১.জীবন কি? আপনার বর্তমান জীবন, অবস্থান– যা হতে চেয়েছিলেন বা যা হয়েছেন–এসব নিয়ে কোন আক্ষেপ, অনুশোচনা বা গর্ব হয়?
কাজল চক্রবর্তী : জীবন একটা বহমান নদী। এখন চাকরি থেকে অবসরের জীবন। দিব্য আছি। সময়কে ইচ্ছেমত মুঠোয় নিয়ে ফেলি, যেটা চাকরিতে থাকার সময়ে পারতাম না। কী হতে চেয়েছিলাম, কি হয়েছি সেসব হিসেব নিয়ে বসা পাগলামো। আমার বর্তমান অবস্থান আমার কর্মের ফসল, আমি সুখী। একটা কবিতার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে এসেছি, সে কবিতা এখনো পাইনি হাতের মুঠোয়। কাজেই কাজলকে যে নামেই ডাকা হোক, কাজলই থাকবো।
২. আপনার শৈশব-কৈশোর কোথায় কেটেছে? কীভাবে কেটেছে? কোন অব্যক্ত কথা বা স্মৃতি কি মনে পরে? তাড়িত করে?
কাজল চক্রবর্তী : আমার শৈশব- কৈশোর-যৌবন কেটেছে কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে, ঢাকুরিয়ায়। এখন থাকি উত্তর-পূর্ব কলকাতার সল্টলেকে। ঢাকুরিয়ায় গেলেই মনে পড়ে শৈশবের সেইসব মানুষেরা আজ ছবি হয়ে গেছেন, আর স্মৃতি সেতো মহা প্রতারক। তবে অতীত আমার কাছে সত্যিই মোহময় এক কথামালার দেশ। আমি প্রায়শই আপন মনে সেই দেশে গিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আসি।
৩. সাহিত্যে এলেন কেন? কীভাবে এলেন? অর্থাৎ শুরুটা কীভাবে? কোথায়?
কাজল চক্রবর্তী : বিজ্ঞানের ছাত্র আমি, সাহিত্যে আসার কথাই নয়। সাহিত্যে আসার কথা নিয়ে অনেকবার লিখেছি। অক্ষরজন্মের ডায়েরি ও নির্বাচিত রচনা সমগ্র প্রথম খণ্ডতেই লিখেছি। সেটা অনেক বড় কাহিনী। সংক্ষেপে বললে বলবো, ভালোবাসাই এখানে চুম্বকের কাজ করেছে। আমি সাহিত্যের কাছে এসেছি।
৪. বাংলা ভাষার তথা বাংলাদেশের প্রধান কবিবৃন্দ যেমন : ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী, আবদুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ– তাদের সাহিত্যকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? পশ্চিমবঙ্গের প্রধান কবিবৃন্দ– কার-কার সঙ্গে আপনার সখ্যতা বা বন্ধুত্ব বা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে উঠেছিলো বা আছে ? তাদের সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বা তাদের সাহিত্য নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
কাজল চক্রবর্তী : এ প্রশ্নটা একটু গোদা হয়ে গেল। প্রধানের তালিকায় আরো আছে। আবুল হোসেন মারা যাবার পরেই মনে হয় বাংলাদেশের সাহিত্যের সঙ্গে আমার যোগাযোগ। আর বাংলাদেশের যেসব লেখক মূলত কবি যারা পশ্চিমবঙ্গের কবিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পছন্দ করতেন তাঁদের সকলের সঙ্গেই আমার সখ্য ছিলো, যারা এখনো প্রয়াত হননি তাঁদের সঙ্গে এখনো আছে।
৫. আপনি একাধারে একজন কবি-সম্পাদক ও সাহিত্যবিশ্লেষক অর্থাৎ বহুমাত্রিক। আপনার অভিজ্ঞতা ও বিচরণ ক্ষেত্র ব্যাপক ও বর্ণিল। বিচিত্র। এই সামগ্রিক সত্তাকে কিভাবে দেখেন? কিভাবে উপভোগ করেন?
