প্রচ্ছদপ্রবন্ধমানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক

লিখেছেন : আবু তাহের সরফরাজ

মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক

আবু তাহের সরফরাজ

মানুষের চোখের সামনে এই যে বিশ্বজগৎ, এর ব্যাপার-স্যাপার দেখেশুনে একটু গভীরভাবে ভাবলে বোঝা যায়, জগতের সকল জীব ও জড়বস্তুর প্রত্যেকের এক একটি নির্দিষ্ট প্রকৃতি বা স্বভাবজাত ধর্ম রয়েছে। প্রতিটি বস্তুর সঙ্গেই প্রতিটি বস্তুর আন্তরিক যোগাযোগও আছে। যারা চিন্তাশীল, তারা এসব বিষয়ে যত জানে তত বেশি সৃষ্টিকর্তার সত্তা স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করে। টের পেতে থাকে অদ্বিতীয় ও অনাদি আল্লাহর অস্তিত্ব। সে দেখতে পায়, আল্লাহর জ্ঞান, শক্তি ও জগতের প্রতি কল্যাণ সাধনের ইচ্ছে প্রকৃতির সব জায়গাতেই ছড়ানো। জগৎ-সংসারের প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের মধ্যে পারস্পরিক যে সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছেন, মানে, বিশ্বরাজ্য পরিচালনার জন্য যে নিয়ম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, এর সবই জগতের কল্যাণে। প্রকৃতির গভীরে লুকনো এসব নিয়ম জানা গেলে কারো প্রতি অভিযোগ থাকে না। সকলের প্রতিই প্রাগঢ় ভালোবাসা তৈরি হয়। প্রকৃতির এসব নিয়ম মেনে যে মানুষ জীবনযাপন করবে, সে সুখি ও কল্যাণময় জীবনের অধিকারী হবে।

এই পৃথিবীর বুকে কল্যাণময় একটি জীবন কাটাতে সব মানুষই চায়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ জগতের নিয়মগুলো জানে না। তাই তারা বিভ্রান্ত হয়ে জগৎ-সংসারে দুখের নদী সাঁতরে বেড়াচ্ছে। মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও বুদ্ধিমান প্রাণী। যেসব গুণে মানুষ শ্রেষ্ঠ, এই ভূমণ্ডলে তা আর কোনো প্রাণীর ভেতর নেই। আবার দেখা যাচ্ছে, মানুষের ভেতর রয়েছে পরস্পরবিরোধী গুণ। এ গুণও প্রকৃতির আর কোনো প্রাণীর ভেতর নেই। একদিকে মানুষকে শয়তান বলে মনে হয়, আরদিকে ফেরেস্তার মতোও মনে হয়। জগতের এমন কোনো হীন কাজ নেই যা মানুষ করে না। এরই পাশাপাশি এটাও সত্য যে, জগতের এমন কোনো কল্যাণকর কাজ নেই যা মানুষ করে না। ভালো ও মন্দের এই সহাবস্থান, এটা প্রকৃতির আর কোনো প্রাণীর নেই। আল্লাহ বলেন, সৃষ্টিকর্তা মানুষের অন্তরে ভালো-মন্দের বোধ ঢেলে দিয়েছেন। সূরা শামস ৮

ছাগল ও মেষের মতো যেসব প্রাণী দুর্বল প্রকৃতির, এবং যাদের স্বভাব খুবই নিরীহ, তাদের সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্কও সেরকম সহজ ও সাধাসিধে। মানুষের আশ্রয়ে থেকে তারা ঘাসপাতা খেয়ে জীবননির্বাহ করে। কিন্তু বাঘ খুবই হিংস্র প্রাণী। তার স্বভাব অনুযায়ী তার বসবাসের জায়গা গভীর জঙ্গল। সেখানে তার হিংস্র স্বভাব প্রকাশের পরিবেশ ও সীমা নির্দিষ্ট করা আছে। নিরীহ ছাগল কিংবা মেষ ঘাসপাতা খেয়ে যেমন তৃপ্তি পায়, হিংস্র বাঘও তেমন তার হিংস্রতা খাটিয়ে প্রাণী হত্যা করে আহার করে তৃপ্তি পায়। জগতের সকল প্রাণীর প্রকৃতিই এই রকম। মানে, প্রাণীর শারীরিক ও মানসিক বৃত্তি প্রকৃতির আরসব জিনিসের সঙ্গে মিলেমিশে একটি সুশৃঙ্খল ও সুকৌশলী নিয়মে গড়ে ওঠে। প্রকৃতির সবকিছুই যেন এক একটি যন্ত্র। প্রকৃতির নির্দেশমতো যাকে চলতে হচ্ছে। সবকিছুর সঙ্গে এই যে ঐক্য, তার সঙ্গে যে যতটা নিজেকে মিলিয়ে চলতে পারবে, তার জীবন ততটাই সহজ ও সুন্দর হয়ে উঠবে।

বাঘের কথাই ধরা যাক। কোনোদিন যদি দেখা যেত, বাঘ তার চারপাশের সব প্রাণীকে নৃসংসভাবে হত্যা করে মাংস খাচ্ছে এবং পরদিন দেখা যেত, সেই বাঘটি আবার আগের দিনের হতাহত প্রাণীর দেহে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে, কিংবা লোকালয়ে থাকতে তার একান্ত খায়েশ জেগেছে, তবে এই বাঘের প্রাকৃতিক স্বভাব হয়ে উঠত দ্বন্দ্বমুখর। বাঘের যে প্রকৃতি তার সঙ্গে লোকালয়ে বসবাসের ইচ্ছে কিংবা নৃশংসতার পরপরই অনুশোচনা, এ বৃত্তিগুলো থাকে না। আর এ কারণেই বাঘ লোকালয়ে এসে বসবাস করলে সুখি হতে পারবে না। যে পরিবেশ তার জন্য স্বস্তিকর সে পরিবেশেই সে সুখি হতে পারবে। প্রাণীর মানসিক বৃত্তিগুলোর সঙ্গে প্রকৃতির নিয়মকে মিলিয়ে নিতে পারলেই প্রাণী সুখি হয়ে উঠবে। এটাই সৃষ্টিজগতের নিয়ম, প্রকৃতির সৌন্দর্য।

