প্রচ্ছদকবিতানির্বাচিত ১০ কবিতা : আমিনুল ইসলাম

নির্বাচিত ১০ কবিতা : আমিনুল ইসলাম

দলে ফেরার ডাক

চুমুর সেই শপথ বিস্ময়ের ব্যঞ্জনায় অনুদিত হলো তোমারই ঠোঁটে;
স্কুলত্যাগী কিশোরের মনে আমি তো খুইয়েছিলাম পিপাসার পাঠ;
তুমি নিয়ে এলে ডেকে হারিয়ে যাওয়া পিপাসার অভিমানী ঋতু।
মরচে পড়া নদী কান পেতে শোনে বানডাকার আগাম আওয়াজ।
দলে ফেরা বোলারের মতো উইকেটমুখী যাবতীয় উত্থিত বাসনা।

এখন আমাদের আর কোনো থার্ড আম্পায়ারেরও প্রয়োজন নেই।

তুমি

তুমি তো সেই অদ্ভুতী চাঁদ
দুলিয়ে গেছো শীতশাসিত জল
যদিও আজ কৃষ্ণপক্ষ
জোছনা কুড়ায় মুগ্ধ বুকের তল।

নারদ বাতাস

নারদ বাতাস বহে—মালীর হাতের ছোঁয়ায় ‘না’ করে
তৃষিত বাগান
ঘরে ফেরে মালী—ঘর কই? দ্বারেই বিস্ময়-
পুরাতন চাঁদ- মুখ ফিরিয়ে সে হয়েছে আঁধার!

নারদ বাতাস বহে—-নিউপার্কে সমুদ্রসৈকতে
প্রেমিকার ঠোঁট হতে খসে পড়ে প্রেমিকের ঠোঁট।

পাথর নিয়তি

পাথরের ঘাটে বসে পা উঠিয়ে পা ঘষে রজনী
খসে পড়ে অন্ধকার
পাথরের ঘাটে বসে জামা খুলে নাভি মাজে দিন
ধুলোবালি জল হয়ে যায়
পাথরের ঘাটে বসে বুক খুলে প্রেম করে সাঁঝ
মুছে যায় বেদনার উল্কি;

অথচ পাথরের দুর্নাম ঘোচে না! শালা পাথর!

পাথর তো নই—তথাপি পাথর হয়ে আছি
ঘষা..ঘষা..ঘষা…
ক্ষয়ে যাওয়া..ক্ষয়ে যাওয়া.. এবং ক্ষয়ে যাওয়া..

অপ্রষ্ফুটিত দুপুর

প্রভাতী পাহাড়ে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে ঝরনা
চারপাশে কুয়াশারঙের ছায়া
বাঘ সাপ শেয়ালের চোখ
হাতের তালুতে সূর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সময়
অর্ধ-আবৃত পৈথানে
ছোঁয়ামাত্র রাজকুমারীর চোখ মেলে
জেগে উঠবেন পরী
জেগে উঠেই হয়ে যাবেন স্রোত ঢেউ বাঁক;
কিন্তু কোথাও কোনো নৌকার ছায়া নেই।

ভীরু সকাল হয়ে কাঁপছে অপ্রস্ফুটিত দুপুর!

ফণা গুটানো চিত্রকল্প

হোয়াইট ওয়াশ ওয়াল থেকে পিছলে পড়ে রোদ
রোদে পোড়া চোখে
ভেতরে বাতাস সাপ
ফণাটা গুটানো;

দালানের নিচে মৃত্তিকায় মিশে যায় ফোঁটা ফোঁটা
দষ্ট ঘাম রক্ত অশ্রুপ্রাণ
রাজা যায় রাজা আসে
এই দৃশ্য সর্বদর্শী টিকটিকির নজরে পড়ে না।

ক্ষমতার দৃশ্যপট

গুলিতে মরেছে বাঘ, সিংহ লুপ্তনাম
হরিণেরা দৃশ্যচ্যুত যেহেতু হালাল
পোষ মেনে ঐরাবত শেখে ভুল কাম
বাঘছাল পরে হাসে বাঘের দালাল।

বিশ্বরোগ

আকবরের তখতে বসে শান দেয় বিভেদের দাঁত…

স্বপ্নের সিংহাসন

অথচ আমরা একটু ঘুমাবো বলে
জেগে থাকি রোজ
অজস্র জগতশেঠ দিন
কীর্তিনাশা নদীটির কূলে
দূরের সমুদ্র হতে আমাদের ঘুমে এসে
দাঁত মেলে
শুভ্রডানা তিনটি হাঙর;

হায় স্বপ্ন, এখন তুমিই বলো–
কী করে তোমার হাতে ধরা দিই?
কে দেবে পাহারা?
ফেরেনি মোহনলাল–,
মীরমদনও মোছে না মরিচা;
তবু এই ভাগ্য নিয়ে আমরা চেয়েছি
অনেক স্বপ্নের সিংহাসন
একূল ওকূল করা নদীটির তীরে।

কড়িকাঠে ঝুলে আছে দিন

কড়িকাঠে ঝুলে আছে দিন
ধূসর রোদের ঠোঁটে লালা
নাড়ি টিপে ফিরে যায় যম;

ওগো দিন তুমি নেমে এসো
কথা দিচ্ছি- আর ভুল হবে নাকো
দ্যাখো—তোমার জন্য এনেছি-
হাওয়ায় দোলা কাশবন
শরতের ঘুড়ি
চিরকুমার স্বপ্নের রাত
এবং আরো কত কী!