কাজল চক্রবর্তী : এটা বেশ ভালো প্রশ্ন। আমার পোশাকী নাম দেবেশ চক্রবর্তী, ডাক নাম কাজল। কাজল নামেই লিখি। যখন কেউ দেবেশ ডাকে বুঝি সে আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্র থেকে চেনে। আর কাজল ডাকলে বুঝে যাই সাহিত্যের মানুষ। কবিতা, উপন্যাস, ছোটোগল্প তিনটের পাঠক তিন রকম। কবিতার পাঠকের সঙ্গে মেধায় দৌড়ে উপন্যাস ও ছোটোগল্পের পাঠক পারবেন না। আজকাল যখন কেউ ঔপন্যাসিক বলে, কবি বলে না, দুঃখ পাই। কবিতাই আমার জায়গা। বাঁকি সব লিখি নিজেকে জাহির করতে নয়, কিছু তাচ্ছিল্যের প্রতিবাদ দিতে। আগে কিছু গদ্যের লোক বলতেন ও গল্প-উপন্যাস লিখতে পারে না, শুধু কবিতা লেখে। এখন যখন তারাই বলেন আরে তোমার এই উপন্যাসটা বেশ সিরিয়াস, ভাষাশৈলী অসাধারণ। সেসময়ে উপভোগ করি।
৬. আদি বাংলা তথা চর্যাপদ থেকে আজ অবধি বাংলা সাহিত্য কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে–আপনার বর্ণনা ও বিশ্লেষণে?
কাজল চক্রবর্তী : এ প্রশ্নের উত্তর কী দেবো। আগে মানুষ গুহায় বাস করতো এখন অট্টালিকায়। মানুষের জীবনের মান এগিয়েছে না পিছিয়েছে সেটা বলে দিতে হবে ? আর বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অবস্থান কোথায়? যেখানে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাভাষার অবস্থান নড়বড়ে, গত বারো বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ নেই, স্কুল/কলেজের শিক্ষক/অধ্যাপকরা আমাদের গ্রন্থের পাঠক তৈরী করেন, তারা যদি অর্থের জোরে চাকরি পেয়ে যান, সেখানে পাঠক তৈরী করবে কারা!
৭. সাম্প্রতিক শিল্প-সাহিত্যচর্চায় কোন-কোন চ্যালেঞ্জ বা সুবিধা-অসুবিধা আছে বলে আপনার মনে হয়? কীভাবে এগুলি মোকাবিলা করেন?
কাজল চক্রবর্তী : প্রতিবন্ধকতা আছে বৈকী। আছে। প্রথমত বাজারী লেখক না হলে স্বল্পপরিশ্রমী পাঠকের কাছে কৌলিন্য পাওয়া যায় না, বাজারীদের অনুপাতে গ্রন্থের বিক্রি কম হয়। আর বাজারীদের নিয়ন্ত্রিত কিছু প্রকাশক আছে তারাও আমার গ্রন্থ প্রকাশ করেনা, আমি অবশ্য কোনোদিন বলিও নি। পশ্চিমবঙ্গে অনেক প্রকাশক টাকা নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশ করেন, এটাই তাদের বাণিজ্য। আমি এইসব কিছুকেই মানি না। আমার গ্রন্থ নিজেই প্রকাশ করি, ‘সংস্কৃতিক
খবরে’র পক্ষে, বিক্রিও হয়ে যেত। পশ্চিমবঙ্গের লাইব্রেরী গুলোতে আগে আমার বই কেনা হতো রামমোহন ফাউন্ডেশনের টাকায়। বর্তমান সরকার আসার পরে, ওটা নিয়ে এত বেশি কারচুপি হচ্ছে, সেটা বলার নয়। আর আমাদের বই নৈব নৈব চ। যে প্রদেশে একজন সব পারে, এমনকি কবিতাও, সেখানে আমাদের মতো কবিদের জায়গা কোথায়! কাজেই গ্রন্থের বিক্রি কম হয়। এটা কীভাবে মোকাবিলা করবো! সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজে যাচ্ছি।
৮. আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কোন টি? কবে প্রকাশিত হয়েছিলো? প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কেমন ছিলো?
কাজল চক্রবর্তী : আমার প্রথম গ্রন্থটি ছিলো কবিতার, ‘সাংস্কৃতিক খবর’ প্রস্তাবিত বানানে এটি প্রকাশিত হয়েছিলো। নাম ‘ঠিক শেই শময়’। প্রকাশ সাল ১৯৮১, এই গ্রন্থটিকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে বেশ আলোড়ন হয়েছিলো, বলতে দ্বিধা নেই, গ্রন্থটির কাব্যগুণ থেকে অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছিলো এর বানানপদ্ধতি। সাংস্কৃতিক খবরের প্রস্তাব ছিলো উচ্চারণের কাছাকাছি বানান।
৯. সাহিত্যে আপনি কার উত্তরাধিকার বহন করেন?