বাঘের ঠিক বিপরীতে মানুষের স্বভাব ভাবা যাক। মানুষের স্বভাবে পরস্পরবিরোধী দুটো বৃত্তির উপস্থিতিই তীব্রভাবে আমাদের চোখে পড়ে। মানুষের নৃংশস প্রবৃত্তি উত্তেজিত হলে হেন কোনো অপরাধ নেই যা মানুষ করতে পারে না। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তি ও ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে চললে মানুষের ভেতর মহত্ব প্রকাশ পায়। মানুষের ভেতর এই যে পরস্পরবিরোধী দুই বৃত্তি, কিভাবে এদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হতে পারে? কিংবা বিশ্বপ্রকৃতি কী রকম হলে মানুষের প্রতিটি বৃত্তির উপযোগী হতে পারে? এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া একমাত্র সৃষ্টিকর্তার পক্ষেই সম্ভব। পরস্পরবিরোধী প্রবৃত্তিগুলোর সামঞ্জস্য রেখেই সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পৃথিবীর অধিপতি করেছেন। জগতের সবকিছুর সঙ্গে মানব-প্রকৃতির যে সম্পর্ক, গভীরভাবে ভাবলে বোঝা যায়, মানুষকে সুখি করতেই সৃষ্টিকর্তা জগতের সব নিয়ম সৃষ্টি করেছেন। সেসব সূক্ষ্মনিয়ম ঠিকঠাক পালন করতে পারলে পৃথিবীর বুকে মানুষের কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকে না। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাতেও থাকে না কোনো বিশৃঙ্খলা। জীবনের প্রতিটি ক্ষণ সুখে-শান্তিতে কাটুক, দুঃখে নয়, এই বাসনা সকল প্রাণীর। মানুষের প্রকৃতি কি, চারপাশের নানা জিনিসের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কি, এই সম্পর্ক অনুযায়ী কী কী কাজ করা মানুষের উচিত, এসব বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে মানুষ সুখের পথটা খুঁজে পাবে না। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, এই জ্ঞান সুখি হয়ে উঠতে গেলে খুবই জরুরি। যখন তা জানা হয়ে যাবে তখন তা যাপিতজীবনে পালন করে চললেই সুখের পথে হাঁটা শুরু হয়ে যাবে। সুতরাং স্বীকার করে নিতেই হচ্ছে যে, সৃষ্টিকর্তার বিধানই প্রকৃতির প্রাকৃতিক সংবিধান।

আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, মহাবিশ্ব একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে। সৃষ্টিজগতের কোথাও এ নিয়মের এতটুকু হেরফের নেই। যদি তা থাকতো তাহলে মুহূর্তেই সবকিছু উলটেপালটে ধ্বংস হয়ে যেত। এরপর আমাদের বুঝতে আর বাকি থাকে না যে, এ নিয়মের বিপরীতে গিয়ে আমরা কোনোভাবেই সুখি হতে পারব না। সৃষ্টিজগতের এই নিয়ম চিরন্তন। এ নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করে সৃষ্টিকর্তা বিশ্বরাজ্য পরিচালনা করছেন। এই নিয়ম অনুসারে সৃষ্টিজগতে সুখ-দুঃখ বিতরণ করছেন। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী যে চলছে সে তার স্বাভাবিক অবস্থায় প্রকৃতির বুকে বিরাজ করছে। আর যে এ নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো চলছে, তার স্বাভাবিক অবস্থা আর থাকছে না।

বলতে কি, মানুষ ছাড়া প্রতিটি সৃষ্টি প্রকৃতির চিরন্তন নিয়ম মেনে চলছে। মানুষ কেন মানছে না? এর কারণ, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। যা আর কোনো সৃষ্টির ভেতর তিনি দেননি। এটা এজন্য যে, আল্লাহর প্রতিনিধি হিশেবে মানুষ পৃথিবীতে ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করে কিনা, তা দেখার জন্য। জগতের নিয়ম-শৃঙ্খলা বিষয়ে মানুষ যেন জ্ঞান লাভ করতে পারে এজন্য আল্লাহ প্রতিটি সম্প্রদায়ের কাছে নবি-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাদেরকে দিয়েছেন গ্রন্থ। সেসব গ্রন্থে দিয়েছেন মানুষের জন্য বিধান। মানুষের জীবন কয়েকটি পর্বে বিভক্ত। শিশুকাল, শৈশবকাল, যৌবনকাল ও বৃদ্ধকাল। একইভাবে পৃথিবীতে যখন মানবজাতির শিশুকাল ছিল তখন আল্লাহ যেসব বিধান দিয়েছেন, মানবজাতির শৈশবকালে তা সংশোধণ করে নতুন বিধান দিয়েছেন। মানবজাতির যৌবনকালের বিধান শৈশবকালের বিধান থেকে উন্নততর। সবশেষে মহাম্মদের (স.) প্রতি আল্লাহ যে কোরআন অবতীর্ণ করেন তা মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত বিধান। কেননা, মহানবির সময়ে থেকেই মানবজাতির বৃদ্ধকাল শুরু হয়। বৃদ্ধকালে মানুষ যেমন জীবন-অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানে প্রাজ্ঞ হয়, মানবজাতিও এই সময়ে এসে জ্ঞানে ও কর্মে প্রাজ্ঞ হয়ে ওঠে। মানবজাতির শিশুকালে যে শারীরিক কাঠামো মানুষের ছিল, মানবজাতির বৃদ্ধকালে পৌঁছে মানুষের সেই কাঠামো পরিপূর্ণ রূপ লাভ করেছে। কোরআনে আগের অনেক বিধান সংশোধন করা হয়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন অনেক বিধান। কোরআন মানুষের জন্য প্রাকৃতিক সংবিধান। মানুষকে শিক্ষা দিতে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে প্রকৃতির নিয়ম ও সূত্রগুলো। এছাড়া জগতের নিয়ম-শৃঙ্খলা বিষয়ে মানুষ যেন জ্ঞান লাভ করতে পারে, এজন্য আল্লাহ প্রকৃতির কিছু কিছু জিনিসকে মানুষের আয়ত্বে এনে দিয়েছেন। যেন মানুষ সেসব জিনিসের প্রাকৃতিক ধর্ম নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে জ্ঞান লাভ করতে পারে। এ পদ্ধতিই মূলত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। সাধারণ যে নিয়ম দ্বারা আল্লাহ বিশ্বরাজ্য পরিচালনা করছেন, সে নিয়ম দ্বারাই তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন মানুষের কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়। এ নিয়ম পালন করে না চললে প্রাকৃতিক নিয়মকে উপেক্ষা করা হয়। যা মানুষের স্বভাবগত ধর্ম নয়। বিশ্বপ্রকৃতি পরিচালিত হচ্ছে সুনির্দিষ্ট একটি নিয়মে। প্রকৃতির কোত্থাও এ নিয়মের ব্যতিক্রম নেই। প্রকৃতির এই নিয়ম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। মহাবিশ্বের প্রতিটি জিনিসই যে আল্লাহর এই নিয়ম মেনে নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে তার প্রমাণ হিশেবে কোরআনের পাঁচটি আয়াতই যথেষ্ট।

