spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাক্ষাৎকারপ্রবাসজীবন ভালোমন্দ যেমনই হোক এক ধরনের উদবাস্তু : প্রবীর বিকাশ সরকার

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব

প্রবাসজীবন ভালোমন্দ যেমনই হোক এক ধরনের উদবাস্তু : প্রবীর বিকাশ সরকার

. আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কোন টি? কবে প্রকাশিত হয়েছিলো? প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কেমন ছিলো?

১] আমার প্রথম বই একটি ক্ষীণকায়া কাব্য ‘সেই ঘরে সুন্দর’, প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৯১ সালে (১৯৮৩?) কুমিল্লা থেকে। আমরা কতিপয় সাহিত্যকর্মী মিলে ‘আজকাল প্রকাশনী’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা গঠন করেছিলাম। সেই সংস্থার পক্ষ থেকে প্রকাশ করেছিল স্বপন সেনগুপ্ত। সনেট আকারে চৌদ্দ লাইনের চৌদ্দটি কবিতার বই। মূলত তখন ছড়া লেখাই ছিল প্রধান সাহিত্যকর্ম। কবিতা তেমন লিখিনি। কিন্তু কবিতার প্রতি আজন্ম একটা আত্মীয়তা অনুভব করে আসছি। কাজেই জীবনের প্রথম কাব্য প্রকাশের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা এককথায় দুঃসাধ্য। অসামান্য কাজ সাধন করার আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলাম এটুকুই বলা যায়। গ্রন্থের জনক হয়েছিলাম বলে বুকের ভেতরে একটা ওজন অনুভব করেছিলাম। 

. সাহিত্যে আপনি কার উত্তরাধিকার বহন করেন?

২] দলমতবর্ণশ্রেণীধর্ম ব্যতিরেকে যাঁরা সুদূর অতীতকাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাভাষায় সাহিত্যচর্চা করে এসেছেন আমি তাঁদের উত্তরাধিকার বহন করছি। 

. এ যাবৎ সর্ব মোট আপনার কতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? এর মধ্যে কোনটি বা কোনকোন কাজকে বা কোন বইকে আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে মনে করেন?

৩] এই পর্যন্ত আমার ১৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আরও দু-তিনটি গ্রন্থ প্রকাশের পথে। ছড়া এবং উপন্যাস বাদ দিলে প্রবন্ধের গ্রন্থ হিসেবে যেগুলো প্রকাশিত হয়েছে আমার বিবেচনায় সবগুলোই উল্লেখযোগ্য। অবশ্য এর কারণ একাধিক। যেমন: জানা অজানা জাপান ১, ২ এবং ৩ খণ্ড জাপানের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, শিল্পকলা, সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, জাপান-ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, রবীন্দ্র-জাপান সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে লিখিত প্রবন্ধসমূহের সংকলন। একই এশিয়া মহাদেশের সুপ্রাচীন দেশ জাপান সম্পর্কে বাংলা ভাষা বা ইংরেজিতেও খুবই কম লেখালেখি হয়েছে। সত্যিকথা বললে, তেমন গ্রন্থ নেই। ভ্রমণের ছলে জাপানে এসে স্বল্পকালীন অবস্থানে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে একাধিক জনের লিখিত গ্রন্থ থাকলেও গবেষণামূলক কাজ নেই বললেই চলে। আমি চেষ্টা করেছি এই কাজটি করার জন্য যাতে বাঙালি বৃহত্তর পাঠক জাপানের বিভিন্ন বিষয়কে জেনে নিয়ে স্বজাতি-সংস্কৃতিকে চিনতে পারে, জানতে পারে এবং অনুধাবন করতে পারে। এটাই আমার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য যে, ‘জানা অজানা জাপান’ এর ১ম খণ্ডটি দিল্লির প্রকাশনা সংস্থান হিন্দি সংস্করণ প্রকাশ করেছে ২০০৮ সালে। 

এরপর মনে করি ‘জাপানের নদী নারী ফুল’ গ্রন্থটি লিখেছি জাপানের তিনটি অসামান্য এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি যথাক্রমে নদীসংস্কৃতি, গেইশা সংস্কৃতি এবং সাকুরা সংস্কৃতি নিয়ে। যা অন্যকোনো ভাষায় বিস্তারিত লিখিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। 

