spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েনিষিদ্ধ কবিতায় ঠিকুজি সন্ধানী : প্রেম ও দ্রোহের এক নিপুণ সেতুবন্ধন

লিখেছেন আবু জাফর সিকদার

নিষিদ্ধ কবিতায় ঠিকুজি সন্ধানী : প্রেম ও দ্রোহের এক নিপুণ সেতুবন্ধন

আবু জাফর সিকদার

শিরোনামবিহীন এক একটি কবিতার ঢালি দিয়ে বিনে সুতার মালা গেঁথেছেন কবি সাজ্জাদ বিপ্লব । নব্বই দশকের সাড়া জাগানো এক উজ্জ্বল তারকাকবি এই সাজ্জাদ বিপ্লব !

জীবন ও জীবিকার তাড়নায় সুদূর প্রবাসে পাড়ি জমালেও কবিতাকে বিসর্জন দিতে পারেননি । আর পারেননি বলেই কবিতার সাথে গভীর প্রেমে নিমগ্ন থেকেছেন পরম মমতায় । তারই এক নিপুণ কাব্য গাঁথা ‘তুমি ছাড়া আমার কোনো বসন্ত নেই ‘

এটি কবির একক চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ। লিটলম্যগাজিন প্রকাশনা “ছোটকাগজের বারান্দা”, থেকে মাত্র দু’ফর্মার এই কাব্যগ্রন্থটি গুণে, মানে এবং দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে এক কথায় অনন্য ।

নব্বই দশকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার কিছু কবিতা পড়লেও কবির সাথে কোন ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না । অতি সম্প্রতি ফেসবুকের সুবাদে কবি ও তার কবিতার সাথে নতুনভাবে আমার পরিচয় ঘটে।

আমার মতো অনেকেই হয়তো এই কবি প্রতিভাকে সেভাবে চিনেন না। দূর প্রবাসে এবং প্রচারণার আড়ালে থাকাতে হয়তো হয়নি, জানার তেমন সুযোগও !

মূল আলোচনায় যাবার আগে প্রচার বিমুখ এই কবি সম্পর্কে তাই দু’টি কথা বলে রাখছি ।

মফস্বল শহর বগুড়াতে কবির জন্ম এবং বেড়ে ওঠাও সেখানেই। লিটলম্যাগাজিনের হাত ধরে মূলত কাব্যচর্চার উম্মেষ ও ক্রমবিকাশ।

বগুড়ার সাহিত্যাঙ্গনে সাজ্জাদ বিপ্লব একটি পরিচিত নাম । বিদেশে পাড়ি জমানোর আগে অল্প কিছুদিন ঢাকাতেও কাব্যচর্চায় নিমগ্ন থেকেছেন তিনি, সেই সুবাদে অনেকের সাথে সখ্যতাও গড়ে ওঠে কবির।

কবি আল মাহমুদ, কবি ফজল শাহাবুদ্দীন, কবি সমালোচক এবং সব্যসাচি লেখক আবদুল মান্নান সৈয়দ সহ অনেকেই তার গুণমুগ্ধ ভক্ত ।

বেশ দাপটের সাথেই তিনি সম্পাদনা করেছেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও গবেষণার কাগজ “স্বল্পদৈর্ঘ্য “

প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা : এগারো। কবিতা : পৃথিবী তোমার নয় (১৯৯৭), কবিতাং শরণং গচ্ছামি (২০০০), গ্রাসের গোঁফ (২০০৬), স্বপ্নশিকারিদের অরণ্যবিহার(যৌথ, ২০১৬), তুমি ছাড়া আমার কোনো বসন্ত নেই (২০১৬)। ছড়া : চলো সবে লড়ি(১৯৯৭), টুক টুকা টুক (১৯৯৭), সাম্প্রতিক ছড়া (১৯৯৮)। সম্পাদিত গ্রন্থ : নব্বইয়ের কবিতা : অন্য আকাশ (২০০১), সাক্ষাৎকার আল মাহমুদ (২০০৩), প্রসঙ্গ : নব্বই দশক (২০০৪)

