spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাজন্মদিনের কবিতা : মঈনুস সুলতান

জন্মদিনের কবিতা : মঈনুস সুলতান

বল্গাহরিণ

হয়তো আমার চাই বল্গা হরিণ
নতুবা কেন যে পথ চলি ভলগা উপত্যকায়,
পায়ের নীচে তুহিন তুষার, ফারের টুপি
শ্বেত ভালুকের চামড়ার বিশাল চাপকান,
হাতে চকচকে বর্শা—
হিমেল নিঃসঙ্গতায় পিছনে একাকী অনুসরণ করে
কৃষ্ণ লোমশ আফগান হাউন্ড!

অথবা যেন বসে আছি অনন্তকাল স্প্যানিশ প্রস্তরে
মুর রূপসীর মতো চপল ঊর্বশী ঝর্ণায়
গহীন রজনীতে তৃষ্ণার্থ হরিণের মতো দল বেঁধে নেমে আসে—
নক্ষত্রের সুবর্ণনীল কমলালেবু রঙ ছায়াপথ
আমি বসে থাকি প্রস্তরবৎ!

কেথায় যেন ফেরাউনের কফিন ঘিরে
কোলাহল করে কথা কয় কতিপয়
প্রত্নতাত্ত্বিক বাদুড়।

অই মমীর মিশরী স্মৃতি, অই কুহক কল্পনা
আমার চোখের শিশিরে আঁকে—
জেব্রার মতো নক্সাকাটা স্বপ্ন!

পৌরাণিক নিঃসঙ্গতায় আমার চাই বল্গাহরিণ
অথচ আফগান হাউন্ডের জ্বলজ্বলে সবুজ চোখ
চেতনার সৌরলোকে জ্বালিয়ে রাখে
আঁধারের রূপালি ঝাড়!

বৃত্তের অন্দরে বৃত্ত

আসে —কখনো নীরব নীশিথে— মৃদু পায়ে আসে অনিশ্চয়তা,
মুখোশ খুলে বসে পাশে ছায়ামূর্তি—
অন্তর্জালের অশোক কাননে পথ হারায় পত্রমিতা,

বুঝি-বা এসেছে ঘরে— কাছের মানুষ—
খৃষ্টমঠে সন্ন্যাসীরা পার্চমেন্টের পান্ডুলিপিতে আঁকে চিত্র
বর্ণের বিভ্রমে হয় বেহুঁশ;
কাপাডোকিয়ার পাথুরে গুহায় তৈরী হয় গোধূলিতে গোলকধাঁধা
পতঙ্গের রঙিন ডানার সাথে হামানদিস্তায় মেশায় রত্ন
জ্যামিতির রেখাচিত্র থেকে ওড়ে ঝংকার— হরফের হার্প সাধা;

প্রিটোরিয়া থেকে নয় তেমন দূরে
মরু-সাভানার ঘাস ছাপিয়ে ওড়ে ধুলো— জেব্রার কঠোর খুরে
সড়কি হাতে কুচকাওয়াজ করে অনিরাপত্তার বরকন্দাজ,
বেলাবেলার জলাশয়ে ওড়ে বাষ্প—
সিক্ত শরীরের স্নায়ুতন্ত্রীতে বাজে না আর্দ্রতার কবোষ্ণ এস্রাজ;
বৃষ্টিবনের নিরজনে বুঝি-বা বিষ্ফোরিত হয় বীজ
পল্লবিত হয় সদালাপি বৃক্ষ,
নক্ষত্রের নৃত্যরত লাটিম সৃষ্টি করে বৃত্তের অন্দরে বৃত্ত
তছনছ হয়ে সীমাহীন শূন্যতায় ছড়িয়ে পড়ে আমার অন্তরীক্ষ।

চীনামাটির পেয়ালায় ক্রিসেনথিমাম

কোন কোন দিন আমার ভেতরে তৈরী হয়
কৃষ্ণপক্ষের প্রগাঢ় তৃষ্ণা,
কোন এক শহরে বেড়াতে গেলে—শুনতে পাই
ইঁদারার ভেতর থেকে উঠে আসছে রোদন,
যখন পারি না যেতে কোথাও
বাড়ে না পরিধি—পরিব্যপ্ত হয় না ভ্রমণ,
ভদ্রাসনের সিঁড়িগুলো ডুবে যেতে থাকে
ধাপে ধাপে মনসুনের মগ্ন সয়লাবে,
শাপলা-শালুক নিদ্রা ভেঙ্গে জেগে ওঠে পাললিক খোয়াবে ।

যখন আমার— থাকে না করার তেমন কিছু
পালতোলা পুর্তগীজ জাহাজ পাড়ি দেয় মালাক্কা প্রণালী,
সুমাত্রার টেরাসে টেরাসে অজস্র শতাব্দী জুড়ে
কারা যেন ফলাচ্ছে শিশিরের সোনালু আভায় জারিত রূপশালী;

কত কিছু ঘটে যায় নিরলে
কেউ ভাবে না— কী হবে কার—অবশেষে কী-বা পরিনাম,
রাইন উপত্যকায় ক্যাসোলের ছায়া ভাসে স্রোতে
চীনামাটির পেয়ালায় উষ্ণজলে ফুটে ওঠে ক্রিসেনথিমাম।

কালপুরুষ

সেইলিংয়ে কথা লিখেছিলাম—
পালতোলা বোটে ভাসতে আপত্তি — নীরবে করছি অনুমান,
না হয় হাঁটা গেল সৈকতে—
হাঁটতে হাঁটতে করা যায় ফেনার অবয়বে নকশার অনুসন্ধান,
শতেক সেতু আমরা তো হয়েছি পার— প্রতারিতও হয়েছি বেশুমার
কিংবা আমাদের আছে যত— অন্তর্গত— রোনাজারি,
কখনো চেয়েছি কী পুষতে দুঃখসুখের শুকসারি?
কথা বিশদ কিছু নয়—
মেঘচোঁয়া কিরণের মতো যখন জাগে জোৎস্না-নিবিড় বোধ,
পৌঁছতে দাও পূর্ণিমায়— পর্দায় করো না তো পথরোধ—
মেয়াদের করো না অপচয়;
ক্রমাগত মনষাঙ্কে বিভ্রান্ত হওয়া আদতে কী অস্বাভাবিক?
প্রণয়ের পরিভাষায় প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে যে—পৃথক পরবাসের প্রতীক;
ভারাক্রান্ত হতে হতে আমিও তো হিসাবে হই হামেশা বেঁহুশ,
তারপরও অভিলাস যেহেতু এখনো চলছে আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস
দেখি না হয় একবার— একসাথে কালপুরুষ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