১
কেউ হেঁটে গেছে অন্ধকারের ভেতর
কেউ হেঁটে গেছে অন্ধকারের ভেতর
আবছা আলোয় তার পড়েছিল বিস্তৃত ছায়া
সে কী কুহক কোনো;
নিঃশ্বাসের শব্দ তার ভারী হয়ে বেজেছে হাওয়ায়
মধ্যরাত ডেকেছে আমায় দরোজার কড়ার শব্দে
আকস্মিক মনের অজান্তে দরোজা খুলেই গেছি
খোলাছাদে ঝুলে থাকা অন্তরীক্ষের নিকষ আঁধারে
কোথাও কেউ নেই; শুধু মিশমিশে তমসায়
কেউ চলে গেল পিঠ রেখে দক্ষিণের বনে
হয়তো ডেকেছিল সে-ই
হয়তো কড়া নেড়ে বলে গেল উত্তরে এসো
উত্তরে কী পাহাড় কোনো?
আমি শুনেছি তার কলকল নিঝরের ধারা
আমি যাইনি মায়ার পেছন; দেখেছি তার
প্রলম্বিত ছায়া অপসৃয় হয়ে
মিশে গেছে উত্তরের অচেনা আঁধারে…
২
ক্রমশ মিশে যাই ভূনিসর্গে
পৃথিবী আমাকে ঠেলে নিয়ে যায়
জাতীয়তাবাদের গণ্ডি থেকে
দেশের মানচিত্র থেকে ছিটকে দেয়
অবিভাজিত সসীম সীমায়
ব্যঙ্গ করে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন;
দেশ বলে কিছু নেই;
গণতন্ত্র!– সে তো নষ্ট দলতন্ত্রের চতুর পদ্ধতি:
লুটপাট
হিংসা
হিংস্রতা
লোভ ও জিঘাংসার ভুয়োদর্শনমাত্র!
রাষ্ট্রতন্ত্র স্বভাবত দলান্ধ ভোগচক্রী
কঞ্জুসের সরাইখানা;
মোসাহেব ও ক্রীতদাসের জন্মের কামশালা।
বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় অসীম শূন্যতায়
উত্তরে দক্ষিণে পুবে ও পশ্চিমে জলে অন্তরীক্ষে আদিগন্ত মহাসীমায়…
আমি মানুষ হয়ে হয়ে ক্রমশ লীন হয়ে যাই
মিশে যাই ভূনিসর্গে…
৩
তোমার উপমা তুমি সবটুকু জুড়ে
ডানা ও ঠোঁটেই পাখি তার সুর ও সৌন্দর্যে সুন্দর
হরিণ তো মায়াবী চোখের জাদুতে ছড়ায় আবেগ
বাঘ তার গর্জনে শ্রেষ্ঠ শক্তির উপমাতে;
তোমার উপমা তুমি সবটুকু জুড়ে
অপূর্ব সুষমা ধরে রাখে অবয়বের দৃশ্যত যাকিছু
ওষ্ঠ নয় শুধু
নিতল দীঘির মতো চক্ষু নয় শুধু
নিবিড় মেদুর নিঃশব্দ হাসি নয় শুধু
নিকষ তমসার মতো দীর্ঘ কেশগুচ্ছে নয় শুধু
হৃদয়ের দৃশ্যায়িত নয় যে নীলাভ আবেগ
অন্ধকারে প্রবাহিত নির্ঝরের অনিন্দ্য শিঞ্জিনীসম
অপূর্ব কথার ঘুঙুর
টুপটাপ পাতাঝরা শব্দের মতো পুষ্পফোটা
হাঁটার শৈলীতে তোমার
রাগ ও অনুরাগে কখনো নীরব ক্ষোভের প্রকাশেও তুমি সৌন্দর্যের অপার আধার
পাখি ও মৃগ নও তুমি
ব্যঘ্রী নও তুমি
ময়ূরপেখমী নও তুমি
তোমার উপমা তুমি সবটুকু জুড়ে…
৪.
কখনো কী সেই বনে আমিই প্রথম
কখনো কী গেছি আমি সেই বনভূয়ে
যেখানে পড়েনি কারো পদছাপ আগে
যেখানে উদাস হাওয়া পাতাদের ছূঁয়ে
শিহরণ তুলে গেছে মিহি অনুরাগে
রঙিন পাখির পর
উড়ে উড়ে
পড়েছে হাওয়ায়
ঊষসীর আবাহনে জেগে গেছে মহুয়া কুসুম…
রাতভর জেগে থেকে
খদ্যোত ও
ঝিঁঝিরা ঘুমায়
তল্লার ঝাড় হতে ভেসে আসে হুহুম হুহুম।…
কখনো কী সেই বনে হেঁটে যাবো আমিই প্রথম
পদধ্বনি পেয়ে বন সচকিত হয়ে যাবে তখন ঠিকই
ঝরাবে বোশেখি গাছ চুকা আম নেচে ঝমঝম
ছড়াবে হলুদরেণু হিমঝুরি স্বর্ণালি সোনাঝিকিমিকি
কোনো এক নীলপাখি
প্রথম শোনাবে শিস
কোনো অতিথিকে
অসংখ্য রাঙাবক উড়ে যাবে জাওয়াঝাড় থেকে…
বুনোপথ ধরে আমি
হেঁটে যাবো উত্তরে
পাহাড়ের দিকে
যেখানে শেষের নদী দক্ষিণে গেছে এঁকেবেঁকে।
চমৎকার