ইউসুফের আহত ঈগল
জুলেখার প্রাণের ভিতর
ডানা মেলে অচেনা ঈগল
তীক্ষ্ণ আর্তনাদে উড়ে যায় পর্বত শিখরে
ফসলের ক্ষেত থেকে ভেসে আসে আদিম নির্যাস।
বনিআদমের কন্যাগণ
মেতে ওঠে নবান্ন উৎসবে
সুপ্রাচীন আইসিস হাসে
নির্জন রাত্রির বেশবাস খুলে
নিনেভা সম্রাট মুগ্ধ অপলক
দেবীর গোপন রূপে।
আন্দোলিত হয় একান্ত নদীর জল
অস্থির নক্ষত্র সব
তাণ্ডব প্রবাহ বর্ষণ করে সুতীব্র ঘৃণায়।
প্রাজ্ঞ নক্ষত্র জানে,এরা সব অবোধ বালক
সারিবদ্ধ কাফেলার উট।
এবং নিয়তির এমনি নির্বন্ধ
ইউসুফের মোহন রূপে
পাড় ভাঙ্গা আহ্বান গীত।
বাঘবন্দি খেলায় একজনকে তো হারাতেই হবে
অপরূপ আলোর জানালা।
জুলেখার প্রাণ চিরে বাস করা
সোনালি ঈগল নেমে আসে ফসলের ক্ষেতে
কান পেতে শোনে সমুদ্রের বিক্ষুব্ধ গর্জন।
কাহিনির ভাঁজে ভাঁজে লেখা হয় অন্য কাহিনি।
রহস্যের গভীর আঁধারে
বাক্সবন্দি তুলোট কাগজ
প্রাচীন হরফে বলে যায়
ভালোবাসার নিগূঢ় আলাপ।
মিশরের রাজপথে
যতবার প্রবাহিত জুলেখার শব
সুশোভিত শবাধার ছুঁয়ে
ততোবার উড়ে যায়
ইউসুফের আহত ঈগল।
কসম অপরাহ্ন বেলার
কসম অপরাহ্ন বেলার
জীবনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে
চিরন্তন খুঁজেছি তোমাকে।
রোদজ্বলা খুব দূর শূন্য ডাঙা এক
নাওডোবা গ্রাম, পুরনো মফস্বল শহরের প্রান্ত ছুঁয়ে
পরিত্যক্ত রেলপথ।
অথবা চাতাল হাইয়ুক, আদিম গ্রামের প্রেম
প্রভুভক্ত প্রথম কুকুর
সুমেরিয়া, অগ্নিকুণ্ড ঘিরে
কোন নিবিড় সন্ধ্যায়, নিনেভা নগরে
অতি বৃদ্ধ কথকের কণ্ঠে
গিলগামেশের বীরগাঁথা শুনতে শুনতে
তোমাকেই দেখেছি রাত্রির আকাশে।
কর্নওয়ালে, কেল্টিক ডাইনীর চোখের তারায়
ঝলকায় কন্যারাশির পরম কুমারী।
আমি এক অন্ধ উঁই
নিশ্চিত বিনাশ জেনে
স্মিত হেসে ঝাঁপ দিই উজ্জ্বল আনন্দে।
আর্যাবর্তে আদিম গ্রামের পথে, নিভৃত আশ্রমে
নবান্ন উৎসবে ফিরে আসে পূর্ব জন্ম
দশ হাজার বছর পরে আবার জন্মেছি আমি
ফসলের গান ভালোবেসে।
বিস্মরণ আপেক্ষিক
সীমানার ওপারে মহাশূন্যের শ্বাশত নীরবতা
সত্য শুধু অপরাহ্ন বেলা
আরেকবার বলি,
চিরন্তন, খুঁজেছি তোমাকে।
ইসাবেলার প্রতি বৃষভ
প্রিয়তমা,
আমি সেই বলীবর্দ
যার বুক চিরে হৃদপিণ্ড
উৎপাটন করেছিল তোমার প্রেমিক।
তোমার রক্তিম করতলে
ধূমায়িত আমার স্পন্দন,
তখনও বহমান নিভন্ত জীবন আমার।
তোমার কোমল হাতের মুঠোয়
আমি দেখেছি আমার যাবতীয়
প্রেমতৃষ্ণার নিদারুণ সুযুপ্তি।
জানতাম এ খেলায়
দুজনেই বলি হবো রূপের বেদীতে
তখন গ্রীষ্মের শেষ রোদ খেলা করে
তোমার মসৃণ চিবুকের তিলে।
আজ যিনি ম্যাটাডোর
কাল সেই নিহত নিষাদ।
তার হৃদপিণ্ড উপড়ে নিয়ে
প্রিয় হাতে দিবে উপহার
অন্য কোনো নির্বোধ প্রেমিক।
প্রিয়তমা, দেখে নাও আড়চোখে
কত দীর্ঘ নিহত শকুন
তোমার রূপের যজ্ঞে বলি হলো কত অরিয়ন।
