প্রচ্ছদকবিতাসাম্প্রতিক কবিতা : খসরু পারভেজ

সাম্প্রতিক কবিতা : খসরু পারভেজ

ডামি কবিতা

বহুপ্রজ পতঙ্গের মতো আমার চারপাশে অজস্র মীরজাফর। আমার কবিতাগুলো নিমেষেই রূপান্তরিত হচ্ছে অসংখ‍্য ডামি কবিতায়। এ এক বিরল মুহূর্ত!
চিত্রকল্পগুলো ঘৃণা হয়ে উপছে পড়ছে সময়ের থালায়।
উপমা আর উৎপ্রেক্ষা ধূর্ত শৃগালের মুখ হয়ে বাংলার মুখের ভেতর কী উজ্জ্বল ফার্মান্টেশন! দ‍্যাখো,আমার কবিতার শরীর থেকে আদি অলংকারগুলো এক এক করে খসে পড়ছে। নকল কবিদের রেপ্লিকা রেপ্লিকা খেলা দেখে সন্ধ‍্যার ডুমুর পাতার নিচে মুখটি লুকিয়ে রেখেছেন জীবনানন্দ দাশ। এ কেমন পুনর্জন্ম অমর অমিত্রাক্ষরের!
এখানে এখন ঘৃণা,পাপ, ছেনালীপনার মিথস্ক্রিয়ায় নতুন কবিতা লিখছেন সার্গনকন‍্যা এনহেদুয়ানা। তুমি কী জানো, এই প‍্যাপিরাস থেকেই তো জন্ম এক অসভ‍্য ইতিহাসের!

কোনটি ডামি কবিতা আর কোনটি আসল কবিতা আমি চিনতে পারছি না। কী করে তোমাকে কবিতার কথা বলি!

৫ ডিসেম্বর ২০২৩

ভিখারি বৃত্তান্ত

চারপাশে এত এত ভিখারি
নিজেকে কখনো মনে হয় রাজা
ভোট এলে ভিখারির সংখ‍্যা বাড়ে
পকেটে পয়সা থাক বা না থাক
ভিক্ষা দিতে দিতে

আমি ধনী হয়ে উঠি।

২৯ মার্চ ২০২৩

যশোরের যীশু

রঙিন বোতলে গ্লাস ঠুকিয়া নির্জন
ঘরে, চিয়ার্স চিয়ার্স চিৎকার করে কে!
মৃদুনাদে জনান্তিকে কহিলা কে যেন,—-
“আঁরিয়েতা… আঁরিয়েতা! মৃত‍্যুর টুকরো
গুলো তুলে রাখো পাত্রে, দেখ, কী ভীষণ
রক্ত, মৃত‍্যুন্মুখ ‘কবিপীর’; গাউনের
খুটে মুছে নাও ত্বরা রক্তদাগ, কেউ
দেখে ফেলবে যে!” স্ত্রস্ত বেগে আসিলা সে
অভাগিনী। —“কই, কই মাইকেল, তুমি
কার গ্লাসে গ্লাস ঠুকে চিয়ার্স চিয়ার্স
বলে চিৎকার করো হে! এখানে তো কেউ
নেই, তুমি ছাড়া! আহ্, রক্ত! এত রক্ত!”

রক্তাল্পুত যেন যুদ্ধক্লান্ত বীরপতি
নাশিলা নিজেকে বিষ-শরেতে সহসা;

উত্তরিলা রাজকবি মাইকেল: —“জানি
চক্ষুঃষ্মান, তবু অন্ধ কি হে আঁরিয়েতা!
দৃষ্টি নিক্ষেপিয়া দেখিছ না তুমি, হেথা
বসিছে সম্মুখে মোর, সে মধুসূদন!…
কী ভীষণ রক্তচক্ষু…!, বল তো, আমি কি
ক্ষতি করিয়াছি তার? এই দেখ, এই
যে দেখ, দেখিতে পাও নাকি তুমি? বলো
তো, কাহাকে কে করিবে হত? এ সমরে
মাইকেলকে নাশিবে মধুসূদন? না,
মধুকে নাশিবে মাইকেল? বলো প্রিয়া!”

“হে আমার মাইকেল, চুপ করো তুমি!
এত আহাজারি, এত হাহাকার, নাহি
সহে হৃদে মোর, চুপ করো, প্রিয়তম,”—
এমনি কহিলা ব‍্যথাতুরা আঁরিয়েতা,—
গগনে যেমতি কাঁদে বজ্রহীন বৃষ্টি ;
আক্ষেপিয়া তিনি ভাসিলেন অশ্রুনীরে।

এতক্ষণে ক্ষুব্ধ কবি ‘কহিলা বিষাদে’
“কাঁদিতেছ কেন তুমি ওহে প্রিয়তমা !
এই দেখ,হাসিতেছি আমি উচ্চস্বরে;
নিজেকে যে করে খুন, এমনি করিয়া
সেই পারে প্রাণ খুলি এতেক হাসিতে!
এসো, সখী গলাগলি করি, ধরি হস্ত
এসো, নাচি, গাই ‘মহাগীত’ , ‘রীররসে
ভাসি’! এত অশ্রু নাহি সহে প্রাণে মোর!”

গলক্ষত, উদরীতে ওষ্ঠাগত প্রাণ;
তবু চাই পমেটম বোতল বোতল।
বাহিরে পাওনাদার; দরজায় খিল:
খিস্তি ও খেউড়ে মুখরিত পাড়া। অন‍্য
ঘরে নিরাহারে কাঁদে সন্তানেরা; রক্ত
বমনে ভিজিয়ে কোট-প‍্যান্টালুন,কবি
হাসিলেন পুনর্বার। কহিলেন তিনি—-
”যশের মন্দির ওই, ওথা যার গতি,
অশক্ত আপনি যম ছুঁইতে রে তারে!”

সবিস্ময়ে কহিলেন পুনঃ, —-“আঁরিয়েতা,
ওই দেখ ওই নিয়তির ক্রুশ; যেন
ডাকিছে আমারে ত্বরা, ‘সুবদনে’ হাসি
‘আলিঙ্গি আদরে’। ‘তবে কেন আর আমি
থাকিরে এখানে!’ সেই ভালো জুড়াইব
জ্বালা সুশীতল শরে, ভুলিয়া কুমতি!
‘তুমিও আইস দেবি’– বধ‍্যবনে ত্বরা;
নিজেকে বধিব আমি ওই ক্রুশে আজি!
দেখিবে জগত, আর হাসিবে জীবন!”
এমনি কহিয়া উচ্চহাস‍্যে পুনরপি;
কাঁপাইলা গৃহাঙ্গন যশোরের যীশু।

চারিদিকে শনশন বহিল মলয়,—–
ধূলিঝঞ্ঝা অতি বেগে ছুটিল সহসা;–
অর্ণব উঠিল দুলি। মহারণে যুঝি
কে পারে মারিতে বলো অদৃষ্টরে! হায়,–
কবিকুলচূড়ামণি চাপড়িলা বুক।

৮ জানুয়ারি ২০২৪

[ বাংলা সাহিত‍্যে অমিত্রাক্ষরের জনক মাইকেল মধুসূদন দত্তকে অমিত্রাক্ষরে স্মরণ। এ প্রচেষ্টা সফল হলে লেখা হতে পারে ‘মাইকেলবধ কাব‍্য’। ]

স্পেস

সামান‍্য একটু স্পেস চেয়েছিলাম, দাওনি
মার্জিনেও তুমি লেপ্টে দিয়েছ ক্রশচিহ্ন
একটু স্পেস পেলেই খুব সহজে ঢুকে যেতাম
নিবিড় নামাজীর মতো তোমার ভেতর
সিজদা-রুকুতে
তোমার জন‍্য কাটিয়ে দিতাম মরণ অবধি
একটু স্পেস পেলেই মুখর হয়ে উঠতে পারে
প্রতিবন্ধী ইতিহাস
খুব সহজেই বেরিয়ে আসতে পারে
বুকের ভেতর চেপে রাখা চাবুকের হর্ষধ্বনি
আমার কোথাও কোনো স্পেস নেই
না ঘরে, না বাইরে, এমনকী তোমার দুচোখেও
যখন তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি
তখন অজস্র চতুর চোখ বিদ্রুপ করে আমাকে
হে সম্পাদক,আপনিও আামার কবিতার

স্পেসটুকু খেয়ে ফেললেন!

২৯ জানুয়ারি ২০২৪

কবিতা উৎসবে ঘুম ও ফিডারতত্ত্ব

কবিতা উৎসবে
কিছু লোক কবিতা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে
তোমরা মিছেই ওদেরকে ভর্ৎসনা করো
কবিতা শুনতে শুনতে যারা ঘুমিয়ে যাবে যাক
তাদেরকে কিচ্ছু বলো না
ওরা মাইলাম খেয়েও কত রাত ঘুমোতে পারে না
আহা! কবিতায় যদি ঘুমের যাদু থাকে, ক্ষতি কী
কী মায়াময় চন্দ্রস্নিগ্ধ সুরের শব্দেরা ঝরে পড়ে
হলরুমের প্রতিটি প্রান্তরে – ডায়াসে – কার্পেটে
এত সহজেই ফিরে যাবে মরফিয়াস তা কীকরে হয়
একটু আধটু স্বপ্নের চোখছোঁয়া ঘুমঘুম খেলা হোক
কবিতাঘুম কবিতার স্বপ্নঘুম
কবিদের কীসব মরমী নাম পড়তে পড়তে
মায়াবিনী উপস্থাপিকার কণ্ঠও কখনো জড়িয়ে আসে
মাইক্রোফোনে মুখ রেখে সেও কি ঘুমিয়ে যেতে চায়
অতিথিদের কেউ কেউ মোবাইল স্ক্রিনে মগ্ন
হয়ত ওরা গুগল ইঞ্জিনে খুঁজে ফিরছেন
কবিতার সাথে ঘুমের কোনো কালচারাল হেজিমনি
অনেকক্ষণ ওয়াশরুম থেকে ফেরেননি
সত্তরোর্ধ মাননীয় প্রধান অতিথি, তবে কী…
কবিতা শুনতে শুনতে যারা ঘুমিয়ে পড়ে,পড়ুক
ওরা বাংলার দুধশিশু
ওদের মুখে তুলে দিতে হবে রঙিন ফিডার

ফিডার চুষতে চুষতে একটা সময় ঘুম ভাঙবেই।

১৬ মার্চ ২০২৪

আরও পড়তে পারেন

2 COMMENTS

  1. কবি খসরু পারভেজের কবিতাপাঠে এক গভীর বোধের জাগরণ ঘটে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা