spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতানির্বাচিত ২৫ কবিতা : মাঈন উদ্দিন জাহেদ

নির্বাচিত ২৫ কবিতা : মাঈন উদ্দিন জাহেদ

🔵 শব্দগণিত

অনেক হয়েছে লেখা- সবাই ফিরতে বলে, 

কবিকে ফিরতে হয় নাকি শেকড়ের দিকে, 

মাটি নিড়ানো রস এবং সালোকে জারকে 

গাণিতিক সংখ্যা কষে প্রথা ছন্দ দোলে- 

মানুষ মজে ভালো, নৃত্যময় দুলতে দুলতে। 

কবি তো উড়াল ঋষি- উপনিষদ বিহঙ্গ 

ঠোকর দিয়ে তোলে তো সময় তরঙ্গ গান; 

কিংবা দৃষ্টির বৈভবে ছুঁয়ে যায় ব্যর্থ তান, 

ছন্দ সীমিত জলে হয় কী এ লীলা সঙ্গ? 

সময় স্রোত তরঙ্গে শব্দভুক করে খেলা- 

যেতে যেতে দূরগামী দৃষ্টির প্রসন্ন রেখা

স্রোতের আগে হাল কেটে সময়ের ভেলা 

টেনে যাপনে আপন মনে গদ্যেপদ্যে বেলা। 

উৎপ্রেক্ষা চারিত্র্য দোষ যদি কাব্যে ফেলে- 

উপমাকেই মা ডেকে যদি যায় হেলে দুলে; 

কবিতা নিঠুরা নয়, সেতো ভীষণ লাজুক; 

কবিকে ফেলে যাবে সে, দিব্যি যাই বলুক।

🔵 চেরাগীর নেভানো আলো 

তুমিতো পক্ষি হয়ে উড়ে গেলা কলমীর ধারে

একা একা ঘুরি ফিরি খুদ পানি খোঁজে আড়ালে।

চেরাগে আলো জ্বেলে হাঁটতে থাকে শাহ বদর,

মাঝখানে কদম রাসুল- গভীর শান- পাত্থরে পাত্থর।

ঊমেদ খা’ ভেতর কিল্লা’র রেখে যায় বিজয়ী খঞ্জর,

আন্দরকিল্লার নীচে বয়ে যায় জাগতিক জ্ঞান-নহর।

বছর বছর শুধু হাঁটতেই থাকি,

ভাসাতেই থাকি জাগতিক বহর;

ভাসতে থাকি সিলসিলার মুসাফির নাদান কৈতর।

বদর পট্টি শোক তোলে-

হায় ইনসান… হায় ইনসান…

তুমি আমি ভুলে ভুলে চলে যায় ঊনত্রিশ রমজান

চাটিগা’র শোকের ক্বাসিদা জ্বলে অন্তরের ভেতর। 

কোথায় গেলো মাহি আছোয়ার রক্ত?

কদল খান গাজী, হাজী খলিলের খ-লি-ল ধারা?

মোল্লা মৌলবী আজ মৌ-লোভী শুধু কোর্তা ওয়ালা;

কেবল খোঁজ মাংসের ফালু আর আলু,

সরুভাতে কাড়া নাকাড়া ।

ভুলেছে রাসুল-সুন্নাহ-দা’য়ী-সত্ব ধারা?

হায় রাসুল… হায় রাসুল… জিকিরে সারা,

এ কী শুধু জিকির? …ফিকির… ফিকির…

জিকিরের লাহান শোনায় তাহা।

বাড়ে শাহ বদরের পাশে শাহ আমানতের রৌশনায়,

ওরশের ডেক বাড়ে, বাড়ে না চৈতন্য- হুশ নাই।

চাটির চেরাগে আলোতো বাড়ে না,

চেরাগী আলোয় মশা মাছি উড়ে,

ভনভন গন্ধ ছড়ায় মেথর পট্টীর রসালো,

আলোতো জ্বলে না… আলোতো জ্বলে না…।

নিয়নের আলোয় সুবোধ তাড়ালে-

সাধুর মিষ্টি চলে কচুরির মিলালে,

মুদ্রায় মুদ্রায় চলে মুদ্রালয় চালে,

কেউ আজ বদর বদর বলে জিকির তোলে না।

চেরাগের আলো নিভে গেছে বহু আগে

মিডিয়ায় আলো আসে স্বার্থের সুযোগে ;

এখন চেরাগীর সেই আলো জ্বলজ্বল করে না।

কেউ বদর…বদর… ডাকে না, চেরাগ জ্বলে না।

🔵 মায়াবাস্তব  

সময়গুলো থমকে গেছে স্মৃতির কাছে

স্মৃতিগুলো চমকে চমকে উথলে ওঠে;

খামখেয়ালি সময়গুলো বিষণ্ন হয়

যাপনের মধ্যদুপুর তাতানো রৌদ্রময়,

সুখ সকালে মায়াবী ঐ হাতবুলানো-

তোমার স্মৃতি চমকে ওঠে, চমকে ওঠে।

রিক্সাহুডে অমরাবতী দিনগুলোতে

স্বপ্নশেষে নেতিয়ে পড়া মানগুলোতে 

অভিমানী ঈষৎ আভা জমতে থাকা 

ঘামগুলো জমতে থাকা, জমতে থাকা- 

সবই গেছে, গেছে সবই, সময়গুলো-

আশলে কী ভেস্তে গেছে এসব মায়া?

এখন তুমি কেমন আছো ধল প্রহরে?

মানগুলো আগের মতো কান্না ছোঁয়া?

সময়গুলো থমকে গেছে স্মৃতির কাছে?

স্মৃতিগুলো কী মূর্ত হয়ে থমকে গেছে ?

যে তুমি নেই, এই ভূবনে- অমাবশ্যা;

তবুও চাঁদ উঠে-ঢুবে নীল আকাশে –

নেই ক্ষতি নেই, মায়াবাস্তব স্বপ্নধামে

যায় বয়ে স্মৃতির এমন আকাশধামে ।

১৯.১০.২০১৫

🔵 স্পর্শে আনন্দটুকু 

মুণ্ডুবইয়ে তোমার ছবিগুলো লাইক দেয়া হয় না আর,

স্পর্শ ঐ বাটনে পৌঁছে যেতো তোমার অনুভূতি বার্তায় ।

আজকাল এভাবে আর চলে না,

কেনো জানি মনে হয়-

ইচ্ছের সম্মানটুকু খুঁয়ে যাচ্ছে ওভাবে ;

তোমার চারপাশের পরিব্যাপ্ত জনমন পবন ছুঁয়ে নিচ্ছে

একান্ত স্পর্শগুলো- যেখানে একা আমি একা তুমি সর্বভৌম।

এমন জনগণমন করে দিতে পারে না সে স্পর্শে আনন্দটুকু-

যেটুকু একান্ত গভীর গোপন; নিজস্ব সম্পূর্ণিমা।

কেউ জানুক বা না জানুক! তুমিতো জানো-

ভালোবাসা চিরকাল চলে গেছে অবাণিজ্যিক পথ ধরে

হৃদয়ের ইতিহাসে;

তেমন পড়েছে সে যাপনের গ্রন্থ খুলে, ক্ষরণের মোমবাতি জ্বেলে।

🔵 চৈত্রদাহ

থমকে আছে আকাশ, আলো-ছায়া খেলা, 

অভিমানী মেঘগুলো ধীরে ভেসে ভেসে যায়; 

আবারও কাঁদাবে বুঝি- 

সময়ের চৈত্রসংক্রান্তি ঝড়ো হাওয়া? 

দমকা হাওয়ায় ভাসে তোমারই রক্তাভরী মুখ।

জানালার পর্দাকে ধন্যবাদ, 

হাওয়া, তোমাকে সেলাম, 

সেলাম- দখিণা হাওয়া… 

তোমার বয়ে আনা সেই ঘ্রাণে, 

অতীন্দ্রিয় আবেগে 

সোনালু আলুথালু, ও হাওয়া, 

সময়ের ছক পাল্টে যাওয়া। 

বিরহ সানাই বাজে বুকের দখিনে 

দখিণা বাতাস! ধীরে,

আরো ধীরে, 

ধীরে বও… 

বহতা সময়তো পুড়ে পুড়ে যাওয়া।

🔵 কুশল  

তোমার শুভ্র আভায় ভরে উঠতো আমাদের জেগে ওঠা ভোরগুচ্ছ; 

সম্ভাষণের স্নিগ্ধতায় ছড়িয়ে দিতে সব রাঙাপরী ডানায়;

যে ডানা-কারু মোহে কেটে যেতো পুরুষ পৃথিবীর মধ্যদুপুরও। 

সন্ধ্যা হতে হতে আরও কিছুটা ঘ্রাণ রয়ে যেতো প্রানের তসতরিতে। 

মুগ্ধতার পংক্তি গুলো কতদিন শুনতে পাই না।

আহা! সন্ধ্যা গড়ালেও, অথচ আর তুমি এলে না!

রাতগুলো হয়তো আরও কাঁদবে, সান্ত্বনা দিলে না।

গড়ানো মুদ্রার ভাঁজ আর কীভাবে ঢাকবে কষ্টে?

পংক্তির ভাঁজে শিউলি ঘ্রাণে যদি আবার প্রাণিত হও

প্রিয়ভাষী, প্রানোষ্ঠ বোশেখে পুন:জীবন পাবে হয়তো।

🔵 গোলাপ কথা

ইদ্রিস নবীর উম্মতেরা খোদাকে নাকি গোলাপ দিতো;

অদৃশ্য থেকে আলো এসে কাঙ্খিতটা ছুঁয়ে দিতো। গোলাপ!

তোমার অমন কদর জানে কি কেউ এমন করে? 

তাইতো তার নামটা আমি পাল্টে দিলাম গোলাপ বলে। 

গোলাপ আমার অদৃশ্য হলো, মন ছুঁয়েছে খোদার বুঝি? 

সে গোলাপের জন্য আমি দিবস-রজনী জেগে খুঁজি।

গোলাপ তুমি কোথায় আছো? নিজের মাঝে, না অন্য কোথাও? 

আমার মত এমন সুবাস! কেউ পেয়েছে তোমার কী কেউ? 

তোমার জন্য মেঘকে আমি তুলো করেছি ঘুম বালিশের, 

তোমার জন্য হাওয়ার মাঝে খাট বিছিয়েছি স্বপ্ন সাধের;

তোমার জন্য লেপ বানালাম বসন্তেরই পুবাল হাওয়ায়;

তুমি এখন মন ছুঁয়েছো, কার কাছেগো? কোন গোপনে ? 

তোমার জন্য থরো থরো, তোমার জন্য দ্বিধা কাতর;

তোমার জন্য মন উদাসী তোমার জন্য প্রগলভতা;

তোমার জন্য টলোমলো তোমায় নিয়ে স্বপ্ন বোনা

গোলাপ তুমি আমার আছো, গভীর গোপন বুকের ভেতর।

🔵 কালো বন্দনা

কালো বরফের মেঘগুলো ভাসে পুবালি বাতাসে 

কালো হরফের সংবাদগুলো ঝুলে কার্নিশে; 

কালো বিড়ালের; চিৎকার শুনেই আজ পান্থ চলে

কালো মানুষের আর্তনাদ আজো শাদাদের দেশে।

কালো কালো সব ছায়ারা ছড়ায় পেতে রেখে ফাঁদ

কালোর এখন বান বয়ে যায়- যেনো নিশি রাত।

কালোই এখন কালো নয় শুধু নিয়তিতে হায়! 

কালোর প্রকোপে কালোময় সব এ হীন লজ্জায়।

কালোর ভীষণ মূল্য ছিলো ঐ বেলাল হৃদয় গুণে

কালো এখনও হীরকখণ্ড শেখ নুরীনের কণ্ঠ গুণে।

কেটে যাক কালো, ভেসে আয় আলো, করোনা কালে;

কালোর আলোয়, কালোর ভালোয়, পৃথিবী উঠুক জ্বলে।

০৭.০৬.২০২০ কাফকো, চট্টগ্রাম।

🔵 চন্দ্রমল্লিকার দেখা  

অদ্ভুত মায়াবী চোখ, চোখের পেছনে মায়া

কে তুমি হৃদয় আড়াল করে চিত্তে ফেলো ছায়া?

মেলার কোনো এক ফাঁকে,

ছবির আলোছায়া বাঁকে,

কে যেনো বলে যায় রাজহংসী গ্রীবায়- হাই! 

তোমাকে লাগছে খুউব- শাদাকালোবেশ- হরিণী!

আমাদের পৌরুষহাটে চিত্তচাঞ্চল্য ছোটে, 

উপমা-উৎপ্রেক্ষা ফোটে কবিতা পাড়ায়। 

কে এলো? কে এলো? 

অমন সুকেশী, আলতা রঙের সম্পূর্ণিমায়? 

একরাশ অন্ধকার পেছনে ঠেলে, হেলে, 

হেঁটে যায়, হেঁটে যায়, হেঁটে পৌরুষ ছায়ায়; 

হরিণী ত্রস্তত বোধ, 

ছোটো শান্ত-ধীর লয়ে ইটের চাতালে, 

জেগে থেকে ষষ্ঠইন্দ্রিয় পাড়ায়… পাড়ায়। 

নিয়ত যায় বেলা, 

মধুছায়া করে খেলা, 

দাগ কাটে নাগরিক শিলান্যাসে। 

কে তুমি অমন করে, 

আউলা করো বাউল বাতাসেরে, 

নিয়ত জেগে চন্দ্রমল্লিকা! 

নিঃঘুম- দ্বন্দ্ব কায়ামায়া, 

বাজিয়ে ভোরের রাগিণী, 

যেনো অপেক্ষার যোগীন-যোগিনী, 

যায় বেলা। 

এমনও যায় বেলা নিয়ত সুর-অসুর খেলা, 

রোদপুরে জেগে ওঠে যাপনের সর্পিনী। 

সান্ধো আকাশে বাজে বিরহী সানাই; 

সানাইয়ের সুর- 

বেদনা বিদুর; 

ছড়িয়ে থাকে শুধু অনাঘ্রাত ঘ্রাণ, 

পড়ে থাকে পাতা-কাণ্ড-ডাল চন্দ্রমল্লিকা;

আহা! বড় অসময়ে তোর সাথে দেখা!

🔵 দেয়াঙ পাহাড়ের মৌনতায়

দেয়াঙ পাহাড়ের মৌনতায়

কেটে যায় সুনসান সন্ধ্যা নীরব রাত কুয়াশা ঢাকা ভোর;

যতটুকু কোলাহল তাও নগর ছাপিয়ে নয়,

মাঝে মাঝে ডাকে কয়েকটা কুকুর- শেয়ালের হুক্কাহুয়া।

যেভাবে সবুজ শ্যামল বঙ্গদেশে কতিপয় পিশাচের হানায়-

কালের মুয়াজ্জিনের কাটে দিন আঁধার প্রকোষ্ঠে সিজদায়।

তেমন নীরব বেদনায়-

নিস্তব্ধ পাহাড় ডাকে আমাকে তোমাকে ;

ওখানে মৌনব্রত সেবাস্টিন শিষ্য থাকে , 

রামানুজ আঁকে দেবপ্রাসাদের রঙিন চিত্রাঙ্গদা। 

লোকালয় থেকে দূরে, অনেক দূরে- 

নীরব শুভ্রতায় শাহ্ সুজার ঈদ গাঁ তোমাকে ডাকে,

খোদাকে ডাকে গিফারীর কতিপয় অনুসারী।

মরিয়ম ফুল বাগানে ভাস্কর্য হয়ে জীবনের অন্য রূপ নিয়ে থাকে।

দেয়াঙ মৌনতায় বাংলাদেশ কাঁদে মরিয়মের প্রভুর কাছে।

কেনো তুমি অমন বেচইন দিল দিলে প্রভু?

কেনো তুমি সন্ধ্যা রাগে এ হৃদয় সাজালে?

দেয়াঙ মৌনতায় দিন যায় রাত্রি গভীর হয়,

নিশিতে বাজে করুণ করুণতম গীর্জার ঘন্টা;

দেয়াঙেরও মৌনতা ভাঙে,

ভাঙে রক্তেগড়া হৃদয় চিত্রের মৌল সম্বন্ধ গরিমা;

হায় বাঙলাদেশ, 

তোমাকে কে শেখাবে মানবিক ইতিহাসের সীমা?

🔵 প্যারিস রোড 

প্যারিস রোড চেয়ে আছে আমাদের দিকে

ওপথ ধরে হাঁটতেন একজন মহাত্মা এবনে সামাদ; 

আরও কত শিক্ষাপ্রাণ নমস্যজন।

এবং তাঁদের ছায়া-প্রচ্ছায়া ঘিরে পথটি গেছে বেঁকে ;

যদিও পাইনি তাঁর এইটুকু আলো-ছায়া,

তাই তাঁর প্রতিটি পংক্তি ভাঁজে, 

খুঁজি মনন বিশ্ব যুঝে- 

হাঁটছি এখনও প্যারিস রোডটি ধরে-

বাংলাদেশের হৃদয় খুঁজে ফিরে।

নৃ-তত্ত্বের হাঁড়-নাড়ি

খুঁজে ইতিহাসবাড়ি

যাচ্ছে দিবস-রাত

আত্মপরিচয় ছেনেছুনে 

কঙ্কালটুকু নি চিনে-

এ সংগ্রাম নিজস্ব আমার 

পুর্বপুরুষ চাষা নাকি মনমাঝি?

পদ্মা-মেঘনা-যমুনার স্রোতে ভাসি 

মাঝি বইয়া যাও রে… 

ও আমার মনমাঝি! 

🔵 ভালোবাসা মরে না

নগর ভ্রমণ নিয়ে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক বলতেন–

যে নগরে যাও না কেনো মানুষ চিনবে দুটো জায়গাতে;

নগরের কাঁচাবাজার ও অন্যটি গ্রন্থাগারে–

তারা কী খায় এবং কী বের করে;

তাদের চিন্তার দৌড় খোঁজা যায় সহজে সরলে।

মদিনাকে যখন খুঁজতে খুঁজতে

মোকতুবাতে আবদুল আজিজ-এ ঢুকলাম,

তখন মনে পড়ে সবুজ গম্বুজের সেই ইমামের কথা

যিনি ভালোবাসাকে সবার উর্ধ্বে রাখতে সবুজ গম্বুজ

আগলে রেখেছিলেন।

দৌড়াতে থাকি সেই প্রাজ্ঞ ইমামের কবরটি খুঁজতে,

একটু সালাম জানাতে

দৌড়াতে থাকি গারকাতুল বাক্কির দিকে।

একে একে সালাম দিয়ে যখন-

আমিরুল মোমেনিন হযরত উসমান রা.’ র কবরে পৌছলাম,

মনটা বিষণ্ন হয়ে ওঠে

আহা কতো নির্মম, মহাকাল!

আরবের ধনাঢ্য ও ক্ষমতাধর আমিরুল মোমেনিন,

কী সাধারণ যাপন করেন কালের যাত্রায়।

বিষণ্ন মনে ফিরে ফিরে,

একেকটি কবর ঘিরে।

কৌতূহলগুলো সেরে

যখন সেই ইমামকে খুঁজি মদিনাকে জানার জন্য;

যিনি রাত্রিদিন মসজিদে নববীতে বসে আবাদ করেছেন এ বালাদ,

রাসুলাল্লাহর হাদিস ও সুন্নাহর একটি দীপ্ত বলয় তৈরি করে-

মসজিদে নববীকে করে তুলেছিলেন অনিশেষ জ্ঞানকেন্দ্র।

হন্যে হয়ে যখন ইমাম মালিক বিন আনাস রাহ. কবর খুঁজি

তখন কোথা থেকে এক ভিনভাষী ছবির মতো তুলে ধরে

গারকাতুল বাক্বির এক নকশাচিত্র।

আমি স্ক্রিনশর্ট নিয়ে তখন প্রসন্ন হৃদয়ে

পৌঁছলাম তার কবরে;

দূর থেকে সবুজ গম্বুজর প্রশান্ত হৃদয় ভাষ্যে তখন বলে ওঠেন 

ভালোবাসো…ভালোবাসো… আর জেনো ভালোবাসা মরে না,

ভালোবাসাকে যতন করে রেখে দিতে হয় ঠিক সবুজ গম্বুজের মতো।

আমার তখন মদিনার কাঁচাবাজার খুঁজতে আর ইচ্ছে হলো না।

🔵 এই ঘন মালতী সন্ধ্যায় 

কখনো কী কাটবে নিশি?

কখনো কী হবে ভোর?

ভিক্ষু ও পৌরোহিত মন্ত্রে সশস্ত্র প্রহর- 

তিনদিকে ঘিরে আছে শ্যামল প্রান্তর।

ক্রমান্নয়ে ক্ষীণ হয় মিনারের ধ্বনি;

মৌলবী হয়ে ওঠে মৌ-লোভী- 

মুদ্রার হিসাব বোঝে পাজামার প্রান্তর;

মুখোমুখি বসে আছে শাহবাগ-শাপলাচত্ত্বর!

এখানে তিতুমীর হাসে, 

হাসে শরীয়তউল্লাহ’র জোব্বার বহর;

মিডিয়া কুটিকুটি মার্ক্সীয় নন্দনবাদী,

উন্নয়নের জোয়ার ওঠে, 

ফুলে ওঠে আধিপত্যবাদী উদর ;

তবুও ডুবতেই থাকে ফ্লাইওভার, 

কিংবা বহদ্দারহাট চত্বর। 

এ ঘন সামন্তযুগে

চারদিকে সন্ধ্যা নামে…

সন্ধ্যা মালতী পূজোয় ঘন ঘন আরতি বহর ।

এখানেও সন্ধ্যা নামে, 

উন্নয়নের ডানে বামে

ইতিহাসের কান্না শুনে যাপিত প্রহর।

কখনো কী কাটবে নিশি?

কখনো কী হবে ভোর?

🔵 নতুন দিনের গান 

তোমরা যারা স্বপ্ন দেখো একটি নতুন পৃথিবী হবে,

মাড়িয়ে তুফান কষ্টের বান উজান ডিঙ্গিয়ে তবে,

হাসি মুখে গাও যাপনের দু:খ, জেল জুলুম কথা,

রিমান্ড-পৃথিবী, আইন-আদালত, অকথ্য-যাপন ব্যাথা।

তোমরা যাকে আবেগ ভাবো, ভাবাবেগ ভাবো মনের; 

এসব কিছু জন্যেই নতুন পৃথিবী- নবজীবন গানের-

সেখানে মানুষ পাবে সম্মান, পাবে সম অধিকার;

নারী-পুরুষ-উচুনিচু, ভেদ আশরাফ-আতরাফের।

যেখানে জায়া গাইবে গান রাঙা দুটো হাত মেলে;

যেখানে বোন পাখনা উড়ায়ে যাপনপূর্ণতা করে।

যেখানে মা বুনবে জামা রাঙাতে সন্তান সুখ;

বাবা বাধেঁন সাতরঙা স্বপন তাড়িয়ে সব দু:খ।

এমন পৃথিবী গড়তেই চাই নব জীবনের গান,

এমন জীবন গড়তেই দি যাপনের এ স্লোগান-

এসো মানুষ, এসো গাই: এ পৃথিবী শুধু মানুষের হবে,

পশুরা সব মুখোশ পরেছে, আইন আদালত মসনদে।

🔵 সময়ের স্লোগান   

বিপ্লবের লাস্যময় স্লোগান শোনা যায়;

সময়ের স্রোতে গা ভাসানো মন্ত্রণা!

জেগে আছে মহাকাল;

পদ্মা-মেঘনা-যমুনার কালো জলে,

ফোরাতের কালো ছায়া ফেলে-

বলে : হায় হোসেন!  হায় হোসেন!

এ কোন কারবালা বয়ে যায়?

বিপ্লব লিখে যায় শুধু মহিমাময় ইতিহাস-

যে আনে সুন্দরের অবিমিশ্র অনাবিল ভোর-

মানুষ শুনতে চায় তার গান- গীটারে তোমার-

লিখে না কেউ পরাজিতের নির্মম পরিহাস।

জেগে থাকে মহাকাল।

জাগো!  

সময়ের রুদ্র নায়ক, জাগো!

হাওয়ায় দোলে কাপুরুষ কাল।

🔵 সোনাদিয়া প্যারাবন

আমরা গিয়েছি সমুদ্রকূলে পাথরের খুব কাছে 

হাজার বছরের বেদনাটুকু বুকপেতে শোনাতে ।

প্রবালগুলো মেলেদিল দিল বললো আমাকে হেসে 

তোমার মত অমন অনেকে বলেছে মিথ্যে নাগর সেজে;

সোনাদিয়া নাম শুনেছো সোনাছিলো না কোনো কালে-

নীল জলরাশিরূপে মুগ্ধ নাগর নাম দিলো মিছাদিলে;

অথচ এখন বর্জ্য ভাগার লাল কাঁকড়া পালায় নিত্য 

পূর্ব-পশ্চিম-দক্ষিন সমুদ্রে শুধু গর্জন ওঠে তেল যুদ্ধ।

চাঁদের মায়ায় বিবাগি তুমি জোয়ার-ভাটার খেলায়!

অথচ রঙিন মাছগুলো মরে লাস্টিক ক্যান জ্বালায় ।

বালিয়াড়ি জুড়ে প্লাস্টিক-কাচে সমাধি চলছে প্রাণের

অমর কাব্য কিভাবে লিখো- মুক্তাচাষীর ঘাম-নুনের ?

প্যারাবনে শুধু পেরা বাড়ে এখন পাখিরা হারায় প্রাণ 

কাদাখোঁচা আর চামঠুঁটোর শোনা যায় না এখন গান ;

প্রাণবৈচিত্র বইয়ের খবর পাখির পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক

কচ্ছপদেয় আর্টিফিশিয়াল ডিম- ফ্র্যাঞ্চইজি নিয়েছে চৈনিক।

মানববিদ্যা বইয়ে রেখে এসো তবে, আমার সাথে করো পিরিত;

সোনাদিয়া দ্বীপ সোনা ফলাবে, প্রাণে পাবে প্রাণ ঠিক।

🔵 রূপসের পাখি গান 

পুকুর ঘাটে জিরিয়ে কিছুটা যখন শান্ত,

পর্যটন ক্লান্তি- রয়েছে কিছু দাগ- শ্রান্ত;

খাদেম দেখিয়ে দিলেন কুমিরের কবরটি নয়, 

শাহ মাখদুম রূপস শুয়ে আছেন ভেতর কামরায়।

যেভাবে আমাদের ভেতর পশুরা লক লক করে যাপনে,

তবু আত্মার গভীরে ঘুমায় এক সাধক আবদুল কুদ্দুস। 

সেখানে ইতর বিশেষও মুগ্ধ হয়ে ওঠে যাপন শুভ্র শুদ্ধতায়, 

রাজশাহীর অন্তজ মানুষ চেয়েছিলো যা হৃদয় রেহালে,

কী আছে সেই মাখদুম রাহে? 

বাহে?

২.

নিপিড়ীত মানুষ খুঁজে তাদের যোগ্য নৃপতি,

নৌযুদ্ধ, অশ্বযুদ্ধ, হৃদয় যুদ্ধে জিতে রূপসের সৌম্য পুরুষ,

সাম্যের বাণী 

হৃদয় জুড়ানি 

গেয়ে ওঠে বাঘার কৃষাণ-কৃষাণী ;

পদ্মার তীর ঘেষে তরঙ্গিত হয় আত্মার গান।

শাহ দীঘির প্রশান্ত ঢেউ খেলে বেঁচে আছেন শতবর্ষী সেই আম্রকানন।

৩.

সালাম ও তাসবিহ্ জপে ধীর পায়ে এগোতে থাকি- 

কুমিরের পথচিহ্ন খুঁজে,  

যে পথ বেয়ে শাহ মাখদুম ডাঙ্গায় উঠেছেন; 

পর্যটনের ব্যঞ্চিগুলো মাড়িয়ে যেই 

পদ্মার ধূ ধূ বালুচরে কদম ফেলি,  

দেখি একটি ছোট্ট পাখি নিয়েছে পিছু…  

হাঁটতে হাঁটতে যখন বাঁধা নৌকায় পা রাখি,  

অকস্মাৎ দুলে ওঠে সমস্ত পদ্মা চরাচর, 

দুলতে থাকে নৌকো, 

দুলতে থাকে আমাদের স্থির মনস্তত্ত্ব জগৎ-

পাখিটা তখন নৌকোর গলুইয়ের ‘পর। 

৪.

সখ্য হয়েছিল এক আবাবিল ছানার সাথে 

বছর দুয়েক আগে- এক প্রাচীন নগরীতে, 

যার পূর্বপুরুষ সম্রাট আবরাহারকে 

ধ্বংস করেছিলো অলৌকিক উপল অস্ত্রে, 

সেই পাখি আবার কেনো আমার নিয়েছে পিছু পিছু ? 

আহত সে পাখির ছানার ডানায় আবে জমজম ঢেলে আমিতো করেছি শুশ্রূষা।

ও মায়ার  প্রলেপ লেগে আছে কি পাখির হৃদয়ে?

নাকি শাহ রূপস দিয়েছে কোনো বাড়তি নির্দেশ-

আমাকে কোনো এক রহস্যবার্তা শোনানোর? 

অথচ এখনও আমি রপ্ত করিনি তাসাউফ, 

শব্দের মোচড় শিখতে শুধু 

হাত বাড়িয়েছি অলি-গাজীর দরগায় দরগায়, 

দেখতে বের হয়েছি শুধু প্রবল প্রতাপি রাজাদের 

কীভাবে উড়েয়ে দিলেন তখতে তাউস- 

ঘোড়ামারা, বাঘারের দেউরাজ সামন্তদের দোর্দণ্ড মহড়ায়।

ও পাখি! তোর ভাষাটা আমাকে একটু বুঝিয়ে দে…

৫.

পাখি আমার পিছু ছাড়ে না, 

কূই কূই করে কি যেন শোনায় আর চলে আমার পিছু পিছু।

দুপুর গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা, 

প্যারিস রোড ধরে হাঁটতে থাকি, হাঁটতে থাকি… ;

বিশাল দেবদারু ও ইউক্যালিপ্টাস হাওয়ার দুলুনি দিয়ে 

ছায়া দিতে থাকে শহীদ মতিউরের কবর। 

আমি হাঁটতে হাঁটতে শুনি আবার সেই ছোট্ট পাখির ডাক, 

কূই কূই করা রহস্য গীত, 

দেখতে থাকি ফুড়ুৎ করে 

কানের পাশে দিয়ে উড়ে যাওয়া একখণ্ড সাহস। 

অবোধ্য এক বার্তা শুনিয়ে যায় সে পাখি। 

আমি সেই থেকে…

আমি সেই থেকে পাখির ভাষা বোঝার আশায় 

নবী সোলেমান আ. এর সহীফা খুঁজে বেড়াই- 

সমস্ত গ্রন্থপাড়ায়।

এবং শেষ বেলায়, 

দেখা পাই এক বিস্ময় মানুষ সাদেকুল ইসলাম- 

বুকে যার একখণ্ড হীরক নিয়ে রাবির ক্যাম্পাসে নীরবে আড়ালে রয়।

যে কিনা আয়ের প্রায় টাকা বিলিয়ে দেন গ্রামীণ লাইব্রেরিতে- স্থানিক ইতিহাসের বই বিলিয়ে বিলিয়ে;

এই ভেবে, একদিন ওখানে থেকে প্রাণিত হয়ে 

বিশাল উত্থান হবে এ বঙ্গ জনপদের লুপ্ত ইতিহাস। 

পাড়ায় পাড়ায় 

মহল্লায় মহল্লায় 

লিখিত হবে গাজীদের জীবনগাথা- প্রত্ন ইতিহাস।

বিপুল বিস্ময়ে গড়ে তুলবে প্রজন্মের কেউ 

প্রাকৃত মানুষের সাম্যের সেই লুপ্ত জনপদ, জনগাথা- মাখদুম জনপদ।

🔵 জিবরাইল যা বলেছিলেন…

পর্ব: এক : বিসমিল্লাহ 

ঘাস বলে উঠলো সালামুন আলাইকুম

পাখি বলে উঠলো সালামুন আলাইকুম

পাথর বলে উঠলো সালামুন আলাইকুম

নির্জন পথ বলে উঠলো সালামুন আলাইকুম

বিহ্বল হৃদয়ে উঠে শঙ্কা

ধ্যানের ধারায় আসে তটস্থতা 

চারদিক তাকাতে, যত উৎকন্ঠা তার চেয়ে বারে আরও…

আমি কি কবি তবে এ মরু জাজিরায়?

