হে বেইলি রোড
কি বাগান সাজিয়েছো হে বেইলি রোড
রমনার হৃদয় থেকে কতদূর তোমার উদর
কতদূর তোমার অগ্নিলাভা প্রাসাদ
তারুণ্যের ঝলসানো চোখ দিয়ে কোন রেসিপি করো হে পাষাণ রেস্টুরেন্ট। মানব-গ্রিল বিক্রি হবে কি কাচ্চির উদ্যানে!
তোমার পাঁজর থেকে জীবন-পোড়া গন্ধে
শোকাহত আঠারো কোটি শ্বাস
প্রতিটি বাঁকে বিবেক বর্জিত সিগনাল জ্বলজ্বলে
ডান বাম হলে কি করে গন্তব্যে যাবে পথিক
এমনিতেই মানুষের বুকে বুকে লেলিহান
সারাটা দিন কিংবা রাতভর দগ্ধ হতে হতে
ফুসফুস এখন অগ্নিগর্ভ। প্রতারণার জালে ছত্রিশ কোটি পা কী ভীষণ দিশাহীন। তার ওপর তুমি ক্ষুধার্ত মুখে সেঁটেছো আগুনের লোকমা
মুহূর্তে এত প্রাণ কাবাব হলে
কী করে সামাল দেবে মানুষ!
তুমি কি জানো একেকটি হৃদয়ের কত দাম
কত পৃথিবী নীলাম দিলে মিলে একটি হৃদয়
সমগ্র মানব জাতির হৃদয়কে মুষ্টিতে রাখো
তারপর দেখো- আটশ কোটি হৃদয়ের একটিই ঘর, একটিমাত্র বসতি। জুলুমে একটি প্রাণও যদি নিভে যায়, সমস্ত প্রাণ নিভে যাওয়ার শামিল!
বুঝতে পারো একেকটি হৃদয় কতটা মূল্যবান!
হে মানব কাবাবের বেইলি রোড
তোমার লেলিহানে অশ্রুসিক্ত বাংলাদেশ!
তবুও স্বপ্নের কথা বলি
এক হাতে স্বপ্ন আরেক হাতে মৃত্যুর নিশান
স্বপ্ন ছাপিয়ে নিশান উঁচু হয়ে উঠেছে
একটি জাতির আকাশ কাফন ঢেকে দেবে
কে জানতো
জীবনের চেয়ে মৃত্যু কেনো এত সহজ
কেনো মানুষের মানচিত্রে উড়ছে
অন্ধ রাজনীতির পতাকা। অথচ কোনো
পতাকাই আর মানুষের স্বাধীনতার কথা
বলে না। কোনো সংবিধানই তোলে না অধিকারের আওয়াজ
তবুও স্বপ্ন দেখতে হবে!
ছুটতে হবে স্বপ্নের দিকেই-
ধরুন রোদের ভাগ ছায়ার হিস্যা বৃষ্টির আয়োজন
রাত্রির অধিকার এবং একটি স্বাধীন সকাল।
সমান অধিকার না হোক অন্তত: অধিকারে সাম্য জরুরি!
ক্ষমতার রোষ যদি কণ্ঠ খেঁচিয়ে দেয় তাকে কি করে বলি মানবিক। শোষনের জ্বর যদি অতিক্রম করে পারদ কিংবা উত্তাপ যদি হয়ে ওঠে আগুন, তাকে দমানোর কোনো গণতান্ত্রিক টেবলেট নেই।
তবুও স্বপ্নের কথা বলি
দেখি সব বাজার দামের আগুনে ঝলসানো
চোখে তীব্র মৃত্যুর ফণা। স্বর-রুদ্ধ গুমোট তাণ্ডব। মানুষের মুখ থেকে খসে পড়ছে জীবনের নুন!
একবার সবজির হাটে দেখো-
ধোপদুরস্ত পোশাকের ভাঁজে কীভাবে উঁকি দিচ্ছে দারিদ্র্যের চোখ। কীভাবে ভেতরের ক্ষয় বাইরে ঠেলে অকাল বার্ধক্যের ছাপ! চোখের ভেতর চোখ পড়লেই দেখবেন- কালো ছায়ার ধূম। দেখে মনে হয়- সমাজটি বড় অচেনা!
তবুও খোঁজো নতুন পথের সন্ধান। কেননা স্বপ্ন মরে যাওয়া মানেই নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নয়!
রুয়ে দাও নতুন স্বপ্নের বীজ!
আকাশ দেখে
আমার কেনো আকাশ দেখে মন ভরে না
দৃষ্টি দিলে একটুও আর চোখ সরে না!
ইচ্ছে করে, ইচ্ছেগুলো ছড়িয়ে দিতে
মস্ত আকাশ বুকের ভেতর কুড়িয়ে নিতে।
তুমি যখন আকাশ নিয়ে ভাবতে থাকো
দূরের আকাশ বুকের কাছে আনতে ডাকো।
একটি বুকে সাতটি আকাশ লুকিয়ে রেখে
মনকে তরুণ তাজা করো জোসনা মেখে।
আমি তখন আকাশ নিয়ে খেলতে থাকি
আমার সাথে তুমিও আজ খেলবে নাকি!
মধ্যরাতের আকাশ দেখে চমকে ওঠা
অজস্র সেই তারায় তারায় একলা ছোটা!
রাত সরিয়ে নামবে যখন ভোরের নদী
নতুন দিনের খুলবে দুয়ার শেষ অবধি।
চোখ- নদীতে আকাশ যখন ডুবতে থাকে
হৃদয় বিনে কে আর টেনে তুলবে তাকে।
বুকের ভেতর রাখলে তুমি রাখতে পারো
নির্জনতায় জড়িয়ে রাখো স্বপ্ন আরো
অন্ধকারে দেখবে যদি দেখবে তখন
নিঃশব্দতায় জোনাকিরা জ্বলবে যখন।
একলা হয়ে আকাশ দেখো একটু সময়
দেখো কেমন রঙের খেলা আনন্দময়!
আকাশ নিয়ে ভাবতে গেলে বিস্মিত মন
আকাশ কি আর ছাদের মতো যেমন তেমন!
মনের ভেতর মনটা যখন যখন দুখী
তখন তখন মন হয়ে যায় আকাশ-মুখী।
সমকালীন ঘটনা অবলম্বনে এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষিতে রচিত চমৎকার তিনটি কবিতা পড়লাম প্রিয় কবি জাকির আবু জাফরের। অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ কবি
সময়ের উৎকৃষ্ট চিত্রকল্পময় কবিতা! প্রতিটি শব্দ তুলে ধরেছে ঢাকা শহরে বসবাসরত মানুষের বর্তমান সময়ের অসহায়ত্ব, হতাশা এবং আশা নিরাশার দ্বন্দ্ব ! শুধু তাই নয় সারা পৃথিবীর মানুষের আর্থ সামাজিক , রাজনৈতিক প্রতিচ্ছবি এখানে উপস্থিত । হে বেইলি রোড পড়ে যে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলাম সেখান থেকে তবুও স্বপ্নের কথা বলি পড়ে চমৎকার ভাল লেগেছে ! শেষ কবিতাটি আকাশ দেখে পড়ে একেবারেই সব বেদনা মুছে যায়।