ধারাবাহিকভাবে, ‘জাপানে গণিকা সংস্কৃতি’ উল্লেখ করতে চাই একারণে যে, এটাও ব্যতিক্রম একটি গ্রন্থ বাংলাভাষার সাহিত্যের ইতিহাসে। জাপানি ভাষায় গণিকা, বারবনিতা, পেশ্যা বা পতিতাকে ‘অইরান’ বলা হয়। কিন্তু অনেক বিদেশিই ‘গেইশা’ এবং ‘অইরান’কে এক করে  ফেলেছেন বা দেখেছেন এটা আদৌ সঠিক নয়। জাপানের গণিকাশ্রেণীর ইতিহাস বাঙালির কাছে অজানা এক করুণ মানবিক অধ্যায় বলে আমার বিশ্বাস। 

এসবের পরেও আমার একান্ত বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ-জাপান সম্পর্ক জাপান-বাংলাদেশ-ভারতের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা বৃহত্তর বাঙালি বা ভারতীয় জনগোষ্ঠীর অজ্ঞাত বললেই যথেষ্ট। শুধু সাহিত্য বা শিল্পকলার ক্ষেত্রেই নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এই সম্পর্ককে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই এখন পর্যন্ত। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এত মাতামাতি করেছেন জাপানি বিদ্ব্যৎমহল তা কল্পনারও অতীত! শতবর্ষেরও অধিককাল ধরে জাপানে রবীন্দ্রচর্চা অব্যাহত আছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ-ভারতে খুব কমই জাপানি সাহিত্য-সংস্কৃতি- শিল্পকলার কথা তুলে ধরা হয়েছে। রবীন্দ্র-জাপান সম্পর্ক তথা শতবর্ষের শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ভাববিনিময়ের ইতিহাসটা লেখাই হয়নি কারো পক্ষেই। সেই অপ্রকাশিত, অজ্ঞাত, হারানোপ্রায় তথ্য, উপাত্ত, ঘটনাসমূহের আবিষ্কার নিয়েই তিনটি গ্রন্থ এই পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে ‘জাপান এবং রবীন্দ্রনাথ: শতবর্ষের সম্পর্ক’ (২০১১), ‘জাপানে রবীন্দ্রনাথ’ (২০১৬) এবং ‘জাপানে রবীন্দ্রনাথ’ (বিষয়ভিন্ন)  (২০১৭)। প্রথম গ্রন্থটি ২০১১ সালেই রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবর্ষে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। এই বছর কলকাতায় দ্বিতীয় সংস্করণ ‘রবীন্দ্রনাথ ও জাপান: শতবর্ষের সম্পর্ক’ নামে প্রকাশিতহ হয়েছে আত্মজা পাবলিশার্স, কলকাতা থেকে। এখনো বহু তথ্য বাংলায় তুলে ধরার বাকি। কারণ এইসব তথ্য-দলিলপত্র সবই কঠিন জাপানি ভাষায় লিখিত সেগুলো পাঠোদ্ধার করে বাংলায় ভাষান্তর করা আদৌ সহজ কাজ নয়। 

. সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার নতুন বই সম্পর্কে বলুন।

৪] এই বছর প্রকাশিত হয়েছে ৩টি গ্রন্থ। ‘রবীন্দ্রনাথ ও জাপান: শতবর্ষের সম্পর্ক’ কলকাতায় প্রকাশিত হয়েছে যাতে ১৫টি প্রবন্ধ সংকলিত আছে যেগুলো সম্পর্কে বৃহত্তর বাঙালি ও ভারতীয় জনগোষ্ঠী জানেন না বললেই চলে। আশা করি রবীন্দ্র-জাপান সম্পর্ক বিষয়ে নতুন আলো ফেলবে ভারতে। ঢাকার বলাকা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘জাপানে রবীন্দ্রনাথ’ নামে ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থ তাতে কীভাবে জাপানে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করেছি জাপানি বুদ্ধিজীবী সমাজের চিন্তাভাবনা ও শিক্ষায় আমি তারই একটি অতিসংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেটা আসলে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসেবে লেখার ইচ্ছে রয়েছে। 

