spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধঅসাম্প্রদায়িকতা, রবীন্দ্রনাথ এবং ঊনবাঙাল সভা

লিখেছেন : কাজী জহিরুল ইসলাম

অসাম্প্রদায়িকতা, রবীন্দ্রনাথ এবং ঊনবাঙাল সভা

কাজী জহিরুল ইসলাম 

রবীন্দ্রনাথ আমাদের এতো দিয়েছেন যে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। কিন্তু ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো যে সমস্যা সেই সমস্যাটি তার বিশাল সাহিত্যভাণ্ডারে আদরের সঙ্গে স্থান পায়নি। এজন্য জীবদ্দশাতেই তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি যৎসামান্য যা কিছু সংখ্যালঘুদের নিয়ে লিখেছেন তাতে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বহিরাগত শত্রু হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন। কেন তিনি মুসলিম প্রতিবেশিদের নিয়ে লেখেন না, কেন তার সাহিত্যে মুসলমানদের জীবনাচার উঠে আসে না, এইসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে তার অজ্ঞতার কথাই প্রকাশ করেছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, একটি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিকে ভেতর থেকে ভালো করে না জানলে ভালো সাহিত্য রচনা করা যায় না। কথাটি সত্য হলেও এর মধ্যে দায় এড়ানোর একটি প্রবণতা আছে। তার মতো এতো বড়ো মাপের প্রতিভার পক্ষে প্রতিবেশি মুসলমানদের জীবনাচার জানা কি খুব কঠিন ছিল? “ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া” বের হলেই তো যবনপাড়া, সারি সারি যবনগৃহ, ওখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে দুদণ্ড সময় কাটালেই তো তাদের জীবনাচার জানতে পারতেন।

যিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি, যিনি দুটো দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, তার কোনো সাহিত্যকর্ম, কোনো গান-কবিতা থাকবে না যা ভারতবর্ষের ৪৫ কোটি মুসলমান তাদের উৎসব-পার্বণে ব্যবহার করতে পারে? এ-এক বিরাট প্রশ্ন। গত ২৩ জুলাই নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হলো ঊনবাঙালের ৩৮ তম সভা। এই সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল “বাংলা সাহিত্যে অসাম্প্রদায়িকতা”। ড. পার্থ ব্যানার্জির সঙ্গে আমিও একজন আলোচক ছিলাম বলে এই বিষয়ে কিছুটা পড়াশোনা করতে হয়েছে। পড়তে গিয়ে প্রথমেই খুঁজেছি ভারতবর্ষে যার কলম থেকে সবচেয়ে বেশি অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা আমাদের প্রত্যাশা সেই রবীন্দ্রনাথ কি কি লিখলেন। কিন্তু পড়তে গিয়ে আমি ক্রমশ এক হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছি। যদিও সভায় আমি তার নাম উল্লেখ করিনি, এমন কী উগ্র সাম্প্রদায়িক সাহিত্য রচনার অভিযোগে অভিযুক্ত বঙ্কিমচন্দ্রের নামও আমি উল্লেখ করে তাকে ছোটো করতে চাইনি, নৈর্ব্যক্তিকভাবে কিছু সাম্প্রদায়িক সাহিত্যকর্মের কথা বলেছি মাত্র। আমি বরং মধ্যযুগের কবি বড়ূ চণ্ডীদাসের ” শুনহ মানুষ ভাই/ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপড়ে নাই” বাণীর আলোকে রচিত পরবর্তী লেখকদের ইতিবাচক এবং অসাম্প্রদায়িক সাহিত্যের উদ্ধৃতিই দিয়েছি বেশি। আমি এও বলেছি, ধর্মের প্রতি অনুরাগ যে সাহিত্যে প্রতিফলিত হয় সেই সাহিত্যকে আমরা যেন সাম্প্রদায়িক সাহিত্য না বলি। ধর্মকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা সাম্প্রদায়িকতা নয়, যদি না সেই ভালোবাসার তীব্রতায় অন্য ধর্মের প্রতি হিংসার প্রচ্ছন্ন আগুন থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন লেখকের লেখা, একজন ব্যক্তির আচরণ, একজন নেতার বক্তব্য কোনো একটি ধর্মকে বা সাম্প্রদায়কে আঘাত না করে ততক্ষণ পর্যন্ত নিজ ধর্মের প্রতি অনুরাগ, ভালোবাসা অসাম্প্রদায়িক। আমি এও মনে করি সংস্কারমুক্ত থেকে নিজের ধর্ম, সম্প্রদায় বা বিশ্বাসের প্রেমে নিমজ্জিত হলে মানুষের অন্তরে মনুষত্বের আলো জ্বলে ওঠে। তবে তা করতে হবে মুক্তচিত্তে, অন্যের ধর্ম বা সম্প্রদায়ের প্রতি যেন কিছুতেই ঘৃণা তৈরি না হয়, এই কথা সচেতনভাবে মাথায় রেখে।

কৈশোরে, যৌবনে এবং পরিণত বয়সে রচিত রবীন্দ্রসাহিত্যে মুসলমানদের যে যৎসামান্য উপস্থিতি আছে তা মোটেও উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখেনি বরং সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দিয়েছে। সেই সব উদ্ধৃত করে আমি এই মনীষীকে ছোটো করতে চাই না। বরং শেষ বয়সে এসে তার যে আত্মোপলব্ধি ঘটেছিল সেই কথাটি বলে তার মহত্বকেই তুলে ধরতে চাই। 

১৯৪১ সালের ৭ আগষ্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াণের মাত্র ৪২ দিন আগে, ২৪-২৫ জুন তিনি মুসলমানদের নিয়ে “মুসলমানির গল্প” শিরোনামের একটি গল্প লেখেন। গল্পটি তাড়াহুড়ো করে লেখা, গল্প হিসেবে বেশ দুর্বল যদিও কিন্তু এই গল্পে তিনি মুসলমানদের মহত্বকে তুলে ধরে কিছুটা হলেও নিজের দায়মোচন করেছেন। গল্পটি কেন দুর্বল সেই কথা পরে বলছি, আগে এর মহত্বটা বলি। তৎকালীন হিন্দু/ব্রাহ্মণ পরিবারে কন্যা শিশুর জন্মকে একটি অভিশাপ হিসেবে দেখা হত, এ-কথা তার অন্য অনেক সাহিত্যের মত এই গল্পেও আছে। তিনি বলেন, “বাড়িতে রূপসী কন্যার অভ্যাগম ছিল যেন ভাগ্যবিধাতার অভিসম্পাত। এমন মেয়ে ঘরে এলে পরিজনরা সবাই বলত, পোড়ামুখী বিদায় হলেই বাঁচি। সেইরকম একটা আপদ এসে জুটেছিল তিন-মহলার তালুকদার বংশীবদনের ঘরে।”

সুন্দরী কমলার জন্মকে তিনি এভাবেই ব্যাখ্যা করেন। জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই কমলার মা, বাবা দুজনই মারা যায়। কাকা এবং কাকীর সংসারে বেড়ে উঠছিল কমলা। কাকীর অত্যাচার আর লুকিয়ে কাকার কিছুটা আদর, এভাবে বেড়ে উঠলেও সকলেই আতঙ্কে থাকত কখন না এই মেয়ের জন্য পুরো পরিবার বিপদগ্রস্ত হয়, জাত-কূল যায়। একদিন এক উচ্ছন্নে যাওয়া দোজবরের সঙ্গে কমলার অমতে তার বিয়ে ঠিক হয়। মোচাখালির ধনাঢ্য পরমানন্দ শেঠের মেজো ছেলে কমলাকে বিয়ে করে নিয়ে যায় ঠিকই কিন্তু পথিমধ্যে, তালতড়ির মাঠ পাড় হতে গিয়েই, ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাতদের রুখে দেয় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বৃদ্ধ হবির খাঁ। হবির খাঁর ভয়ে গৃহস্থ, নেতা, মওলানা, চোর-ডাকাত সকলেই এক ঘাটের জল খায়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “তাকে সবাই পয়গম্বরের মতই ভক্তি করত”। কমলা যখন ভয়ে জঙ্গলে পালাবার জন্য আড়াল খুঁজছিল, পেছন থেকে হবির খাঁ বলেন, ” বাবাসকল তফাৎ যাও। আমি হবির খাঁ”। ডাকাতরা তাদের কাজে ক্ষান্ত দিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি কমলাকে বলেন, “তুমি আমার কন্যা। তোমার কোনো ভয় নেই, এখন এই বিপদের জায়গা থেকে চলো আমার ঘরে।”

ব্রাহ্মণকন্যা মুসলমানের হাত ধরে তার বাড়িতে গেলে যে জাত-কূল সব যাবে। কমলা সংকুচিত হয়ে উঠলে হবির খাঁ বলেন, “বুঝেছি, তুমি হিন্দু ব্রাহ্মণের মেয়ে। মুসলমানের ঘরে যেতে সংকোচ হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো — যারা যথার্থ মুসলমান, তারা ধর্মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণকেও সম্মান করে, আমার ঘরে তুমি হিন্দুবাড়ির মেয়ের মতোই থাকবে। আমার নাম হবির খাঁ। আমার বাড়ি খুব নিকটে, তুমি চলো, তোমাকে আমি খুব নিরাপদে রেখে দেব”। ব্রাহ্মণের মেয়ে কমলার সংকট কাটছে না দেখে হবির খাঁ বলেন, “দেখো, আমি বেঁচে থাকতে এই তল্লাটে কেউ নেই যে তোমার ধর্মে হাত দিতে পারে। তুমি এসো আমার সঙ্গে, ভয় কোরো না।”

হবির খাঁর বাড়িতে অনেকগুলো মহল। যার একটি হিন্দুমহল। একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ আসেন এবং কমলাকে বলেন, মা, হিন্দুর ঘরের মত এ জায়গা তুমি জেনো, এখানে তোমার জাত রক্ষা হবে। কমলা সেই মহলে জীবনে প্রথমবারের মতো আদর-ভালোবাসা পেল। তার কিছু দাসী এলো, সবাই হিন্দু। কিন্তু কমলা কাকাগৃহে ফিরে যাবার জন্য কাকাকে খবর দিতে বলে। হবির খাঁ কমলাকে বলেন, ওরা তোমাকে ফিরিয়ে নেবে না। যদি প্রমাণ করতে চাও, আমি তোমাকে নিজে নিয়ে যাবো এবং খিড়কির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব। ঠিক তাই হয়। কাকা-কাকী সমাজের দোহাই দিয়ে কমলাকে ফিরিয়ে দিলে হবির খাঁ তাকে নিয়ে আসেন। এবার কমলার মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। হবির খাঁর পুত্র করিমের প্রেমে পড়ে। হবির খাঁকে বলে, বাবা আমাকে আপনি মুসলমান করে নিন এবং করিমের সঙ্গে বিয়ে দিন।

এর কিছুদিন পরে কমলার কাকা-কাকীর নিজ কন্যা সরলার বিয়ে হয়। একইভাবে সেও তালতড়ির মাঠে ডাকাতের কবলে পড়ে এবং এবারও হবির খাঁ তাকে বাঁচায়। কমলা তার বোন সরলাকে কাকার বাড়ি নিয়ে আসে। 

এই হলো গল্প। এই গল্পে দুই সমাজের পার্থক্যটা তুলে ধরে তিনি হিন্দুদের গোড়ামী এবং মুসলমানদের উদারতা দেখিয়েছেন। 

বলেছিলাম এটি একটি দুর্বল গল্প। হ্যাঁ, দুর্বল এজন্য যে এটি পড়লে কেউ গল্পের ঘটনাগুলো বিশ্বাস করবে না। মনে হবে এটি একটি রূপকথার গল্প। তিনি গল্পটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে লেখেননি বা বার্ধক্যজনিত কারণে লিখতে পারেননি। একই জায়গায় একই ঘরের দুই মেয়ে ডাকাতের কবলে পড়া এবং একই ব্যক্তির উদ্ধার করা, খুবই আরোপিত, জোর করে গল্প বানানো। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বন্ধুরা তখনও পারত না, এখনও পারে না শুদ্ধ করে মুসলমানদের নাম লিখতে এবং উচ্চারণ করতে। ‘হবির’ কোনো মুসলমানের নাম আমি শুনিনি। ডাকাতের নাম দিয়েছেন তিনি মধুমোল্লার, এটাও কোনো নাম হয়নি। ডাকাত সর্দার যে মুসলমান এটা গল্পে বেশ ভালোভাবেই বোঝা গেছে। তাছাড়া গল্পের নাম, “মুসলমানীর গল্প”, এটা কোনো নাম হলো? 

