spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : ফেরদৌস সালাম

গুচ্ছ কবিতা : ফেরদৌস সালাম

ও নদীরে…

আমি নদী নদী বলে ডাকতেই উড়ে আসে শালিকের ঝাঁক। পালকের অদম্য বাতাসে শোনা যায় নীড়ে ফেরা আনন্দিত গান। ততোক্ষণে পাখির শিশুরা
চিঁ হি চিঁ হি আলাপনে গাইলো কোরাস।
দীর্ঘ দীর্ঘ দেবদারু ছায়া এসে বিকেলের কথা জানালো আমাকে। মনে হলো উঠোনের বুকে হাঁসেরা ফিরেছে। বড় চাচী গুনে গুনে দেখছেন দু’ডজন ঠিক
আছে কিনা! ফাতুর মা খুলে দিলো রাতের খোয়াড়।

আমিও এখন ধরে আছি গাঙচিল বালিকার হাত।
তার বুকে কবিতার ডানপিটে অনিরুদ্ধ ঢেউ। ক্রমশ সে
বড় হচ্ছে লাজুক লাবণ্যে। বললাম, নদীতে নেমো না
শুনলো কি শুনলো না– কিশোরের রঙিন ম্যাসেজ আর শিস শুনে হঠাৎই ঝাপ দিলো যমুনার জলে। মুহূর্তেই জলের সঙ্গীত অন্তর্গত মুর্চ্ছনায় ডুব দিলো হতাশার নীরব আঁধারে।

চেয়ে দেখি কোথাও সে নেই। অরক্ষিত সরিষার ক্ষেতে পড়েছিল গৃহস্থের মায়াভরা শিল্পিত লাঙল। কতিপয় সর্বনাশ ছুঁয়েছিল আবেগের নাও। জোয়ালহীন গরুগুলো অতিদ্রুত ফিরে গেছে আনন্দ গোয়ালে–
তাদের কোনো হদিস মেলেনি।

আমি ফের ফিরে আসি জোছনার জলে
সুরে সুরে ডাকি ও নদীরে–
কখনো সে নদীরা ফেরে না– তরঙ্গও আসে না ফাগুনে
নদীও কি ভুল পথে হারাবে ঠিকানা ?

বিব্রত বেহুলা

ঘুঙুরের শব্দে বুঝি পদ্মাসনে বসেছে বেহুলা
আদিম সম্ভোগ চাই খুলে যাবে শিল্পের বসন
সাভারের বেদেপল্লী অনুভবে তীর্থ নিরীক্ষণ
অগ্রাণের দীপ্তবায়ু চুড়ি নাড়ে ধানভরা কুলা।

ওৎ পাতে আততায়ী– ছুঁড়ে মারে পাথরের ঢিল
সজাগ পাড়ার ছেলে ঘুর পথে যায় সিনেমায়
রিকশার হুড তুলে আড়ালের গোধূলি সন্ধ্যায়
কাবাবের গন্ধ শুঁকে খুন হয় প্রেমিকার দিল !

প্রতিরাত ডাকি তাকে অজান্তেই নামে দীর্ঘশ্বাস
শহরে মমতা নেই যেতে হবে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে
বেহুলার বক্ষশিল্প দেবতার যদি দৃষ্টি কাড়ে
গাভিন গাভীর পাতে তুলে দাও কচি তাজা ঘাস।
গলায় নিয়োনা কাটা খেয়োনা সে ইলিশের মাথা
বিব্রত বেহুলা মুখ– ঢেকে দেয় নগ্নতার ছাতা !

রোদ্দুরে পোড়া গন্ধ

তীব্র রোদে পুড়ে যাচ্ছে আমার শহর। জ্বলে যাচ্ছে রমণীয় লাবণ্যের সবুজ ভূভাগ। রোদেরাও অকুলান রোদে ডুব দিচ্ছে চৌবাচ্চায়। কখনোবা শরীর ভেজাতে নেমে যাচ্ছে নদী ও দীঘিতে।

গরম কি শুধুই গতরে? তোষকের তুলো ঘামে ঘামে হয়ে যাচ্ছে দূর্গন্ধের নিদ্রাহীন নদী। ঘামগন্ধে দূর্দশায় মধ্যরাতে মিশকল দিচ্ছে পুরনো কোকিল
জেগে, তবু উঠছো না শয্যা ছেড়ে। যদি এই গন্ধটুকু উড়ে উড়ে লটকে থাকে জানালার কাচে। কি অদ্ভুত- এসির বাতাসেও সন্দেহের ধারাপাতে বিভ্রান্তির
শীতল প্রয়াস !
হয়তোবা দূর গাঁয়ে রাতের প্রহরে ডেকে যায় আত্মমগ্ন বাঁশী । সে সুরেও পোড়া গন্ধ– ঠিক এভাবেই হৃদয়ের নীলাকাশ পুড়ে যাচ্ছে তোমার বিরহে
রাত দিন পুরোটা সময় টের পাচ্ছি পোড়া গন্ধ
মনে হয় কেউ আমাকেই বানিয়েছে
কেরোসিন তেলে ভেজা শ্মশানের কাঠ …

জলের শুদ্ধতা

নদীতে নেমেও খুঁজি জলের শুদ্ধতা। ছুটে আসি বৃক্ষের নিকট। শোনাই সে বন্দনার নান্দীপাঠ। ফাগুন সবুজে
ভেসে আসে কোকিলের গান। অমরত্বে নেচে ওঠে
পরকীয়া বৃক্ষের চুম্বন। চন্দ্রস্নাত গন্ধরাজ
খুঁজে নেয় মৃত্তিকার ঘ্রাণ। নদীরাও ফিরে চায়
সমুদ্রের সুখদ ঠিকানা।

আমি জানি তুমি ছাড়া শুদ্ধ কোনো কবিতাই নেই।

এই শেষবার

আমার সুখের দিন চলে গেছে। হতোদ্যম মৃত্তিকাও।
মেঘেরাও রোদের কান্না শুনে চলে গেছে অতিদূর
মরুর জমিনে। রোদ ছুঁইলেই শুরু হয় ধান পাকা
আর বৃষ্টির ব্যান্ডেজ সেই ক্ষেতে জন্ম দেয় ঘাসের বাথান।
শেষবার আমি রোদ বৃষ্টি চাই না কিছুই! তুমি
দুহাত তুলে মোনাজাত করো
ফসলের দ্রোহে বাধ ভেঙে বয়ে যাক আবেগের
অনিরুদ্ধ ঢেউ। শেষবার তাকাও স্বজন।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