আরও একটি প্রেম কাব্যের পান্ডুলিপি “আমি বিক্রি হবো ” প্রকাশের অপেক্ষায় ।

এবার “তুমি ছাড়া আমার কোনো বসন্ত নেই” প্রসঙ্গে আসা যাক ।

এই কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশক “ছোটকাগজের বারান্দা”র মলাটে লিখা সেই মুখবন্ধ দিয়ে শুরু করা যাক :

“…প্রবল স্রোতের মতো তিনি কবিতা লিখেছেন, লিখছেন,সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও অন্যান্য অনলাইন এবং প্রিন্টিং মিডিয়ায়। অন্তর্জাল বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র কবিতা থেকে দ্রুত বাছাই করা কয়েকটি কবিতা নিয়ে পাঠকদের সামনে হাজির হলো কবির একক চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ,’তুমি ছাড়া আমার কোনো বসন্ত নেই’ ।

…. প্রকাশকের এ কথাটিও বেশ প্রণিধানযোগ্য …আশার কথা, দীর্ঘপ্রবাস যাপনে কবি সাজ্জাদ বিপ্লব কবি ও কবিতাকে কখনোই ভুলে যাননি। বরং তিনি পাঠকদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন ভিন্ন স্বাদে। ভিন্ন আঙ্গিকে । বিপুল বেগে ।…

এই সময়ের এই প্রতিভাবান ও প্রধানতম কবি সাজ্জাদ বিপ্লবকে নতুনভাবে পেয়ে এবং পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করতে পেরে আমরা গর্বিত ।…

এই দাবী কতটা যুক্তিগ্রাহ্য এবং যথার্থ তাই আমরা এখন দেখার খানিকটা প্রচেষ্টা নিবো ।

প্রথম কবিতাটি দিয়েই শুরু করছি :

” আমি এক নিষিদ্ধ কবিতা

পঠিত হই প্রত্যহ গোপনে

আড়ালে

আমাকে হারালে থাকে না কিছুই

না স্বপ্ন না চিত্রকল্প

থাকে না পৃথিবীর প্রাচীন মুদ্রা

থাকবে না কোন প্রত্ন পাথর

কালো অক্ষর

অদৃশ্য

দৃশ্যমান সব ভাবের বর্ণমালা

চিত্রকলা …”

এভাবেই সমুদ্রের অজস্র ফেনায়িত শুভ্র তরঙ্গের মতোই মোহনীয়, লীলা লাস্যময়ী প্রতিটি কবিতা। এক ছন্দময় ও গীতিলয় আবেশ তৈরী করে প্রতিটি কবিতার শরীর ও ভাবনাগুলো, দ্রোহ আর প্রেমের, বিশ্বাস আর স্বপ্নের দোলাচলে দুলতে-দুলতে কবি হয়ে যান এক নিরুদ্ধ দিনের যাত্রি!–

“তুমি ছাড়া

আমার কোনো বসন্ত নেই

নেই শীত ও সন্ধ্যা

বন্ধ্যা সমস্তকাল, সকাল -দুপুর-রাত্রি

আমি, নিরুদ্ধ দিনের যাত্রি।”

এখানে প্রেম ভলোবাসা যেন স্বচ্ছ সরোবরে হংস মিথুনের নিত্য জলকেলী । অথবা রুয়ে দেয়া জমিনে পত্র-পুষ্প-পল্লবে ভরে ওঠা রঙিন এক গ্রহ। কিংবা হেসে খেলে বিশ্বাসে বেড়ে উঠা সবুজ ঢেঁড়সের মতো তাজা ও সতেজ এক হৃদয়ের নির্যাস। কী নিদারুণ কাব্যভঙ্গি। পড়ে দেখুন পাঠক এই দুটি কবিতা :

