ছায়া
কমলা রোদে হাঁটতে ছিলাম; তখন মনের ধান ছিলো।
হাঁটার গতি, মনের গতি – দুইয়ের ভেতর প্রাণ ছিলো।
চতুর্ভুুজের বাহু সম পৃথিবীরও প্রেম ছিলো।
প্রেমের সওদা করতে ফেরি সব মানুষের হুঁশ ছিলো।
দিনের সমান লম্বা গড়ন ; ফরশা তাহার হাত ছিলো।
হাতের ভেতর শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো ভোর ছিলো।
ভোরের বাড়ি কেমন কেমন ছায়া ছায়া ঘোর ছিলো।
রাত্রি এলে তারার আকাশ ভালোবাসা বাসছিলো।
কমলা রঙের রোদ ছিলো আর শাদা রঙের হাঁস ছিলো।
হাঁসেরা সব হৃদ-পুকুরে সূর্য ধরে আনছিলো।
পার্থিবতার এই নমুনা পৃথিবীতে ঠিক ছিলো।
তোমার ভেতর চক্ষু-ভরা ভালোবাসার পান ছিলো।
কমলা রঙের রোদে ভরা ছায়া এখন অল্প।
ইহুদি -চোখ হানছে ছুরি; রোদন-ভরা গল্প।
কয়েকটি চোখ
একটা চোখ রেখে এসেছি ধানের সিঁথানে ।
এখানে শুয়ে আছে কাঠিলজেন্স ,
কয়েকটি মরহুম ছায়া আর জান্নাতবাসী ভোর।
কোনও কোনও দিন এসব খুব মনে পড়ে।
তখন রুহের মাগফিরাত কামনা করি
কামিজের মতো লাল সন্ধ্যার ;
হাঁটি হাঁটি পায়ে হেঁটে আসা বিকেলের।
একটা চোখ রেখে এসেছি দুপুরের কাছে।
মায়ের কাছে বসে গল্প করছে
চুল্লি ও ব্যঞ্জন ।
জিহ্বায় লেগে আছে তার সব পার্থিবতা।
কোনও কোনও দিন এসব কথা খুব মনে পড়ে।
তখন একমনে দরুদশরিফ পড়ি।
আল্লাহ, বেহেস্তের এককোণে রেখে দিও
এই রঙিলা দিন।
একটা চোখ রোদের সমান ।
সৌন্দর্যের সর্ত খুলে খুলে দেখবে সবকিছু ।
একটা চোখ তিন বোনের মতো
যারা একটিমাত্র চোখের অধিকারী।
দেখার জন্য একে অপরকে ধার দেয় ।
আর মেডুসাকে হত্যার জন্য বাতলে দেয় পথ ।
এইভাবে নিহত হয় কুৎসিত, কুরূপ ও অন্ধকার ।
কয়েকটি চোখ আমার থাকুক সুন্দরের সাথে।
চোর
খুব বিলম্বে পৌঁছলো ডাক; তোমার চুম্বন,খামে মোড়া-
খুলে দেখি, কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে দুটো ঘন নিঃশ্বাস,
ঠোঁটের পরমাস্তিক কম্পন আর মাছের মতোন একটু সাঁতার।
বলেছো,পাঠিয়েছো নিবিড় রাত্রি,বালিশে হেলান-দেওয়া গল্পসংকলন,
তার অনন্য প্রচ্ছদ।
অথচ,কী অবাক! রাত্রি;ভূতুড়ে এবং গু-মুতের গন্ধে ভরা।
এই পত্র খুলে দেখেছিলো কেউ,তারপর একে একে নিয়ে গেছে
দৌঁড়;যা তোমার বুকের দুপাশে বিজ্ঞানসম্মত শোভা পায়;
অহর্নিশ।
এখন,শুধুই ঠোঁট পড়ে আছে আলুথালু।
চোরে নিয়ে গেছে সুসিদ্ধ সমাজবিজ্ঞান।
নেই
ফুলের মধ্যে নেই ।
স্বপ্নের লাল অভ্যন্তরে নেই ।
সূর্য ওঠার ঔদার্যে নেই ।
তোমার একঝলক বিদ্যুৎ-স্পৃষ্ঠ হাসি পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই :
কোনো উপমার অনিবার্য হৃৎপিণ্ডে নেই ।
