spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাসাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ

সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ

বিকল্প পৃথিবী

অবয়ব জুড়ে তোমার মধ্যাহ্ন- বিরতি।
তারপর যতিচিহ্ন ।
কমা , কিছুটা বাঁকানো —
যেনো একটু বেশি ঝুলে আছে বৃত্ত বরাবর।
সেমিকোলনের মতো একটু থেমে নেমে গেছে —
বামে ; প্রণয় সংকেতে আবহসঙ্গীত দুলছে
নাকফুল সাদৃশ্যে ।

এই দৃশ্যে বাতাস অস্থির -চিত্ত ।
বাক্যসব ভুলে আছে অর্থবহ নির্মাণ- রীতি।

আর ডান ও বাঁ দিকের মাঝ বরাবর উঠেছে
সুঢৌল সূর্য ;
আলোকিত এই চরাচর।

বিকল্প পৃথিবী এক–
মৃদু তাপ সঞ্চারিত হয়।

১৮ অক্টোবর ২০২৩

শাশ্বত

এখানে রোদ ওঠে ছন্দে দুলে–
জলজ ঘ্রাণ লেবুর রঙে ভাসে।
মায়ের চোখের মতো দৃষ্টিপাতে–
শুকায় অশ্রু ছলনাকাল ভুলে —-

এখানে নেই বিষাদ-ভরা গাড়ি —
বৈয়াম-ভরা ছিলো প্রণোদনা।
এখনও তাই বইছে রাশিরাশি —
চোক্ষুভরা স্নেহমধুর বাড়ি।

বেণীকরা বিকেলগুলো রোজই–
মৃদু ছায়ায় সভা করে; বসে।
হাওয়ারা তাই উত্তাল , সবুজ।
প্রেম এখানে করছে সুরের খোঁজই।

নদীর নামটি সন্ধ্যা, —- ঢেউ লাল।
ভালোবাসা ঘাসের মতো বোনা।
হাঁসগুলো যায় মন্দাকিনির দেশে।
এখানে নেই বিষাদ বা আকাল।

বোনেরা সব পরির দেশের রোদ।
চম্পা গাছে ফোটে অহর্নিশ —
গ্রামগুলো দুপুর-রঙা; খাঁটি।
চিরল চিরল পাতায় ছাওয়া বোধ।

ভাইয়েরা সব চম্পাবতীর ব্রত–
মেন্দিপাতার অন্তঃস্থ রঙ, –মাখা।
চুলের ক্লিপ; নিবিড় পরিপাটি —
শাশ্বত স্বর , — স্বর্ণ- শ্যামল স্তত।

৯ জানুয়ারি ২০২৪

ফিলিস্তিনের শিশুটি

সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে এসেছে। ফিলিস্তিনের শিশুটির একটি আঙুল কাটা হয়েছে এইমাত্র।
রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে।
সন্ধ্যার সাথে মিশেছে তার কিছুটা।
কালো আর লাল মিলে সন্ধ্যাটা হয়েছে খয়েরি।
শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর আরও একটি আঙুল কেটে ফেলা হলো।
অচেতন হয়ে গেলো শিশুটি।
সৈন্যরা হাততালি দিলো।
একপ্রকার অদ্ভুত আনন্দ হলো।
তারপর ভোর হলো।
তারপর পরপর তিনটি আঙুল কাটা হলো।
একটা চোখ নষ্ট করে দেয়া হলো।
শিশুটি বোধহীন পড়ে রইলো।
তাকে যখন উদ্ধার করা হলো তখন সূর্য উঠেছে।

শিশুটির লাল রক্তের সাথে সেই সূর্যের লাল মিশে যাচ্ছে পৃথিবীতে।

১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

চিত্রাংকন

শিশুটি রঙ পেন্সিলে আঁকলো আকাশ।
মাঝ বরাবর সূর্য।
অমনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে
কিচিরমিচির ডাকে পূর্ণ করে তুললো।
আঁকলো কয়েকটা গাছ।
তারপর একটা গ্রাম।
গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছোটো নদী।
ধানের খেত।
কয়েকটা ঘরবাড়ি।
প্রাত্যহিকতা।
সামান্য এইসবে দৃশ্য আঁকতেই তৈরি হল

পরিবেশ বিজ্ঞান।

ধীরে ধীরে একটা পৃথিবীর রূপ নিলো।
কতো সভ্যতা উঁকি দিলো শিশুর তুলিতে!
তারপর ইহুদি সৈনিকের বন্দুক এঁকে ঘুমিয়ে পড়লো শিশুটি।

১২ জানুয়ারি ২০২৪

রঙ

রঙ আছে সকালের ;
সে কেবল শুভ্রতা ছড়ায় ।
ভোর কি চালতা ফুল?
খোঁপাবাঁধা পার্থিবতা নিয়ে আসে।
মাশাল্লাহ ! মাশাল্লাহ !
রঙ আছে উজ্জ্বল ভাতের ।
রঙ আছে প্রমত্ত ক্ষুধার ।

অগ্নিফুল জবা হয়ে ফোটে।

জুইরঙা ভাত তাই উচ্ছ্বাস ছড়ায় ।
মাশাল্লাহ ! মাশাল্লাহ !
ভালোবাসা লাল গোলাপের মতো
উদ্দীপনা পছন্দ করে।
বিপ্লব সবুজ।
মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ!
উঃ ! আঃ! আনন্দের মতো যৌনফুল সুবাস বিলায়।
মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ!

৭ অক্টোবর ২০২৩

আশ্রয়

বলো, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের পালনকর্তার।
বলো, আমি কল্যাণ কামনা করছি মহাজগতের সৃষ্টিকর্তার।
বলো, আমি আত্মগোপনকারীর অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ চাই।
বলো, কুমন্ত্রণাকারীদের কুফল থেকে নিরাপদ দূরত্ব চাই।
সহজ ও নরম আলো চাই।
উদার ভোরের মতো পার্থিবতা চাই।
ওহে জগতের প্রভু,
মানুষ ও জিনের অকল্যাণ ও মন্দ থেকে রক্ষা করুন।
সব রকমের শয়তান ও দুষ্টুদের থেকে দয়ার চাদরে ঢাকুন।

বলো, রাতের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।

বলো, আমি শরণ নিচ্ছি প্রভাতের পালনকর্তার।
বলো হে মানুষ, আমি সূর্যোদয়ের মতো বিভা চাই।
উচ্চারণ করো, আমি বহুরূপী হিংসা থেকে পরিত্রাণ চাই।

বলো, আমি শস্যসম্ভবা খেজুর বৃক্ষের মতো পরকাল চাই।
বলো,আমি মানুষের ইলাহের কাছে আশ্রয় চাই।
শস্যদানার মতো ফলপ্রসূ আখিরাত চাই।

বলো মানুষ, বলো, আমি ফরশা ও সুন্দর কল্যাণ চাই।

(সুরা নাস ও ফালাক অবলম্বনে)

২০ মার্চ ২০২৪

ফররুখ আহমদের কবিতা

ফররুখের চোখের ভেতর জেগে উঠলো
কাঁটা ঝোপঝাড়-বেষ্টিত ভূগোল।
জাগলো একটা নদীমেখলা দেশ,
যার আকার অনেকটা কাগজি লেবুর মতো;
ঈষৎ ঘ্রাণে আপ্লুত আবেদনের পরিপূরক।
জাগলো আরেকটা অপরিহার্য সুন্দরবন।
বাংলাকবিতা তখন নেচে উঠলো কালবৈশাখী ঝড়ের মতোন।
তাঁর কবিতা রয়েল বেঙ্গল টাইগার হয়ে
লাফ দিলো প্রবল গর্জন করতে করতে।
ভয়ে কাঁপতে লাগলো চোর-চোট্টা,গুন্ডা, বদমাশ আর হায়েনার দল।
তছনছ হয়ে গেলো মজুতদার, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের আড়ত।
সুদের কারবারিরা পালালো পেছনের দরজা দিয়ে,
যেরকম রাজা লক্ষণ সেন পালিয়েছিলেন বখতিয়ারের আগমন টের পেয়ে।
দুপুরের অসমাপ্ত খাবার পড়ে রইলো এঁটো বাসনে।
আকাশে বাতাসে তার পালানোর ধ্বনি উঠলো বেজে।

এমনকরেই ফররুখের কবিতা জয়ঢাক বাজিয়ে রাজত্ব করতে এলো
দৃশ্যের ভেতর
চোখের ভেতর
মানুষের অস্তিত্ব হয়ে।

নির্বিঘ্নে।

লোকেরা বললো ,শাবাশ, বাংলাকবিতা!
শাবাশ!

শেয়াল আর ফেউ ঊর্ধ্বশ্বাসে লেজ তুলে দিলো দৌড়।

বাংলাকবিতা তখন মাঝ আকাশে সূর্যের সমদৃশ্যে গনগন করছে।
আর বলছে, ফররুখের চোখদুটো যেন স্বর্ণের মার্বেল।
অক্ষয় হয়ে আছে কবিতার হৃৎপিণ্ডে
দুটো চাঁপা ফুলের মতোন।

২০ মার্চ ২০২৪

যৌথ

নরম রোদের তক্তপোষের
মগ্নতা–
ঝুলিয়ে দিলাম চোখ দুখানির
স্বল্পতা।
চোখের ভেতর নদীর ভাষা
ডুবানো;
প্রেমের কাব্য লাল কালিতে
চুবানো।
কোকিল যেমন সবুজ -রঙা
ভোর খুলে–
দিনকে নাচায় নূপুর পায়ে
বোল ভুলে।
এমন বোলের দিক রাঙানো
রঙধনু–
হৃদয় যেমন গয়না-পরা
সুরবেণু!
দিনের ভেতর রাত্রি এসে
ভাত বাড়ে।
রোদের মতোন তখন বুঝি
হাত নাড়ে?
শোনায় তখন হৃদয়-ধোয়া
নগ্নতা।
রূপকথা নয় ; দুচোখ জুড়ে
মগ্নতা।
১৯ মার্চ ২০২৪

আরও পড়তে পারেন

3 COMMENTS

  1. ভালো লাগলো কবিতাগুলো। আন্তরিক শুভেচ্ছা।

  2. Proud of you Kobi, your thoughts between the lines have so much to tell. I still read you with a careful attention, and your poems automatically dives me into the deep of your poetic aesthetics.
    Kobi, I love reading you!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