কাজল চক্রবর্তী : প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। বাংলাভাষার প্রথম সার্থক কবি হিসেবে লালন ফকিরকে মান্যতা দিয়ে থাকি, সেটা ধরে বললে বলবো লালন ফকির।
১০. এ যাবৎ সর্ব মোট আপনার কতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? এর মধ্যে কোনটি বা কোন-কোন কাজকে বা কোন বইকে আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে মনে করেন?
কাজল চক্রবর্তী : সংখ্যাটা প্রায় একশো আশিতো হবেই। উল্লেখযোগ্য কোনটি? এটা খুব জটিল প্রশ্ন। সবগুলোই আমার উল্লেখ্য সবগুলোই… হা হা হা
১১. সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার নতুন বই সম্পর্কে বলুন।
কাজল চক্রবর্তী : এবারে প্রকাশিত দুটো উপন্যাস প্রথমটা ‘খিদে’, কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত সাংস্কৃতিক খবরের উদ্যোগে। ওটা লিখেছি গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে, লেখা সম্ভব হয়েছে সাকিল আহমেদের জন্য, সে আমাকে জোর করে গঙ্গাসাগর মেলায় না নিয়ে গেলে লেখা হতো না। পরের উপন্যাসটি ‘একলা পুরুষ’। এটি ঢাকার বইমেলায় প্রকাশ করেছে ‘কালের চিঠি’। কলকাতা বইমেলায় প্রকাশ করেছে ‘সাংস্কৃতিক খবর’। উপন্যাসটিতে প্রমাণ করতে চেয়েছি পুরুষ আসলেই একটা খেজুর গাছের মতো, সে আসলেই একলা। কোনোরকম পরিচর্যা ছাড়াই, সে বেঁচে থাকে, তার কাজ শুধু দিয়ে যাওয়া।
১২. আপনি নিজেকে কোন দশকের কবি-লেখক বলেন? কেন?
কাজল চক্রবর্তী : দশক বলে কিছু হয় না। লেখক কোন সময়ে লেখালেখির শুরু করেছেন সেটাকে বুঝে নিতে দশকের লেবেল লাগাই। সেই বিচারে আমি আটের দশকের।
১৩. আপনার সমকাল নিয়ে বলুন।
কাজল চক্রবর্তী : আমার সমকাল অনেক কিছু দেখেছে, হজম করে ফেলেছে সেসব। স্পর্ধিত রোদ হবার বাসনা তাদের আর নেই, সবাই সমঝোতায় ব্যস্ত। চোরের মায়ের কাছে তার সন্তান সবসময়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকে। আমাদের সমকালের মান্যবরেরাও তেমনি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে ইতোমধ্যে। কেউ কেউ এমন আপাত-অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছে, আমি অনায়াসে তাদের সঙ্গে একাসনে বসে কাঁচালঙ্কা ও পেঁয়াজ সহকারে মুড়ি খাই।
১৪. আপনি কি কখনো বাংলাদেশে এসেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাচ্ছি।
কাজল চক্রবর্তী : ১৯৮৫ সালে প্রথম যাওয়া শুরু করেছিলাম, এখন পর্যন্ত কতবার যে গেছি গুণতে হবে, তবে সেঞ্চুরি হয়নি এখনো। আর অভিজ্ঞতা? পৃথিবীতে আমার পছন্দের চারটে শহর হলো কলকাতা, ঢাকা, নিউ ইয়র্ক এবং প্যারিস। যাতায়তের খরচ, ব্যয়বহুল ট্যুরিস্ট ভিসা, ট্রাভেল ট্যাক্স, বর্ডারে মহাপুরুষদের নাচানাচি না থাকলে প্রতিমাসে বাংলাদেশে যেতাম। এত কষ্ট সহ্য করে ওপারে গেলে পাই প্রাণের আরাম।
১৫. বাংলাদেশের সাহিত্য পড়েন? আপনার প্রিয় বা পছন্দের বাংলাদশী সাহিত্যিক কে-কে বা কারা? কেন?
কাজল চক্রবর্তী : বাংলাদেশের সাহিত্য অবশ্যই পড়ি। পছন্দের তালিকা বেশ দীর্ঘ। উপন্যাসে অবিস্মরণীয় আবু ইসহাকের ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’, অদ্বৈত মল্লবর্মনের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এবং আল মাহমুদের ‘পানকৌড়ির রক্ত’। প্রবন্ধে, আনিসুজ্জামান, আবদুল মান্নান সৈয়দ ও আমিনুল ইসলাম বেদু। কবিতায় অনেক, কত বলবো! তবে প্রকৃত স্বতস্ফূর্ততায় নির্মলেন্দু গুণ অনন্য।
১৬. বাংলাদেশ এবং ভারতীয় বাংলা সাহিত্যের মিল ও তফাৎ — কোথায়? কি-কি?
কাজল চক্রবর্তী : বাংলাদেশে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ বাংলাভাষা মূর্ত। ভারতে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী বাংলাভাষা মূর্ত নয়। ভারত ও বাংলাদেশের সাহিত্যে এই তফাৎ চোখে পড়েই। দুদিকের জীবনসংগ্রামের ধারা এক নয়, আর জীবনসংগ্রামের ইতিবৃত্তই সাহিত্য। কাজেই কোনো মিল নেই, বাংলাভাষার ব্যবহারও এক নয়।
১৭. এই দুই দেশের সাহিত্যিক মেলবন্ধন উন্নয়নে কোন-কোন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?
কাজল চক্রবর্তী : সাহিত্যের উন্নয়নে লেখকদের জন্য রাষ্ট্রের অনেক কিছু করার আছে। দু-চারটে পুরস্কার দিয়ে আর কিছু সংস্থা তৈরি করে দায় সেরে ফেলা হয়। ভাবুন একবার সামান্য একজন মানুষ রাজনীতি করে সাংসদ হলো, তার জন্য এতো খরচ, সব জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। কেন এটা হবে। রাজনীতি তো সমাজসেবা। সেবকদের নিয়ে এত কিছু হলে সাহিত্যের সেবকদের নিয়েও হওয়া উচিত। সেটা কোনোদিন হবেনা। তারপরে দু-দেশের সাহিত্যের মেলবন্ধনের কথা ভাবা ভালো। অন্যদিক থেকে ভাবুন কোনো রকম সরকারী সাহায্য ছাড়াই দু-বালার সাহিত্য একে অপরের কাছাকাছি। কেননা বাংলাভাষা এক ও অভিন্ন।
১৮. আধুনিকতা ও উত্তর আধুনিকতা বলতে আপনি কি বোঝেন? কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
কাজল চক্রবর্তী : দুটো বিষয় আমার ভৌতিক। আমি জানি শক্তি তৈরি করা যায় না, শুধুমাত্র পরিবর্তন করা যায়। এটাই বিজ্ঞান। আধুনিকতা আর উত্তর আধুনিকতার তকমা দিয়ে বলতে পারবো না রবীন্দ্রনাথ আধুনিক, আর কাজল চক্রবর্তী উত্তর আধুনিক। তবে হ্যাঁ নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে বাংলা কবিতায় বহু আন্দোলন হয়েছে, বাংলা কবিতা বাংলা ভাষার বাইরে যায় নি। যাবেও না। কাজেই ভৌতিক বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তা না করাই মঙ্গল। আসুন মঙ্গলযাত্রায় সামিল হই।
১৯. আপনার লেখালেখিতে দেশি-বিদেশি কবি/ সাহিত্যিকদের কারো কোন প্রভাব কি আছে?
কাজল চক্রবর্তী : প্রচুর পড়ি, অবচেতনে কারো প্রভাব যদি এসে যায়, যেতেই পারে। কিন্তু সেটা আমার গোচরে নেই।
২০. কোথায় আছেন? কি করছেন? পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।
কাজল চক্রবর্তী : কলকাতায় আছি। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পুরো সময় লেখালেখিতে। স্ত্রী অঞ্জনা চক্রবর্তী তিনিও অবসর নিয়েছেন, ছড়া, গল্প ও নাটক লেখেন। একাধিক প্রকাশিত গ্রন্থ তাঁর আছে। ছেলে ও মেয়ে দুজনেই ইঞ্জিনিয়ার। তারা তাদের জগত নিয়ে ব্যস্ত। লেখাপত্র নিয়ে তাদের কোনো ব্যাস্ততা নজরে পড়ে না।
২১. আপনি কখনো কি কোন পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন অথবা সংকলন সম্পাদনা করেছেন? বিস্তারিত বলুন।
কাজল চক্রবর্তী : ১৯৮১ সাল থেকে ‘সাংস্কৃতিক খবর’ সাহিত্যপত্রটি সম্পাদনা করে আসছি। এই দীর্ঘ ইতিহাসের কথা এই পরিসরে সম্ভব! খুব উল্লেখ্য কাজের ভেতরে প্রথম দিকে উচ্চারণের কাছাকাছি বাংলা বানান হোক এই কাজে বেশ কিছুটা বর্তমানের বানান দেখলে বোঝা যায়, আমাদের আন্দোলন মান্যতা পেয়েছে পত্রিকার প্রায় সবকটি সংখ্যাই বিশেষ সংখ্যা। বেশিরভাগ প্রামাণ্য সংখ্যা হিসেবে চিহ্নিত। পাঠকমহলে আদৃত। একাজ আর কোনো লিটিল ম্যাগাজিন করেছে বলে আমার জানা নেই। এই পত্রিকার উদ্যোগে আয়োজিত বাংলা কবিতা উৎসব সাঁইত্রিশ বছর পার করেছে। এই মঞ্চ থেকে অর্থমূল্য সহ বিষ্ণুদে পুরস্কার, সাংস্কৃতিক খবর পদক এবং আরো কিছু পুরস্কার গ্রহণ করেছেন দু-বাংলার কবিরা। আজ অব্দি ‘সাংস্কৃতিক খবর’ কোনো পুজো সংখ্যা বা ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করে ধর্মান্ধদের সারিতে বসেনি।
২২. লিটল ম্যাগাজিন এর সংজ্ঞা কি? এ নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন।
কাজল চক্রবর্তী : লিটল ম্যাগাজিন তাবেদারি না করে নিজের মাথা উঁচু করে থাকবে। ভালো লেখকের লেখা খুঁজে নিয়ে ছাপবে। এখন বেশিরভাগ তথাকথিত লিটিল ম্যাগাজিন উক্ত লিটিল ভাবনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারা কিছু নিষ্ঠ পাঠক নয় তাবেদার সৃজনে ব্যস্ত।
২৩. অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিন চর্চাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
কাজল চক্রবর্তী : এটা হঠাৎ করে ভালো লাগা খুব সুন্দরীকে নিয়ে কিছুক্ষণ মনে মনে তারিফ করা। এছাড়া উপায় কী! মুদ্রণে খরচ অনেক, অন-লাইনে সে ঝঞ্ঝাট নেই। এটার স্থায়িত্ব মুদ্রণের মতো নয়।
২৪. আগামী দিনের সাহিত্য কেমন হবে–আপনার কল্পনায়?
কাজল চক্রবর্তী : সাহিত্য নিত্য প্রবাহমান, এর ধারা নিম্নগামী। আগামী সাহিত্য নিশ্চিত বর্তমানের অবস্থানকে স্বীকার করে নীচেই অবস্থান করবে।
২৫. কেমন পৃথিবী কামনা করেন?
কাজল চক্রবর্তী : শোষণমুক্ত পৃথিবী
গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব
মে ৫, ২০২৪
অসাধারণ সাক্ষাৎকার। খুবই ভাল লাগল। যা বলার অকপট বলেছ।কোথাও কারচুপি নেই। তোমার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
কমল দে সিকদার।
পঁচিশটি প্রশ্নোত্তরে সমৃদ্ধ সাক্ষাৎকারটি পড়লাম। বেশ ভালো লাগলো। সাবলীল আলাপ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন: “ বাংলাদেশে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ বাংলাভাষা মূর্ত। ভারতে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী বাংলাভাষা মূর্ত নয়। ভারত ও বাংলাদেশের সাহিত্যে এই তফাৎ চোখে পড়েই। দুদিকের জীবনসংগ্রামের ধারা এক নয়, আর জীবনসংগ্রামের ইতিবৃত্তই সাহিত্য। কাজেই কোনো মিল নেই, বাংলাভাষার ব্যবহারও এক নয় ।” এমন সহজ সত্য সবাই উচ্চারণ করতে পারে না। অবশ্য কিছু কিছু বিষয়ে আরও বিস্তারিত বলতে পারতেন। কিন্তু এখন তো আমার দীর্ঘ লেখা পড়তে চায় না কেউ। অতএব সার্বিক বিবেচনায় একটি সুন্দর সাক্ষাৎকার।
কাজল দার সাক্ষাৎকারটি পড়লাম। ভালো লাগলো। খুব সাবলীল উত্তর দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের জন্য সম্পাদককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সহজ-সুন্দর।
খুব ভালো লেগেছে।