spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাদেশপ্রেমের ১০ কবিতা : মোহাম্মদ নাসির

দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : মোহাম্মদ নাসির


রাষ্ট্রীয় পতাকা

পাখিদের কোনও মালিকপক্ষ নাই।
কোনও শ্রমিকপক্ষও নাই—
ফুলেরা একাকী ফোটে।
মাছেরা শিখে নেয় সাঁতার।
তবুও মানুষ আশরাফুল মখলুকাত—
কেননা মানুষ ব্যতীত সাধ্য আছে কার
আগুন জ্বালাবে!

তবুও প্রত্যাশা—
একদিন নতুন এক রাষ্ট্র হবে পৃথিবী।
কৃষক হবে রাষ্ট্রের রাজা—
শ্রমিক হবে প্রধান সেনাপতি—
মুচিরা সংসদে বসে সেলাই করবে ছেঁড়া মানবতা।
বারুদের কারখানায় চাষ হবে গোলাপ—
মুদ্রা নয়; প্রেম হবে বিনিময়ের একক মাধ্যম।

জাতিসংঘের পতাকার চেয়ে— পবিত্র;
শরীর বেচে শরীর ঢেকে রাখা পতিতার
পাজামা হবে রাষ্ট্রীয় পতাকা।

মৃত্যু প্রসবের বেদনায় পোয়াতি জীবন

সারারাত মাকড়সার জালে বোনা ফসল
ভোরবেলা তুলে নিয়ে যায় গোপন চড়ুই—

আমি দরিদ্র কৃষক—
আবাদি জমি বেঁচে চাউল কিনে খাই

কোনোভাবে বিছানাটা গুছিয়ে নিলে—
মাথার উপর ভেঙে পড়ে আস্ত বাড়িটাই

ভাতের বদলে নিজের গলা টিপে দেখি—
কতদূর ফুটে আছি ডালে
শিকড়কে বেদনা ভেবে বৃক্ষের হাহুতাশে

ডাস্টবিন

প্রিয় প্রেমিক ও রাজনীতিবিদগণ—
যার যার প্রেমিকার বুকে হাত রেখে দেখুন
আরও অসংখ্য প্রেমিকের হাত।
ব্রা‘র হুক খুলতে না পারলে—
টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলুন
ফুল ছিঁড়বেন না।

এবং আপনারা—
যারা প্রকাশ্যে মিছিল করেন
‘আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’
অথচ গোপনে করে বেড়ান—
ফুল দেখলেই ছিঁড়ে ফেলার নিষিদ্ধ রাজনীতি
পাখি দেখলেই ছুঁড়ে দ্যান—
বিষাক্ত অর্থনীতির বুলেট
বন্ধ করুন।

আমি তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশপ্রেমিক।
যদি কিছুই করতে না পারি—
ফুল ও পাখিদের জন্যে।
এতবেশি দুর্গন্ধ হবো—
শিকারী রাইফেল ফেলে নাক ধরতে বাধ্য হবে।

সরকারি হাসপাতাল

সে নিজেই অসুস্থ কংক্রিট গাছ
ফুল আছে; ঘ্রাণ নাই
পাতা আছে; ছায়া নাই

দৃশ্যটা এমন—
বাড়ি আছে ঘর নাই
দরোজা খুলে কোথায় যাই

দর্জিরা সব ওটিতে
বাইরে সার্বজনীন সন্ধ্যা
সারারাত বোবা মশার গান—
এখানে চিকিৎসকের চেয়ে
বিনয়ের সাথে লাশ কাটে ডোম—
মাতাল কালাচান

পবিত্র আগুন

খাদ্যের আকাশে পূঁজিবাদী মেঘ—
ঢেকে রেখেছে ‘ঝলসানো রুটি’ সহ সমস্ত দানা।

সুকান্ত দা—
চলো হাত ধুয়ে আসি।
পেয়ে গেছি খাদ্যের সন্ধান।

তোমার ক্ষুধা খাবো আমি
আমার ক্ষুধা খাবে তুমি!
চলো ওঠো, চলো হাত ধুয়ে আসি—
শুকনো হাতে ছুঁতে নেই পবিত্র আগুন।

কিপ সাইলেন্স

হে রাষ্ট্র নীরব হও, শহিদেরা ঘুমাচ্ছে।
ওদেরকে ঘুমাইতে দাও।
ওরা রাত জেগে যুদ্ধ করেছে।

মানচিত্র

মা চিরুনি দিয়ে এমনভাবে চুল আঁচড়ায়
দেখে মনে হয় কড়াই ভর্তি কালো শাক
আমি প্লেট ভরে সাদা ভাত নিয়ে দাঁড়াই

মা হেসে ওঠে
আমি হাসিমাখা ভাত খেয়ে ঘুমের স্কুলে যাই

ঘুমের ভেতর স্বপ্নকে শিক্ষক মানি
আমি ভুল করা ছাত্র
পৃথিবীর মানচিত্র আঁকতে বললে—
স্লেটের উপর ভুল করে মায়ের মুখ এঁকে ফেলি

পারমাণবিক ফল

ধীরে ধীরে শহরের সবগাছ কেটে
রোপণ করা হবে কৃত্রিম গাছ
মানুষ এটিএম বুথ থেকে বেরিয়ে—
সরাসরি লগইন করবে অক্সিজেন বুথে
যুদ্ধবিমান উড়ে গেলে, বাতাসে
রেডওয়াইনের পাশে—
শুধু মাংসের চাহিদা মেটাবে পাখি
পারফিউমের ঘ্রাণ উড়ে গেলে যাবে
ফুল ফুটে থাকবে
পাতা নড়বে না
ছায়া পড়বে
পাতা পড়বে না
আলোর প্রতিফলনের সূত্র ধরে
সূর্যে ফিরে যাবে আলোক রশ্মি
মনে করো—
ফুলকুড়ানির দল
কেউ ফলের দাবি জানালেই
ছুঁড়ে দেওয়া হবে বারুদভর্তি বাদাম

সাবধানে থেকো।

গণতন্ত্র

বিশ্বাস করুন গণতন্ত্র আছে
বিশ্বাস আপনাকে করতেই হবে
আমার হাতে বন্দুক
আপনার মাথার উপর অসংখ্য পাখি
বিশ্বাস করুন
চোখ বন্ধ করে টেনে দেবো ট্রিগার
নিশানা নিষ্প্রয়োজন

আননোন সিগন্যাল

দেখা গেল প্রচণ্ড সংকটের দিনে বিদ্যুৎ বিল এসেছে তোমার বেতনের চেয়ে বেশি। ঘরে অসুস্থ মা; তিনমাসের বাড়ি ভাড়া বাঁকি। তোমার পুরোনো মামলার তারিখ এসে কড়া নাড়ছে দরজায়— বৃদ্ধ বাড়িওয়ালা; বাড়ি ভাড়াই যার একক সম্বল। বলো কোনদিকে যাবে তুমি এমন পরিস্থিতি আসে যদি বাগানের সব ফুল দাঁত হয়ে তোমাকে ছিঁড়তে আসে কোথায় লুকাবে তুমি নিজের চোখ ফাঁকি দিয়ে এখন পালাচ্ছ যেমন স্বৈরাচারী অন্ধকারে?

মোহাম্মদ নাসির || আটচালা, নওগাঁ

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
- Advertisment -

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

shahanarabanani@gmail.com on কবিতাগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on কবিতাগুচ্ছ
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on রসূলের (স.) শানে সনেটগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on এক চিমটি মুজিববাদ
--অতনু রায় on কবিতাগুচ্ছ
তনজিম আতিক on কবিতাগুচ্ছ