প্রেমিক
হয় না এমন? — উল্টে যাচ্ছে ছাতা
কারো কারো ছাতাও থাকে না জানি,
মাথার উপর কুড়ানো কচুর পাতা।
এই রকম এক বৃষ্টিমুখর দিনে
এলোমেলো খুব বিরহ বিরহ লাগে,
তুমি নাকি অন্য কারো বিনে?
বুঝতে পারি না। সামনে তাকাই
পথের মতো চোখেও জমে জল।
উল্টে যাওয়া ছাতার মতো আমি
প্রেমিক থেকে হচ্ছি ছবির খল।
নিজের ভেতর ভেসে যাচ্ছি দূরে
পাড় ভাঙছে, ধসে যাচ্ছে পাহাড়
সিনেমা শেষ ঘন্টা তিনেক পরে
মুহূর্ত
লেভেল ক্রসিং পার হয়ে চলে যাচ্ছি দ্রুত
এক হাতে লাল,
অন্যহাতে সবুজ পতাকা নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছে লাস্যময়ী গেইটম্যান
এসময় ট্রেন থাকেনা সচরাচর,
তাই
সংকেতের সব দ্বিধা ছুঁড়ে দিয়ে মুহুর্তেই
ইতিবাচক কিছু একটা ভাবতে ভাবতে
চলে যাচ্ছি আমি
বাইশে ডিসেম্বরের রাত
বিবাহের পরে সবাই বলে থাকেন—
তুমি আমার প্রথম প্রেম।
বিশ্বাস করতে পারো—
শরীর দূরে থাক, আঙুলও ছুঁয়ে দেখে নাই কেউ
এই কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হলো
বাইশে ডিসেম্বরের রাত।
কম্বলের নিচে মগ্নতায়
পরস্পরকে জড়িয়ে শুয়ে থাকে তারা।
দুই লাইনের মাঝে তবু কিছু ফাঁক থেকে যায়।
সেই ফাঁক থেকে উঠে আসে—
কয়েকটি পরিচিত মুখ।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বিনোদন পার্ক —
তার পেছনেই রমা মাসিদের নিরিবিলি বাড়ী।
দূরসম্পর্কের কোনোএক আত্মীয়ের কথা
ভাবতে ভাবতে
আরও কিছু মনে পড়ে যাবে তারপর
সেতু
দোদুল্যমান কাঠের সেতুটা পার হয়ে
তবেই যেতে হয় বিশেষ পাড়ায়,
এছাড়া আর বিকল্প নাই কোন
আবহাওয়া খারাপ থাকা সত্তে¡ও একদিন
তড়িঘড়ি ঢুকতে যাচ্ছি আমি আর
ছাতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে
ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন আমার ক্লান্ত পিতা;
ঠিক সেই মুহূর্তে সেতুটার ওপর
আমাদের মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল
সিগন্যাল অমান্য করে দুই দিকের দু’টো ট্রেন
একই লাইনে হঠাৎ ঢুকে গেলে
আমরা বীভৎস রকমের দুমড়ে মুচড়ে গেলাম—
দোদুল্যমান সেই সেতুটার ওপর
কুমারী মাতা
হাত ও পা একটুও না-কাঁপিয়ে
যে কুমারী মাতা
তার সদ্য প্রসব হওয়া বাচ্চাটাকে
লোকলজ্জার ভয়ে অনেক উঁচু
লাল ব্রীজ থেকে নিচে ফেলে দিলো
সেই মেয়েটিই পেছনে সূর্যাস্ত রেখে
রেলপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে
দেখলো—আত্মহত্যাপ্রবণ একটি পাগল