তুমি ফিরে না এলে, বলো তো–
কী করে আমি বাজাই
তোমার দেয়া সেই পাগলপারা বাঁশি?

আরও পড়তে পারেন

12 COMMENTS

  1. “হায় স্বপ্ন, এখন তুমিই বলো–
    কী করে তোমার হাতে ধরা দিই?
    কে দেবে পাহারা?
    ফেরেনি মোহনলাল–,
    মীরমদনও মোছে না মরিচা;”
    প্রতিটি সহজ সুন্দর কবিতার আবেদন মনে দাগ কাটে, চোখের সামনে ভেসে উঠে ছবি। আমাদের জীবনের, আমাদের আবেগের পটিটি উচ্চারণ উঠে আসে শব্দে শব্দে।

    • আপনি আমার কবিতাগুলো পড়েছেন, এতেই অনেক খুশি আমি। আপনার মন্তব্য আমার জন্য বাড়তি ঈদ উপহার। অনেক অনেক ধন্যবাদ কবি। এবং ঈদ মুবারক।

  2. ঈদের আনন্দের সাথে এক গুচ্ছ সুন্দর কবিতা যা কবিতাপ্রেমী আমাকে বাড়তি আনন্দ দিল । কবিতাগুলো ছোট,সাবলীল এবং সুখপাঠ্য , যা আপনার মনের খোরাক তো মেটাবেই তার সাথে সাথে আপনাকে ভাবাবে কবিতা বিষয়বস্তু নিয়ে ।

    (“কড়িকাঠে ঝুলে আছে দিন
    ধূসর রোদের ঠোঁটে লালা
    নাড়ি টিপে ফিরে যায় যম;”)

  3. সুন্দর অভিমত। আমি আনন্দিত কবিতাগুলো পাঠ ও অভিমত প্রদানের জন্য। অনকে অনেক ধন্যবাদ গুণীজন। এবং ঈদের শুভেচ্ছা: ঈদ মুবারক।

  4. আমিনুল ইসলামের কবিতার একটি বিশেষ দিক হলো বিষয়বস্তুর বিচারে কবিতাগুলো অনন্য। সমাজের সর্বস্তরের লোকজনের সংস্পর্শে থাকতে পারার সুবাদে বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ ঝুলি থেকে কবিতা লিখেন তিনি । একজন সব্যসাচী কবি হওয়ার দৌড়ে তাই সমকালীন কবিদের থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন তিনি। বেশ ভালো লাগলো কবিতাগুলো পড়ে। শুভকামনা রইলো।

    • নির্বাচিত ১০টি কবিতা পড়ে পাঠোত্তর মন্তব্য করতে গিয়ে আপনি আমিনুল ইসলামের সামগ্রিক কাব্যপ্রবণতা সম্পর্কে সংক্ষেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিমত প্রদান করেছেন। সেটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। ফলে আপনি আমার কবিতা পড়েন বলে ধরে নেয়া যায়। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । এবং কৃতজ্ঞতাও।

  5. শ্রদ্ধেয় কবি আমিনুল ইসলাম এর কাব্য ভাবনা নিঃসন্দেহে ভিন্নমাত্রার। জাগতিক বিষয় ও ভাব প্রবাহে কবির জুড়ি নেই। তাঁর কবিতার কথা ও শব্দ ব্যবহার সীমার মাঝে অসীম দ্যোতনা সৃষ্টি করে। পাঠককুল তাঁর কবিতা পড়ে মুগ্ধ না হয়ে যায় না। প্রেমের কবিতা আমার বরাবরই ভালো লাগে। কবির প্রেমের কবিতায় আমি কবি নজরুলের প্রেমের কবিতার স্বাদ পাই। আমার ভীষণ ভালো লাগে। নির্বাচিত ১০ টি কবিতা সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত কিন্তু শব্দের গাঁথুনি চমৎকার ও অভিনবত্বে ভরা। শুভকামনা প্রিয় কবি।

    • গুণী সমালোচকের অভিমত /পাঠ-উত্তর মন্তব্য একজন লেখককে সঠিক পথ দেখায়, তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় । নির্বাচিত ১০টি কবিতা পাঠ করে অভিমত প্রদানের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সঙ্গে শুভকামনা।

  6. কবি আমিনলল ইসলামের কবিতা সবসময়ই একটু ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন চিত্রকল্পের হয়ে থাকে। বর্তমান সময় আমরা যারা কবিতা পড়ায় আগ্রহী এবং কবিতার চিত্রকল্প ও ভাবনা বিষয়ে নিবিষ্ট , তারা অনেকেই এক বাক্যে স্বীকার করবেন কবি আমিনুল ইসলাম শুধু সফল প্রাবন্ধিক নন তিনি কবি হিসেবেও উজ্জ্বল। কবিকে অভিনন্দন।

    • সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে সমৃদ্ধ পাঠ-প্রতিক্রিয়া পেয়ে আমি আনন্দিত। অনুপ্রাণিত। কবিতা তো লেখক-পাঠক উভয়কে চায়। আপনি নিজেও একজন সুপরিচিত কবি ও কথাসাহিত্যিক। আপনার অভিমতের আমার কাছে একধরনের বাড়তি মূল্য আছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ কবি। এবং শুভকামনা।

  7. সবগুলো কবিতাই ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন আমেজের…

    • আপনার অভিমতের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ কবি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা