মা-ভূমি’র কোলে
…….
জননী শুধুই একজন ‘মানুষ মা’ নন।
জননীর কোল মানে জন্মভূমির প্রাঙ্গন।
শিকড়ের টান মানে মাতৃশ্বাসের বারতা,
সেখানে ফিরলে মেলে কল্যাণ, আখ্যান
তাতেই মৃতের আত্মা খোলে আশীর্বাদাকাশ,
বৃষ্টি নামে, মেঘ ঝরে, মুগ্ধস্নিগ্ধ রোদের কোরাস।
সবুজে অবুঝ-ঘঁষা প্রকৃতি সুকৃতি খেলে
আর বলে যেখানে জীবন শোয়া
সেখানেই বিরাজিত দোয়া,
এইতো আদর নাও মাতা-বাগানের, মাতৃসদনের,
মা-ভূমি জননীসম, দেশগ্রাম, আহা
শুদ্ধতার জাদু মেলাবার মাতৃ-বদনের!
এখানে প্রশান্তি নাও কোলঘেঁষা স্মৃতিরোদনের।
মটিগ্রাম, খাঁটি গ্রাম সে ‘চিকনমাটি’
বাবা-মা’র পাদপীঠে বাঁধা আমার আত্মাটি।
সবই তার কবিতার উপমার ঘাঁটি।
ডোমার, নীলফামারী
……..
রোগের নাম অহমিকা
……..
প্রতিদিন মৃত্যুনিয়তি দেখেও
নিজেকে অমর ভাবা
এও এক প্রসন্নতা রোগ,
হয়তো ডাকতে পারি অহমিকা নামে।
কী তার ওষুধ?
শুধুই কি ধর্মগ্রন্থে আছে তার
প্রেসক্রিপশন, নিরাময়পত্র?
হাসির মানুষ বাসী হয়ে চলে যায়,
বলে যায় গুডবাই প্রাণের চেয়ার!
আসনটি রেখে যান সঙ্গে সে ভাষণ
মানুষেরা সারিবদ্ধ হয়ে জন্মে
একটি একটি করে তবে দেখেও দেখে না
পিঁপড়ের গতিধারা। ধাপে ধাপে ক্ষুদ্র মৃত্যু…
বারোমাস বারোয়ারী উল্লাস মিছিল ছোঁয়
প্রাণ থেকে প্রাণে
বেঁচে থাকে জীবনের সেতুবন্ধ।
প্রসন্ন মানুষ পশু সেজে পাগলের পাশা খেলে,
সূর্যের হাসিতে হাসে, রাতের রমণে ঘামে
নামে বদনামে, মোহময় সুরে স্বরগ্রামে
অধিক মানুষ অমরতা খুঁজে ফেরে।
অথচ পায়ের কাছে পিঁপড়ের সারি
মৃত্যুর মিছিল নিয়ে হাঁটে,
কাঁধে কাঁধে একযোগে হয়তো কফিন! তাই
অহমিকা তোমাকে কবর, তোমাকে পোড়াই।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম
…….
শোক উৎসব
……..
মানুষেরা খুব উৎসবমুখী হয়ে ওঠে কোনও বিষয় পেলেই।
যখন ছুটবে তখন না পেলেও প্রশান্ত পথ
প্রয়োজনে বাঁধার ওপর রেখে যাবে পদচিহ্ন,
পাসপোর্ট না থাকলে খুঁজবে রাজনৈতিক আশ্রয় বা
পাহাড়ে উঠবে, চাঁদে নামবে আবার
মেঘের ওপরে মহাশূন্যে গিয়ে কাটাবে ক’দিন।
পাউন্ড ডলার রুপী ইত্যাদি আয়ের হিসেব মেলাতে
ছুটে যাবে ব্যস্ত-সমস্ত ব্রোথেলে, সী-বীচে, অরণ্যে।
ব্যাংক-ব্যালেন্সের অংকগুলো পানীয় বানিয়ে ঢালবে গলায়,
রাতভোর ক্যাসিনোয় খেলবে রুলেত আর ব্ল্যাকজেল।
আমরা প্রায়শ যাই এই সব পথে
কিছুটা প্রশান্তি পাই, বেশিটা হারাই।
যাওয়া মানে স্বনির্ভর দেহের কৌমার্য রেখে আসা
যাওয়া মানে আগামী পুরুষ অকুস্থলে ফেলে আসা
সভ্যতার নামে নীল ছবিতে নিজেকে বারংবার দেখা।
আর যারা যায় রক্ত দিতে অবেলায় মিছিলে সংগ্রামে
তারাতো জানে না
যাওয়া মানে প্রাণহীন দেহ নিয়ে উৎসবে
ফিরে ফিরে আসা,
ফেরে তারা বছর বছর শোকার্ত সঙ্গীতে
শোভন শহীদ মিনারের পাদদেশে কাঁদে বসন্তের ফুল।
তাদের ইচ্ছের কথা
শ্লোগানে শ্লোগানে
কবিতা নাটকে
সম্পাদকের কলামে
বারবার দাবি হয়ে ফিরে ফিরে আসে।
ভাবি আজ তাই, আমরা সবাই
খুব উৎসবমুখী হয়ে উঠি কোনো বিষয় পেলেই।
কলকাতা