দ্রæতগতির ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একা
মুহূর্তেই খুব বিশ্রী রকমের কিছু একটা ঘটবে—
এই আশঙ্কায়
মেয়েটির চোখ বন্ধ হয়ে গেলো,
পা কেঁপে উঠলো থরথর
ডিভোর্স
প্রতি সাইত্রিশ মিনিটে একটি ডিভোর্স হয়ে যায়
এই ঢাকা শহরে।
আর সতের জন দম্পতি আমাকে বলেছে—
তিন বছর পার হওয়ার আগেই
দায়িত্ব ছাড়া আর তেমন কোনো সম্পর্কই
অবশিষ্ট থাকে না পরস্পরের প্রতি
বিশেষ মুহূর্তে ঘন হয়ে আসে রাত
অনিচ্ছাসত্বেও ঘড়ির কাটা মিলতে থাকে
একে অপরের সাথে।
এক বিছানাতে থাকলেও নিদ্রাহীন
একজনের চোখে ভাসে দীপিকা পাড়ুকোন,
অন্যজন ভাবছে-শাহরুখের পাঠান শরীর
ক্ষুধা
পুকুরভরা মাছের সাথে গোয়ালভরা
গরুর গল্প শুনতে শুনতে দেখি—
বাবা চাষ করছেন অন্যের জমি,
অন্যের বাড়ীতে কাজ করছেন মা।
অনেকগুলো ভাই-বোন আমরা,
পরিবার পরিকল্পনা তখনো আসে নাই গ্রামে।
ভাত মানে মনে হতো দূরের নক্ষত্র,
মাংস বললে বুঝে নিতাম কোরবানির ঈদ।
এরকম ক্ষুধার ভেতর একটা কুকুর
মরা হাঁস মুখে নিয়ে দৌড়ে যেতেই—
লোভ আর ঈর্ষায় আমাদের চোখ
চকচক করে উঠতো। চকচকে এইসব
চোখের দিকে তাকিয়ে
বিষণ্ণ হয়ে উঠতেন আমাদের মা
পানি ও জল
শ্যামা আর আমি পাড়াতো ভাই-বোন।
আমার মতো শ্যামাও আকাশকে আকাশ
নদীকে নদী
পাহাড়কে পাহাড় নামে ডাকে।
ধানক্ষেত
বাতাবীলেবু
গাজর, টমেটো, ফুলকপিকেও
আমরা একই নামে চিনি।
এই যে রেলস্টেশন,
আন্দোলন,
সংগ্রাম
সমাজতন্ত্র
ফুল, পাখি, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বাতাসও
আমাদের কাছে একই।
শ্যামা শুধু পানিকে জল
আর
আমি জলকে পানি বলে থাকি।
পানি ও জলের এই পার্থক্য সত্ত্বেও
আমাদের প্রেম হলো, বিয়ে হলো না
শরনার্থী
আমি হিন্দু আর আমার বউ মুসলমান,
ক্ষুধা আর যৌনতাময় পৃথিবীতে—
আমরা পরস্পর কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম।
আমাদের সন্তানাদিও ছিলো
মত্যুর পরে আমি ভগবানের সামনে
আর আমার বউ আল্লাহর সামনে বিচারাধীন হলে–
সীমালঙ্ঘনের অভিযোগে আমি নরকে
আর বউ চলে গেলো দোজখের দিকে
আমাদের প্রিয় সন্তানেরা—
একবার ভগবান, একবার আল্লাহ;
একবার নরক, একবার দোজখ-করতে করতে
শরনার্থীর মতো ঘুমিয়ে গেলো-যেখানে নোম্যান্সল্যান্ড
চাঁদের মেয়ে
চাঁদের মেয়ের সাথে স্কুলে যাই,
একসাথে পড়ি। ক্লাসে ওর রোল এক হলে,
আমার বত্রিশ। আসতে আসতে বই,
যেতে যেতে ফুল; মন দেয়ার আগেই তার
বিয়ে হয়ে গেলো—
বয়সে দ্বিগুন এক রাক্ষসের সাথে
