spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাক্ষাৎকারবড় কোনো বই অনুবাদে হাত দিলেই মৃত্যু চিন্তা আচ্ছন্ন করে : আনোয়ার...

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব

বড় কোনো বই অনুবাদে হাত দিলেই মৃত্যু চিন্তা আচ্ছন্ন করে : আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

প্রশ্ন: আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কোন টি? কবে প্রকাশিত হয়েছিলো? প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কেমন ছিলো

উত্তর: আমার প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল আসলে যৌথভাবে লিখা একটি বই, নাম: ছোটদের বিশ্বকোষ’, প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। খুব উচ্ছসিত হবার অনুভূতি জাগেনি। কারণ আমি ১৯৬৭ সাল থেকে, অর্থ্যাৎ যখন ক্লাস নাইনের ছাত্র তখন থেকে দেয়াল পত্রিকা ও লিটল ম্যাগ প্রকাশনার সাথে জড়িত ছিলাম। একত্রে কয়েকজনের সাথে বই প্রকাশনা ম্যাগাজিন প্রকাশের মতোই মনে হয়েছে। ১৯৯২ সালে আমার একক প্রথম বই একটি ভ্রমণ কাহিনী ”ও আকাশ ও বিহঙ্গ” প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ করতে পেরে খুব আনন্দ বোধ করেছি।  

প্রশ্ন: সাহিত্যে আপনি কার উত্তরাধিকার বহন করেন?

উত্তর: আমি বিশেষভাবে কারো উত্তরাধিকার বহন করি না। কারণ আমি নিজেকে প্রকৃত অর্থে সাহিত্যিকদের মধ্যে গণ্য করি না। আমি একজন পাঠক এবং যেহেতু বাংলা সাহিত্য পাঠ করার মধ্য দিয়েই সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকেছি সেজন্য ব্যাপক অর্থে বাংলা ভাষার সকল যুগের সাহিত্যিকদের কাছে নিজেকে ঋণী বলে মনে করি।

প্রশ্ন: এ যাবৎ সর্ব মোট আপনার কতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? এর মধ্যে কোনটি বা কোনকোন কাজকে বা কোন বইকে আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে মনে করেন?

উত্তর: আমার নিজস্ব বইয়ের সংখ্যা মাত্র চারটি। কিন্তু আমার মূল কাজ সেরা লেখকের ভালো সৃষ্টি অনুবাদ করা এবং আমার অনূদিত বইয়ের সংখ্যা ৪৭টি। এসবের মধ্যে খুশবন্ত সিং এর উপন্যাস ‘দিল্লি,’ ‘ট্রেন টু পাকিস্তান,’ তাঁর আত্মজীবনী ‘ট্রুথ লাভ এন্ড এ লিটল ম্যালিস,’ স্কটিশ লেখক উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল এর ‘দি লাষ্ট মোগল,’ ‘হোয়াইট মোগলস,’ নোবেল বিজয়ী সার্বিয়ান লেখক আইভো অ্যানড্রিচ এর ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য দ্রিনা,’ তুরস্কের নোবেল বিজয়ী ওরহান পামুকের ‘ইস্তান্বুল,’ মিশরীয় নোবেল বিজয়ী নাগিব মাহফুজের ‘উইজডম অফ খুফু,’ ‘থেবস অ্যাট ওয়ার,’ কোলম্যান বার্ক এর ‘দ্য সোল অফ রুমি,’ বইগুলো সেরা সাহিত্যকর্ম বলে আমি মনে করি। আমি বাংলায় অনুবাদ করে বাংলা ভাষার সাহিত্য ভান্ডার কিছুটা সমৃদ্ধ করতে সামান্য অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছি কিনা তা বিচার করবেন পাঠকরা। 

প্রশ্ন: সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার নতুন বই সম্পর্কে বলুন। 

উত্তর: আমি এক বিশাল অনুবাদ কাজে হাত দিয়েছি। নাগিব মাহফুজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সৃষ্টি ‘কায়রো ট্রিলজি।’ প্রায় দেড় হাজার পৃষ্ঠার বইটি তিন খন্ডের। বড় কোনো বই অনুবাদে হাত দিলেই আমাকে মৃত্যুচিন্তা আচ্ছন্ন করে। মৃত্যুর ভয় নয, যে কাজে হাত দিয়েছি সেটি শেষ করতে পারবো কিনা সেই শঙ্কা। ইতোমধ্যে ‘কায়রো ট্রিলজি’র দুই খন্ড ‘প্যালেস ওয়াক’ এবং ‘প্যালেস অফ ডিজায়ার’ এর অনুবাদ শেষ করেছি এবং যথারীতি তা প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় খন্ড ‘সুগার ষ্ট্রিট’ অনুবাদ শুরু করেছি।  

প্রশ্ন: আপনি নিজেকে কোন দশকের কবিলেখক বলেন? কেন?

উত্তর: আমি আগেই বলেছি, আমি কবি বা লেখকদের মধ্যে নিজেকে বিবেচনা করি না। দশকওয়ারীভাবে খন্ডিত বাংলা সাহিত্যের বা সাহিত্যিকদের সৃষ্টির সাথে আমার যৎসামান্য পরিচয় আছে আমার পাঠাভ্যাসের কারণে। আমি যেহেতু সাহিত্যের ছাত্র নই, সেজন্য দশক গুণে সাহিত্যের বিচার করতে পারি না।    

প্রশ্ন: আপনার সমকাল নিয়ে বলুন। 

উত্তর: আমি কাল বিচারে বিশ্বাসী নই, তার ইঙ্গিত আগের প্রশ্নের উত্তরেই আছে। পুরো জীবনটাকেই আমি সমকাল মনে করি। এ জীবনে সমাজ ও দেশের জন্য কতোটুকু অবদান রাখতে পেরেছি বা পারবো আমার ভাবনায় শুধু এটুকুই কাজ করে। 

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক কালে কারা ভালো লিখছে বলে মনে করেন

উত্তর: বাংলা সাহিত্যে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সাহিত্য ক্ষেত্রে রীতিমতো আকাল চলছে। অনেকে লিখছে, হাজার হাজার বই প্রকাশিত হচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন কে বা কারা ভালো লিখছে। কারণ ভালো লিখার জন্য যে প্রচুর ভালো বই পাঠ প্রয়োজন, নিজ দেশের পক্ষপাতমুখ রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন, রাজনৈতিক প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত থাকা প্রয়োজন আমাদের লেখকরা সেই প্রয়োজনীয়তাগুলো উপলব্ধি করতে পারেন না বলেই কারা ভালো লিখছে তা মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।  

প্রশ্ন: কত দিন আপনার প্রবাস জীবন? কোথায় আছেন? কি করছেন? পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।

উত্তর: আমার প্রবাস জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। যখনই বিদেশে এসেছি মোটামুটি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। কখনো সাথে পরিবার ছিল, কখনো একা কাটিয়েছি। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে থিতু হয়েছি আট বছর যাবত। আমার স্ত্রী কামরুন নাহার মনি একজন সৌখিন চিত্রশিল্পী। মেয়ে সাদিয়া আনোয়ার যুক্তরাষ্ট্রে চাকুরি ও ব্যবসায়ে নিয়োজিত, ছেলে সা’দ আনোয়ার যুক্তরাষ্ট্রে কিছুকাল অবস্থান করেছে, কিন্তু খাপ খাওয়াতে না পেরে বাংলাদেশে চলে গেছে। 

প্রশ্ন: প্রবাস জীবনে সাহিত্যচর্চায় প্রতিবন্ধকতা বা সুবিধা কিকি? কোথায়?

উত্তর: প্রবাস জীবনে সাহিত্য চর্চায় কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করি না। বরং সুবিধাই বেশি। সাহিত্যের প্রতি যদি সত্যিকার অর্থেই অনুরাগ থাকে, প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা তার দিগন্তকে আরো প্রসারিত, উন্মুক্ত করে দেয়। তবে কেউ যদি প্রবাসে বাংলা সাহিত্য চর্চা শুরু করতে চান, এমনকি বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে কেউ যদি ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করতে চান, তার বা তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। কারণ তিনি বা তারা যতো ভালো সাহিত্যই সৃষ্টি করেন না কেন, বাংলাদেশে তাদের কোনো পরিচিতি না থাকায় তাদের রচনা গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সক্ষম হবেন বলে আমি মনে করি না।   

প্রশ্ন:আপনি কখনো কি কোন পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন অথবা সংকলন সম্পাদনা করেছেন? বিস্তারিত বলুন।

উত্তর: আমি নতুন ঢাকা ডাইজেস্টনামে একটি মাসিক ম্যাগাজিন এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ১৯৮৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম প্রকাশিত হবার পর এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। আমাকে বিজ্ঞাপনের উপর তেমন নির্ভর করতে হতো না। সামরিক শাসনের অবসানের পর নতুন নতুন দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে থাকে এবং এসব দৈনিক বাড়তি কোনো মূল্য না নিয়েই সপ্তাহে ২/৩টি করে ম্যাগাজিন পাঠকদের কাছে তুলে দিতো। এরপর ইন্টারনেটের বদৌলতে যে কোনো তথ্য সহজলভ্য হয়ে উঠায় শুধু ঢাকা ডাইজেস্ট নয়, অন্যান্য ম্যাগাজিনের সার্কুলেশনের উপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ডাইজেস্ট এর মতো বিক্রয় নির্ভর ম্যাগাজিনের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠে। এ অবস্থায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকা ডাইজেস্ট এর মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। অনলাইনে করার চেষ্টা করছি। নিয়মিত আপলোড করা হয় না। এছাড়া কলেজের প্রথম বর্ষে একটি লিটল ম্যাগাজিন এবং দ্বিতীয় বর্ষে কলেজ বার্ষিকী সম্পাদনা করেছি। 

প্রশ্ন: লিটল ম্যাগাজিন এর সংজ্ঞা কি? এ নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন।

উত্তর: লিখতে আগ্রহী তরুণদের লিখা সমৃদ্ধ ছোট্ট প্রকাশনা, যার পাঠক সংখ্যা সীমিত, যারা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোক্তাদের পরিচিত ও ঘনিষ্টজন। যাদের লেখক প্রতিভার উন্মেষ ঘটতে পারে তাদের জন্য লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা জরুরী। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে উৎসাহ দেয়ার জন্য পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে অধিকাংশ পৃষ্ঠপোষকতা আগাছার জন্ম দেয়। তা যাতে হতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখারও জরুরী।  

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব, ২০১৭

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