তৃতীয় যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য বিকাশ থেকে সেটা একটি উপন্যাস ‘অপরাজিত’ যা আসলে বছর কয়েক আগে দৈনিক ভোরের কাগজ’এর ঈদসংখ্যায় ‘অভিজিৎ’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে লিখিত। উপন্যাসের নায়ক অভিজিৎ মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে অংশগ্রহণ করে ঘটনাক্রমে পাকাহানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছিল পুরো ন’টি মাস। অমানুষিক অত্যাচারে তার একটি পা হারাতে হয়, হারাতে হয় পুলিশ ইন্সপেক্টার বাবাকেও এই যুদ্ধে। হারিয়ে ফেলে প্রিয়মানুষীকে যার সঙ্গে ভালোবাসার গভীর সস্পর্ক ছিল। যুদ্ধের পর পঙ্গু, অসহায় একাকী অভিজিৎকে প্রচণ্ড লড়াই করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়। পিতৃহারা পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে হয়। শুধু তাই নয়, যুদ্ধে বিপর্যস্ত একটি কাঠব্যবসার প্রতিষ্ঠানকেও দাঁড় করাতে পরিশ্রম করে। সেই ব্যবসার মালিকের একমাত্র পুত্র মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হলে পরে বিধবা পুত্রবধূর নাবালক সন্তানেরও দায়িদায়িত্ব নিতে হয় কাঁধে। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি অভিজিৎ, বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দেশগঠনেও আত্মনিয়োগ করে। ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে গড়ে তোলে বয়স্কশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষিখামার এবং ধর্ষিতাদের পুনবার্সন কেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্ব পালন করতে না পারলেও বিধ্বস্ত দেশকে সাবলম্বী করে তোলার জন্য সে হয়ে উঠেছিল আরেক অপরাজিত যোদ্ধা। এরকম দেশপ্রেমিক তরুণও ছিল স্বাধীনতার পর। সম্ভবত এই থিম নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কোনো উপন্যাস লিখিত হয়েছে বলে মনে হয় না। 

. আপনি নিজেকে কোন দশকের কবিলেখক বলেন? কেন?

৫] আমার লেখালেখির সূচনা ১৯৭৬ সালে সেই মোতাবেক যে দশক হয়। তবে কোনো লেখকের ক্ষেত্রেই দশক কোনো বিষয় নয়, কী লিখছেন লেখক সেটাই বড়কথা। 

. আপনার সমকাল নিয়ে বলুন।

৬] আমি মনে করি আমার সমকালটা বিশেষ করে বাংলাদেশে অতীতের চেয়ে অনুজ্জ্বল—মূঢ় এবং মূর্খের প্রজন্মই অত্যধিক। এদের দ্বারা দেশ ও বিশ্বের কোনো উপকার হবে না, মঙ্গলও হবে না। এই ক্রান্তিকালে আমি অবরুদ্ধ হয়ে আছি। জানি না, এই অন্ধকার কবে দূর হবে। 

. সাম্প্রতিক কালে কারা ভালো লিখছে বলে মনে করেন?

৭] মন্দলেখা আর ভালোলেখা, অর্থহীনলেখা এবং অর্থবোধকলেখার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা তো কঠিন। আমার যে লেখাটি ভালো লাগবে অন্যের সেটা ভালো নাও লাগতে পারে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যস্ততম দেশ জাপানে প্রবাসী হওয়ার কারণে অনেক উদীয়মান লেখক, নতুন কবি-লেখক-সাহিত্যিকের লেখা পাঠ করা সম্ভব হয়নি। বিস্তর লেখা না পড়লে বোঝা মুশকিল কে কী লিখছেন, কেমন লিখছেন। গুটিকতক লেখায় ভালো লেখকের আভাস পাওয়া যায় না। পুরস্কৃত হলেই যে সেটা ভালো তাও অনেকের কাছে বিবেচ্য নয়। তবে অনুসন্ধানী, গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখার প্রবণতাটা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে তা সুস্পষ্ট। 

. কত দিন আপনার প্রবাস জীবন? কোথায় আছেন? কি করছেন? পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।

৮] জাপানপ্রবাসজীবনের ৩৩ বছর চলছে। টোকিওতেই আছি ১৯৮৪ সাল থেকে। চাকরি করছি। আমার স্ত্রী জাপানি নাগরিক নোরিকো মিয়াজাওয়া। সেও চাকরীজীবী। আমাদের একমাত্র সন্তান মেয়ে টিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করে এই বছর চাকরিতে প্রবেশ করেছে। 

. প্রবাস জীবনে সাহিত্যচর্চায় প্রতিবন্ধকতা বা সুবিধা কিকি? কোথায়?

৯] প্রবাসজীবন ভালোমন্দ যেমনই হোক এক ধরনের উদ্বাস্তু–ভাসমান জীবন বলাই শ্রেয়। যেভাবেই থাকা হোক না কেন সেটা স্থিতিশীল নয়। সুতরাং অস্থিতিশীল অবস্থায় সৃজনশীল কাজ করা কোনোভাবেই সহজ নয়। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিশ্বের ব্যস্ততম দেশ জাপান–এতবেশি ব্যয়বহুল যে পর্যাপ্ত আয় না করলে জীবন ধারণ করাই মুশকিল। এইদেশে চাকরি করতে হয় দীর্ঘসময়, ছুটিছাটা হারাম তা ছাড়া দেশের আত্মীয়স্বজনের নানা রকম দায়দায়িত্বও পালন করতে গিয়ে দুদণ্ড সময় তৈরি করে নেয়া কত যে কঠিন একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝা অসম্ভব। তার মধ্যে দিয়েই সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সৃজনশীল এবং গবেষণামূলক কাজ করতে হচ্ছে। ১৯৯১-২০০২ পর্র্যন্ত নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে মাসিক ‘মানচিত্র’ সাময়িকী প্রকাশ ও সম্পাদনা, সৃজনশীল পাঠচক্র ‘আড্ডা টোকিও’, ‘ দোয়েল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’, ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক-লেখক ফোরাম’, ‘শাপলা নীড়’ এনজিও প্রভৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলাম। এর মধ্যেই ব্যক্তিগতভাবে গবেষণা করে একাধিক বই লিখতে পেরেছি বলে বিধাতাকে জানাই কৃতজ্ঞতা। আমার সমকালীন আর কোনো প্রবাসী এরকম সৃজনশীল কাজ করতে পেরেছেন বলে দেখতে পাচ্ছি না। 

১০. আপনি কখনো কি কোন পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন অথবা সংকলন সম্পাদনা করেছেন? বিস্তারিত বলুন।

১০] সাহিত্যচর্চার ঊষালগ্নে ছড়া সংকলন ‘ঝিলিমিলি’, সাহিত্য সংকলন ‘স্বপ্নীল’ সম্পাদনা করেছিলাম। এরপর জাপানে এসে মাসিক ‘মানচিত্র’, ‘আড্ডা টোকিও’, ‘অন্যচিত্র’ সম্পাদনা করেছি। এবছর সম্পাদনা করেছি আলোড়ন সৃষ্টিকারী লিটলম্যাগ ‘ঘুংঘুর’এর জাপান সংখ্যা অতিথি সম্পাদক হিসেবে। নিঃসন্দেহে একটি সৌভাগ্যজনক কাজ আমার জন্য। 

‘মানচিত্র’ ছিল জাপানের প্রথম মুদ্রিত বাংলা তথ্যভিত্তিক সামায়িকী। প্রথমে এটা ছিল ট্যাবলয়েড, পরে ম্যাগাজিন হিসেবে প্রকাশিত হয়। ঢাকা থেকে মুদ্রিত হয়ে জাপানে আসতো। জাপানের বিষয়াদি ছাড়াও বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্র্থনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, চলচ্চিত্র, নাটক ছাড়াও গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হতো। বাংলাদেশের অধিকাংশ কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরা মানচিত্রে লিখেছেন। কলকাতার কতিপয় লেখকও লিখেছেন। অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে কমবেশি। ২০০ জনের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি লেখার জন্য সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। ঢাকায় ১৪ জন স্টাফ ছিলেন। লেখক মঞ্জুরুল আজিম পলাশ, কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কবি মতিন রায়হান, কবি শিহাব শাহরিয়ার, সাংবাদিক ও লেখক মোকাম্মেল হোসেন, সাংবাদিক মোতাহার হোসেন বুলবুল, সাংবাদিক আহমেদ রাজু, সাংবাদিক ইয়াদী মাহমুদ, সাংবাদিক রাজু আহমেদ, অনুবাদক এম আবদুল্লাহ, সাংবাদিক শান্তনু হাসান খান, কবি, চিত্রশিল্পী ও নাট্যকর্মী সাফায়াত খান প্রমুখ স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। সম্ভবত ‘মানচিত্র’র মতো জাপানে ও বাংলাদেশে প্রবাসে প্রকাশিত আর কোনো সাময়িকী এত আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি সেই সময়। তা ছাড়া ত্রৈমাসিক একটি সাহিত্য ম্যাগাজিন ‘প্রাচী’ প্রকাশ ও সম্পাদনা করেছিলাম স্বল্পসময়ের জন্য। এটার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন সাফায়াত খান, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি সংখ্যা। 

‘আড্ডা টোকিও’ ছিল অনিয়মিত একটি ট্যাবয়েড এতে পাঠচক্র ‘আড্ডা টোকিও’তে পঠিত লেখাগুলো প্রকাশিত হতো। মিনি তথ্যভিত্তিক ত্রৈমাসিক সাময়িকী হিসেবে ‘অন্যচিত্র’ প্রকাশ শুরু করেছিলাম ২০০৩ সালে। একটি সংখ্যাই প্রকাশ কেেরছিলাম চট্টগ্রাম থেকে। গ্লোসি পেপারে মুদ্রিত সম্পূর্ণ রঙিন কাগজটি বেশ আলোড়ন তুলেছিল বাংলাদেশে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা তার সাহিত্য পাতায় ‘অন্যচিত্র’ নিয়ে আলোচনা লিখে আমাকে অবাক করে দিয়েছিল! 

১১. লিটল ম্যাগাজিন এর সংজ্ঞা কি? এ নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন।

১১] লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য। কিন্তু কেন যে লিটল ম্যাগ বা ছোটকাগজ বলা হয়ে থাকে বোধগম্য নয়। কোনো লিটল ম্যাগই ছোট নয়, পৃষ্ঠাবহুল ম্যাগাজিন। বিশ্বের বহু বিখ্যাত লেখক লিটল ম্যাগে লিখে খ্যাতি লাভ করেছেন। গবেষণামূলক প্রবন্ধ এবং ধারাবাহিক উপন্যাসের জন্য যথার্থ হচ্ছে লিটল ম্যাগাজিন। যদিও আমি লিটল ম্যাগাজিনে খুব কমই লিখেছি। কিন্তু সাহিত্য জগতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ এবং কলকাতায় প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিনে আধুনিক মুদ্রণ প্রযুক্তির যেমন ছোঁয়া লেগেছে তেমনি বিষয়বৈচিত্র্যও এসেছে। ঋদ্ধ এবং আকর্ষণীয় ম্যাগাজিন এখন প্রচুর প্রকাশিত হচ্ছে। দেখতেও যেমন চোখ জুড়িয়ে যায় তেমনি মন ভরে যায় নানা বিষয়ক সাহিত্য পাঠ করেও। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে মুদ্রিত লিটল ম্যাগের ভবিষ্যৎ কতখানি সুদূরপ্রসারী বলা কঠিন। 

মূলত প্রথাবিরুদ্ধ এবং অপণ্যভিত্তিক সাহিত্রচর্চাই লিটল ম্যাগজিনের সংজ্ঞা বলে প্রতীয়মান হয়। তবে এই সংজ্ঞা অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। 

পরিচিতি: প্রবীর বিকাশ সরকার জাপানপ্রবাসী কিশোরসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে, অবাক কাণ্ড, তালা, জানা অজানা জাপান, জাপান এবং রবীন্দ্রনাথ: শতবর্ষের সম্পর্ক, জাপানে রবীন্দ্রনাথ, জাপানের নদী নারী ফুল, জাপানে গণিকা সংস্কৃতি প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা।                   

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব, ২০১৭

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