‘রুয়ে দিলাম

আমার ভালোবাসা

তোমার জমিনে

পত্র-পুষ্প-পল্লবে

ভরে যাক

এ রঙিন গ্রহ

দ্রোহ থেকে প্রেমে

আমাদের জীবন-যৌবন

ওঠে যেন ঘেমে ।’

কিংবা–

‘সবুজ ঢেড়সের মতো

তাজা ও সতেজ

এই হৃদয়

মোটেও

সহজলভ্য নয়

পাবে না দোকানে

রাস্তার মোড়ে

কিম্বা বিলাসবহুল ভিলায়

এই হৃদয় মিলায়

শুধু ভালোবেসে

হেসে

বিশ্বাসে ‘

এই প্রেম বহুমাত্রিক ! প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয়নিঃসৃত,বাহুলগ্ন প্রেম যেমন এখানে ছত্রে-ছত্রে বিমূর্ত, ঠিক ঈশ্বর প্রেমও এক অনন্য উচ্চতায় উচ্চারিত ।

এখানে প্রকৃতি, মানুষ এবং স্রষ্টার সমুদয় সৃষ্টির প্রতিও কবি হৃদয়ের অপরিসীম দরদ নির্ঝরের ক্লান্তিহীন নিক্কণের মতই অনুরণিত ।

এখানে দ্রোহও আছে প্রেমের নিগূঢ় কুঞ্জে । বইটির শেষের কবিতাটি এর এক জ্বলন্ত উদাহরণ :

“আমি অন্ধ হলে তুমি খুশি হও!

আমার পরাজয়ে যদি তোমার সুখ

তবে,তাই হোক

আমি পরাজিত হতে রাজি

ধ্বংস হোক 

আমার চোখ,মুখ,বুক ও পীঠ

রক্ত ঝরুক হৃদয়ে

ঝড়ে তছনছ হয়ে যাক

সাজানো বাগান

আমার সাধের ফুল,ফল ও বৃক্ষরাজি

তোমার নামের কসম

আমি হারতে রাজি “

এটা কী প্রেম , না কী দ্রোহ? স্বয়ং ঈশ্বরের সাথে এই কথোপকথন কবির অকপট মানসশৈলীর অভিমান সঞ্চালি প্রেম নিবেদন, যা দ্রোহের অনলে আপন সত্তা কিংবা অস্তিত্বকেও বিসর্জনে কুন্ঠিত নয়।এখানে আস্থা এবং বিশ্বাসের ভিতটা এতটা গভীরে প্রোথিত যে প্রেম ও দ্রোহ যেন একাকার হয়ে গেছে। এক অভূতপূর্ব প্রকাশশৈলী !

একটি নিটোল প্রেমের কাব্যে ‘মনোলগ’ না হয়ে বিচিত্র বিষয়,ভাবনা ও প্রকাশভঙ্গির কারণেও কাব্যটি পাঠককে বিমুগ্ধ করবে ।

পড়ুন :

১।

আমি ছাড়া

কে তোমাকে

আগলে রাখবে ?

কে দিবে

আশ্রয়-প্রশ্রয়?

কে গাইবে

প্রশংসা তোমার

বর্ণের ?রূপের?রসের?

দিগ্বিজয় শেষে

কে রাখবে পৃথিবীর সেরা উপঢৌকন

তোমার পায়?

কে বিছিয়ে দেবে

লাল গোলাপের পাপড়ি?

তাবৎ শুভ্রতা?

আমায় মান্য করো

হে অবুঝ নাবালিকা ।

কিংবা

২।

‘হে মহান

কী নীরব আর নিবিড়তায়

ছুঁয়ে যান

হৃদয়,মন ও মনন

অগনন

অপলক দৃষ্টি হেনে ‘ …

এভাবে এক একটি অখণ্ড চিত্রকল্পে উঠে এসেছে কাব্যের সারাৎসার। ছোট হউক কিংবা বড় কবিতার খণ্ডিত অংশ উদ্ধৃত করা প্রায় দুরূহ। তাই অনেক চিত্তাকর্ষক তুলনামূলক বড় কবিতা থেকে কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে উদ্ধৃতি টানতে পারছি না।

যা হোক। এই কাব্যের আর একটি অনিন্দ্য সুন্দর দিক সম্পর্কে আলোকপাত না করলে আলোচনাটি পূর্ণতা পাবে না ।

তা হল,তার কবিতায় শব্দের ব্যবহার এবং এক যাদুকরী দক্ষতায় অনিন্দ্য সুন্দর রূপকল্প বিনির্মাণ।

শব্দ নিয়ে কবি দারুণ খেলতে পারেন। শব্দের পিঠে শব্দ বসিয়ে কবিতার গতরে যেন প্রাণ সঞ্চার করেন তিনি !

সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থজ্ঞাপক শব্দকে অবলীলায় জুড়ে দেন। সমার্থক, দ্বিত্ব ও অনুকার শব্দের ব্যবহার রীতিমত তাক লাগানো ! এক অব্যর্থ তীরন্দাজের মতোই নিখুঁত নিশানায় গেঁথে দেন শব্দসম্ভার।

তবে শব্দের রবীন্দ্রযুগীয় আবহ পরিহার করে, এমন কি ত্রিশ দশককে পেছনে ফেলে সহজ ,সরল, প্রচলিত এবং উত্তর আধুনিক–মনস্ক যথাশব্দ প্রয়োগে কবি সিদ্ধহস্ত।

মাত্র কয়েকটি উদাহরণ দেখুন :

১।

‘আমার সামনে-পিছনে

ডাইনে-বায়ে

সবদিকে, চতুর্দিকে

ছড়ানো ছিটানো ফুল ও কাঁটা

আলোচনা-সমালোচনা

সংবর্ধনা

দল-নির্দল-উপদল কোন্দল

কোলাহল-নির্জন

নিভৃতে

সর্বত্র সর্বদা সর্বকালে উচ্চারিত

আমি…

কিংবা 

২।

‘অনন্য অসামান্য অসম্ভব

অনিবার্য

এক নাম

যে নামের কোন বিকল্প নেই

প্রতিলিপি হয় না,হয়নি ,হবেও না

কোনদিন ।’

অথবা

৩।

‘আমি ক্ষুদ্র এ পোকা

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র

আমার

ধ্যান-জ্ঞান-বয়ান

আমার পদচ্ছাপ

আমার চিন্তা-চেতনা

আমার আনন্দ-বেদনা

হাসি-কান্না-দুঃখ ও সুখ’ …

এভাবেই এগিয়ে গেছে এক একটি কবিতাশরীর, যেন বহিরাঙ্গ এবং অন্তর অঙ্গের এক ফলগুধারা !

এই কবিতাটি আরও এগিয়ে যায় সাবলীল ভঙ্গিমায় :

‘আমার সমগ্র সত্তা

আমার অন্তর

ভিতর-বাহির

আমার কামনা-বাসনা

প্রেম ও ঘৃণা

রাগ ও বিরক্তি,বিবিক্তি

ব্যক্তিত্ব,আসক্তি, নিরাসক্তি

ভোগ ও ত্যগ

সব মিলিয়েই অখণ্ড

আমি

এই ব্রহ্মাণ্ডে

সামান্য জলের

ফোটা’

এভাবে অসংখ্য উদাহরণ ছিড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রতিটি কবিতার চরণে-চরণে ।

চির চেনা-জানা চারপাশের নিত্য ব্যবহার্য শব্দগুলো যে কত কাব্যিক হয়ে উঠতে পারে কবি সাজ্জাদ বিপ্লব’কে পাঠ না করলে কিভাবে বুঝতে পারবেন,পাঠক ?…

‘কাল থেকে কালান্তর

ব্যাপে

অমলিন,অধরা,অজরা

চিত্রে-কল্পে’

তিনি আসলেই এক অনন্য রূপকার !

আমার মতে কবি সাজ্জাদ বিপ্লব একক এবং স্বাতন্ত্রসত্তায় দিপ্যমান হয়ে উঠছেন,উঠবেন ।

প্রত্যেক উদীয়মান কবির জন্য নিজের জায়গাটি বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে আলাদা করা ভীষণ জরুরী । যারা বাংলা কবিতা আকাশে উজ্জ্বল তারকা, তারা সবাই মূলত এই কাজটিই করে গেছেন ।

আমার বিশ্বাস কবি সাজ্জাদ বিপ্লব সেটা করে দেখাতে পারবেন। ইতিমধ্যে তিনি তার কাজের স্বীকৃতিও পেতে শুরু করেছেন। পেয়েছেন সম্মাননা ।

লিটলম্যাগাজিন সম্পাদনার জন্য যশোর থেকে পেয়েছেন, “কণ্ঠশীলন সম্মাননা পদক ২০০৬”। কবিতায় পেয়েছেন “শব্দশীলন সাহিত্য পুরস্কার ২০০৮” ঢাকা থেকে। ২০১৪ সালে কবি হিসেবে সংবর্ধিত হয়েছেন আটলান্টা, জর্জিয়া তে “বাংলা ধারা” কর্তৃক।

শিরোনামবিহীন কবিতা গ্রন্থনা পাঠকে খানিকটা বিড়ম্বনায় ফেলবে বৈ কি!

তবে মাত্র ছাব্বিশটা কবিতা নিয়ে গ্রন্থটি সাজানো হয়েছে। প্রতিটি কবিতার প্রথম চরণটি দিয়েই কবিতাগুলোকে সহজে চিনা যাবে ।

‘আমি এক নিষিদ্ধ কবিতা’/’হয়তো তুমিই’/’প্রতিবাদ আমার রক্তে’/’তুমি ছাড়া আমার কোন বসন্ত নেই’/ ‘তুমি বলতে ফ্রজের কথা ‘/’আমার কোন পূর্বসুরি নেই’/’বিশ্বাস হারিয়ে গলে’/’রুয়ে দিলাম’/ ‘তবুও কবিতা পড়ুন’/’এ সময়ে এই অসময়ে’/’বিপ্লব দীর্ঘজীবী হউক’ 

ইত্যাদি সব চমৎকার চরণ দিয়েই কবিতাগুলো শুরু ।

উৎসর্গ পাতায়ও কবি লিখে রেখেছেন:

‘আজো খুঁজিয়া বেড়াই’

এখানেও নাম-গোত্রহীন! তবুও কতই না চমৎকার !!

নব্বইয়ের এই কবির আরও একটি বিষয় আমাকে চমৎকৃত করেছে।

তিনি একেবারেই স্বভাব কবির মতোই ! সেখানে যান, যেভাবেই থাকেন খাতা কলম খুলে [অধুনা সেটা অবশ্য কোন সৌখিন হ্যান্ডসেট বা কী প্যাডও হতে পারে !] কবিতা লিখতে বসে পড়েন বা বসার সুযোগ না পেলে বোধ হয় দাঁড়িয়েই কবিতা লেখার কম্মটি সেরে ফেলেন! অন্তত কবিতার নীচে লেখা সন,তারিখ ,স্থান, সময় দেখলে তাই মনে হবে পাঠকদের ।

একজন জাত শব্দ-শ্রমিক এর দিনলিপির মতো দিন দিনান্তে, সকাল সন্ধ্যা কিংবা দুপুর-রাতে, মধ্যরাতে কখনও ডোরাভিল-জর্জিয়া, কখনও চেস্টনাট ড্রাইভ,কখনও বা আটলান্টার ডাউন টাউন ,স্যান্ডি স্প্রিংস,আবার কখনও বা শ্যাম্বলী স্টেশন, ফাইভ পয়েন্ট স্টেশন কিংবা নর্থ এভিনিউ স্টেশন ! কবিতা লেখা চলছেই!