সে এখন সংসার সামলায়। বছর বছর
সন্তান প্রসব করে। শ্বাশুড়ির সেবা করতে করতে
বিল থেকে তুলে আনে হাঁস
ব্যস্ততা ক্রমশ বাড়ে—
অভাব-অনটনে নিজের পা জ্বালিয়ে
রান্না করে ভাত। আগুনের কাছে
পুড়তে পুড়তে কয়লা। ত্রিশের আগেই
একদিন হঠাৎ সে বুড়ি হয়ে যায়
ভাড়াবাসা
এক মধ্যবয়স্কার বাসায় ভাড়া থাকি
তার স্বামী বিদেশে থাকেন
তবে মাঝেমধ্যে রেমিট্যান্স পাঠায় আর
বহুদিন পরপর দেশে ফেরে।
শুনেছি, স্বামীর সাথে তার তেমন বনিবনাও নাই
আমি উপরতলায় উপুড় হয়ে থাকি,
তিনি নিচ তলায় চিৎ হয়ে উপর দ্যাখেন।
এইসব বাসার একুরিয়ামে—
শান্ত জলের মাছেরা খুব ছোটাছুটি করে
পাঁঠা-১
প্রেমিক পালিয়ে যাওয়ার পরে ব্ল্যাকারের বউ হলো
মিনতি দাস। কোলেকাঁখে দু’টো বাচ্চা রেখে
ক্রসফায়ারে মরে গেল সে বেটাও
সেই থেকে পাঁঠা পুষে সংসার চলে তার।
পাঁঠার স্বাস্থ্য আর সক্ষমতার সুনাম
চারিদিকে ছড়িয়ে গেলে—
ব্যবসা ভালো হয়, দূর থেকেও খরিদ্দার আসে
ওভারলোড নিতে নিতে পাঁঠারও ক্লান্তি নামে,
আরও অসুস্থ হলে—
হাটবারে কিনে নেয় পাড়াতো কসাই
চামড়া বিক্রি হয়, মাংস বিক্রি হয়।
একেএকে সবকিছু ফুরিয়ে গেলে—
মাথা থেকে বেরিয়ে আসা একজোড়া চোখ
জগতের দিকে তাকিয়ে থাকে, উপহাসের মতো
পাঁঠা-২
গ্রামের ছাগিদের ডাক নিবারনের জন্য
আমাদের পাড়ায় এক রামপাঁঠা ছিল–
তার গায়ে ছিল বহুজাতিক উকুন আর
বহুসংগমের ফলে মারাত্মক উটকো ঘ্রাণ।
মাথার উপরে ছিল একজোড়া সুরক্ষা শিং
আর ছিল বুদ্ধিজীবিদের মতো লম্বা চুলের বেলেল্লাপনা
খড়, বিচুলি, ঘাসের পরিমিত আহারে সন্তুষ্ট থাকলেও
একদিন সে সমুদয় উপযোগিতা হারিয়ে বৃদ্ধ হয়ে গেল
আর তার মহান মালিক তাকে পাঠিয়ে দিল—
কসাইয়ের দোকানে
তারপরেই কেজি কেজি মাংসের হিসেব…
মা
পঁচাত্তর বছর বয়সেও আমার মা
চশমা ছাড়াই কোরান পড়তে পারতেন।
এই চোখ দিয়েই মনের মতো সাদা কাপড়ে
কাঁথা সেলাই করতেন অবসরে।
রঙিন সুতোয় ধীরে ধীরে ফুটিয়ে তুলতেন
ফুল আর মাছ। মায়ের মৃত্যুর পরে
সেই কাঁথা বাক্স থেকে বের করে
রোদ্রে দিই, আর দেখি—
কাঁথার ফুলগুলো সতেজ হয়ে
ঘ্রাণময় করে তুলছে সমগ্র বাড়ি।
আর মাছগুলো আরও রঙিন হয়ে
আমাদের অশ্রুর ভেতর
সাঁতার কাটতে কাটতে পথ ভুলে
চলে যাচ্ছে লোকান্তরে—
পাখিহীন কোনো এক সমুদ্রের দিকে
কবিতার বই
প্রকাশক বললেন–কবিতার বই এখন আর
বিক্রি হয় না তেমন, লাভ দূরে থাক
বিনিয়োগের টাকাই উঠানো কঠিন।
মুনাফাই যদি না-হয় তবে আর ব্যবসা কিসের?
লজ্জায় নত হয়ে শুনলেন কবি,
আঙুলের নখ কাটতে কাটতে দাঁতে
কিনে নিলেন সবগুলো কবিতার বই
টেবিলের পায়াটা ভেঙে আছে অনেকদিন
কবিপত্নী জুড়ে দিলেন সেখানে কিছু; আর কিছু
কপি গেলো–উইয়ের বাড়ি, ইঁদুরের কাছে
নীলকান্ত পরামানিকের সেলুন
টুল নিয়ে চুল কাটেন নীলকান্ত পরামানিক—
বটতলায়, শেকড়ে বসে।
আয়না নাই, মুখদর্শনও নাই এখানে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে সামান্য কথা,
কথার ফাঁকে ফাঁকে দু’একটা বিড়ির টান।
দেয়ালে ঝোলানো আয়না, গদির চেয়ারও আছে;
ঢাকা ফেরৎ টিপটাপ সেলুন বসেছে সদ্য।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত চুল-নতুন স্টাইলে কাটতে কাটতে,
ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে কমনীয়—
লোশনের ঘ্রাণ। সেদিকেই ভিড় বাড়ে ইদানীং
খুরের জং তুলতে তুলতে চামড়ায়
নীলকান্ত পরামানিকের হাত কেঁপে কেঁপে ওঠে;
ধুলোর আস্তরে ঢাকা, না-থাকা আয়নার মতো
সহজেই ঝাপসা হয়ে আসে চোখ
শীত রাতে
ধরো, কনকনে শীতে
তোমার জানালা খোলা
কী যে হলো তোমার! এ
রাতে নিজের ভেতর
ডুবে যাচ্ছো খোলামেলা।
দরজায় টোকা নাই
মানে কেউ আসছে না।
শিশিরের আনাগোনা
আর পাতা ঝরা ছাড়া।
তুমি ভাবছো-তোমার
মতো ওই চাঁদটাও
বড় একা। যদি কেউ
না-ই আসে ক্ষতি নাই।
ভালোবেসে কাছে থাক,
শুধু সেই শূর্পণখা।
কোরবানি
সামনে কোরবানির ঈদ, কোলেপিঠে
সন্তানের মতোই বাড়ছে ইব্রার ছাগল
বিছানায় থাকে, আদর পেতে পেতে
লাফিয়ে ওঠে কাঁধে। নাম ধরে ডাকলেই—
আহ্লাদে চেটে দেয় গা
কোরবানি হবে আজ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পশু নিয়ে
আসছে সবাই। ছাগলের দড়ি হাতে ইব্রাও
এগিয়ে যাচ্ছে সেইদিকে
হঠাৎ তার মনে হলো, সে যেনো ইব্রা নয়
নবী ইব্রাহীম, ছুরি হাতে নির্বিকার
ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছেন প্রিয় পুত্রের সাথে
ঈদ
‘আজ ঈদ মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ’
ছোটবেলায় পড়তাম। পড়তে পড়তে
চাঁদ থেকে হঠাৎ নেমে আসতো ঈদ
শহরের কাজ থেকে হতাশার ব্যাগ হাতে
বাবা ফিরে আসতেন নতমুখে,
অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতেন মা।
পাশের বাড়ি থেকে সেমাই,
বিবিধ রান্নার ঘ্রাণ ভেসে আসতো বাতাসে।
অনেকগুলো ভাই-বোন আমরা
আমাদের তালিমারা প্যান্ট, ছেঁড়া লুঙ্গি
বহু আগেই ছিঁড়ে যেতো জামা আর কামিজ
রিং পেরিয়ে সাবলীল চলে যাওয়া
সার্কাসের সেই শিকারী ঘোড়ার মতো
এইসব ছেঁড়া আর ফুটো দিয়ে
সহজেই
দেখতে দেখতে চলে যেতো আমাদের ঈদ
কাফকা ও কলিমউল্লা
শীতকালে মানুষ ভ্রমনে যায়, আমার যাওয়া
হয় না কোথাও। পলায়নপর মাছের মতো সবসময়
নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকি।
বাড়ি থেকে অফিস, অফিস থেকে বাড়ি।
সন্ধ্যায় বাজারে যাই, এর বাইরে আর কোনো
জীবন-তীর্থ নাই।
যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই চোখে পড়ে
পুরনো কাগজের দোকান।
এখানে সবকিছু ওজনে বিক্রি হয়। কাফকা যা—
কলিমউল্লাও তাই, সব একদর বিশ টাকা কেজি
বাংলা মদের দোকান
শিবু কাকার দোকান বাংলা মদের জন্য বিখ্যাত,
মাঝেমধ্যে যাই।
ঈশ্বরের সাথে দেখা হলে পান করি চুমুকে চুমুকে।
শয়তানও আসে হঠাৎ হঠাৎ
গ্লাস তুলতে তুলতে কুশল জিজ্ঞাসা করি হাসিমুখে
শয়তান আর ঈশ্বরের সাথে
এক টেবিলে বসতে পারিনি কখনো, একজন ঢুকলে
অন্যজন দ্রুত পালিয়ে যায়।
কেন যায়-সেকথা বলেনি কেউ
খেলনা গাড়ির চাকায়
হেঁটে হেঁটে বাজারে যেতেন দাদা,
তবে তার ছেলেকে সখ করে সাইকেল
কিনে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সাইকেল চালিয়ে
হাওয়া খেতে খেতে অফিসে যেতেন বাবা।
আমার কুড়িতম জম্মদিনে
বাবা যে বাইক উপহার দিয়েছিলেন—
সেই বাইকে চড়ে আমি কালো বাজারে যাই,
শেয়ার মার্কেটে ঘোরাফেরা করি নিয়মিত
‘আমাদের ছেলেকেও আমি গাড়ি কিনে দেব’—
এরকম ভাবতে ভাবতে দেখি—
তার খেলনা গাড়ির চাকায় মরে আছে পিঁপড়ের দল,
অসংখ্য মানুষ
ভাগ
দেশভাগের কথা মনে হলেই—
আমার চোখের সামনে একটা কবর ভেসে ওঠে
দাদা মারা গেলেন অল্প বয়সে,
ভালোবেসে উঠোনেই কবর দিয়েছিলেন দাদি
কাকা আর বাবার সম্পর্কের মতো
সহজেই ভেঙে গেল একান্নবর্তী পরিবার
তারপর ভাগ হলো-ফসলের মাঠ, বাড়ির উঠোন
একদিন হুট করে কবরের মাঝ দিয়ে
উঠে গেল সীমানা প্রাচীর
সেই থেকে দাদিও ভাগ হলো কবরের মতো—
সমান ভাগে
পৃথিবীর কোন বেল, ব্রেক নাই
উনুনে জ্বাল দিচ্ছে মা, মাছও কুটছে।
হঠাৎ তার মনে হলো—
পৃথিবী একটা জ্বলন্ত চুলা, আঁশটে গন্ধময়।
তৃতীয় লিঙ্গের ভাইটিকে কেউ কেউ হিজড়া বলে ডাকে,
নৃত্য শেখাতে শেখাতে তার ধারণা হয়েছে—
পুরো পৃথিবীটাই একটা নাচের স্কুল, মুদ্রা শেখার ক্লাস।
ঘাম আর ক্লান্তির সন্ধ্যায়—
ভাঙা সাইকেল চালিয়ে অফিস থেকে ফিরে আসেন বাবা।
প্রতিদিন এভাবে যাওয়া-আাসা করতে করতে
তার মনে হয়েছে-ভাঙা এই সাইকেলের মতো
পৃথিবীরও কোন বেল-ব্রেক নাই;
না হলে কী করে যখন-তখন এ-ওর গায়ে লাফিয়ে পড়ে!
পাখি
প্রতিষ্ঠার মুখে লাথি মারতে মারতে
কবি নির্মল হালদার পাখি আঁকতে পারতেন,
পাখির পাশে কিছু ডালপালাও আঁকতেন।
উড়ে যাওয়ার ভয়ে কখনো ডানা আঁকতেন না
আমিও তার মতো যতœ করেই পাখি আঁকি,
ডালপালা, আকাশ আর দিগন্ত আঁকি না।
টেকসই খাঁচার মতো কিছু কিছু শঠতা আঁকি
কখনোই তার কোন দরজা রাখি না
কর্মজীবী মেস
মেস ছেড়ে যে যার কাজে বেরিয়ে গেলে
মাঝেমধ্যে আমিই হতাম একার পাহারাদার।
কলিংবেল বাজিয়ে বুয়া আসতো,
ম্যাচের কাঠি জ্বেলে একে একে শুরু হতো
রান্নার কাজ।
গুনগুনিয়ে গানের সাথে উথলে উঠতো
সাদা চালের ভাত, সেদ্ধ হতো মুরগির মাংস।
একটা সরলরেখার ওপর আরেকটি সরলরেখা
দণ্ডায়মান হলে–কিছুটা কেঁপে উঠতো
সস্তা কাঠের চৌকি।
সেই থেকে জানি-শরীরেও একটা হারমোনিয়াম থাকে,
আঙুলে আঙুলে নাচে সাদাকালো রিড
———-
জন্ম : ২১ আগস্ট ১৯৭৯
কুষ্টিয়া, কুমারখালীর চরভবানীপুর গ্রামে
প্রকাশিত কবিতার বই : ৯টি