এই কবিতাটির মতো বাতাসে দুলছে তোমার হৃদয় ।
দোলনায় চির রহস্যনিবিড় শিশু ।
ব্যাপ্ত মাঠে ফসল ও আদিগন্ত সবুজ ।
বাদামি দুটো কোলাহল কোলাকুলি করছে গভীর অধ্যয়নে ।
ঝুমকো একটা ফুল গোসল করছে কাপড়-চোপড় খুলে
সকালের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ।
তোমার উপমা অন্য কোথাও নেই ।
অবধারিত নিঃশ্বাসে নেই ।
যৌনসম্ভোগে নেই ।
অঙ্কুরিত কোনো উদ্ভিদে নেই ।
নগ্ন একজোড়া স্তন কদম ফুলের মতো আভা ছড়াচ্ছে । — নেই ।
একটা ব্রা হুক খুলে দিয়ে বসে আছে
প্রকৃত কোনো সুন্দরীর জন্য । – নেই।
তোমার একটা আকাশচুম্বী বিস্ময়
স্থির হয়ে আছে আমার চোখের মণিতে ।
উর্ণাজাল বুনছে কয়েকটা বহতা বোধ ।
এই আনন্দে ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে আজ বিকেলে ।
সন্ধ্যা নামবে তোমার নামে ।
তোমার তুলনা আর অন্য কোথাও নেই ।
চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো নরম রোদে নেই ।
একটা লতা গাছের কোমর ধরে উঠে যাচ্ছে । –নেই ।
পাছা দুলিয়ে দাম্ভিকতা দেখাচ্ছে সফলতা । –নেই ।
চুম্বনের লালায় তুমি নেই ।
ডুমুর পাতার লকার খুললাম । — নেই ।
একটা মেহগনি গাছের আড়াল অনুবাদ করলাম । — নেই ।
ইচ্ছে হলে পৃথিবী চলে যেতে পারে অন্য কোথাও ।
তুমিই আমার পৃথিবী ।
শ্যামলা মেয়েটির নির্বাণ
লালশাক খেত দিয়ে যেতে যেতে
শ্যামলা মেয়েটি ভাবে, পুষে রাখবে দীর্ঘ শীতকাল !
হাওয়ায় চঞ্চল একটা পাখি গুঁবরে পোকা মুখে-
জীবনের ব্যাকরণ জানে ।
সে কি দূরে নিক্ষেপ করবে মেয়েটির বিষণ্নতা ?
ভাবিকে দেখলাম– তার ব্যক্তিত্ব শুকোতে দিয়েছেন রোদে।
তার বহু রঙা আলো ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে ।
কেউ কি লিখতে পারো — অনাঘ্রাতা এই জীববিজ্ঞান ?
শ্যামলা মেয়েটি আকাশ দ্যাখে।
হে ভোর, তুমি এত নির্দয় কেন ?
তাকে একখণ্ড আকাশ উইল করে দাও।
কার্পণ্য মোটেও আমি পছন্দ করি না।
ও-ভাবি, ওই মেয়েটিকে লালশাকের মতো বোধি হতে বলো।
হে পাখি, তুমি এই পরিপার্শ্ব থেকে অবসর নিয়ো না এখন।
মেয়েটিকে জীবন বুঝতে দাও।
সে লাভ করুক প্রকৃত নির্বাণ।
জুনো
শয্যা ও সৌন্দর্যের মাঝে লাফ দিয়ে উঠলো ডোরাকাটা বাঘ।
তছনছ হলো ফ্রেমে বাঁধানো চুম্বনদৃশ্যের অতি কাছাকাছি একটা শব্দ–
কুঞ্চিত ঠোঁট,
হালকা লিপস্টিকে মোড়া ছন্দশাস্ত্র–
আলুথালু পড়ে রইলো বহুভুজি শীৎকার।
তার পাশে,সমগ্র অবয়ব জুড়ে মুদ্রিত থাকলো একটা মরুভূমি।
বইলো লু-হাওয়া।
প্রবহমান নদী ও শালিকের ঠোঁটের মতো চিত্রায়িত বাতাস।
এই দৃশ্যকাব্যে , মধুবর্ষী প্রেমের প্রস্তাব করেছিলো জুনো!
বারবার,তবু হামলে পড়ে বাঘ।
দুঃসংবাদ
গোলাপ গাছটির পাতাজুড়ে লেখা- দুঃসংবাদ ।
আপেল গাছটির হৃদয়জুড়ে লেখা-দুঃসংবাদ ।
আঙুর লতার অবয়বজুড়ে লেখা-দুঃসংবাদ ।
আমগাছটির সংসারজুড়ে লেখা-দুঃসংবাদ ।
সংবাদপাঠিকা বিষণ্ন চোখে জানাচ্ছে এইসব অস্থিরতা ।
টিভিপর্দায় তাকে দেখা যাচ্ছে
একটা অনিবার্য গোলাপগাছের মতো ।
অজস্র ফুলে
অজস্র পাতায়
বাস্তুসাম্যে পূর্ণ পার্থিবতা ।
তবু লকডাউন হয়ে আছে
গোলাকার আবেগ ।
কুমড়োলতার মতো পরিব্যাপ্ত জনপদ ।
জীববিজ্ঞান ।
মেয়েটি দুঃসংবাদ পাঠ করতে করতে
মূর্ছা যাচ্ছে না কি ?
ঋণ
ঋণ করা মন্দ নয় ।
তুমি কাজী নজরুলের লম্বা চুল থেকে নিতে পারো —
একটা উচ্চাঙ্গ ঝড়ের উদ্দামতা ।
ফেরত না দেবার শর্তে-মহান উচ্ছাস ।
শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত আঙ্গুলের মতো
নেচে ওঠা সমুদ্র।
বস্তুত, ভূমিসংলগ্ন কিছু প্রতিবাদ ।
কার প্রয়োজন, জোরে আওয়াজ দিতে পারো ।
একটা সার্বিক ঝড় ঋণ দিচ্ছি শরিয়া ব্যাংকের মতোন।
আনন্দের নিজস্ব রঙ
বাড়তে দিয়েছি আনন্দ;
তোমরা ধান বুনে যেভাবে অপেক্ষা করো।
হ্রস্ব করেছি বিষাদ;
তোমরা শোক মুছে যেভাবে কবরস্তান থেকে ঘরে ফেরো।
মূলত,এভাবে তোমরা জীবনের দিকে ফেরো।
প্রত্যেকেই বিকিরণ করে এই নিজস্ব রঙ।
কারণ,তারা পূর্ণ হতে চায়।
রঙ প্রকাশ করে ভোর।
রঙ প্রকাশ করে ইট,সুরকি।
রঙ প্রকাশ করে রান্নার হাঁড়িপাতিল।
রঙের উৎসব করে হেস্তিয়ার উনুন।
তার মনোযোগ দ্বিধাহীন প্রচার করেছি।
এই রঙের ভেতর ডুব দেওয়া লোকদের আমি পছন্দ করি।
অভীক্ষা
একটা মিষ্টি আঙুরের সাদৃশ্যে ঝুলছিলো এই বোধ ।
চালাহীন ঘরের মতো
ছাদহীন বেদনার মতো
ধাবমান দ্রæততায় নিকটতর হলো রাশি রাশি পূর্ণতা।
নির্মাণ ও নির্মিতি
এবং প্রজ্ঞা আজ্ঞাবহ ছিলো বোধহীন অ্যাটির ।
সে এখন থেমে যাবে।
উঠবে শাশ্বত সূর্য।
কে মানুষকে উজ্জ্বল করতে ভালোবাসবে?
কে রোদকে অলংকার করবে?
সুতরাং, একটা অভীক্ষার সূর্য দেখতে দেখতে যাবো।
সুতরাং, একটা আস্ত আনন্দ ছড়াতে ছড়াতে যাবো।
আহা! এই পরিসীমায় কে চোখ উজ্জ্বল করে?
আহা! কে বধিরতার জাল ছিন্ন করতে করতে যায়?
একজন শাদা হাঁস
– কে যাচ্ছে? কে বহন করছে আর্তনাদ?
: আমি তোমাদের দুঃসহ আকাক্সক্ষা।
যাই অন্ধের মতো একটু একটু করে।
আর দীর্ঘ করি ব্যক্তিগত ঢেউ, উজ্জ্বল করি ।
পৃথিবীকে প্রতিবেশী করি ।
— আর মানুষ?
: মূলত একজন শাদা হাঁস।
বিষাদ না পেরোলে আমি তাকে চক্ষুষ্মান করবো না।
— তোমাকে দেখতে দাও। আমি অধীর হয়ে আছি।
: একবার রোদকে চুম্বন করতে শেখো। পাবে।
নিজেকে একবার টান দিয়ে বাইরে আনো।
তারপর পালক ছড়িয়ে কেবল সাঁতরে যাও।
তোমাকে একটি সহনীয় আয়তকার উচ্ছাস দেবো।
ভ্রমণ
একটা গোল রাত্রির ভেতরে
একটা সুস্থির ধারণাপ্রসূত জলের ভেতরে
একটা চ্যাপ্টা পাতার আকারে
দুই দিকে প্রসারিত আনন্দের ভেতরে
ভ্রমণ করতে করতে জানা গেলো
রূপকথা-মিশ্রিত ভূখণ্ডের কথা ।
সেখানে সূর্যোদয় হয়
সর্বজনীন ইচ্ছার উদর থেকে।
আর রাত্রিরা নেমে আসে রাজহাঁসের গ্রীবা থেকে;
ধীরে ধীরে আর্তনাদসমূহ মুছতে মুছতে।
এসো, আনন্দস্বরূপা আনারের বোঁটা ধরে থাকি
আরও একবার।
এসো, ভ্রমণ করি আরও একবার।
অ্যাথিনী
থাকা আর না-থাকার মধ্যে শুয়ে আছে যে জ্ঞান-
তার মাঝে আমি থাকবো না।
বামেও না,ডানেও না–
সামনেও না, পেছনেও না।
থাকুক দূরদর্শী,অদূরদর্শী উত্তাপ,
থাকুক বাকপটু অন্ধকার–
আর বানাতে শিখুক প্রবর্ধিত পরিধি ও প্রণোদনা;
জ্যা-বিশিষ্ট বৃত্তাকার যাবতীয় বর্তমান।
সেখানে হাঁটতে পারেন চতুর ভবিষ্যৎ ও ব্যাপ্তি–
গলা ধরতে পারেন বাস্তু ও বাস্তবতা;
আপাদমস্তক প্রদীপ্তি।-তার পলেস্তরা খসে না পড়ুক।
এসবের সঙ্গে সাম্য-প্রতিসাম্য আছে বহুস্তরবিশিষ্ট আনন্দ-বেদনার।
তবু আমি তার নই।
আমি থাকবো না। না রঙে না উত্তাপে।
বামেও না,ডানেও না।
সামনেও না, পেছনেও না।
না অন্তরঙ্গে, না বহিরঙ্গে।
এদের কারো আমি প্রতিবেশী হবো না।
না, না !
থাকা আর না-থাকার মাঝে শুয়ে আছে যে জ্ঞান-
তার ভেতর আমি থাকবো না।
এদের আমি কেউ নই।
আমি তাদের হবো না।
না,না!
অ্যাথিনী,অ্যাথিনী বলে আমি বেরিয়ে পড়েছি।
সূর্য দেবে আমার হাতের মুঠোয়;
আর পূর্ণ পরিতৃপ্ততা।
আমি অ্যাথিনীর হয়ে আছি শিল্পের সমান।
প্রত্যুত্তর
কে তোমাকে নাম দিয়েছিলো–“পৃথিবী”?
কে ভালোবাসার ঘূর্ণাবর্ত ছড়িয়েছিলো শিরায় শিরায়?
সে কি কবি নয়!
অথচ,বুড়ো বিজ্ঞানীর দল বলছে–তুমি কমলালেবুর মতো গোল।
কেউ কেউ বলছে–তুমি কিছুটা চ্যাপ্টা;
একটা হাঁসের ডিমের মতো।
ওদের ধারালো শিং দিয়ে তোমাকে গুঁতো দিয়েছে কতবার!
অসংখ্যবার তোমার গায়ে চিমটি কেটেছে নির্বোধের মতো।
বিরক্ত করেছে অতি প্রাজ্ঞ পণ্ডিত সম্প্রদায়;বুড়ো ভাম !
প্রত্যুত্তরে তুমি কিছুই বলো না।
কেবল ফোটাও রক্তজবার মতো গভীর লাল নৈবেদ্য ও হৃদয়।
কাঁটা ভেদ করে যত্রতত্র স্বাক্ষর করো গোলাপে গোলাপে।
রজনীগন্ধার ডাঁটায় উঁচু করে রাখো সব ভোর।
আর বারবার শোনাও চিরহরিৎ কুহু কুহু।
ভূকম্পন
এই নাতিশীতোষ্ণ পাঠ্যক্রমে ;
গার্হস্থ্য-ভূগোলে–
একটা নীতিশাস্ত্র-পড়ুয়া পৃথিবীর শয্যাগৃহে
তুমি পরিবেশন করছো আবহাওয়া-সংবাদ।
সবুজ ওড়নার মতো বৃষ্টি হবে।
এই বার্তা শুনে হেসে উঠলো আসবাব ;
কলরব করে উঠলো পৃথিবী।
কয়েকটা নাশপাতি কেটে প্লেটে সাজাতে সাজাতে বললে-
দ্যাখো, প্রেম ও শুভকামনার বর্ণমালা।
তোমার নাকটা একটু ছুঁয়ে দিতেই নড়ে উঠলো পৃথিবী।
রিখটার স্কেলে তার কাঁটা ঘুরে দাঁড়ালো ৩.৫ ।
একটা মৃদু ভূকম্পন হলো।
জলজ , একজন
এই যে ! আপনাকে এত রোদে পেলো !
এত নদী বেগবতী আপনার চোখে
বাসা বেঁধে সংসার করে গেলো
সমস্বরে ।
জলে পাওয়া
জলজ একজন
নদীর উরুর কাছে
বসন্তের
কানে কানে
বলেছেন বেহায়া কোনো কথা !
তাই এত মধু !
এত হরষিত কানাকানি ।
ঘর করছেন এই সব সবুজের সাথে ।
একজন রোদে পাওয়া রোগী !
ভূমিষ্ঠ
একটা প্রচল ব্যাপ্তি
ভূমিষ্ঠ হতে দেখলাম
সূর্যোদয়ের সমান অন্বয় নিয়ে।
ভেতরটা জারুল ফুলের মতো বিভাযুক্ত।
থোকা থোকা সৌন্দর্য ছাড়া যেন অর্থদ্যোতনা নেই কোনও।
কী নাম দেবো?
ভোর বললে সম্পূর্ণ বলা হয় না।
আনন্দ কিংবা উত্তাপেও এর লক্ষ্যার্থ ধরা পড়ে না।
প্রতিটা শব্দই হোরাসের মতো অনুভবে পূর্ণ।
আমি এখনই প্রার্থনা করবো।
তোমার লাল শাড়িটার মতো বাসনা অটুট থাকুক।
মায়েরা যৌবনবতী হোক।
এইসব উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়ুক মিনার্ভার পৃথিবীতে।
প্রচারক
বহুদিন প্রচার করেছি আর্তনাদ।
অসুখী ছিলাম;
কারখানা বানিয়েছিলাম।
একটা কমলালেবুর পাশে শুশ্রুষার কানাকানি স্থাপন করিনি।
বড় মূর্খ ছিলাম!
বহুদিন প্রচার করেছি হাহাকার।
অসুস্থ ছিলাম।
সন্দেহের দোকান খুলেছিলাম।
একটা সূর্যের পাশে ঘরবাড়ির নিত্য সম্পর্ক বিস্তৃত করিনি।
বড় অদক্ষ ছিলাম!
মীমাংসিত পাণ্ডুলিপি
একবার পুরো একটি সন্ধ্যা বিছিয়ে দিলে তুমি
জামদানির মতো।
পৃথিবী বিছানার মতো সমতল হলো।
নামলো অক্ষয় প্রণোদনা।
লোকেরা জেনে গেলো–
এমন নিবিড় উর্বরতা আছে শুধু প্রেমে।
সেই সন্ধ্যায় মিশেছিলো
হাজার রঙের ছায়া,
একটা পরিবর্ধিত গুঞ্জরণ,
একটা পরিমার্জিত কলরব,
অরণ্যের একাগ্রতার মতো তিনফর্মা গৌরব।
এই দ্বিধাহীন প্রেমে ম্রিয়মাণ জঙ ক্ষয়ে পড়ে।
আমি এই তাবৎ রূপক তোমার ওড়নায় ঝুলিয়ে দিয়েছি।
একবার অর্ধস্বর যুক্ত একটা সধবা উচ্ছাস বিছিয়ে দিলে তুমি
একছড়া ধানের মতোন।
দৃশ্যমান হলো সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের সর্বশেষ নমুনা।
পৃথিবীতে কোটি কোটি বাসগৃহ হলো।
লোকেরা জানলো–
একটি শ্যামল গ্রহের পূর্ণাঙ্গ জ্যামিতি।
এই সংবাদ জেনে ছুটছে রোহিঙ্গারা।
এর লিপ্যন্তর ছড়িয়ে পড়বে সাড়েতিনহাজার ভাষায়।
আমি তোমার চোখে গ্রথিত করেছি মানুষের সর্বকামনার দ্যুতি।
ছলছল করে উঠছে অশ্রæ ও আশ্বাস।
একটি শান্তিচুক্তির মতো
একটি উজ্জ্বল ব্রার মতো
একটি আকাক্সিক্ষত চুম্বনের মতো
নেমে আসছে রাত।
তোমার রেশমি চুলের কসম,
আমি পৃথিবীতে এখনই নামাবো
একটি মীমাংসিত পাণ্ডুলিপির মতো ভোর।
শিষ্যদের প্রতি নবি মুহম্মদ : ৩
শিষ্যবৃন্দ ,
আমি কি তোমাদের অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনবো না ?
যেমন সূর্য দিনকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে ।
শোনো, তোমরা ছড়িয়ে দেবে আনন্দ ;
সরলতা, ঔদার্য আর কবিতার মতো সুমিষ্ট ভাষা ।
শিখবে, মা যেমন স্নেহ উজাড় করে দেন সন্তানের জন্য ;
পাখি যেমন তার ছানাকে রক্ষা করে শত্রæর ছোবল থেকে;
– আল্লাহ ভালোবাসেন তোমাদের মায়ের চেয়েও বেশি ।
তিনি খুবই কাছে ।
তিনি পার্থিবতা কল্যাণময় করেন ।
বলো, প্রভু , আমাদের রোদের মতো দুনিয়া দান করুন ।
বলো , শস্যখেতের মতো করুন পরকাল ;
আমাদের কোনো কাজ আপনি বিনষ্ট করবেন না ।
আমাদের স্ত্রীদের আমাদের জন্য চোখের প্রশান্তি করুন ।
আমাদের আবেগময় করুন । পাতার মতো সবুজ করুন।
আমাদের মধ্য থেকে নিষ্ঠুরতা উঠিয়ে নিন ।
যেমন পায়ে কাঁটা বিঁধলে তুলে ফেলি কাঁটা ।
আমাদের চোখ শীতল করুন ।
আমাদের সন্তানদের আমাদের জন্য আনন্দ হিশেবে নাজিল করুন ।
আমাদের আহল, পরিজনদের অগ্নি থেকে রক্ষা করুন ।
আমাদের আপনি অগ্নিকূপের জ্বালানি কাঠ করবেন না ।
আপনি আলো দিন ;
যেমন আলো দেয় আপনার সূর্য ।
যেমন স্নিগ্ধতা দেয় আপনার চন্দ্র ।
যেমন ঢেকে রাখে আপনার অফুরন্ত করুণা ও দয়া ।
বলো , হে প্রভু ,
আমাদের প্রতিফল দিবসকে আমাদের জন্য একটি খেজুরের মতো ফলপ্রসূ করুন ।
শিষ্যসকল , সে নিঃস্ব হবে
যে গালি দেয় , অধিকার নষ্ট করে ।
সে নিষ্ফল হবে, যে কাউকে হত্যা করবে ।
যে হিংসা ও ঘৃণার জাল বুনবে , তার সৎ কাজ বিফলে যাবে ।
কেউ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না ।
কেউ হতাশার পল্লবে নিজেকে আচ্ছাদিত করো না ।
ফসল ফলানোর মতো কাজে মনোযোগী হও ।
আর ইমান বৃদ্ধি করে নাও ।
যেমন লোকেরা ব্যবসায় লাভ বৃদ্ধি করে ।
যেমন লোকেরা কৃষিজমি বৃদ্ধি করে নেয় ।
আমি কি তোমাদের আনন্দের সংবাদ দেবো না ?
কমলালেবু
এই এক বিকল্প রোদের সমান হয়ে যাচ্ছে কমলালেবু ;
এই এক প্রযোজিত দুপুর বসে আছে শিল্পকলা হয়ে।
ওঁ মধু ! ওঁ মধু!
অমৃত সমান এই আনন্দ-ধ্বনি ।
এই ইহলৌকিক রক্তজবা ।
পুবে ও পশ্চিমে অশ্রকণা ;
উত্তরে -দক্ষিণে হাহাকার ।
ডানে -বামে যুদ্ধ, রক্তপাত ।
উপরে ও নিচে নিষাদ, বিষাদ ।
এইখানে আরও কমলালেবু ;
এইখানে সুগভীর রোদ ।
এইখানে সান্তনা , শুশ্রুষা ।
এইখানে বহমান বোধ ।
এই এক বিকল্প রোদের সমান হয়ে যাচ্ছে কমলালেবু ;
এই এক অসুখের পাশে বর্ণমালা ।
এই এক মানুষের আস্থার দুপুর ।
এই এক অনিবার্য রূপকথা ।
রঙে রঙে পৃথিবীর প্রেম , শিল্পকলা।
ওঁ মধু ! ওঁ মধু !
হে ইভের প্রেমকণা ,
তুমি আরও প্রকৃত কমলালেবু হও ।
ডাকহরকরা
– পিঠে কী বয়ে বেড়াচ্ছো তুমি ?
বেদনার অগ্নিকণা না কি শতাব্দীর সর্পিল দীর্ঘশ্বাস ?
পিঠ বেঁকে যাচ্ছে তো !
আহা ! আহা !
ওহে ভারবাহী , অশ্রপাত !
: পিঠে মানুষের ঘামলিপি ; প্রেমশস্যদানা ;
গেবের হাঁসের মতো সহজ বিজ্ঞান ।
হৃদয়ের সবুজ জাইলেম আর অন্তর্ভেদী চক্ষুসমগ্র ।
— আর কোনো সুখবর?
: ঝোলার ভেতরে সাতশো কোটি উচ্ছ¡াস।
রোদ হয়ে নেমে আসবে ওরা ;
সার্বভৌম হবে।
বলো , জিন্দাবাদ । জিন্দাবাদ ।
অস্তিতা
কিছু নীতিপরায়ণ মেঘ জলকণা বইবে আনন্দে।
কিছু সান্ত¡না শাদা অ্যাপ্রোনপরা দিদিমণির সমগোত্রীয়।
অহর্নিশ বোন বোন ভালোবাসা বিলি করে।
কিছু বুটিদার একাগ্রতা মায়ের স্বভাবে পাশে এসে বসে।
কুশল জিজ্ঞেস করে;
কাঁধে রাখে হাত।
এসব অস্তিতা আছে চারপাশে;
স্নেহে
মমতায়
উদার আবেগে।
আমি যত্নে-প্রযত্নে ধনী হয়ে উঠি।
ভ্রমণ
ভোর দেখতে যাবো ।
দেখে ফেলি মানুষের কোলাকুলি, ধোঁয়া ওঠা চায়ের দোকান ;
কত কানাকানি,বাজারদর ।
বেঁচে থাকা মানুষের কর্মব্যস্ততা ।
রোগশোক,ব্যাধি ।
করুণ চোখের ছলছল কান্না ।
রোদ লেগে স্বর্ণের মতো ঝলমল করছে প্রতিটি দিবস ।
যেন “দৈনিক ইত্তেফাক” ; যার এক একটি পৃষ্ঠা জুড়ে মুদ্রিত ভবিষ্যৎ ।
লাল ও কালো অক্ষরে দুর্ঘটনা অতিক্রম করে হেসে উঠছে সূর্য ।
যেন তোমার বিবাহবার্ষিকীর শাড়ি ;
যেন তোমার গন্তব্য মিশেছে অপরিহার্য উদয়ের দিকে ।
ভোর দেখতে গিয়ে দেখি ফেলি শাদা শাপলা ভরা আনন্দ ।
মানুষের মিছিল ।
জনতার উত্তাপ ।
মধ্যবিত্তের উপার্জন ।
গায়ের ঘামের গন্ধ ; যেন তৈরি হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর আতর ।
যেন লোকেরা চলছে পবিত্র কাবায় ।
যেন আজ হজ ।
ভোর দেখতে গিয়ে দেখি ফেলি মানুষের আজন্ম আনন্দ-ধ্বনি।
সূর্যের সাথে হেসে উঠছে হৃদয় ।
সভ্যতা
তোমার রোপণ করা একটি ফুল গাছে ফুটেছে ফুল ।
আর পাশের বাড়ির দিকে যাচ্ছে সুবাস ।
বন্ধ দরজা-জানালা খুলে যাচ্ছে
একের পর এক ।
তারপর পৃথিবীতে আহ্নিক গতি বার্ষিক গতি হলো ।
তুমি ফুল ফোটানোর মন্ত্রে কত দীক্ষা নিলে ।
তোমার প্রতিবেশী হলো ।
পৃথিবীর কত রাষ্ট্র হলো ।
প্রতিটি রাষ্ট্রের অনেক ফুলবাগান হলো ।
ফুলের ভেতরে পোকা ঢুকলো ।
আর্তনাদ ও কান্না
অসুখ ও অসহায়ত্ব গলাগলি করলো ।
ফুল দলিত-মথিত হলো ।
তারপরও এখানে ওখানে ফুলের বন্দনায় শিহরিত হলো মানুষেরা ।
প্রেম গ্রীবা উচ্চকিত করলো রাজহাঁসের মতোন ।
একে আমরা সভ্যতা বলি ।