এর ব্যাপ্তি যেন আরও ব্যাপক, বিস্তৃত ।

কবির ভাষায় শুনুন :

‘পৃথিবীর সমস্ত স্টেশনগুলোতে

লেখা আছে আমার নাম

আমিও ছিলাম

শান্তাহার থেকে আখাউড়া কিম্বা

লালমনিরহাট হয়ে কমলাপুর

মেদেনীপুর বা শিয়ালদহ

দিন শেষে ডুরাভিল

যেখানেই যাবে

আমাকে পাবে ।

এখনো চলি ইচ্ছে মতো

পাহাড় পর্বত সমুদ্র মাড়িয়ে

ছাড়িয়ে সবকিছু , সকলকে

পৃথিবীর বন্দরে বন্দরে

নোঙরের গায়ে লেখা থাকে

আমার পরিচয় জন্মবৃত্তান্ত ঠিকুজি ।’

কাজেই এই সুবিশাল ক্যানভাসকে ধারণ করেই বিনির্মিত হয়েছে ‘তুমি ছাড়া আমার কোনো বসন্ত নেই ‘ এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাখানি ।

মাত্র বারখানা কবিতা নিয়ে সাজানো “অগ্নিবীণা ” নিয়ে, বাংলা সাহিত্যের ধ্রুবতারা, কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল।

হয়তো এভাবেই বেজে উঠে সময়ের ঘণ্টা !

পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়। কবি সাজ্জাদ বিপ্লব বাংলা কবিতাচর্চার চিরায়ত এবং প্রচলিত ধারার ছন্দ ও অলঙ্কার প্রকরণের অনুকরণ বা অনুবর্তী না হয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব আঙ্গিক তৈরীর নিরীক্ষাধর্মী প্রয়াস চালিয়েছেন তার সর্ব শেষ এই কাব্যগ্রন্থে। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের একজন প্রকৃত যোদ্ধা হিসাবে, সন্দেহ নেই, তিনি ঋদ্ধ হস্তেই তা করেও দেখিয়েছেন । সময় হয়তো ঠিক করে দিবে কবি সাজ্জাদ বিপ্লবেরও ভাগ্য। আমরা সেই অপেক্ষায় রইলাম।

এখানে পাঠকের কথা বিবেচনা করে গ্রন্থটির পরিচিত তুলে দেয়া হল ।

পুস্তক পরিচিতি:

তুমি ছাড়া আমার কোনো বসন্ত নেই

কবি: সাজ্জাদ বিপ্লব

প্রকাশক: রহমান তাওহীদ

ছোট কাগজের বারান্দা

সবুজবাগ,বগুড়া,বাংলাদেশ।

প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৬ খৃ.

প্রচ্ছদ : মইম সুমন

মূল্য: পঞ্চাশ টাকা (৫ ইউ এস ডলার) মাত্র।

কোথায় কোথায় পাওয়া যাবে বইটি : শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট,ঢাকা

বাতিঘর,চট্টগ্রাম। এবং সবুজবাগ,বগুড়া মুঠোফোন(০১৭ ২৮ ৫৭০ ৫৯৬)

আমরা ‘তুমি ছাড়া আমার কোন বসন্ত নেই’ বইটির ব্যাপক সাফল্য কামনা করছি এবং প্রত্যাশা করছি তার এই অনন্য কাব্যগ্রন্থটির পাঠক প্রিয়তা। নামে মাত্র মূল্যের এই বইটি গ্রন্থমেলা ২০১৬ উপলক্ষে মেলার একেবরে শেষ দিকেই মেলায় এসেছিল। এটি সত্যিই কবিতা প্রেমিকদের সংগ্রহে রাখার মতই একটি বই।

১৭ বৈশাখ ১৪২৩

৩০ এপ্রিল ২০১৬। ঢাকা ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