। 

৪. 

আলোর প্রভাত 

রাস্তাটা বুঝি চিতাবাঘ হয়ে গেল 

ছোপ ছোপ কালো, হলুদে ঢেকেছে ত্বক 

ডিসেম্বরের নয়/দশে তবে এলো 

হলুদ পত্রে ছেয়েছে মহাসড়ক।  

এখনো পাতারা টুপটাপ ঝরে পড়ে 

হেমন্ত শেষে শৈত্য প্রবাহ বহে 

কাঠবেড়ালিরা গাছখোড়লের ঘরে 

বহ্নুৎসব শুকনো পত্র দহে। 

দূরের বঙ্গে মুক্তির জয়গান 

শীত রাত্রির দুঃসহ দিন শেষ 

গণমানুষের তীব্র স্রোতের টান 

আলোর প্রভাতে জাগছে বাংলাদেশ। 

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১০ ডিসেম্বর ২০২২। 

৫. 

নষ্ট হবে? 

নষ্ট হবে? 

আমার কাছে নষ্ট হবার মন্ত্র এবং যন্ত্র আছে। 

বছর কুড়ি আগে, 

নষ্ট হতে এসেছিল অষ্টাদশী নারী। 

তাকে আমি নষ্ট করি  

বড্ড তাড়াতাড়ি। 

নষ্ট করি  

ভ্রষ্ট করি তাকে আমি 

সরল রেখায় যে পথ চলে সেখান থেকে। 

এখন সে খুব নষ্ট নারী 

তুড়ি মেরে দিব্যি ওড়ায়  

মন্ত্রী, সচিব  

ফ্লাগ লাগানো ডিউটি ফ্রি ভলবো গাড়ি। 

ধর্ম-টর্ম? মামলা, পুলিশ? 

কাজ হবে না। 

জেল-জুলুম আর মান-অপমান? ধার-ধারে না, 

ওর সঙ্গে তর্কে এখন কেউ পারে না। 

চুলের মুঠি ধরতে গেলে হাত ভেঙে দেয়। 

শিষ বাজিয়ে একলা হাঁটে ওড়না ছাড়া, 

সিগারেটে টান মেরে সে  

ধোঁয়া ছাড়ে দুর্নীতিবাজ নেতার মুখে। 

এখন সে এক নষ্ট নারী, 

মুখের ওপর সত্য বলে। 

মিথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এ সংসারে 

এই মেয়েটি বিপথগামী।  

নষ্ট হবে? 

আমার কাছে নষ্ট হবার আগুন আছে। 

কম বয়সী একটি ছেলে 

মাঝে-মধ্যে পংক্তি সাজায়, 

ঘাসের মাঠে একলা বসে বংশি বাজায়। 

হয়ত সে খুব প্রেমিক ছিল, 

প্রেমিক এবং লাজুক কিশোর। 

হঠাৎ করে নষ্ট হবার নীল আগুনে ঝাঁপ দিলো সে। 

লজ্জা-রাঙা রঙিন পালক পুড়ে পুড়ে এখন সে এক নষ্ট যুবক। 

চিরুণিহীন রুক্ষ চুলে  

বিচিত্র সব প্রজাপতি বসতো এসে। 

হঠাৎ করে নষ্ট হবার  

স্পষ্ট পথে পা বাড়ালো রাস্তা ভুলে। 

এখন সে খুব বুক চিতিয়ে স্লোগান ধরে 

ভোট ও ভাতের অধিকার চায় 

গণতন্ত্রের জন্যে পথে মিছিল করে 

নরম-শরম কোমল দুহাত  

কী নির্ভয়ে মুষ্টিবদ্ধ গর্জে ওঠে। 

অন্য দু’জন, জমজ দু’ভাই, 

নষ্ট নাকি হয়নি তখন, সুবোধ বালক। 

নেতার কথায় মিছিলে যায় 

স্বধর্মীদের মান বাঁচাতে  

দিব্যি ওড়ায় বিধর্মীদের মাথার খুলি, ধর্মশালা। 

আগুন, বোমা,  

কয়েক রাউন্ড রিভলবারের তাজা গুলি সঙ্গে রাখে। 

তখনও খুব ভদ্র ওরা, নষ্ট হবার কুমন্ত্রণা দেয়নি তো কেউ। 

সামনে ওদের সম্ভাবনার নতুন সিঁড়ি  

রাজনীতিতে নাম হবে খুব,  

পার্টি যদি কোনোমতে নমিনেশন দিয়েই দিলো, 

আর কে ঠেকায়। 

এই যুগে কি নির্বাচনে জিততে হলে ভোট লাগে আর? 