তিনি দায়মোচনের জন্য গল্পটি লিখেছেন বটে কিন্তু কলকাতার ব্রাহ্মণসমাজের সমালোচনার ভয়ে সর্বক্ষণ ভীত ছিলেন বলেই আমার মনে হয়েছে। দুই সম্প্রদায়ের বিবাদ মেটাবার উদ্যোগ তার সাহিত্যে কখনোই দেখা যায়নি। এই গল্পেও তিনি ব্রাহ্মণদের কাছে কৈফিয়ত দেবার জায়গা রেখেছেন ডাকাত সর্দারকে মুসলিম দেখিয়ে। এবং প্রকারান্তরে হবির খাঁকেও আজকের ভাষায় মাফিয়া ডন হিসেবেই দেখিয়েছেন। 

তা যাই হোক, তবুও যে তিনি শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের উদারতা নিয়ে কিছু একটা লিখেছেন সেজন্য তাকে প্রণাম জানাই। 

ঊনবাঙাল সভায় ড. পার্থ ব্যানার্জি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার বড়ো উপায় হিসেবে মনে-প্রাণে, চর্চায় বাঙালি হতে পরামর্শ দিয়েছেন। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে মানুষ ধর্মাশ্রয়ী সংস্কৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছে বলেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাড়ছে। আমি অবশ্য মনে করি, বাঙালি হিন্দু এবং বাঙালি মুসলমান, বাঙালিদের এই দুটি ধারাই স্পষ্ট এবং শক্তিশালী, দুটি ধারাকেই আমাদের আদরে গ্রহণ করতে হবে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধায়, সহিষ্ণুতায় পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে এই দুই ধারা মিলে একটি নতুন ধারা হয়ত গড়ে উঠবে৷ যেটি আমরা গায়ানায় দেখি। ভারতবর্ষ থেকে পাড়ি দেওয়া হিন্দু-মুসলমান এবং ইউরোপ থেকে পাড়ি দেওয়া খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা গায়ানায় আজ ১৫/২০ প্রজন্ম পরে এসে সকলেই গায়ানিজ হয়ে উঠেছে। সকলেই হিন্দি সিনেমা দেখে, সকলেই মন্দির, মসজিদে যায়, গীর্জায় যায়। যার যার ধর্ম পালন করেই ওরা প্রতিবেশির ধর্মশালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে শ্রদ্ধার সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে তাকায়। এটিই হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। ধর্মকে মুছে ফেলা অসাম্প্রদায়িকতা নয়। তখন ‘ধর্মহীনতা’ নামের আরো একটি ধর্ম মাথাচারা দিয়ে ওঠে এবং ধর্মের অনুসারীদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করে, যেটা চীন এবং রাশিয়ায় হয়েছিল। পৃথিবী এক পবিত্র গ্রন্থ। আমরা সবাই, সকল প্রাণী, এই গ্রন্থের এক একটি অক্ষর। কেউ লেখেনি এই অক্ষর, কারো অধিকার নেই সেই অক্ষর মুছে ফেলতে। মোছার চেষ্টা বা চিন্তাই হচ্ছে হিংসা আর হিংসাই জন্ম দেয় সাম্প্রদায়িকতা। 

সাহিত্য হচ্ছে আলো, সাম্প্রদায়িকতা এক অভিশপ্ত অন্ধকার। আলোর কাজ তো অন্ধকার দূর করা, আলোর ভেতরে অন্ধকার বাসা বাঁধতে পারে না। যে সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ থাকবে সেটি কখনোই সাহিত্য নয়। 

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ২৬ জুলাই ২০২৩

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