আমি কি তবে আক্রান্ত অশরীরী আত্মায়?

প্রবল প্রগল্ভ মরুচারী বাক্যবাগীশ যেমন কল্পনার ফানুস উড়ায়-

আমি কী তেমন তবে?

সুহৃদ খাদিজা বলে উঠেন না… না…

আপনি তেমন নন…

আপনি কবি নন তবে কবির অধিক

আপনি গণক নন তবে মানুষের ভবিতব্য জানা বার্তাবাহক 

আপনি সত্যবাদী…  উপকারী মানুষের…

সান্ত্বনায় তিনি পরম নির্ভর হন মহর্ষী হৃদয়ে

সাহসের সহযাত্রী হন মরুর রুক্ষতায়

বন্ধুর মতো আগলে রাখেন বাহুবন্ধনে-

যে বন্ধন ছিন্ন হলে –  তিনি কেঁদেছেন বারবার,

যে বন্ধন ছিন্ন হলে- বলছেন তেমন স্ত্রীর উপমা নেই আর,

যে বন্ধনকে ঈর্ষা করেছেন মহর্ষী আয়েশা

যে বন্ধন স্মৃতি উযযাপন করেছেন তিনি বকরি কুরবানে…

তেমন বন্ধনে আলিঙ্গনে আনন্দে অশ্রুতে উযযাপন হোক 

তেমন বন্ধন হেরার মত নেমে আসুক ধরায় 

নামুক ফেরেশতা নামুস…

নামুসের বিশাল ডানায় বিহ্বল আহমাদ 

যেমন শুনেছিলেন-

আপনি নবী…

আপনি সত্যবাদী…

আপনি রাসুল…

আপনি পড়ুন মঙ্গলবার্তা….

পড়ুন, তার নাম যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন….

সেই থেকে প্রভুর নামে পাঠ

মানুষের উৎকর্ষের অনিবার্য প্রসঙ্গ বিসমিল্লাহ ।

০১.১২.২০২২

কাফকো

🔵 পাথর সময় 

সব কিছু কর্তৃত্ববাদ, জয়তু মোসাহেব তন্ত্র! চমেৎকার 

সব কিছু পোয়াবারো, পিয়ারী পিয়ারী  ‘পাতন্ত্র নমস্কার।

সব কিছু হাত কচলানো, চিয়ারসআপ চমেৎকার, চমেৎকার। 

মচৎকারতো হতেই হয়, ভাই বেরাদার অমত কার?

সাধ্য আছে না বলার? 

হায় আমাদের  ‘পাতন্ত্র মচেৎকার! 

দেখেই আছি ভরত নাট্যম, কত্থকনৃত্য  হেহ হেহ হেহ…

কর্তৃত্ববাদ  জিন্দা + বাদ,  

 ‘পাতন্ত্র নমস্কার হে …নমস্কার  হে…।

🔵 সার্চইঞ্জিন 

শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম খুঁজতে খুঁজতে

আমার ছোট কন্যা সকাল থেকে নাকাল;

মোবাইলে এ সার্চইঞ্জিন ওপেন হয়তো, ওটা হয় না।

শেষমেষ  ফলাফল যা দাঁড়ায়, নেটেই ডাটা শেষ হয়ে যায়…

ইন্টারনেট ঘাটতে ঘাটতে বাচ্চারা এখন 

সব উদ্ধার করে ফেলছে।

এই সেদিন তারা, রাস্তা বন্ধ করে- 

রাষ্ট্র মেরামতের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়।

আর আমি স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে 

তোমার আশল নামটাই ভুলে গেলাম!

অথচ তোমার নামে কত রটনা না রটিয়েছে নিন্দুকেরা।

তার দশ শতাংশ বাস্তব হলে 

তোমাকে হারিয়ে যেতে হতো না কবিতা থেকে;

তোমার ঐ টানা চোখ জোড়া নিয়ে এতোদিনে হয়ে যেতো!

কতো পংক্তি, কতো গান, কতো কথকতা!

টোল পড়া কপোল জুড়ে কত বিমূর্ত উষ্ণতা ছুঁয়ে যেতো তারুণ্যের ভরা ভাদরে!

কিন্তু তোমার ভেঙ্গে যাওয়া বন্ধনক্ষতে বিন্দু দাগ লাগুক, 

তা চাইনি বলে, 

ওসব কথকতা-ইশারার ব্যাখ্যা চাইনি কারো কাছে।

কোনো এক মানবিক বোধ, 

প্রতিটি পুরুষের  থাকে বলে, বলা হয়না অমন করে ভালোবাসি।

শুধু কোনো এক জমপেশ আড্ডায় কৌতুক ছলে-

‘শাপলা, মিশরীয় সভ্যতার প্রেমের প্রতীক ছিলো;

প্রেমিক পুরুষ তার দয়িতা কে নিবেদন করতো 

প্রিয় ফুল শাপলা’;

আর তাতেই  রটিয়ে গেলো মিশরীয় পুরাণ!

আশলেই , বাঙালি এক প্রেমিক জাতি-

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে

তারা পুরো জাতিকেই এনে দিলো একটি প্রিয় ফুল-

‘শাপলা’ সেই থেকে মুদ্রার পিঠে জ্বলজ্বল করে আছে-

অমর পুরাণ হয়ে আছে বাণিক  বাঙালির হৃদয়ে।

যদিও অনেক বাঙালি এখনো একবারও শাপলা খায়নি।

তবুও আমার প্রিয় আহার শাপলা ছিলো, 

শাপলা ইলিশের ঝোল কিংবা কড়া রসুনের ভাঁজা শাপলা-ব্যঞ্জন।

আহা! কতকাল মায়ের হাতের এ অমৃত মুখে তুলি নি।

বাঙালির নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস মিশরীয়দের সাথে 

কোন এক স্তরে মিলেমিশে আছে;

এ এক নান্দনিক অহং, শাপলায় মুগ্ধ হওয়া!

তোমার ডাকনাম শাপলা ছিলো;

এতোকাল আমরা ভুলেই গেছি, 

ভুলেই গেছি তোমাদের পদ পদবী পরিবার।

নিন্দুকেরাও হারিয়ে গেছে কালের করাতে,

নাম-ধাম-রূপ-রস সবকিছু মুছে গেছে লৌকিক স্রোতে।

অথচ হঠাৎ সার্চ ইঞ্জিন থেকে বের হয়ে আসছে সব, 

তোমার বৈজ্ঞানিক নাম, ইতিহাস, মায়া, স্মৃতি এবং  রটনা পুরাণ। 

প্রজন্মের নির্মম বোধের চাদরে 

এক এক করে পষ্ট হয়ে উঠছে তোমার আশল নামও,

রাষ্ট্রের নাড়িভুঁড়ি, সমস্ত গোপন সম্পর্ক, টাকশালের বেহিসাবি হিসাব।

আর তারা হয়তো আবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ঝুলিয়ে দেবে আরেকটি সাইনবোর্ড- 

‘রাষ্ট্র মারা গেছে, কোনো এক বিষুদবারে তার জানাজা হবে’।

বোধ-কাম-প্রেম নামধাম কীর্তির ঘোলা জলে ভেসে 

আমরা এখন অযোগ্য পুরনো বাতুল মাল, রাবিশ! 

শুধু দাঁড়িয়ে আছি রাজদণ্ড লোভে খাটাশ-খবিশ। 

🔵 আগস্ট  

ব্যাক্তি আমাকে ছোঁয় না, ছোঁয় না ইতিহাসের খেরোপাতা;

চিরকাল অনৈতিহাসের হালখাতা হয়ে ছুঁতে চেয়েছি হৃদয়-চিবুক।

ইজেলে এঁটে, ফ্রেমে, তুলির আঁচড় হয়ে বোধের বাড়ি- 

তুমিও তাড়াতাড়ি ঘোমটা আঁটো আমাদের আড়াআড়ি;

দ্রোহের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আর হয় না দেখা আমার তোমার,

এ কেমন বেচইন মনোপ্রেম হয় না আঁকা মুখটাও তোমার

বিরহ কাহিনীগাঁথা, ভীত সংলাপ আজও বাংলার বুকে 

আগস্ট মানে গীতমালা তোমার আমার অনিশেষ দুঃখে।

🔵 জার্নাল : ২৬ সেপ্টেম্বর 

এই দেখো! ক’দিন আগে কি অদ্ভুত ভালোলাগায় একজন- খাওয়ার টেবিল সাজিয়ে শিয়রে দাঁড়িয়ে ছিল। পুলকিত শিহরণ নিয়ে চাওয়ার ছায়ায় আহার পর্ব সারি। শুধু ভাববাচ্যে সংলাপ আউড়িয়ে সময়টা পেরোয়। মুগ্ধতার তৃষা লজ্জায় ফেলে-

মুগ্ধতার এমন বিস্ফোরণ হয়- অমন চোখ ঠিকরে পড়তে দেখে গুটিয়ে নিই নিজেকে ভাড়াক্কির চালে- হৃদয় ছোঁয়া না ছোয়াঁর গল্পটা কখনও তেমন।

তুমিতো জানো স্বভাবে এমন এক কৌশল আয়ত্ব রেখে অলৌকিক মোমদানি দিয়ে আমাদের স্বাপ্নিক মনোভূমি সাজিয়ে রাখা। অমন নিবিড়েও কখনো বলিনি- ‘স্পর্শের গভীরতা মাপো।জীবনের অমন মুগ্ধ পর্ব পুত রেখে মওলানা রুমির জোব্বা পরে থাকা আর গান গায় রবি ঠাকুরের- ‘যে ছিলো আমার স্বপ্নচারিণী….’

জীবন বারান্দায় যখন পায়চারি করতে করতে

শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের গল্প মিলায়- ভেতরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে। ছোঁয়া না ছোঁয়া গল্প তখন অস্তিত্বময় হয়ে মোচড়ে ওঠে ভেতর পৃথিবী‘শোন! তোর অমন ভালো মানুষী মানায় না বস্তু সংসারে। দুমড়ে মুচড়ে ভালোলাগাকে পিষে নিতে হয় অস্তিত্বের গাঢ়তায়; আলু থালু ভালোবাসা তখন গোঙা-কান্নায় তৃপ্ত হয়ে হেসে ওঠে; অস্তিত্ববাদ তখন জিন্দাবাদ দিয়ে ওঠে।’ হাহ হাহ হা…

ছোঁয়া না ছোঁয়া গল্প তখন রবি ঠাকুরের কাদম্বরীর সুইসাইট নোট হয়ে ওঠে না… আহা…জীবন এতো ছোট্ট ক্যান?

🔵 ইনতিফাদা… ইনতিফাদা…

স্বাধীনতা শব্দটি দ্রোহের আকর হয়ে বুকে জ্বলছিলো যাঁদের , 

কৈশোর পেরিয়ে বেদনার রক্তে গড়েছিলো যে খণ্ডিত পায়ে 

জীবন্ত শহীদ ভাস্কর্য যারা 

তারুণ্যে মুহুর্মুহু স্লোগান… ইনতিফাদা… ইনতিফাদা…

পাথরে পাথর জ্বেলে বুকে জ্বেলে আগুন 

ফিলিস্তিন মানচিত্রে রচে যায় সাহসী ফাগুন ৷

মারগারে আমেরিকা… মার… মার…

মারগারে ইসরাইল… মার…. মার…

ইনতিফাদা… ইনতিফাদা…

রক্ত ও বারুদে মেশানো ফাদি আবু সালাহ্’র ভাইয়েরা!

বেহেস্তের এক একটি অনাঘ্রাণ পুষ্প… 

তোমার আমার প্রাণের দাম লুটে নেবো ফিলিস্তিন।

শান্তি বাণিজ্যের নেমক হারাম সওদাগর- জাতিসংঘ! হায়, তার সদরদপ্তরে গিয়ে একবার যদি পেচ্ছাব করতে পারতাম!

ফাদি আবু সালাহ্! তোমাকে সালাম! 

আমার শহীদ ফিলিস্তিনী ভাইয়েরা! তোমাদের  সালাম।

সালাম ইয়া আইয়ুহাল মাহদী… সালাম…

সমগ্র উম্মার সালাম…

🔵 জুতো জোড়া 

আজকাল চোরের উপদ্রব হয়েছে বেশ-

রাষ্ট্র  থেকে শুরু করে  জুতো জোড়াও  চুরি যাচ্ছে, 

সব চুরি হয়ে যাচ্ছে…

তাই আমি আমার জুতো জোড়া খুউব যত্ন করে রাখি; 

আজকাল মসজিদেও আমার কড়ানজর থাকে জুতো জোড়ার প্রতি;

যা কস্মিনকালেও হতো না।

মাঝে মাঝে ভাবি আমার নামাজ হচ্ছেতো?

আসতাগফিরুল্লাহ…

এভাবে আর কত জুতো জোড়া পাহারা দেবো?

