আমি যা বলতে চাই
মুহম্মদ আবদুল বাতেন
আমি যা বলছে চাই, তা পারি না,
এমন যে আমি বধিরতায় আচ্ছন্ন।
ভোরের সূর্য এবং গোধুলীর সূর্যাস্ত
যা ব্যক্ত করে কোন ভাষা দিয়ে তা
আমি রুদ্ধ করে দিতে পারিনা।
অন্ধকার, নিঃসঙ্গতা, স্তব্ধ মৌনতা
ও রাতের নীরবতার মধ্যে মানুষ
তার অজানা জীবন পথের বিমূর্ত
প্রতিভাস দেখতে পায়। আর এই
স্তব্ধতার মধ্যে ভাষাহীন জড় জগত
কথা বলতে শুরু করে, মানুষের
কোলাহল থেমে যাওয়ার পরে
ফাঁকা রাস্তা, লাইটপোস্ট, নির্বাক
গাছপালা ইউনিভার্সাল অভিব্যক্তি
নিয়ে হাজির হয়। শুধু অসীম শূন্যতা।
….
দুঃখ জয়ের গান
মাহফুজুর রহমান আখন্দ
ঈদ মুবারক ঈদ মুবারক ঈদ
সময়ের ক্লান্তিতে ঘিরেছে আঁধার
ঈদের পরশে মাখি জীবনের ঘ্রাণ
রাশেদার খিলাফত আনবো আবার
সিয়ামের শিক্ষাতে জেগে তুলি প্রাণ
এই হোক ঈদের আহ্বান
দুঃখ জয়ের গান।
ভয়ের আঁধারে মাখি সাহসের নূর
বৃষ্টিতে ভিজে নেই হৃদয় জমিন
তাকোয়ার স্বরলিপি হৃদয়ে মেখে
শষ্যের মাঠে হবো সাচ্চা মোমিন
হেরার চেরাগে গড়ে সব অন্তর
ঘরে ঘরে আনবোই আলোকের বান।
আসহাবে রাসূলের ত্যাগের মশাল
একতার সংগ্রামে হাতে রাখি হাত
উঁচু নিচু ভেদাভেদ থাকবে না আর
আঁধারের জাল ছিঁড়ে আসবে প্রভাত
মানবিক কোমলতা বুকের ভেতর
সুখে দুখে মানুষের কাছাকাছি হই
ঈদের খুশিতে মাখি ভালোবাসা গান
লাল সবুজের সুখে স্বপ্ন জাগাই
ভাইবোন হয়ে করি কষ্টের ভাগ
বুকে বুকে হাসবেই সুখের লগন।
….
পৃথিবীর সকল অহংকার
জাকির আবু জাফর
নুহের নৌকাই ছিলো মহাপ্লাবনের পিঠে একটুকরো কাঠের পৃথিবী। জোড়া প্রাণীদের ভাসমান ছোট্ট গৃহ। এ গৃহ থেকেই বিশ্বে ছড়িয়েছে মানুষের মিছিল
খুঁজলাম প্লাবনের ছবি!
ইংগিত এলো – প্রতিটি সাগর মহাসাগর সেই প্লাবনের টুকরো টুকরো ছবি। সাগরগ্রন্থ পাঠ করে দেখো- আগুনের মহাকাব্যগুলো সমুদ্রের তলপেটেই লেখা! প্রতিটি আগ্নেয়গিরি মহাকাব্যের একেকটি অধ্যায়! একদা সমুদ্র প্রজ্জ্বলিত হলে ঢেউ হবে আগুনের পাহাড়
লোহিত সাগরে ঢেউয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখি ফেরাউনের শেষ নিঃশ্বাসের দাগ
জলের ভাঁজে বিস্ফারিত দৃষ্টির সংলাপ
মুসার অলৌকিক লাঠির আঘাতটি বড় যত্নে রেখেছে লাল সাগর
হাটতে থাকলাম ইব্রাহিমের অগ্নি-উদ্যানের প্রতি
কেউ যেনো ইংগিত দিলো একটি প্রাসাদের দিকে
দরোজা খুলতেই দেখি নমরূদের উল্টানো চোখ
বিঁধে আছে মহলের রাজকীয় ছাদের কিনারায়
চোখের পাতায় লেপ্টানো দাম্ভিকতার রঙ
মগজের শিরায় উৎকীর্ণ অন্ধ মশার হুল
হিটলারের আত্মহত্যার কক্ষটি পেলাম
চারদেয়ালে পিস্তলের শব্দ ঝুলছিলো
থেকে থেকে ঝরছিলো স্বেচ্ছাচারী রঙ
সে রঙেই উতলা জগতের সকল রাজা রাণীর মন
অথচ কোনো ক্ষমতাই মৃত্যুর গ্রাস থেকে সরাতে পারেনি নিজের মুখ
ভাবুন তো – কীভাবে মাটিচাপা পড়ে আছে পৃথিবীর সকল অহংকার!