ইসাবেলা সুচরিতা
তোমাকে ভালোবেসে
আমি এক নিহত বৃষভ।
জীবন মৃত্যুর কোরিডোরে
–আর বাঁচবে না দেখো।
–হ্যা, হয়তো রাত্তিরটা।
এমনভাবে বলছি যেন তিনি আমার মা নন।
যেন অন্য কেউ, দূরবর্তি কোনো ছবি, নামহীন কোনো সত্ত্বা।
এমনভাবে বলছি যেন নয় মাস তার শরীরে বাস করিনি
তার হাত ধরে হয়নি হাতেখড়ি
বিশ্বকে দেখার চোখে প্রথম জাগেনি সেই মুখ।
–অক্সিজেন লাগবে, ভেন্টিলেশন।
–কিডনি অকেজো, থেমে আসছে জীবন স্পন্দন।
এমনভাবে বলছি যেন সে নয় সেই মানুষ
যে না থাকলে খাবার টেবিলে অভিমান
চুলবাঁধা অসম্পূর্ণ, জ্বরের উত্তাপে বিস্বাদ ওষুধ।
এই দূরত্ব বিষাদের,
এই দূরত্ব সেই নো ম্যান’স ল্যান্ডের
যার একধারে জীবন, অন্যধারে মৃত্যু।
মৃত্যু তার শয্যার চারপাশে এমন এক পর্দা ঝুলিয়ে দেয়
ভিতরের মানুষটি তখন হয়ে যায় নাম গোত্রহীন।
না ভাসাইয়ো জলে
লখিন্দর দিয়েছিল প্রথম চুম্বন
আদিম কুমারী নাগিনীর ওষ্ঠপুটে।
কথা ছিল পাড়ি দিব দূর রেলপথ
পাহাড় চূড়ায় গড়ে নেবো নিজস্ব নগর
তাহিতির নীল জলে ঝিনুক প্রাসাদ
আফ্রিকার উপকূলে অরণ্য বসতি
কথা ছিল হাতের মুঠোয় পুরে নেবো
নৈনিতাল, বারানসী, আগ্রার মহল।
মৃত মাছ হয়ে ভেসে ওঠে সব গোপন বাসনা
বারো হাত কাকুঁড়ের জীবন খাঁচায়
শ্বাসরুদ্ধ আমাদের বিস্মৃত কামনা।
আগামি জন্মের জন্য তুলে রাখি এসো
যৌথ বৃষ্টি স্নান, কালো ড্রাগনের ঘর
মেঘমগ্ন নিবিড় দুপুর, সীতাহার,
আশ্বিনের ভোরবেলা, সেতার সংলাপ।
এক জীবনের যাবতীয় ঋণ শোধ করে
মৃত্যু অভিমুখে হেঁটে চলে নিষাদ কাফেলা।
মৃত্যু নয় চূড়ান্ত কখনো
মৃত্যু নয় বিচ্ছেদ নগর
দেখা হবে অন্য কোনো গ্রহে
অন্য কোনো সময়ের বাঁকে।
না হয় আরেক বার ধরা যাবে হাত
শোনা যাবে নাবিকের জাহাজী সংগীত
দেখা হবে রেশমপথের ধারে
দীপজ্বলা সরাইখানায়, ভক্তপুরে, সিয়ান নগরে।
এ জন্মের মতো শেষ হোক রাসলীলা
শেষ হোক পূর্ণিমার মোহন উৎসব
ক্লান্ত চোখে নেমে এসো ঘুম, এসো প্রেম,
এসো মৃত্যু, মৃন্ময় আবাস, আচ্ছাদন
সর্বশেষ আলিঙ্গনে বিদায় সুপ্রিয়।
অলৌকিক স্নানের গল্প
গল্পটি শেষ পর্যন্ত শোনা হয়নি। কীর্তিনাশার তীর ধরে হেঁটে চলেছে তরুণ-তরুণী। শেষ রাতের দুরন্ত অন্ধকার তখন মাটি স্পর্শ করে ছুঁয়ে ফেলেছে আকাশের আলোর খুঁটিনাটি। মেয়েটি হাঁটছে পথ দেখিয়ে, আঁচল আঁকড়ে অনিশ্চিত পদক্ষেপে ছেলেটি। অন্ধকারে ডুব দেওয়ার পর তারা খুঁজছে নদীর ভেজা বুক।
মেয়েরা কখনও নদী চিনতে ভুল করেনা আর ছেলেরা গভীরতম অবচেতনে সর্বদাই নিজস্ব কোনো নদীর সন্ধানে মগ্ন। লীথি, আকেরন, বৈতরণী পার হয়ে আর কতদূর কীর্তিনাশা? কিংবা নামে কিবা এসে যায়? যে কোনো নদী যদি তা ধারণ করে সমস্ত জীবন হতে পারে একান্ত বিপাশা। গল্পটি শেষ পর্যন্ত শোনা হয়নি।নদীর অন্বেষণেই যদি অতিক্রান্ত হয়ে যায় যাবতীয় ব্যক্তিগত রাত, অলৌকিক অবগাহণের গল্প না হয় আরেক জনমের জন্য তোলা রইল।
তারাখসা রাতের সিম্ফনি
মোমের নরম আলো
দূরাগত নক্ষত্রের উষ্ণতায়
মৃত্যুকে আবৃত করে।
উন্মোচিত হয় জীবনের অনন্ত আকুতি।
সময়ের মৃদুল প্রবাহে ভেসে যায়
সেইসব তারাখসা রাত, ফাগুন পূর্ণিমা, দোলের আবীর।
যজ্ঞের আগুন ছেড়ে উঠে আসে স্বাহা
চোখ মেলে ভস্মীভূত প্রেম।
চন্দ্রজ সংগীত বাজে
দূর, বহু দূরবর্তি জীবনের প্রাচীন মন্দিরে।
তখন কেবল রাত, সুবর্ণ রোদ্দুর তখন কেবল স্মৃতি
হরিকেলে অচেনা বন্দরে তখনো নোঙর করে
দুধসাদা ডিঙা মধুকর।
পার্বতীর কেশ থেকে ঝরে পড়ে অনার্য কুসুম।
ধান, দুর্বা, সুপারিতে গৃহকোণে আলো দেয়
মহালক্ষ্মী, ঢাকেশ্বরী।
সেইসব নিবিড় নিশীথে
নিমগ্ন, নিভৃত নক্ষত্রের মরাল সংগীতে,
কাঁসার থালায়, মাটির প্রদীপে
রয়ে গেছে আমাদের যাবতীয় বিনিময়
শব্দহীন দৃষ্টির অক্ষরে।
নেফারতিতির মোহময় বিকেল
তারপর আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হলো সেই অজানা বালক।
উটের কাফেলা এগিয়ে চলে তার রক্তাক্ত হৃদপিণ্ডের উপর দিয়ে।
নেফারতিতি উপভোগ করেন বিকেলের মোহময় রূপ
সাহারায় বিলীয়মান নীলের প্রবাহ।
সম্রাজ্ঞীর শিরস্ত্রাণ থেকে ঝরে পড়ে রক্তবিন্দু
নুবিয়ার সিংহরা গর্জন করে সেই রাতে
তারারা নেমে আসে আকাশের বাড়িঘর ছেড়ে।
মৃত্যুর মূল্যে কেনা হয় অমোঘশিল্প।
শীতল বুকের ভিতর আরও উষ্ণ আলিঙ্গনে ঘুমায় পেশল চিতা।
তখনও স্পন্দিত বালকের হৃদপিণ্ড উচ্চারণ করে ভালোবাসার নিভৃত স্বপ্ন।
নেফারতিতি সে ভাষা বোঝেন না।
তিনি জানেন, মৃত্যু অথবা জীবন কি তীব্রতায় খেলা করে রক্তের ভিতর।
সম্রাজ্ঞী মৃদু হাসেন, ঝকমক করে ওঠে তীক্ষ্ম খঞ্জর
আংটির ইশারায় ফুটে ওঠে শতশত প্যাপিরাস ফুল।
পিরামিডের শীর্ষদেশ থেকে কোন বালক নেমে এল তার পদতলে
পশমী গালিচা বিচলিত হয় না যদিও।
মরূভূমির তরঙ্গ আলোড়িত করে শুধু আন্দোলিত হয় অগণন হাত
যারা ভালোবেসে ছুঁতে চেয়েছিল তার দীর্ঘ ছায়া।
সম্রাজ্ঞীর আভরণে মৃত্যুর ঘন্টাধ্বনি বাজে।
মৃত বালকের হৃদপিণ্ড তখনও স্পন্দিত তখনও জীবিত সে।
হতাশার দীর্ঘশ্বাস শুধু কুয়াশা বিছায়
নেফারতিতির মোহময় বিকেলের বুকে।
ওম মণি পদ্মে হুম
তারপর কোশলের প্রাচীন সড়কে
রাত্রি নেমে এলো।
আরতির প্রদীপ আর ধূপের ধোঁয়া
মিলিয়ে এলো শিশিরের জলজ সৌরভে।
বিষ্ণু মন্দিরের দেবদাসীরা
কামজ লীলা শেষে
আঁচলে বেঁধে নিল প্রগাঢ় রাত্রিকে।
নগর নটীর উচ্ছল নূপুর
ক্লান্ত হতে হতে
আকাশের দেহে উত্কীর্ণ করে চলে
বাসনার ক্ষীণ ক্যাসিওপিয়া।
ঘুমন্ত কপিলাবস্তুর উদ্যান প্রাসাদে
শাক্যকুমার
জীবনের অনিঃশেষ ক্লান্তিতে বিপর্যস্ত।
তবে কি যযাতিই ঠিক?
