মৌনলেখা
(রোজার দিনগুলি ২০২৪)
ধীরে ফুল ফোটে, যুদ্ধ ও যানে
জীবন এখানে– মওতের নাম।
এমন রোজার দিন আমাদের!
মানুষ কোতল হলো ফিলিস্তিনে
শিশুদের মাঠ দীর্ঘ গোরস্তান।
রোজা, উপবাস– সবই সমান।
ঘর বাড়ি ছাড়া, হয়েছি তাড়িত
যেন আজীবন ইয়াহুদী আসে
তুলে নেয় আমাদের ভিটামাটি
নারী, শিশু- জয়তুনের বাগান।
*
আপেল বাড়িয়ে দিয়েছি তোমাকে,
তুমি কি নেবে না? দেখো– দরোজার
বাইরে হাজির – আপেল বাগান।
জানি রোজাদার, তাই চুপ থাকো
লৌহ বেড়াজালে ধরে রাখো মন।
কালব মুক্ত– চিনেছ নিজের
পরিচয় জাত। চারদিক মৌন,
ওড়ে জল পাখি– শান্তি-বাতাস।
যে জন প্রেমিক –আল্লাহ-প্রেমে
তার চোখ পড়ে থাকে মাগফিরাতে
বাকী সব ধুলা, বাকী সব ছাই।
*
সারাদিন ঘুরি, পৃথিবী ভ্রমণ করি
শরীর কামান – কামকাজ চলে
তাতে খুশি ঝরে– মুখ আফতাব
দুই হাত ওঠে মালিকের কাছে
যেন আবরার– পাখি ও পাতার
ভিড়ে দুটি হাত। যতটুকু খুলে,
বুকের ভেতর দরদের নদী
আমি ভাষাহীন মাঝি, পথ নাই।
যদি পেয়ে যাই ঠাই নির্জনে
তারতিলা হয়– নূরের কালাম।
*
নিজেকে জানবো বলে নিজেকেই
আলগোছে ছাড়ি।
ধরি পথ সাধু নিঃসীম শূন্য
নামজুরে শুধু নামহীনতার
প্রত্ন ধ্বংস, সহজিয়া গান।
সেই বেজে চলে আমিহীনতায়
যে আছে গায়েব হয়ে চিরকাল।
ভালোবাসে যারা, তাদের হৃদয়
বেয়ে নেমে পড়ে– ভাষার কাফেলা।
সারাদিন জল পড়ে
পাথরের বুক কাঁপে ভালোবাসায়।
*
একা হয়ে আছি। এ যে এক দান।
হৃদয় খুললো অবাক কালামে।
যেন বহুদিন অন্ধ ছিলাম।
বহুদিন নিজ ভাষায় এঁকেছি
বালি ও মিরাজ। জানি নি কোথায়
থাকে ঐশীভাষা, ভাষার খলিফা।
সোনার দূর্গ খুলে গেল আচমকা।
নিজেকে জানার– কত ভাষা শিখি!
দূর করি কালো– ভাবের ফাসাদ ।
*
কবে দরজায় বসেছিল মা জননী
সাদা কাপড়ের ভাজে চাঁদ ছিল।
সকালে দুপুরে কোরানের পাখি ছিল।
আমরা কি ভুলে গেছি
সেই সব গান– দৃশ্য মোজেজা।
আজো বিদেশের লাল বাড়ি দেখে
মায়ের কথাই মনে পড়ে যায়।
যেন নিখিলের শান্তি বিলিয়ে,
আমাদের ঘরে
চাঁদ-ফুল্লরি– বানায় জননী ।
*
যত নিচে নামি, এই মাস ধরে রাখে
ওপরের দিকে। চোখ, মুখ, নাভি
স্তনের বাহার দেখে মন ভাসমান!
নাফসের দাওয়া– শিক্ষক এই মাস।
আল্লার বাণী– হুকুম তামিল হোক
ভেতরের শয়তান হোক চুরমার।
সেই আশাতেই আগুনের হাতে হাত
যে দেখায় মদ, মাংস দেখায়
তার থেকে সরে আসি
সিয়াম শিকল দিক নাফসের পায়ে।
*
নিজেকে ধরেছি নিষেধের মায়াজালে।
সবটুকু কাল হল– যা কিছু সহজ
যা আছে হাতের কাছে সে হলো দেয়াল।
দেয়ালের পাশে যদি ওড়ে প্রজাপতি
তাকে ভাবি সাপ।
সেই কি মুক্তি– শক্ত দেয়ালটুকু সরে গেলে?
সেই কি আসল প্রেম মালিকের সাথে,
সমস্ত বাধা সরে গেলে ফোটে
খুশবু-গোলাপ।
*
আমি তো নিখোঁজ হয়েই রয়েছি
তুমি যেরকম চাও। এই দেহ মন
আমার তো নয়। যা কিছু আমার,
সব ঋণ করে ফসল ফলাই।
আমার হৃদয়– তোমাকে না চায়
এই অভিশাপ যেন কোনোদিন
না হয় আমার। পাথরও গলে যায়
তোমার কালামে, আমি তো গাফেল
হই বারবার। তাই বুক চিড়ে
উঠুক তোমার নাম, যেন গাছ
প্রেমপাখি এসে গায় তোমারই গান ।
*
কবিকে নাজাত দাও। রহমত দাও।
তোমার সিয়াম নামে যে জীবন
পোড়ে ধীরে ধীরে– তাকে জান্নাত দাও।
মাফ করো আজ। যেন কলমের
কালো কালি জুরে তোমার জিকির ওঠে।
রাত হোক পার। করি ইস্তিগফার ।
অনেক গুনাহ করেছি জীবনে।
অনেক জুলুম করেছি জীবনে।
জানি তুমি ক্ষমা দিবে
মাবুদ আমার।
তাই ভালোবেসে যাই অবিরাম।
১৯/৩/২০২৪
ভালো লাগলো আপনার কবিতা।
দীর্ঘ কবিতায় আবেগ ও ভাব সুন্দরভাবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
ধন্যবাদ নয়ন আহমেদ ভাই। ভালো থাকবেন। আগাম ঈদ মোবারক।