….
ঈদ
তৌফিক জহুর
এ কোন ঈগলের গান লোকালয়ে ভেসে আসে মুহুমুহু
হাওয়ায় ভাসে বারুদের ঘ্রাণ
পোড়া জমিতে গমের শিষ অঙ্গার,শিশুর আত্মা কাঁদে
আমরা দু-হাত তুলে ক্বদর রাতে কেঁদেছি আকুল
শিশুদের এমন আহাজারি, থরোথরো সাজানো বিল্ডিং
নিমিষেই ধূলোয় হয়ে যায় স্মৃতির আয়না
মাননীয় প্রভু
আজকের ঈদে মরণজয়ী সমাজে
জিব্রাইলের ডানায় ঢেকে দাও ফিলিস্তিনের আকাশ
অগম আঁধারে ঢেলে দাও রূপালী আলো
” তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম…….”
আমাদের মোনাজাত কবুল করো…প্রভু
….
বুকের মানিক
এ কে আজাদ
[উৎসর্গ: অনেক আদরের কুররাতুল আইন জিশানমণিকে]
বেহেশতের ঐ বাগান থেকে
একটা পাখি আসলো উড়ে,
ধরণীরে আপন করে
গাইলো যে গান মধুর সুরে।
সবুজ দেশে মাটির বুকে
বাগান জুড়ে ফুলের মেলা,
হাওয়ার তালে নাচলো পাখি
ফুলের সাথে জুড়লো খেলা;
ফুলের সাথে হাসলো হাসি
চোখের তারায় আলোরাশি,
পাপড়ি মেলা জীবন তারে
বলল- ভীষণ ভালোবাসি।
পাখির বাসা বুকের মাঝে,
বাসা তো নয়, সুখের খানিক,
বললো সবাই- পাখি তো নয়
শান্তিমাখা বুকের মানিক।
….
ঈদ
মহসিন হাবিব
শওয়ালের এক ফালি
বাঁকা ধনুক
পশ্চিম আকাশে এসে
পৃথিবীর মনটাকে
পাল্টে দিয়ে গেলো
আর মোবারক বাদ
জানিয়ে দিয়ে গেলো
প্রতি তল্লাটে
খুশির মন নিয়ে
মুখিয়ে থাকে সবাই
ঈদগাহের দিকে
ঈদ উৎসব পালনে।
….
নারী
তাজ ইসলাম
নারীর ঠোঁট থেকে উড়ে এলে
মাতৃমমতার চুমু
পৃথিবীতে নেমে আসে
সবুজ স্নিগ্ধ সকাল।
আমাদের কোন ঈদ নাই।। আজন্ম কৃতদাসের কোন ঈদ থাকেনা!!!
সুমন সৈকত
” রমনী তোমার নাভীর সৌন্দর্যে পুড়ে থাকে আমাদের মৃত্যুর খবর!!
কি এমন দায় ছিলো, বলো! যুগ-যুগান্তরের শোক বুকে নিয়ে কৃতদাস বীর্যের নকশীকাঁথার বুনন…
উজাড় সাতপুরুষের ভিটেমাটি, কীর্তনখোলা হয়ে লোহিত সাগরের বুক চিড়ে হেঁটে যায়, বিবর্ণ শাদা অতীত… “
অনেক ভালোবাসা, কবিদের ও প্রিয় সম্পাদক-কবিকে
ঈদের কবিতাগুলো এককথায় দারুণ।