বাসনার রক্তবীজ
দেহকে উত্তাল করে
যে দেহ কীটের খাদ্য
সে দেহের অলিতে গলিতে
কন্দর্পের অক্ষয় রাজ্যপাট।
তক্ষশীলা থেকে গান্ধার মিথিলা
আকণ্ঠ নিমগ্ন কেন মৃগয়া মৈথুনে
সুপ্রাচীন আর্যভূমি জুড়ে
চার্বাকের অট্টহাসি
ভয়ংকর প্রতিধ্বনি তোলে।
যশোধরা অথবা রাহুল
চেতনার স্তরে স্তরে নতুন পলল।
গৌতম হেঁটে যান।
তার পদশব্দে
আড়মোড়া ভাঙে যাবতীয় মোহান্ধ অসুর।
কাঁচ ভাঙার শব্দে ভেঙে পড়ে
বৈশালী, শ্রাবস্তী, বারাণসী, লিচ্ছবি নগর।
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি
সংঘং শরণং গচ্ছামি
পথ শুধু পথ
অন্তহীন প্রবাহণ
শ্রাবস্তীর জেতবনে উচ্চারিত অলংঘ্য বিধান
শ্রেষ্ঠী, নৃপতি, ক্ষত্রপ, বনিতা
স্বয়ম্ভুর স্তূপে জ্বলে অমোঘ প্রদীপ।
মহা উচ্চতায় মাথা হেঁট করে
অন্নপূর্ণা, কাঞ্চনজংঘা, সাগরমাতা
তীব্র শিখায় বিস্ময়ে বিমুগ্ধ দূরবর্তী কাল।
সিদ্ধার্থ দুইচোখ করুণায়
অবিরল নিম্নমুখী।
ব্যধি জরা মৃত্যু ধ্বংস
তবুও নির্বাণ নয়
বড় বেশি আকাঙ্ক্ষিত মানবজীবন
অবন্তিকা মালবিকা বাসবদত্তা
এখনও উত্তাল
বাজে প্রলয় নিক্কণ।
আমাদের নিভৃত রক্তকণিকায়
বাৎসায়ন জয়ধ্বনি তোলে
যশোং দেহি ধনং দেহি
হোমাগ্নি আচ্ছন্ন আকাশ।
তুষিত স্বর্গ ছেড়ে আরেকবার যদি
বোধিসত্ত দিয়ে যায় অবারিত প্রেম
অনিঃশেষ আর্যভূমি
কুমার মৈত্রেয়
বোধিদ্রুমের প্রাচীন শিকড় ছুঁয়ে
আরেকবার উচ্চারিত হোক
ওম মণি পদ্মে হুম।
শান্তা মারিয়া
২৪ এপ্রিল, ১৯৭০ ঢাকায় জন্ম। শান্তা মারিয়া চীনের ইউননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের ঢাকা ব্যুরোতে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইনে কলামিস্ট।
বাবা: কমরেড মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ,
মা: ফয়জুননেসা খাতুন।
শান্তা মারিয়া(ডাক নাম ভ্যালিয়া) তার জীবনের একেবারে শুরুতে আড়াই বছর থেকে বিটিভিতে রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীসহ বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করে খ্যাতি পান।
তিন বছর বয়স থেকে মুখে মুখে কবিতা লেখা শুরু। নয় বছর বয়সে প্রথম কিশোর কবিতার বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। বইটির নাম মাধ্যাকর্ষণ। বইটি প্রকাশের পর জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কুর্ট ওয়াইল্ডহাইম, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ বিশ্বের অনেক দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা বইটির প্রশংসা করে চিঠি দেন। এরপর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের শিশুদের পাতায় এবং সোভিয়েত নারী ও উদয়ন পত্রিকায় সাক্ষাৎকারসহ কবিতা প্রকাশ হয়। এ পর্যন্ত ৬টি কবিতার বইসহ ১৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে গল্প ও প্রবন্ধ। তার সাম্প্রতিক স্মৃতিগদ্য গ্রন্থ ‘আমি বেগমবাজারের মেয়ে’ বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে।
কবিতার বইয়ের নাম
১. মাধ্যাকর্ষণ(১৯৭৯)
২. সকল দোকান বন্ধ ছিল (১৯৯৬)
৩. এবং একতারা বৃক্ষ (২০০০)
৪. আমরা বলে কোনো গল্প নেই (২০০৪)
৫. ওম মণি পদ্মে হুম( ২০১৭)
৬. ব্যক্তিগত জোছনা কুড়ানোর রাত (২০২৩)
অন্যান্য বই: বিশ্বের সেরা রূপকথার গল্প প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৯৬, সম্পাদিত),