১. সাত আসমান ও জমিন এবং এ দুইয়ের মাঝামাঝি সবকিছুই তার পবিত্রতা বর্ণনা করে। এমন কোনো জিনিস নেই যা তার সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করে না। কিন্তু তোমরা তাদের তাসবিহ বুঝতে পারো না। বনি ইসরাঈল ৪৪

২. আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তারা আল্লাহরই তাসবিহ পাঠ করে, এমনকি পাখিরাও। যারা পাখা ছড়িয়ে উড়ছে। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ নামাজ ও তাসবিহের পদ্ধতি জানা আছে। নূর ৪১

৩. পর্বতমালাকে আমি নিয়োজিত করেছিলাম যাতে তারা দাউদের সাথে সন্ধেবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবিহ পাঠ করে। এবং পাখিদেরও, যাদেরকে একসঙ্গে করে নেয়া হতো। তারা দাউদের সাথে মিলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকতো। সোয়াদ ১৮ ও ১৯

৪. বজ্র তারই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে। রা’দ ১৩

মানুষ এই বিশ্বপ্রকৃতির অংশ। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক খুবই গভীর। মানবদেহ যেসব মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি তার মধ্যে শতকরা ৬৫ ভাগ অক্সিজেন, ১৮.৫ ভাগ কার্বন, ৯.৮ ভাগ হাইড্রোজেন, ৩.২ ভাগ নাইট্রোজেন, ১.৫ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং ১.০ ভাগ ফসফরাস। এই দেহকে সচল রাখতে যে খাবার মানুষ খায় তাও আসে প্রকৃতি থেকে। মানুষ নাক দিয়ে বাতাস থেকে প্রতিমুহূর্তে একের এক শ্বাস টেনে নিচ্ছে। আবার ছাড়ছে। এই শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলেই মানুষ মারা যায়। মানুষ যখন শ্বাস টেনে নেয়, তখন নাক দিয়ে অক্সিজেন ঢুকে শ্বাসনালির পথ ধরে ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর তা ধমনীর রক্তে ঢুকে দেহের কোষগুলোতে পৌঁছায়। কোষে শর্করা থাকে। কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পরমাণু একসঙ্গে মিলিত হয়ে শর্করার একটি অণু তৈরি হয়। অক্সিজেনের উপস্থিতিতে কোষের শর্করায় জারণ ঘটে। এর ফলে ডাস্ট বা আবর্জনা হিশেবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কার্বন-ডাই-অক্সাইড কোষ থেকে রক্তের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফুসফুসে এসে পৌঁছায়। এরপর ফুসফুস থেকে নাক দিয়ে বিষাক্ত এই যৌগিক পদার্থটি দেহ থেকে বের হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

এই পৃথিবীর আলো, হাওয়া, গাছপালা, মাটি, পানি প্রতিটি উপাদানের সাথে মানুষের বেঁচে তাকার সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতির যে পরিবর্তন হয়, তার প্রভাব পড়ে মানুষের ওপর। মানুষের শরীর ও মানসিক বিকাশে ভৌগোলিক অবস্থার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। আইনস্টাইন বলেছিলেন, মানুষ সমগ্রের অংশ, যাকে আমরা মহাবিশ্ব বলে থাকি। এই অংশটি সময় ও স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কেউ যখন নিজেকে প্রকৃতি থেকে আলাদা মনে করে তখন তা হয় আত্মপ্রতারণা। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে আন্তঃসংযোগ খুবই নিবিড়। আরেক বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, বুদ্ধিমত্তা তাকেই বলে যখন আপনি প্রকৃতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।

প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে জীবনযাপন করাই যে মানুষের জন্য কল্যাণকর, এর বিপরীতে আর কোনো যুক্তি থাকা সম্ভব নয়। মানুষ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। প্রকৃতির নিয়ম বা শৃঙ্খলার সঙ্গে মানুষের বেঁচে থাকা পুরোপুরি নির্ভরশীল। প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে মানুষের যে যোগসূত্র সেটা কোথাও একটু এদিক-ওদিক হলেই মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ে। প্রকৃতির নিয়ম না মানার কারণেই মানবদেহে নানা রোগব্যধি বাসা বাঁধে। মানুষ মারাও যায়। অথচ মানুষ যদি প্রকৃতির শৃঙ্খলার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে জীবনযাপন করে, তাহলে মানুষ সুখি ও সমৃদ্ধ জীবন কাটাতে পারে। মানুষই প্রকৃতির একমাত্র প্রাণী যে প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গ করতে পারে। আর কেউ তা পারে না। আল্লাহ তো জানিয়েই দিয়েছেন, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তারা আল্লাহরই তাসবিহ পাঠ করে। এখানে তাসবিহ পাঠ করার মানে সৃষ্টিকর্তার নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালিত হওয়া। এটাই আল্লাহর বিধান। এই বিধান মেনেই সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে গোটা বিশ্বজগৎ। কিন্তু মানুষ এই বিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে আচরণ করতে পারে। কেননা, মানুষকে আল্লাহ ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। ইচ্ছে করলে মানুষ প্রকৃতির নিয়ম মানতে পারে, আবার নাও মানতে পারে। মানুষ যেন প্রকৃতির নিয়মকে মেনে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এজন্য আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন কোরআন। কোরআন হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সংবিধান। এই সংবিধান অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা নিয়ন্ত্রণ করছেন মহাবিশ্ব। মানুষও এর বাইরে নয়। সুতরাং, স্বাভাবিক নিয়মেই যখন প্রকৃতির প্রতিটি জিনিস সেই সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে তখন মানুষের জন্যও সে বিধান পালন করা স্বাভাবিক। এটাই মানুষের জন্য প্রকৃতির সীমা।

