১.
অন্বেষা
আমি কোথাও যাইনি, শুধু শান্তির কাছে যেতে চেয়েছিলাম।
আব্বা বলেন, শান্তি আগুনের ভেতর বাস করে।
অথচ আগুনে ভয়। মুসা নবীর জিভের মতো আগুনে পুড়ে গিয়েছিল আমারও জবান!
সবাই শিখেছে গুনের নামতা, আমি যোগের। তাই যোগমায়া করেছি নিজের ভেতর ঢুকে।
হয়তো আনন্দে ছিলাম! হতে পারে, নাও হতে পারে। তবুও ভয় কাটেনি,
ভাবনাহীনতাই আনন্দ? জানি না।
যদিও বৃষ্টির রাত
বিচলিত করে না, বরং মনে পড়ে আল্লাহ তার কৃতজ্ঞ বান্দাদের বৃষ্টির শব্দে ঘুম পাড়াতে চান ।
আলোর স্বরূপ অজানা,
কেউ চলে গেলে আহত হই, অথচ তাকে বিচ্ছিন্নতার জন্য জানাতে ইচ্ছে হয় শুভেচ্ছা সংবাদ
ভাবি, যারা চলে যায়, তাদের কেউ শান্তির দেখা পেয়েছে কি না?
২.
আত্মমগ্ন সন্ন্যাসিনীর সঙ্গীত
*
এখনি যেতে হবে অস্তগামী সূর্যের পাঠ নিতে।
টিকটিকি ডাকে, তার নিজস্ব উপযোগিতা আছে শব্দে
বধিরের কণ্ঠে কথা বলার অভিব্যক্তিময় বেদনা ঝরে দুর্ভর পাহাড়ের পতনের মত, কিন্তু কোন শব্দ হয় না
দৃষ্টি ফেরে না, তবু সন্ন্যাসিনী একসময় নিজেই তলিয়ে যায় ছায়ার ভেতর।
জন্মাবধি হাতরিয়ে চলেছে পথ, কিন্তু এতদিনে সমুদ্র শুকিয়ে গেছে, তাই মৎস্যের কোলাহলে জেগে উঠবার অবকাশও নেই তার
— বসে থেকে নির্বান্ধব ক্ষত ও ক্ষতির দায় কারো ওপর চাপানোর প্রয়াস করো না।
সূর্য ডুবে গেলে তার স্রষ্টার কাছে মাথানত করো, প্রনতি জানিয়ে।
আর পাঠ গ্রহণ করো সূর্যের অস্তগামিতা থেকে।
দেখো, এক মনে মন্ত্রোচ্চারণ করেই চলেছে সন্ধ্যা : আহাদ আহাদ।
৩.
সারল্যের বেসাতি
*
বেরিয়ে পড়ার রাস্তা চতুর্দিকে
ফেরার রাস্তা তোমার বরাবর
সমুদ্রও স্রোতের কাছে বাঁধা
তটের বুকে করতে আসে ঘর
আঁধার ছুটে আলোর পিছু পিছু
আলোও নেয় আঁধারে আশ্রয়
বর্তমানই সত্য জানে লোকে
পেয়েও কারো কাটে না সংশয়
প্রেমের তরী ভিড়ে সকল ঘাটে
সর্ব লোকে ওঠে না সেই নায়ে
উঠলে শুধু ডুববে আপন ভারে
নিজেই বাঁধা শিকলবিহীন পায়ে
পেরিয়ে যেতে নৌকা এবং নদী
সাধুর বুকেও কাঁপন ধরে আসে
পরাশের কামের প্রস্তাবনা
ফিরিয়ে দিতে কেইবা ভালোবাসে?
মৎস্যগন্ধা লজ্জা ভোলে নাই
নির্লজ্জ ছিলো না পরাশর
বেরিয়ে পড়ার রাস্তা চতুর্দিকে
আমার রাস্তা তোমার বরাবর
৪
নদীর জন্ম বৃত্তান্ত
*
সামনে তোমার আকাশ খোলা পেছনে বিস্ময়
মিথ্যে নয় তরঙ্গিত সমুদ্র ও জল
আমিও ভেসে এসেছি প্রতীক্ষিত ছায়া
জানিয়ে দেয় ভেতরগত স্নিগ্ধ কোলাহল
মাটির উপর ভিত্তি করে সভ্যতার চাকা
নদীর সাথে ঘুরতে থাকে অগাধ তৃষ্ণায়
তাতেও বিধুর হয় না শরীর শীর্ণ হয়ে কাঁদে
বাড়তি কিছু নেই যেখানে সকলি সাবলীল
সমুদ্রের কাছে এসে নদীর মুখ নত
সুন্দরের সংজ্ঞা ভুলে অবাক হয়ে থাকা
মনের মধ্যে বাড়ে তখন কোন মানুষীর রূপ!
৫
ভাষাবিজ্ঞান
*
ঠোঁট চুম্বন ছাড়া আর কোনো ভাষা শেখেনি ।
যা ঘটার ঘটে গেছে আগেই। মানুষের মৃত্যু উপভোগ্য ও সমাদৃত। ফলে ভড়কে যাওয়ার অবসর নাই। দূরত্ব পদার্থবিজ্ঞানের প্রহেলিকা। তার ফারাক গুছাতে যাওয়ার মতো বোকামি করতে যাব না। আপনার পথে হেঁটে নিজের কাছেই পৌঁছাতে চাই। তবু এই পরমিতি জানি, হাত বাড়ালে হাত ধরতে হয়।
এও জানি, চুম্বনের পর কোনো নারী আর অনাত্মীয় থাকে না
৬.