এমপি হবে, মন্ত্রী হবে,  

দেখার মতো ব্যাংক ব্যলেন্স আর বাড়ি, গাড়ি, 

দু’চার খানা সরকারী প্লট, 

বিদেশে ট্যুর।  

এসব কী আর খুব বেশি দূর? 

নেতার কথায় স্বপ্ন দেখে। 

এক সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে মাথায় ওদের রক্ত ওঠে, 

দলের ক্যাডার, নিজের দলের,  

নিয়ে গেছে বোনকে তুলে! 

ওরা দুজন নতুন পথে পা বাড়ালো 

নষ্ট হবার শপথ নিলো 

সত্যের ওপর সুদৃঢ় পা, ঠায় দাঁড়ালো। 

তুমিও কী নষ্ট হবে? 

আমার কাছে নষ্ট হবার নদী আছে, 

ঝাঁপ দেবে তো? 

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৮ মার্চ ২০২১। 

৬. 

বৃত্ত ছোটো হয়ে আসছে  

এখনও কী তুমি পাচ্ছ না টের 

কত কাছে এসে পড়েছে বিপদ? 

শুয়ে শুয়ে ভাবো চার পেয়ে বুঝি 

নাকি এ-প্রাণীর রয়েছে দ্বিপদ। 

কত বড় দাঁত, শিং আছে নাকি? 

খুব কি গুতোয়, ব্যথা লাগে বুঝি? 

থাবা মেলে যদি, নোখ আছে কিনা- 

একটু দাঁড়াও ভালো করে খুঁজি। 

এ-কী, কে ওখানে?  

পায়ের ওপর ছায়া পড়ে কার? 

ওঁৎ পেতে ছিল নিকট আঁধারে 

মূহুর্তকাল পায়নি সময় 

দেবে অস্ফুট বোবা চিৎকার। 

এরপর কাকে? আমাকে না তো? 

চারপাশ থেকে বৃত্ত ক্রমশ 

ছোটো হয়ে আসে প্রতিদিন আরও। 

যদি না দাঁড়াও উঠে এক্ষুনি  

রাস্তা পাবে না ছুটে পালাবারও। 

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৮ মে ২০২১। 

৭. 

জিহ্বার স্বাধীনতা  

আমার দুহাত যদি খসে পড়ে হবো না অবাক, 

যদি এই পা দুটি থামিয়ে দেয় হাঁটা, 

চোখেরা আঁধারে আর না ফেলে আলোর রেখা, 

কান যদি বাতাসের আজান না শোনে 

হবো না অবাক আমি একটুও। 

কিন্তু আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না  

আমারই জিহ্বায় উচ্চারিত হয় 

ভিন্ন মানুষের কথা। 

জিহ্বার স্বাদ আমি ছেড়ে দেবো প্রতিবাদহীন 

ছাড়বো না কিছুতেই জিহ্বার স্বাধীনতা। 

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০। 

৮. 

বাঘ 

উদ্যত দেখে অত্যাচারীর নির্মম এ-চাবুক 

পিছু হঠবো না পেতে দেব আজ সাহসে মোড়ানো বুক 

শাসক আমার সারা গায়ে যদি পিটিয়ে ফোটায় দাগ 

আমি হয়ে যাবো বাংলাদেশের ডোরাকাটা এক বাঘ 

বুঝবে তখন নিরীহ মানুষ ভয়ানক হয় কত 

হুশিয়ার করি সরকারি লাঠি রাখো তুমি সংযত 

এদেশ আমার, আমিই দিয়েছি বুকের রক্ত ঢেলে 

একুশের রাতে মরেনি তো কোনো নেতা-মন্ত্রীর ছেলে! 

একাত্তরের উত্তাল দিনে যুদ্ধে গিয়েছি আমি 

আজকে আমাকে পাবলিক বলো তুমি হয়ে গেছো দামী? 

চোখ বাঁধা আছে, মুখও বাঁধা আজ, রয়েছি তবু সজাগ 

একটি আঘাত করো যদি আর দেখবে জেগেছে বাঘ। 

হেম্পস্টেড। নিউইয়র্ক। ২৫ অক্টোবর ২০২২। 

৯. 

রাত্রিকে আলো দিও 

রাত্রিকে আলো দিও, দৃষ্টি 

আঁধারের হয় যদি বৃষ্টি 

সময় কি বেঁধে রাখে কষ্ট? 

উড়াল-পতঙ্গেরা ভ্রষ্ট 

এখন সময় বড় অদ্ভুত  

মিথ্যেরা মঞ্চের রাজদূত 

স্তবগানে পঙক্তিরা মগ্ন 

অসত্যের উৎসব-লগ্ন 

এটাই তো আজকের কৃষ্টি 

আঁধারের হচ্ছে তো বৃষ্টি 

রাত্রিকে আলো দিও, দৃষ্টি। 

নদীরা হারিয়ে ফেলে নাব্য 

শেকড়ে না ফেরে যদি কাব্য 

সঙ্গীতে বেজে ওঠে চিৎকার 

কোত্থেকে আসে ইঙ্গিত কার? 

শান্তির কথা বলে ভণ্ড 

দানবের হাতে রাজদণ্ড  

সত্যেরা হয় যদি বন্দি 

গোপনে গোপনে হয় সন্ধি 

কী অবাক সময়ের সৃষ্টি  

আঁধারের হচ্ছে তো বৃষ্টি 

রাত্রিকে আলো দিও, দৃষ্টি। 

দস্যুতা দাবী হলো ন্যায্য 

সততাই আজ পরিত্যায্য 

চোখ নাকি তুলে নেবে খুঁচিয়ে 

সন্ত্রাসী হাঁটে বুক উঁচিয়ে  

গণমানুষের নেই অধিকার 

ধান্দা তো একটাই, গদি কার? 

নেতা আছে নেই নেতৃত্ব 

জনগণ যেন রাজভৃত্য  

হে মানুষ দানবের রাজ্যে 

আজ শুধু একটিই কাজ যে 

ঘুম ভেঙে জেগে ওঠো জাগো হে 

ঘুম কেনো হলো এতো মিষ্টি? 

দেখছ না আঁধারের বৃষ্টি 

রাত্রিকে আলো দিও, দৃষ্টি।  

হলিসউড, নিউ ইয়র্ক। ২৪ জানুয়ারি ২০১৯। 

১০. 

ধ্বনিত্রয়ের উৎস 

যাত্রী ছাউনির নিচে ক’জন মানুষ 

অদূরে একটি সড়ক দুর্ঘটনা, মুখোমুখি দুটি বিলাসবহুল গাড়ি 

বনেটে তখনো দম্ভের আগুন 

চারজন মানুষের খন্ডিত দেহ রক্তাক্ত, পথের ধুলোয় পোড়ামাংস ও মগজ, 

বাতাশে অস্থির বিকেল  

এর পেছনে রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম খচিত কর্মকর্তা, একদল অসহিষ্ণু  

জনতার বৃত্ত লোকটির চারপাশে, খিস্তির তরঙ্গে ক্রমশ কয়েক ডজন উত্তেজিত মুষ্ঠি 

লোকটির মুখমণ্ডলে এখন নতুন ভূগোল,  

‘চোর চোর’ ধ্বনির কোরাসে হেমন্তের উৎসব 

একটি পতাকাশোভিত গাড়ির অনুপ্রবেশ, ভেতরে মোটাসোটা সারমেয়,  

টিনটেড কাচের ফাঁকে বার দুয়েক ‘ঘেউ’ ধ্বনি, এরপর পলায়নপর প্রস্থান 

দু’জন বিপ্লবীর লাল কুর্তা অদৃশ্য, ওদের ন্যাড়া মাথায়  

ঈমানের টুপি, ওদের নিম্নাঙ্গ খোলা  

অদৃশ্যবাদী জোকারের ভূমিকায় এখন ওরা, মঞ্চের স্পট লাইটের নিচে। 

রাস্তাটির অন্যপাশে, যেখানে ঐতিহ্যহারা একটি বাগান 

ক’জন তরুণ-তরুণী, নগ্ন, ওদের সঙ্গম দৃশ্যে ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইট 

যাত্রী ছাউনিটির বাঁ দিকে দুজন মানুষ, একজন পুরুষ, এক অসহায় পিতা  

সন্তানহারা চোখে ঘোলা যমুনা, জলস্রোতে অব্যক্ত অভিশাপ  

অন্যজন কিশোরী, অভিভাবকের রক্তে রাঙা হাত, সামনে সুসজ্জিত ফাসির মঞ্চ 

ক’জন বিচারকের কালো আলখাল্লায় জল্লাদের প্রতিচ্ছবি। 

যাত্রী ছাউনির নিচে একদল উৎসুক মানুষ 

ক’জনের চোখ ডিজিটাল ক্যামেরা, সামনের বইমেলায়  

প্রকাশিতব্য ইতিহাসগ্রন্থের জন্য  

প্রয়োজন বেশ কিছু রঙিন ছবি 

ক’জনের চোখে দূরবীক্ষণ, দৃষ্টি ওপরে, উচু দালানের এক কামড়ায়,  

যেখানে ‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন’ ধ্বনিত্রয়ের উৎস।  

হলিসউড, নিউ ইয়র্ক। ১৩ নভেম্বর ২০১৫।  

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