সেজদাকে চিঠি
সেজদা, তোর মনে আছে বাবার রেখে যাওয়া সেই বইটি?
আমার বইয়ের আলমারিতে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না…. বাবা বলেছিলেন দাদিমার যত্নে রাখা সেই বই, তাঁর অকালপ্রয়াত শিশু পুত্রের, ১৯১৬ সালে যার জন্ম এবং ১৯২৬-এ বাবার জন্মের আগে অকাল প্রয়াণ— বইয়ের প্রথম পাতায় একটা অস্পষ্ট আবছায়া — বাবা বলেছিলেন দাদিমার কান্নার অশ্রু ওই দাগ! ‘কৃষিগাথা’ নামের সেই শিশুপাঠ্য বইটি কতবার আমরা নাড়াচাড়া করেছি আমাদের ছেলেবেলায়।..
এখন বইয়ের ভিড়ে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রামের বাড়ি, ডালিমতলার ছায়া.. দুপুরের রোদ.. এক একটি চৈত্রমাস …. আর তোর ছবি আঁকার খাতায় জেগে থাকা ‘সোনার তরী’।
সেজদা, তোর কাছেই কি আছে সেই বই? যদি থাকে কী যে ভালো হয়.. একশো বারো বছরেরও বেশি পুরনো সেই বই বাবা রেখে দিয়েছিলেন, আমি রেখে দিয়েছিলাম তুই রেখে দিয়েছিলি, তারপর ভিড়ের ভিতরে, অপ্রয়োজনের ভিতরে কোথায় হারিয়ে গেল! যদি তোর আলমারিতে থাকে একবার আমাকে পাঠাস
শুধু ছুঁয়ে দেখে নিয়ে আবার তোকে পাঠিয়ে দেব।
কত বড় একটা দুপুর
কত বড় একটা দুপুর আমাদের পাড়ায় এসেছে
অনেক দূর থেকে আমরা তাকে দেখতে পাচ্ছি
একটা কেবল শূন্যতার রাজভাণ্ডার তার মাথায়..
সে হেমন্তকে বলেছে এখন যাও, তোমার ঘুমের সময়…
সে বসন্তকে বলেছে ফাল্গুনের বনে বনে তোমাকে দেখে এলাম আসার সময়..
এই তো তোমার হারিয়ে যাওয়া..
তার ভাণ্ডার ছড়িয়ে দিচ্ছে ধূলিধূসরতায়
কত বড় একটা ঝাঁ ঝাঁ দুপুর
তার ঘুম নেই, নাওয়া খাওয়া নেই
শুধু পাড়ায় পাড়ায় তার সুদূর বেড়াতে আসা।
একটি জামগাছ একটি প্রাচীন অশ্বত্থ
চোখে মুখে জল দিয়ে তার জন্য বসে আছে।
আমাদের পাড়া ছাড়িয়ে সুদূর এক পুষ্করিনীপাড়ে
তৃষ্ণার্ত তার ছায়া ভাসছে
পাড়ার ছেলেরা সবাই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে
উৎসবের মেজাজে
তারা এখন দুপুরের কাছে যাবে।
উপহার
তোমার পাঠানো শার্ট খুব সুন্দর গায়ে হয়েছে
এত আরামপ্রদ সহজ অনায়াস—
একমাত্র তুলনা হতে পারে
পুরনো পোশাকের সঙ্গে :
পুরনো পোশাক, কেউ জানেনা, কী সঙ্গোপন সুখ
এখন তুমি কাছে নেই, দূর থেকে, অনেক দূর থেকে ভেসে
আসছে তোমার দূরভাষ
একাকী বাড়িতে বেজে উঠছে নিঃসঙ্গ রোদ হয়ে, শূন্য
আকাশ হয়ে
একা থাকলে বাড়ি আর বাড়ি থাকেনা
এই শূন্যতা তোমার উপহার হয়ে বাজে…
যাওয়া
বিছানায় ছড়ানো ছেটানো বইপত্র.. লেখার টেবিল কাঁপছে
সন্ধ্যা মোমের আলোয়, ক্রমশ গলে গলে পড়ে…
পেনসিল গড়িয়ে যাচ্ছে মেঝে জুড়ে
ধোঁয়ায় বিলীন সাঁঝের লোবানকাঠি.. মায়াবি সুগন্ধে
কত লোক আজ তোমার বাড়িতে এসেছে
শুধু তোমার চোখ ঘন হয়ে আছে এক সুদূর বন্ধুতায়..
তুমি চলে যাবে বলে বাঁশগাছ নুয়ে আছে পানির ছায়ায়..
কবিতাগুলো ভালো লেগেছে। এমন কবিকেই তো আমি খুঁজছি।