নাওয়ার
তোমার বুকে গুলি লাগলো। কেউ চিৎকার করলো না। কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো না।
গুলির যন্ত্রণায় নয়, মানুষের অভিব্যক্তিহীন মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার মরে যেতে ইচ্ছে হলো।
গুলি মানুষের থেকে মুক্তি দিচ্ছে ভেবে তার আবিষ্কর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে জানাতে জীবনের ওপারে চলে গেলে।
৭.
সমাদৃত মৃত্যু
*
মৃত্যু যখন ঘুমিয়ে থাকে রাত্রি জাগি একা,
জাগার ভেতর ডুবাও আছে, দেখায় যেমন ভুল
থেকে গেলে বজ্রাহত হয়েই পড়ে নাটাই।
তার থেকে রাত ঘুমেই কাটাও শীতের রাতে ফুল
তুলতে গেলে পাশের বাড়ির মানুষগুলো হঠাৎ
মরণ দেখার মতই যেন মৃত্যুকামী রাতে
ভয়ের জেরেই ছুঁড়বে আঘাত, তেমন কোন ভুলে
জীবন দেয়ার বিপদ ঢেকে আনবে শেষে রাত!
মরবে সবাই জানা কথাই, তাই বলে কি ভয়
থাকতে দিতে হবে না কেউ তেমন করে রাজি?
মৃত্যু যদি পালিয়ে বেড়ায় মৃত্যুকামী থেকে
তখন জীবন কেমন ভালো বুঝবে অবশেষে
তাই বলি কি ঘুমিয়ে থাকো, কাঁথায় মোড়ে মাথা
শুনতে পাবে পাখির ডাক ভাঙছে যখন বাসা!
৮.
ফলস পার্সেপশান
*
প্রজ্ঞা নয়, প্রেমই টেনে এনেছে তোমাকে।
নিজেকে তলিয়ে দিয়েছ অতলান্তিক সাগরে। এবং এমনভাবে যে, সে বিষয়েও তুমি বেখবর।
হে অর্বাচীন প্রেমিকা আমার, মৃদু পদছাপ মুছে যায় পথের ধুলোয়। কিন্তু এমন অনপনেয় চিহ্ন রেখে যাচ্ছ বুকে– কেবল মৃত্যু পারবে তাকে ঢেকে দিতে।
তুমি আবারও প্রেমে পড়বে, তীব্র কোলাহলে, খুঁজবে নতুন গন্তব্য। অথচ তুমি বারবার একই ঘাটে ডিঙা ভেড়াবে।
সাগরের বেলাভূমিতে কখনো তোমার হাত ধরে হাঁটা হবে না আমার।
যতবার তুমি সমুদ্রে পা ভেজাবে ততবারই তলিয়ে যাবে আমার ভেতর।
৯.
দরজা খুলে দাও, অর্বাচীন
শুভ্র, পেয়েছেন তো আমাকে –এই কথা বলেই সহসা
চোখ নামিয়ে নিলে, বিমুঢ় আমি
সুর ভুলে গাইতে থাকলাম সহজিয়া
সঙ্গীত ;–অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে দেখতে পেলাম ক্ষরণ তোমার ভেতর, সাজা
পেতে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি। ওগো বরারোহা,
তুমি কখনো গাওনি কিংবা করনি পূর্নতাসন্ধান।
সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিলো শূন্যতার, যেন তুমি সহজ কোনো পাতা,–ভালোবেসে সমৃদ্ধ হও, অস্তিত্ব লোপাট হয়; অথবা
ফুটে ওঠো অবচেতনার রূপ ধরে, যেভাবে বাতাস
বয়ে চলে কিংবা রক্ত প্রবাহের দিক আমাদের গতাসু
জীবনের পরিনতি ডেকে আনে। তার আগে আনে প্রেমিকার উষ্ণ বুকে মৃত্যুর মতো ঘুম।
১০
দ্বিধা নয়, স্বীকারোক্তি
▪️
ভালো না বেসে আজও কাউকে চুমু খাইনি।
–নিজের সঙ্গে এইটুকু সততা রক্ষা করেছি
অনেক দিন কেটে গেছে। পাখিদের সঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছি অনেক বেলা।
ভোরের আলোয় প্রস্ফুটিত দ্বিধা কাটিয়ে যখন মেলে ধরো অপার তোমাকে
নিজেকে অসহায় লাগে
সম্ভাবনাহীন প্রতিটি দিন কত দোদুল্যমান
তবু আমরা উজ্জ্বল, তার অধিক বিভা নিয়ে আসে আমাদের হাসি
পাখিরা জাগার আগে তার সুর ভালোবাসি
তোমার কাছে কেন এসেছি? এমন জিজ্ঞাসার জবাবে বলি, তোমাকে ছাড়া আমার গত্যন্তর নাই
তোমার চুম্বনগুলো ছেলের কপালে তুলে দিয়েছি।
মাঝরাতে ঘুম ভাঙে, পীঠ লেপ্টে যায় ঘামে
তখনও ভাবি, আমার প্রতিটি মেয়ের নাম রাখব তোমার নামে
কয়েকটা পড়লাম। বড়ো কবি হয়ে ওঠার আভাস আছে।