আমার জুতো জোড়ার সাথে হারামাইনের স্মৃতি জড়িয়ে আছে, 

হেঁটে হেঁটে  পরিব্রাজনে কী আনন্দ আছে,

প্রেমহীন হৃদয় বুঝে না এসব।

কুবা থেকে মসজিদে নববী আসার ধূলিময় স্মৃতি কাতরাচ্ছে হৃদয় রেহালে;

আরো আছে আরবের পথে পথে রাসুলাল্লাহ  সা: এর স্মৃতি চিহ্ন খুঁজে খুঁজে ধূলিমাখা পথ রোমন্থনের দ্যুতি।

জবলে সুর খোঁজার কষ্ট যখন হৃদয়ে বিঁধে!

আমার জুতো জোড়া রহমতে পরশ হয়ে তপ্ত রোদে বেদনার স্মৃতি হয়ে কাঁদে।

হায় খোদা! এমন সংবেদনশীল করে আমাকে কেনো পাঠালে বাঙলা মুলুকে ?

তার চেয়ে আরবের ধূলো হয়ে আমি যদি উড়তে পারতাম ক্বাবা ও  রাসুলের রওজায় ; 

জীবন আমার ধন্য হয়ে যেতো,

লাগতো না আশরাফুল মাখলুকাত তকমা-

যেখানে কূটনীতির গোপন রূপকথায় চুরি হয়ে যায় রাষ্ট্রও;

যখন ধানমণ্ডির ধূলি মুছে মুছে যাবর কাটে  গোদা বংশের শেষ বুড়ো।

ব্যাক্তি উচ্ছন্নে যায়

সমাজ উচ্ছন্নে যায়

রাষ্ট্র  উচ্ছন্নে যায় নটনীতির বিপাকে; 

কেনো আমি জুতো জোড়া পাহারা দেবো?

ধূলোর আস্তরণ সরাতে?

ধূলিতে ধূলিময় আস্তো বিবেক যখন শুড়ি খানার আড্ডায়;

রাজপথ বেকে গেছে ধানমণ্ডির লেকের বিনোদ বিহারে;

বিপ্লবী বিনোদ বিহারীর উত্তরসূরি ফেঁসে গেছে যখন  নট ও নাট্যমের ভোগের উৎসবে,

সাকী শুরা গোলজার হ্যায় যখন-

হা হা হা… 

আমি আছি শুধু জুতো ঠিক রাখার সংগ্রামে!

তা কোন নমরুদের মাথা ব্যথা সারাতে?

……………

০১.১১.১৬

🔵 লালচাঁদ শুয়ে আছে  থানার দুয়ারে

লালচাঁদ শুয়েই আছে চকবাজার থানার দুয়ারে

‘মিষ্টিমুখ’র মাওয়া খাওয়া আশৈশবের সে আমি,

এখন পালাতে থাকি বাবুর গ্যারেজের পাশ ধরে।

পুকুর পাড়ে মন্দিরে ঘন্টা বাজতে থাকে বাজতেই;

থামার লক্ষণ নেই দেশে-মহাদেশে এবং ইতিহাসে। 

এ পাড়ার মুয়াজ্জিন বারবার হুশিয়ার করতে থাকে- 

পথ অন্ধকার, হোঁচট খেয়ে পুকুরে পরার ভয় থাকে।

একবার তর্ক হলো ওপথের এক মূর্খ ইমামের সাথে,

সেই থেকে ওমসজিদে নামাজ ছেড়েছি আস্থাহীনে।

বাকলিয়া থেকে হেঁটে তেলিপট্টি থেকে দা-ছুরি কিনি, 

মাঝে মাঝে মুসলিম বেকার্স থেকে বেলা বিস্কুট কিনি-

হাঁটতে থাকি হাঁটতে থাকি দু’কন্যা দু’হাত ধরে ধরে-

লালচাঁদদের কথা জানাতে জানাতে দেখিয়ে দিতে-

কবে ? কোথায় ? হোঁচট খেয়েছি পথে মুঁচির দুয়ারে-

যেনো না খায় হোঁচট, লালচাঁদ রোড টু চট্টেশ্বরীরে।

লালচাঁদ আয়েশী ঢঙে শুয়েই আছে থানার দুয়ার;

আটকে যায় শুধু এসব ঘিরে সাম্প্রতিক ইতিহাস ।

৯ আগস্ট

কাফকো, চট্টগ্রাম।

পরিচিতি : মাঈন উদ্দিন জাহেদ

জন্ম ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ চট্টগ্রাম শহরে । আদি ডেরা ফটিকছড়ি উপজেলা, পাইনদং ইউনিয়ন, হাইদচকিয়া গ্রামের আবদুল খালেক চৌধুরী বাড়ি (প্রকাশ : মহব্বত আলি মুন্সী বাড়ি)। 

বাবা মরহুম মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী ও মা মরহরমা হোসনে আরা চৌধুরী দু’জনই ছিলেন লেখালেখির সাথে জড়িত। কৈশোর থেকেই কবিতার সাথে গৃহস্থালি । লেখালেখি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ও লিটল ম্যাগে। পড়ালেখা : চট্টগ্রাম কলেজ রোড-এ শিশু নিকেতন, পরবর্তীতে চন্দনপুরা দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা থেকে স্নাতক, এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (১৯৯২), স্নাতকোত্তর (১৯৯৩)। ৯৭ থেকে দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে, এখন থিতু হয়েছেন বহুজাতিক সংস্থা কাফকো’র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাফকো স্কুল এন্ড কলেজে। স্ব- কালের অজস্র সংকলন, জার্নাল ও ওয়েভজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তার কবিতা, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ ।

যাপনে কর্পোরেট জীবিকাজীবী কিন্তু মননে গদ্য-পদ্য জীবীর মুহূর্তগুলো যায় শাদা শাদা পৃষ্ঠায় কালো কালো শব্দ সাজিয়ে। স্ত্রী : মোৎ-মাইন হাসনা চৌধুরী, দু’কন্যা খুশনুদ দুরদানা ও দুররে সানিয়াতুন কে নিয়ে একান্ত যাপন ।

সম্পাদনা: পুবাকাশ (২০০৫) এবং সাহিত্য চিন্তার ওয়েব পোর্টাল : www.pubakash.com। সেপ্টেম্বরের ইশে রোদ ঘিয়ে বিষ্টি (কাব্যগ্রন্থ ২০০৫); নিখিলেশ কেমন আছো (কাব্যগ্রন্থ ২০১৭); অলৌকিক প্রণোদনা (কাব্যগ্রন্থ ২০১৯); মনন মৌমাছি (প্রবন্ধ ২০২৩) তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ। প্রাকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ : আদ্দাসের একথোকা আঙুর (বইমেলা-২০২৪)।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

খান কাওসার on দীর্ঘ কবিতা : কসম
মেজু আহমেদ খান on দীর্ঘ কবিতা : কসম