পৃথিবীর সবকিছুরই বিকাশ যে একবারেই ঘটবে, তা নয়। সবকিছুর ধীরে ধীরে বিকাশ ঘটাতেই সৃষ্টিকর্তা তার নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। প্রকৃতির সবখানেই এ নিয়ম সহজেই চোখে পড়ে। পৃথিবী নামক গ্রহটি ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে মানুষের বাসের যোগ্যভূমি হয়ে উঠেছে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, শুরুর দিকে পৃথিবী অতি গরম তরল পদার্থময় ছিল। ধীরে ধীরে স্নিগ্ধ ও কঠিন হয়ে দ্বীপের মতো নানা ভূমি তৈরি হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে সেখানে নানা জাতের উদ্ভিত ও প্রাণীর সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর সৃষ্টি ধীরে ধীরে। বদলে যাওয়ার পথে পৃথিবীতে ঘটে গেছে কত না সৃষ্টি আর ধ্বংস। পুরনো প্রাণীর জাত ধ্বংস করে নতুন আরেক প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবী খুঁড়লে ভূমিস্তরে পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম কালের প্রাণীর প্রস্তরীভূত হাড়গোর দেখা যায়, দ্বিতীয় কালের ভূমিস্তরে এদেও অনেক জাতিরই কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। আধুনিক ভূমিস্তরে দ্বিতীয় কালের অনেক রকম প্রাণীর কোনো নিদর্শন পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রতিকালের ভূমিস্তরে নতুন নতুন প্রাণীজাতির চিহ্ন আছে। এবং এটা সত্য যে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাণী সৃষ্টির এই খেলা বিবর্তনের খেলা। ক্ষুদ্র থেকে বিকাশ ঘটিয়ে পরিপূর্ণ রূপ দেয়া।

এই তিনকালে পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি। সবার শেষে মানুষ এই পৃথিবীতে বসবাস করতে এসেছে। মানুষের আগে অসংখ্য প্রাণী এই পৃথিবীতে ছিল। এখন যে প্রাকৃতি নিয়ম, তখনও একই নিয়ম ছিল। মানুষ সৃষ্টি করার সময় সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর আগের নিয়ম পরিবর্তন করে মানুষের প্রকৃতির নিয়মে পৃথিবীর নিয়ম সৃষ্টি করেছেন, এমনটা হবার নয়। এটাই ঠিক যে, মানুষকে তিনি পৃথিবীর নিয়মের যোগ্য করেই সৃষ্টি করেছেন। শত্রুকে দমন করতে সৃষ্টিকর্তা মানুষকে রাগ দিলেন, আবার শত্রুর হামলা থেকে নিরাপদে থাকতে সাবধান থাকার মানসিক বৃত্তি দিলেন। দেখা যাচ্ছে, আগে থেকেই পৃথিবীকে থাকা নানা ইতর প্রাণীর মধ্যে এসে মানুষ সবার ওপর নিজের কর্তৃত্ব খাটাতে শুরু করল। সুতরাং বলা যায়, মানুষের প্রকৃতি পৃথিবীর প্রকৃতির উপযুক্ত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর অনেক ইতর শ্রেণির প্রাণীর স্বভাবের সঙ্গে মানুষের স্বভাবের মিল আছে। খাবার, বাসস্থান ও যৌনকর্মের পরে ইতর প্রাণীর আর কোনো চাহিদা নেই। মানুষের কিন্তু আছে। মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণী। শুধু ইন্দ্রিয় সুখেই মানুষের আত্মা তৃপ্ত হয় না। তার দরকার হয় আত্মার খোরাক। আত্মা পরমাত্মা থেকে উদ্ভুত। এ কারণে স্বভাগতভাবেই মানুষের গন্তব্য শুদ্ধতার দিকে। মানুষের রয়েছে ন্যায়-অন্যায়ের বিচারবোধ। যা প্রকৃতির আর কোনো প্রাণীর ভেতর নেই। বিশ্বপ্রকৃতি বিষয়ে যে যত ক্ষান অর্জন করে, তার ভেতর পরম সত্তার প্রতি প্রেমবোধ তত তীব্র হয়। সে বুঝতে পারে মহাবিশ্বের সৃষ্টি কী অপার রহস্যে ঘেরা! বিশ্বসৃষ্টি নিয়ে মানুষ চিন্তা করতে পারে, আর কোনো প্রাণী পারে না। এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। কোরআনে লেখা আছে, আল্লাহর যে প্রকৃতি তার ওপরই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং মানুষের আত্মিক ক্ষমতা অভাবনীয়। এ ক্ষমতা সৃষ্টিজগতের আর কারো ভেতর নেই।

পরম করুণাময় আল্লাহ জগতের প্রতিটি জিনিসকে মানুষের শুভবৃত্তি চর্চার জন্য উপযোগী করে দিয়েছেন। পৃথিবীতে মানুষের চেয়েও প্রকাণ্ড কত কত সৃষ্টি রয়েছে। মানুষ কখনোই সেসব কিছুর বিশালত্ব পেরোতে পারবে না। কিন্তু আশ্চর্য যে, সৃষ্টিকর্তা দরকারমতো জগতের প্রতিটি জিনিস মানুষের আয়ত্বে এনে দিয়েছেন। মাটিকে করে দিয়েছেন ফসল উপযোগী। বুদ্ধি খরচ করে মাটির গুণাগুণ জেনে চাষ করলে মানুষের খাবারের অভাব হয় না। শুষ্ক মাটিকে সজীব করে তুলতে আকাশে কৃত্রিম মেঘ সৃষ্টি করার বুদ্ধিমত্তা আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণে খটখটে মাটিও চাষের উপযোগী হয়ে ওঠে। পর্বতগুহা থেকে সৃষ্টিকর্তা নদী প্রবাহিত করেছেন। দরকারমতো মানুষ নদীর ঢেউ বদলে ফেলতে পারে। আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সাগর-মহাসাগর। কী বিশাল আর দিগন্তপ্রসারী এসব জলধি! এসবও মানুষ নিজের অধীনে নিয়ে এসেছে। সমুদ্রের তল থেকে মানুষ তার দরকারি জিনিস সংগ্রহ করছে। নৌযান আবিষ্কার করে যোগাযোগ ঘটিয়েছে বিভিন্ন জাতিসত্তার। এভাবেই ঘটেছে সভ্যতার উৎকর্ষ। পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়ালে মানুষকে কত ক্ষদ্রই না দেখায়! অথচ এই মানুষই ডিনামাইন দিয়ে গুড়িয়ে দেয় পাহাড়। তৈরি করে বসতি। জগতের যেসব সৃষ্টির শক্তি পেরোনোর ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকে দেননি, সেসবের স্বভাব  জেনে সে অনুযায়ী কাজ করার জ্ঞান তিনি মানুষকে দিয়েছেন। 

