spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : সাজিদুল হক

গুচ্ছ কবিতা : সাজিদুল হক

অবিনাশী পঙক্তির ঐকিক বেদন

১. আমার যখন বরফের মূর্তি হতে ইচ্ছে করে
সারারাত দাঁড়িয়ে থাকি শূন্যডিগ্রি তাপমাত্রায়

প্রচণ্ড সূর্যতাপকে অগ্রাহ্য করি
যতক্ষণ না গলে বরফ পাথর;

আমি হৃদয়বান পুরুষ হবো, এটুকু বাসনা
আমি না বরফমূর্তি
না মানুষ।

২.খুব সকাল সকাল আমার হাতে তিনটি গোলাপ ধরিয়ে বললে
আমি মানুষ খুনের দায় নেবো না
মহাকাব্যের চেয়ে মহৎকর্ম নেই
রাজনীতির চোরাবালিতে রাখিনি কখনো পা
আমি জ্যোৎস্নাময় রাত
এবং কুয়াশার ভোরে সূর্যোদয় দেখি তাকিয়ে মনভরে
আমি ভালোবাসতে শিখেছি তোমাকে জ্যোৎস্না ও কুয়াশার প্রতিদান থেকে

৩. শীতের চাদরে ঢেকে দিলাম আমার মেহমান ইবলিশকে
যেখানেই যাচ্ছি আমি সে সাথে গেলে অসুবিধে হচ্ছে না
সহযোগী শক্তি হয়ে আমার নানান কাজে হাত লাগায়
এমন বিপজ্জনক একজন সুহৃদ বড়ো কাজের।

৪. তুমি কেমন সুন্দরী গো
গতি নেই আলোতে
জ্বলুনি নেই স্পর্শে
বাঁকা চোখে কই তীর্যক চাহনি?
তোমার নিরুত্তাপ ঠোঁট দেখে দেখে একদিন আমিও হয়ে যাবো নপুংসক;
চন্দ্রগ্রহণের সে রাত আসার পূর্বে
আমি তোমাকে অতিক্রম করে চলে যাই অন্য এক নারীর গন্তব্যে

৫. নদী আমাকে মাঝ নদীতে একা রেখে
চলে এসেছে জনপদে
সেখানে খুঁজে পাবে না তৃষ্ণার্ত প্রেয়সী
যে ছেড়েছিলো এক মধ্যরাতে ঘর
বেগানা পুরুষের জন্য তার কেন কেঁদেছে সে বেলায় মন?

৬. সত্যি বলার জন্য জিরাফ নির্ভয়ে বাড়িয়েছিলো গলা
কোত্থেকে এলো এক দানব
কেটেছে জিরাফের লম্বা সরু গলা
এখানে শুরু গল্পের;

এটাই যাদুর দুনিয়া
হাতে নাও বিস্ময়কর চাবি

৭. আমি সন্তর্পণে তোমার ভিতরে বেড়ে ওঠা দানব
কফিনে শেষ পেরেক মারা হবে
আমাকে দিয়ে;
চেনা আস্তাবলের ঘোড়ার পিঠে
অচেনা এক সওয়ারীকে দেখে
আঁতকে ওঠো না প্রিয়বন্ধু
এতোটা সময় ভ্রুক্ষেপহীন কাটালে ক্রাচে;
জীবন্ত লাশ মৃত্যুঅবধি পড়ে থাকবে হুইলচেয়ারে;
চেয়েছি শুধু ভ্রুণ হত্যার প্রতিশোধ

৮. চেয়েছি রুপোর কৌটা ভরা জল
দিতে যদি বৃষ্টি শুধু
আপত্তির কিছু ছিলো না
তুমিতো রুদ্রমূর্তি ঝড়ে
উড়িয়ে নিলে ঘরের চাল;
খাঁচার পাখি
সারা রাত ভিজে ঠাণ্ডা জলে
ফুটফুটে অন্ধকার
ফুটে আছে চাঁদের কপালে
শিশুটি খুঁজে কাজলা দিদি

৯. হাসপাতালে যায় সুস্থ হয়ে ফেরার আশায়
অনেকেই ফিরে হাসিমুখে
কেউ কেউ না চুকিয়ে লেনদেন
একদম অপরিচিত কোথাও পাড়ি দেয়
যারা ভালো হয়ে ফিরছে সঙ্গী সাথে
তখন নার্সের চোখে মুখে জোনাকির জ্যোৎস্না
মৃত্যুদূত যাকে অজানা পথে নিলো
অবধারিত সে যাত্রায় নার্সের চেহারা দেখতে কেমন হয়

১০. হাত দেখে গণক বলে দিয়েছে ভবিষ্যত
যেন না যাই পাড়ার সুন্দর মেয়েটির কাছে
তার সতর্কবাণী আসেনি কাজে
বাবাও জেনেছে এ কান ও কান হয়ে
মানিনি বারণ
মানেনি নাদান মন
স্কুল যাওয়ার পথে
দাঁড়িয়ে থাকতাম গলির মুখে
রেশমি ওড়নায় হাওয়ায় হাওয়ায় আসবে লীলাবতী;
এসেছিলো সকালে এক পরী
পরীরা মানবী নয়

১১. ডান হাত কতটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে
বুঝে বাম হাতের বেদনা

হাতের আদিগন্ত সমান্তরাল রেখাগুলি আমৃত্যু একাকী কাটিয়ে দেয়
পরস্পর অনাত্মীয় মানুষের মতো
কেউ কারও মুখ না দেখে

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on বাছাই কবিতা
নয়ন আহমেদ on বাছাই কবিতা
নয়ন আহমেদ on ১০ টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