আকবর দ্য গ্রেট (মোগল ইতিহাসের গল্প, ১৯৯৬),
জ্ঞানতাপস ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (কিশোরদের জন্য জীবনীগ্রন্থ, ২০০৫),
সাহিত্যে পরকীয়া ও অন্যান্য (প্রবন্ধ সংকলন, ২০১৭),
চকবাজার টু চায়না(ভ্রমণ গদ্য ২০১৭),
পলাতক জীবনের বাঁকে বাঁকে( কমরেড মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহর স্মৃতি গদ্য, অনুলিখন, ২০১৭)।
আমি বেগমবাজারের মেয়ে (২০২২)
চীনের মুসলিম চীনের মসজিদ (২০২৩)
কবোষ্ণ পূর্ণিমা (গল্প গ্রন্থ, প্রকাশিতব্য)
লক্ষ্মণরেখার বাইরে (ভ্রমণ গদ্য, প্রকাশিতব্য)
চীনা সাহিত্যের আশ্চর্য ভুবন (চীনের কবিতার অনুবাদ)
শিক্ষা: মেধাবী ছাত্রী শান্তা মারিয়া ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এসএসসি (প্রথম বিভাগ) এবং ১৯৮৮ সালে এইচ এসসি(প্রথম বিভাগ) পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স।
বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে ছিলেন। তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে প্রকাশিত বইটির নাম ‘সকল দোকান বন্ধ ছিল’।
ভারত বিচিত্রা আয়োজিত ‘মহাত্মা গান্ধী’ বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতায় এবং সোভিয়েত নারী পত্রিকা আয়োজিত বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পান।
পেশা: ১৯৯৭ সালে দৈনিক মুক্তকণ্ঠে সাংবাদিকতা শুরু।
এরপর জনকণ্ঠ পত্রিকায় অপরাজিতা পাতার বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন ১০ বছর। আমাদের অর্থনীতিতে মফস্বল সম্পাদক,
আমাদের সময়( অ্যাসিসটেন্ট এডিটর),
রেডিও আমার(নিউজ এডিটর) ও
চীন আন্তর্জাতিক বেতার( বিদেশী বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক) এবং
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে, সর্বশেষ আমাদের সময় পত্রিকায় ফিচার এডিটর পদে কর্মরত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় নারী নেতৃত্ব বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য।
পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটসহ মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে পেপার উপস্থাপন করেছেন।
কবিতা, গল্প ও ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। মানবাধিকারবিষয়ক লেখালেখিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশী বিদেশী কবিতা উৎসবে অংশ নিয়েছেন। টিভির জন্য বর্তমানে লিখছেন সিরিয়াল নাটক, মঞ্চের জন্যও নাটক লিখেছেন।
জ্ঞানতাপস ভাষাবিদ ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পৌত্রী ও ভাষাসৈনিক এবং বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহর কন্যা এবং খান বাহাদুর আফাজউদ্দিন আহমেদ এর দৌহিত্রী। তার জীবনসঙ্গী সৈয়দ শাহিন রিজভি একজন কবি ও নাট্য নির্মাতা। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান জুলকার সৈয়দ সামির অর্ণ বর্তমানে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।
ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। মিথোলজি ও ইতিহাসপাঠ শান্তা মারিয়ার প্রিয় নেশা।
বিদেশ ভ্রমণ: যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, চীন।