আমরা জানি যে, আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। এই পরিবেশে রয়েছে নানা স্বভাবের মানুষ ও জীবজন্তু। রয়েছে গাছপালা, নদনদী, পাহাড়-পর্বত। পরিবেশের প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে মানুষের সুখ-দুঃখ জড়িয়ে আছে। এসব জিনিসের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে সম্পর্ক ঠিক করে দিয়েছেন, সে অনুযায়ী কাজ করলেই মানুষের কল্যাণ হয়। এর বিপরীত কাজে মানুষের জীবনে দুঃখ নেমে আসে।  এ কারণে, জগতের প্রতিটি জিনিসের কীরকম প্রকৃতি এবং আমাদের সঙ্গে তাদের কী সম্পর্ক, এ বিষয়ে জানা ও সে অনুযায়ী কাজ করলে মানুষ প্রকৃতির কোলে পরম মমতায় জীবন যাপন করতে পারবে।

মানুষ যখন মূর্খ থাকে তখন সে খুবই নিষ্ঠুর আচরণ করে থাকে। সে হয়ে ওঠে ইন্দ্রিয়পরায়ণ। ধর্ম বিষয়ে নানা কুসংস্কারে আটকে গিয়ে জঘন্য রকমের কাজ করে থাকে। এসময় মানুষের নিকৃষ্ট প্রবৃত্তিগুলো চরিতার্থ হয়ে থাকে। তার শুববোধ ও বুদ্ধিবৃত্তি তার ভেতর নিষ্প্রাণ হয়ে শুকিয়ে যায়। এ অবস্থায় মানুষ মনে করে, জগৎ-সংসারের সকল সৃষ্টি পরস্পর বিচ্ছিন্ন। এদের কারো সাথে কারো সম্পর্ক নেই। বিশ্বের গতিশীল ঘটনাগুলো তার কাছে শৃঙ্খলাপূর্ণ মনে হয় না। এটা এমনই এক অবস্থা যখন তার মনে কার্যকারণ তত্ত্ব কোনো ভাবের উদয় ঘটায় না। জগতের প্রকাণ্ড সৃষ্টিগুলো তার ভেতর এই ধারণা তৈরি করে দেয় যে, এসবের সঙ্গে পাল্লা দেয়া মানুষের কাজ নয়। সুতরাং সৃষ্টিজগতের প্রতি এসব মানুষ হয়ে পড়ে উদাসীন। তারা নিজের ইন্দ্রিয় সুখের চিন্তাতেই ব্যস্ত হয়ে থাকে। মূর্খ এসব মানুষ জানতেও পারে না, জগতের প্রতিটি জিনিস আল্লাহ মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির নিয়ম মেনে চললে তার জীবনও সুখের হয়ে উঠত।

মানুষ যখন জ্ঞান অর্জন করে তখন সে বুঝতে পারে, বিশ্বজগতের প্রতিটি জিনিস ও ঘটনা একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কিত। এবং সবকিছুই একটি শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে চালিত হচ্ছে। যার গন্তব্য কল্যাণের দিকে। জ্ঞানী মানুষ পৃথিবীতে নিজেকে আল্লাহর প্রতিনিধি হিশেবে স্বীকার করে বিশ্বের কর্মপদ্ধতি নিরীক্ষণ করে। এরপর সে নিয়ম অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনা করে। যথেচ্ছ ইন্দ্রিয়সুখে ডুবে না থেকে জ্ঞানী মানুষ ধর্মীয় জ্ঞান থেকে পাওয়া বিশুদ্ধ ইন্দ্রিয় সুখের চেষ্টা করে। সে বুঝতে পারে, জগতের নিয়মই সৃষ্টিকর্তার নিয়ম। এ নিয়ম মেনে জীবন যাপন করলেই মানুষের কল্যাণ হয়। প্রকৃতির বুকে মানুষ হয়ে ওঠে শক্তিশালী।

আদিম অবস্থায় মানুষ অসভ্য ছিল। বনেজঙ্গলে পশুপাখি শিকার করে আহার করতো। পরে কিছুটা জ্ঞান হলে সে কৃষিকাজ আরম্ভ করে। এরপর মানুষের ভেতর শিল্পকর্ম ও আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা চালু হয়। এসব কিছুই ঘটে বিবর্তনের পথ ধরে। মানুষ যখন সভ্য হয়ে উঠল, তখনই তার জীবনে শুরু হলো জটিলতা। বেড়ে যায় মানুষের আকাঙ্ক্ষা। ভোগের আকাঙ্ক্ষা। মনে রাখতে হবে, মন ও শরীরের প্রকৃতি চিরকালই এক। প্রথম অবস্থায় মানুষের প্রবৃত্তি ছিল পশুর মতো। পশুর প্রবৃত্তিগুলো ছিল তার ভেতর প্রবল। মানুষ থাকতও পশুদের সঙ্গে বনেজঙ্গলে। মানুষের দ্বিতীয় অবস্থায় কিছুটা বুদ্ধিবৃত্তি মানুষের ভেতর দেখা গেলেও পশুপ্রবৃত্তিকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এ কারণে মানুষ অসভ্য অবস্থাতেই থাকে। বিবর্তনের তৃতীয় পর্যায়ে মানুষ বুদ্ধি খরচ করে প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিসকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে। এভাবে এগিয়ে চলে আধুনিক মানুষের সভ্যতা। আর এ সভ্যতায় মানুষ প্রকৃতিকে জয় করেও নিজের জীবনে কল্যাণ আনতে পারেনি। এর কারণ, এখনো পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে নিজের মানসিক বৃত্তির ঐক্য স্থাপন করতে পারেনি।

এই যখন অবস্থা তখন অবশ্যই মানুষকে চেয়ে দেখতে হবে তার ভেতরটাকে। খুঁজে বের করতে হবে কী তার প্রকৃতি। জগতের প্রতিটি জিসিনের ভেতর চিরকালীন যে শৃঙ্খলা বজায় রয়েছে, এ শৃঙ্খলার সঙ্গে কীভাবে মানুষ খাপ খাইয়ে চলতে পারে, সে জ্ঞান অর্জন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জ্ঞান মানুষের ভেতরই আছে। কেবল তার পথ ও পদ্ধতি জেনে জীবনে সে শৃঙ্খলা চর্চা করলেই মানুষ সুখি হয়ে উঠতে পারে। আল্লাহ মানুষকে সে ক্ষমতা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে, মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী থেকে বেশি সুখের অধিকারী হোক। এ উদ্দেশ্যে তিনি মানুষকে দিয়েছে বুদ্ধিবৃত্তি। এ বৃত্তি ব্যবহার করেই মানুষের পক্ষে সম্ভব, নিজের ও জগতের অন্যসব জিনিসের প্রকৃতি জানা ও বোঝা। জগতের সবকিছুর ভেতর যে ঐক্য, সেই ঐক্যের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নেয়া। যে শৃঙ্খলা শাশ্বত তাকে উপেক্ষা করে যথেচ্ছ জীবনযাপন মানুষের দুঃখের প্রধান কারণ। মানুষ সৃষ্টিকর্তার বড়ই আদরের সৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তা চান না, মানুষ দুঃখ-যন্ত্রণায় জগৎ-সংসারে হাহাকার করতে থাকুক। প্রথমদিকে আদিম অবস্থায় মানুষ নিজের প্রকৃতি বিষয়ে কিছুই জানতো না। এ কারণে তার জীবন ছিল বন্য। কিন্তু যখন মানুষ বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে নিজের প্রকৃতির সম্পর্ক জানতে পারল, তখন উচিত ছিল সেই শৃঙ্খলাকে জীবনে ধারণ করা। মানুষ কিন্তু তা করেনি। ফলে মানুষ আজ বিভ্রান্ত, অসুখি আর যন্ত্রণাকাতর একটি প্রাণী।

এরকমটি সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য নয়। মানুষের প্রকৃতি ও জগতের অন্যসব কিছুর প্রকৃতি জানা ও বোঝার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা মানুষকে দিয়েছেন। এ কারণে যে, এ ক্ষমতার বলে মানুষ প্রকৃতিরাজ্যের নিয়ম মেনে সুখি-সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু মানুষ তা করছে না। এ অবস্থার জন্য সৃষ্টিকর্তার ওপর দোষ চাপালে বোকামি হবে। মানুষের অক্ষমতার দায় মানুষেরই। সৃষ্টিকর্তার নয়।

আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, মহাবিশ্ব একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম মেনে চলছে। সৃষ্টিজগতের কোত্থাও এ নিয়মের এতটুকু হেরফের নেই। আর যদি তা হয়, তাহলে মুহূর্তে সবকিছু উলটেপালটে ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর আমাদের বুঝতে আর বাকি থাকে না যে, এ নিয়মের বিপরীতে গিয়ে আমরা কোনোভাবেই সুখি হতে পারব না। সৃষ্টিজগতের এই নিয়ম চিরন্তন। এ নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করে সৃষ্টিকর্তা বিশ্বরাজ্য পরিচালনা করছেন। সৃষ্টিজগতে এই নিয়ম অনুসারেই সুখ-দুঃখ বিতরণ করছেন। যে নিয়ম অনুযায়ী চলছে, সে তার স্বাভাবিক অবস্থায় বিরাজ করছে প্রকৃতির বুকে। আর যে এ নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো চলছে, তার স্বাভাবিক অবস্থা আর থাকছে না। বলতে কি, মানুষ ছাড়া প্রতিটি সৃষ্টি প্রকৃতির চিরন্তন নিয়ম মেনে চলছে। মানুষ কেন মানছে না? এর কারণ, আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। যা আর কোনো সৃষ্টির ভেতর তিনি দেননি। এটা এজন্য যে, আল্লাহর প্রতিনিধি হিশেবে মানুষ পৃথিবীতে ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করে কিনা, তা দেখার জন্য। জগতের নিয়ম-শৃঙ্খলা বিষয়ে মানুষ যেন জ্ঞান লাভ করতে পারে এজন্য আল্লাহ প্রকৃতির কিছু কিছু জিনিস মানুষের আয়ত্বে এনে দিয়েছে। যেন আমরা সেসব জিনিসের প্রাকৃতিক ধর্ম নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে জ্ঞান লাভ করতে পারি। সাধারণ যে নিয়ম দ্বারা আল্লাহ বিশ্বরাজ্য শাসন করছেন, সে নিয়ম দ্বারাই তিনি মানুষের কি করা উচিত আর কি উচিত নয়, তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ নিয়ম মেনে না চললে পরম সত্তার নিয়মকে উপেক্ষা করা হয়। যা মানুষের স্বভাবগত ধর্ম নয়। মানুষের দুঃখ-কষ্টের মূল কারণ এটাই।

বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মসহ সর্বশেষ ইসলাম ধর্ম যখন প্রচারিত হলো, সে সময়ে মানবপ্রকৃতি ও বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ম বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। কী নিয়মে বিশ্বসংসার পরিচালিত হচ্ছে, মানুষের সুখ-দুঃখ নির্ধারিত হচ্ছে, এসব বিষয়ে সে সময়ের মানুষের ষ্পষ্ট কোনো জ্ঞান ছিল না। সে সময়ের কোনো কোনো পণ্ডিত জগতের নিয়ম বিষয়ে ভেবেচিন্তে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের মনে হয়েছে, এ রহস্য মানুষ কখনোই বের করতে পারবে না। পরে কেউ এসে হয়তো বললেন, জগতের আসলে কোনো শৃঙ্খলাই নেই। সে যাই হোক, সাধারণ মানুষ কেউ কেউ সংসারজীবনে প্রকৃতির নিয়ম ছিটেফোটা যা জানে, তা মেনে চলতে চেষ্টা করে। এতে করে তারা প্রকৃতির চরত্রি বুঝে নিজের ব্যবস্থা করে নেয়। যেমন: বৃষ্টি না হলে চাষবাসে জলসেচ দেয়। খাবার ও অন্যসব চাহিদা পূরণ করতে শ্রম দেয়। অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যায়। সংসারজীবনের এইসব নিয়ম তাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি। মানুষ নিজের ভেতর থেকেই এ সত্য আবিষ্কার করে নিয়েছে। এরপর তা সামাজিকচর্চা হয়ে গেছে। তাহলে একথা ঠিক নয় যে, জগতের নিয়ম বলে কিছু নেই। নিশ্চিত তা আছে। আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে, প্রকৃতির একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। মানুষও এ নিয়মের বাইরে নয়। কোন কাজের কী ফলাফল, মানুষ তা জানে। এরপর ওই কাজ করার সিদ্ধান্তটি মানুষের। যেহেতু মানুষের ইচ্ছেশক্তি আছে। মানুষ যদি প্রকৃতির নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজটি করে, তবে সে দায় তার। প্রকৃতির নয়। প্রকৃতির রাজ্যে সবকিছুতেই শৃঙ্খলা। এ অবস্থায় মানুষকে ভোগ করতে হয় প্রকৃতির শাস্তি। এ শাস্তিই তার ওপর নেমে আসে নানাভাবে। 

প্রকৃতির নিয়ম ঠিকঠাক পালন করতে পারলে আমাদের জ্ঞানের আয়না ঝকঝকে হয়। নিজের সঙ্গে প্রকৃতির ছবি মিলিয়ে নেয়া যায়। আর, জ্ঞানের উচ্চতা থাকলে সুস্থ জীবন যাপন করা যায়। তার ক্ষমতারও প্রকাশ ঘটে। মানুষের সমাজে সে আদর পায়। এ জ্ঞান আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের দিচ্ছে। মানুষ দেখছে, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ জগতের যে নিয়ম ঠিক করে দিয়েছেন, সে নিয়মের বাইরে গেলেই তার জীবনে নেমে এসেছে নানা ধরনের ঝামেলা। একবার নিয়ম ভঙ্গ করলে আবার যেন মানুষ তা না করে এজন্য সৃষ্টিকর্তা মানুষের ওপর দুঃখ চাপিয়ে দেন। দুঃখের এই ভার মানুষের নিজের অর্জন। মানুষ যা করেছে, নিজের নিয়মের সঙ্গে প্রকৃতি তা খাপ খাওয়াতে পারেনি। তাই তা ক্ষতিকর হয়ে ফিরে আসে মানুষেরই জীবনে। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়ই সৃষ্টিকর্তা এই নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। এর কোনো হেরফের নেই। যে মানুষের জ্ঞানের আয়না স্বচ্ছ, সে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের সমাজে এরকম মানুষ খুবই দুর্লভ। সুস্থ ও সুন্দর জীবন পেতে হলে মানুষকে কিছু নিয়মের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। শরীরের সঙ্গে মনকেও এ নিয়মে নিয়ে আসতে হয়। কেননা, দেহ ও আত্মা মিলিয়েই মানুষ। মানুষ শুধু দেহ নয়, কিম্বা আত্মাও নয়।

জগতের নিয়ম হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ। এ নির্দেশ অমান্য করলে প্রকৃতির সন্তান হিশেবে বেঁচে অধিকার মানুষের থাকবে না। এটাই চূড়ান্ত। এই বিশ্বপ্রকৃতিই আসলে মানুষের ধর্মগ্রন্থ। শুধু দেখে মানুষ শিখতে পারবে না বলে সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পাঠিয়েছেন ধর্মীয় গ্রন্থ নিয়ে। যা প্রকৃতির সংবিধান। মানুষ যেন দেখে, পড়ে ও বুঝে প্রকৃতির সন্তান হয়ে উঠতে পারে, এটাই সৃষ্টিকর্তার মহৎ ইচ্ছে।

বিশ্বপ্রকৃতির প্রতিটি জিনিসের কাজই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ঘটে যাচ্ছে। সমুদ্রের অথই জল বাষ্প হয়ে বাতাসে ভেসে ভেসে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। তাতেই মেঘ জমে ধরিত্রী ভিজে ওঠে সজীব প্রাণে। এখানে জল ও সূর্যের তাপ, এই দুই ধরনের পদার্থের কাজের ফলাফল হচ্ছে, বাষ্প ও মেঘ। কাজের এই শৃঙ্খলা জগতের নিয়ম অনুযায়ী ঘটে থাকে। জল ও সূর্যের তাপের যে প্রকৃতি, এবং সে প্রকৃতি অনুযায়ী দুজনের ভেতর যে সম্পর্ক তৈরি হয়, তাতে ওই কাজের ওই ফলাফল ছাড়া আরকিছু হতে পারে না। জল ও তেজের যে কাজটি একবার ঘটেছে, আবারও যদি সে ঘটনাই ঘটে তাহলে নিশ্চিত যে, বারবারই এরকমই ঘটবে। প্রকৃতির এই যে নির্দিষ্ট একটা রীতি, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। নিয়ম যেহেতু আছে, সেহেতু প্রকৃতিরাজ্যের সবাইকেই তা মেনে চলতে হবে। যেটা সৃষ্টির স্বাভাবিক অবস্থা। একটু আগে বলা জল ও সূর্যের তাপ পদার্থ দুটো প্রকৃতির নিয়ম মেনে মেঘ তৈরি করে। এইভাবে জগতের সবকিছুই কোনো না কোনো একটি নিয়মকেই মেনে চলছে। যার আদি ও শেষ একই বিন্দুতে গিয়ে মিলে যায়। 

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিজগতের এ যে নিয়ম, এ নিয়ম জানা ও সে অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতাও আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। তিনি চান, মানুষ নিজের বিবেক ও বুদ্ধির শক্তিতে জগতের নিয়ম জানুক। এরপর সে অনুযায়ী জগতে জীবনযাপন করে। সিগারেট পান করলে আমাদের কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা আমরা প্রত্যেকেই জানি। এরপরও নিকোটিন টেনে চলেছি। মরেও যাচ্ছি। এর মানে, আমরা প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলছি না। কোনো মানুষ যদি এই সত্য উপলব্ধিতে করতে পারে, তবে সে নিজের প্রয়োজনেই প্রকৃতির নিয়মে চলতে চেষ্টা করবে। একসময়ে সফল হয়ে সে প্রকৃতির সন্তান হিশেবে শান্তির জীবন কাটিয়ে দেবে। প্রকৃতির নিয়ম মানা মানেই সৃষ্টিকর্তার নিয়মকেই মেনে নেয়া। কোরআনে বলা হচ্ছে, নিশ্চয়ই দিন ও রাত আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। পরম দয়াময় আরো বলছেন, যে আমার দিকে এক বিঘৎ এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যায়। যে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে আমি তার দিকে…

যে প্রকৃতির ওপর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, বিশ্বজগতের প্রকৃতিও সেই প্রকৃতি। ফারাক কিছুই নেই। এই সত্য যে মানুষ উপলব্ধি করতে পারে, সে জগৎ-সংসারে সুখি-সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে। কেননা, সে জেনে গেছে, নিয়ম মেনে না চললে তার দেহ ও মন অসুস্থ থাকবে। জীবন হয়ে পড়ছে বিশৃঙ্খল। প্রকৃতির শৃঙ্খলার বিপরীতে সেই বিশৃঙ্খলায় সংঘর্ষ বাঁধবে। এর ফলাফল বিশৃঙ্খল মানুষের জীবনের ওপর এসে পড়ে।

কী করা উচিত আর কি উচিত নয়, তা শেখানোর জন্য সৃষ্টিকর্তা এক একটি কাজের ফলাফল হিশেবে সুখ কিংবা দুঃখ রেখে দিয়েছেন। কোনো কাজের ফলাফল হিসেবে আমরা যদি দুঃখ পাই, তাহলে নিশ্চিত হতে হবে, এটা প্রকৃতির নিয়ম নয়। সে যদি আবারও নিয়ম ভঙ্গ করে কষ্টে পড়ে, তখন তার বিশ্বাস মৌখিক না থেকে আত্মায় গেথে যায়। সে তখন সংকল্পচিত্ত হয়ে জগৎ-সংসারে জীবন যাপন করে। তার আচরণে প্রকাশ পায় সেইসব কাজ যা প্রকৃতির নিয়ম। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মঙ্গলের জন্যই পৃথিবীতে দুঃখ-কষ্ট রেখে দিয়েছেন। বেশি দুঃখ ঘটার আগে অল্প দুঃখ দিয়ে আমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেন। আমাদের সুস্থতার জন্যই সৃষ্টিকর্তা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন, পরিশ্রম করে খাবার খাও। যা হালাল তা, যা হারাম তা নয়।

কোনো একটি কাজের ফলাফল হিসেবে দুঃখ পাওয়া গেল। তাহলে মেনে নিতেই হবে, কাজটি প্রকৃতির নিয়মের অধীনে নয়। এই সত্য জেনে ফেলার পর বিবেকবান মানুষ কাজটি আবারও করতে চাইবে না। কেউ যদি করে তবে ধরে নিতে হবে, সে নির্বোধ, জগৎ-সংসারের নিয়মের প্রতি উদাসীন। মানুষ যেন নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সত্য অনুভব করতে পারে এজন্য সৃষ্টিকর্তা কোনো কাজের ফলাফল দুঃখ, আবার কোনো কাজের ফলাফল হিশেবে সুখ রেখে দিয়েছেন। এই দুঃখ যদি আমাদের ভালোর জন্য না হতো, তাহলে প্রকৃতির নিয়ম ভাঙলেও সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে দুঃখ দিতেন না। তিনি শুধু আমাদের পালনকর্তাই নন, একজন পরম শিক্ষকও। যে নিয়ম অনুযায়ী তিনি প্রকৃতিরাজ্য পরিচালনা করছেন, মানুষের প্রতিদিনকার জীবনযাপনে তা তিনি শিখিয়ে দিচ্ছেন। কেউ শিখছে, কেউ শিখছে না। সংসারে যত রকমের দুঃখ আছে, সবই প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গের ফল। এ কারণে বিবেকবান মানুষ বিবেচনা করে,

কোন কাজের কোন ফল, এটা জেনে গেলে বিবেকবান মানুষ পরেরবার কাজটি করবে না। সে বুঝতে পারে, এটাই প্রকৃতির শাসন-ব্যবস্থা এবং নিয়ম। জগতের সবকিছুরই এক একটি নির্দিষ্ট প্রকৃতি রয়েছে। প্রকৃতি অনুযায়ী প্রত্যেকে এক একটি কাজ করে যাচ্ছে। একটি জিনিস থেকে আরেক জিনিসের কাজের ভিন্নতা রয়েছে।

সৃষ্টির সকল জিনিসের কাজের নির্দিষ্ট যত নিয়ম আছে,  বিশ্বেরও যদি তত নিয়ম থাকত তাহলে সৃষ্টিজগৎ উলটে যেত। এটা ঘটত এ কারণে যে, কাজেরই এক এক রকম নির্দিষ্ট রীতির নামই নিয়ম। মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে জগতের সকল জিনিসের যে নিয়মতান্ত্রিক সম্পর্ক রয়েছে, সে অনুযায়ী মানুষের কাজের ভিন্নতা তৈরি হয়। যেমন: শুকনো ঘাস আগুনে যেরকম পুড়ে যায়, ভেজা ঘাস কিন্তু সেরকম পোড়ে না। এর কারণ, জল আর আগুনের কাজ ভিন্ন ভিন্ন। জগতের প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কাজের ভিন্নতার কারণে প্রকৃতির নিয়ম আলাদা আলাদা, কিন্তু সব নিয়মই নির্দিষ্ট একটি চিরন্তন নিয়মের ফলাফল। সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তুই যার যার প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। 

প্রকৃতির এইসব নিয়ম পুরোপুরিভাবে জানা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এই বিশ্বসংসার রহস্যেরই এক অচেনা পুরী। সব রহস্য জানা না গেলেও কিছু কিছু তো মানুষ জানতেই পারছে।

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. খুব সুন্দর একটি বিষয়, যা চিরন্তন আমাদের জীবন ও সত্যকে নির্দেশ করেন। দার্শনিক চেতনার সঙ্গে বাস্তবের সম্পর্ককেও বুঝতে শেখায়। কোরআন ও সুন্নাহের আলোকে আমরা শিক্ষিত হতে পারি। এরকম লেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা