প্রচ্ছদপ্রবন্ধমিথ্যার প্রাসাদ ভেঙে পড়েই

লিখেছেন : কাজী জহিরুল ইসলাম

মিথ্যার প্রাসাদ ভেঙে পড়েই


কাজী জহিরুল ইসলাম

গল্পটা আপনারা অনেকেই জানেন। আসলে এটা গল্প না, একটি জোক। এক লোক একটা ছেঁড়া লুঙ্গি পরেছে, ফুটোটা সামনে। তো এক পথচারী তাকে বলছে, ভাই, আপনার তো ‘সোনার বাংলা’ দেখা যাচ্ছে, লুঙ্গিটা ঘুরিয়ে পরুন। লোকটি লুঙ্গিটা ঘুরিয়ে পরতে গিয়ে থেমে গেল এবং পথচারীকে বললো, ভাই, ঘুরিয়ে পরলে তো ‘জয় বাংলা’ দেখা যাবে।

আজ আওয়ামী লীগের জয় বাংলা এবং সোনার বাংলা দুটোই দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তা যে বুঝতে পারছেন না তা নয়, তারা খুব ভালো করেই তা বুঝতে পারছেন এবং নানান কিছু দিয়ে সেই ফুটোগুলো ঢাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা নিজেদের সীমাহীন অপকর্ম দিয়ে নিজেদেরই আব্রু ঢাকার বস্ত্রসমূহে এতো এতো ফুটো তৈরি করেছেন যে একটা ঢাকলেই আরো দশটা বেরিয়ে পড়ছে।

ওই যে একটা গল্প আছে না, এক শিশু নেংটো রাজাকে দেখে বলছেন ‘রাজা তোর কাপড় কই?’। আওয়ামী লীগের সর্বাঙ্গ যে উদোম হয়ে গেছে, অসংখ্য ফুটো দিয়ে তার লজ্জাস্থান দেখা যাচ্ছে, এটাকে চাটুকারেরা গল্পের রাজার মত বলছেন, আহা আমাদের রানি’মা কী সুন্দর ডিজাইনের শাড়ি পরেছেন। গল্পের সেই শিশুটির মতো লক্ষ লক্ষ শিশু আজ রাজপথে নেমে এসেছে এবং আঙুল তুলে বলছে, ছি ছি রানি’মা, শতেক ফুটো দিয়ে তো তোমার সব দেখা যাচ্ছে। সারা পৃথিবী দেখছে তোমার লজ্জাস্থান।

গত দেড় দশক ধরে তারা “বিএনপি-জামাত” দল দুটির নাম এক সঙ্গে উচ্চারণ করে স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ দেবার চেষ্টা করেছেন, সফলও হয়েছিলেন, সেই সাফল্যই তাদের ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এনেছিল কিন্তু এর সুফল পেতে পেতে অবশেষে সোনার ডিম পাড়া হাঁসটাকেই তারা জবাই করে খেয়ে ফেলতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। এখন আর এই ন্যারেটিভ কেউ বিশ্বাস করে না। বরং সবাই এখন স্বাধীনতা বিরোধী চক্র হিসেবে আওয়ামী লীগকেই দেখছেন। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় তারা নিশ্চিত করতে পারেননি। ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের প্রতিটি কাজই ছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী, প্রায় দেশোদ্রোহীতার শামিল। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্র হত্যা করা ছিল সবচেয়ে বড়ো ঘটনা, প্রগতির কথা বলে একমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করা তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করে তারা গণদুশমনে পরিণত হয়েছেন, আইনের শাসনের কথা বলে দেশের আইন-আদালতকে পুরোপুরি বিনষ্ট করে তারা জাতিকে অভিভাবকহীন করে ফেলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সরকারের কিলিং এজেন্টে পরিণত করে দেশকে খুনি, মাফিয়াদের রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে, ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে ভারতের সঙ্গে নতজানু এবং মেরুদণ্ডহীন পররাষ্ট্রনীতির চর্চা করে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। শুধু তাই না এদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিদ্বেষ তৈরী করার কাজটিও আওয়ামী লীগ খুব দক্ষতার সাথেই করেছে। ফলে সব দিক থেকে তারা স্বাধীনতার ও বাংলাদেশের শত্রু হয়ে উঠেছেন। যে কারণে তাদের কোনো সিদ্ধান্তকেই মানুষ আর স্বাগত জানাচ্ছে না।

কোটা আন্দোলন ঠিক আছে কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলন কেন? এই প্রশ্ন প্রথম কয়েকদিন আওয়ামী লীগের কর্মীদের করতে দেখেছি। তারা তখনও বুঝতে পারেননি, কোটা আন্দোলনটি ছিল একটি বারুদ ভর্তি পাত্রের মুখে লাগানো সলতেমাত্র, সেখানে ছাত্ররা শুধু আগুনটা ধরিয়ে দিয়েছে। ব্যাস, যা হবার তাই হয়েছে। সীমাহীন দুর্নীতি, গণতন্ত্র হত্যা, নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং সবচেয়ে বড়ো কথা, কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে রাজাকার বলা, এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড়ো অপরাধ, আগুনটা ওখানেই লেগেছে সবচেয়ে বেশি। শেখ হাসিনার সীমাহীন মিথ্যাচার এবং শেয়াল-ধূর্তামী এদেশের মানুষ অনেক আগেই টের পেয়েছে। জ্বলে ওঠেনি এজন্য যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তার সব অপরাধ মানুষ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছে। কিন্তু সব কিছুরই তো একটা শেষ আছে।

আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করলো, এক পুলিশের পুত্রকে পুলিশ গুলি করলো, মুগ্ধকে পুলিশ গুলি করলো, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার ভিডিও আমরা দেখলাম, এমনকী মিথ্যুক শেখ হাসিনা পর্যন্ত স্বীকার করলো আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করেছে, কিন্তু পুলিশের রিপোর্টে গুলির কথা নেই। এই যে সীমাহীন মিথ্যাচার, এগুলো কি মানুষ বোঝে না? শেখ হাসিনা মনে করেন তিনি অভিনেত্রী হিসেবে দক্ষ কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়া তার কান্নাকে বলছে কুম্ভীরাশ্রু মানে কুমীরের কান্না। আমরা সবাই ভিডিওতে দেখলাম হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে, তিনি মিডিয়াতে বললেন, আমি হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ফেলেছি। অবশ্য যাই ফেলা হোক এটা যে তার নির্দেশে হয়েছে এ দায় তিনি স্বীকার করলেন, প্রচুর মিথ্যার মধ্যেও অপরাধী দুয়েকটি সত্য বলে ফেলে আর সেগুলোর কারণেই অপরাধীরা ধরা পড়ে।

জাতির সঙ্গে আরো প্রহসন করার নাটক সাজালেন তিনি, যাদের খুন করলেন, তাদের বাবা-মাকে ডেকে এনে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করলেন। চট্টগ্রামের এক দরিদ্র পিতা তার আহবান প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ছেলে হত্যার জন্য আমি টাকা আনতে ঢাকা যেতে পারবো না, এই টাকা আমার গলা দিয়ে নামবে না। তিনি কিন্তু একজন দরিদ্র খেটে-খাওয়া মানুষ। আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনকারী বেনজীর গংরা এই পিতার কাছ থেকে লোভ সংবরণের শিক্ষা নিতে পারেন। সামান্য পদক-পুরস্কারের লোভে যেসব লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক এখনও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছেন তারাও কিছু শিখে নিতে পারেন।

নিজে হুকুম দিয়ে খুন করালেন, এখন আবার তাদের জন্য শোক দিবস পালন করছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাদের এই প্রহসনের শোক প্রত্যাখ্যান করে লাল রঙ ধারণ করেছে, এই লাল বিপ্লবের বার্তা।

ডিবি প্রধান পুলিশের হেফাজতে রেখে আন্দোলনের সমন্বয়কদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা দেওয়ালেন। দেশের তরুণ সমাজ কী এতোই বোকা যে তাদের এই চালাকি বুঝবে না? আওয়ামী লীগের এটাই সবচেয়ে বড়ো ব্যর্থতা যে তারা সবাইকে তাদের স্তরের মনে করে। আজকের তরুণ সমাজের মেধা ও চিন্তার স্তর সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। তারা সব বোঝে এবং মুখের ওপর বলে দেয়, ফাক ইউ।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৩০ জুলাই ২০২৪

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. সময়োপযোগী পদক্ষেপ কলমের কালি দিয়ে লেখা যেন, কবি জাগ্রত থাকুক সবসময়….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা