spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধতমালিকা'র কবিতা : সহজিয়া জীবনের অনবদ্য বিস্ময়

লিখেছেন : তৈমুর খান

তমালিকা’র কবিতা : সহজিয়া জীবনের অনবদ্য বিস্ময়

তৈমুর খান

কবি তমালিকা পণ্ডাশেঠকে(১৯৫৬-২০১৬) কবি হিসেবেই প্রথম চিনেছিলাম। ২০০৫ সালে প্রথম হলদিয়ার কবিসম্মেলনে গিয়ে খুব কাছ থেকে তাঁকে প্রথম দেখি। আমার কবিতার বই ‘খা শূন্য আমাকে খা’ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কয়েকটি কবিতা উল্টেপাল্টে পড়েই বলেছিলেন ‘বেশ লেখ তো!’ তারপর অনেকদিন চলে গেছে। তাঁর শেষ চিঠি পেয়েছিলাম বাংলা ১৪২২ এর শারদ সংখ্যা ‘আপনজন’ পত্রিকায় লেখার আমন্ত্রণ পত্র হিসেবে। তিনি আজ আর সশরীরে আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তাঁর সৃষ্টির অম্লান প্রাচুর্য স্পর্শ করেই তাঁকে প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে পারি।
তাঁর রাজনীতিজ্ঞ পরিচয় আজও আমার কাছে গৌণ। আমি মনে করি তাঁর কবিসত্তা অনেক বড়, আবহমান তার ব্যাপ্তি। জীবনের ধ্বনি-প্রতিধ্বনির শিহরন সেখানে উপলব্ধি করতে পারি। তাঁর রাজনৈতিক সত্তা ছিল সম্পূর্ণ বাহ্যিক, কর্তব্য বা দায়পরবশ গ্রস্ত। তাই সর্বদা পরাধীন ও জটিল প্রেক্ষাপট সমন্বিত একটি ব্যাপার। কিন্তু কবিসত্তা সম্পূর্ণ নিজস্ব স্বাধীন এবং আন্তরিক ও সহমর্মিতায় প্রচ্ছন্ন একটি সত্তা। একান্ত আত্ম-উপলব্ধির দর্শন ও প্রাণবৃন্তে মুকুলিত হবার অনবদ্য প্রয়াস। যতবার কবি তমালিকাকে দেখেছি এবং ওঁর কবিতা পড়েছি, ততবার মুগ্ধ হয়েছি। অতি সাধারণ নিরাভরণ এবং শান্তশ্রীর ললিত মাধুর্য ফুটে উঠেছে তাঁর মধ্যে। কী কবি হিসেবে, কী ব্যক্তি হিসেবে তিনি সারল্যের প্রতিমূর্তি হিসেবেই উপস্থিত হয়েছেন। সব পরিচয় ছাপিয়ে আজ তিনি পূর্ণ সিদ্ধির এক ব্যক্তিত্বময়ী শিল্পী যে শিল্প শুধু কবিতা শিল্পকেই সমৃদ্ধ করেনি, পত্রিকার সম্পাদকীয়গুলি পাঠ করলে বোঝা যাবে, গদ্য সাহিত্যেও তাঁর কতটা অবাধ ক্ষমতা ছিল। বাংলা সাহিত্যের পাঠক নিশ্চয়ই তাঁকে আবিষ্কার করবেন। তাঁর কবিতা ভাবনা নিয়েই কিছুটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা এই লেখাটির উদ্দেশ্য।
বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ এবং অসংখ্য অগ্রন্থিত কবিতা তিনি রচনা করে গেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল: ‘হঠাৎ এখানে রামধনু’, ‘ভালবাসার অণুপরমাণু’, ‘মানুষ বলেই এত পারে’, ‘ছেদহীন কথার প্রহর’, ‘হৃদয়ের মধ্যে থেকো’। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘একটি কোরকের মুক্তি’, ‘নদীর স্বভাব-চরিত্র’, ‘অন্তরীন অভিমান’, ‘ধুলি থেকে তুলে নাও পাপ’, ‘তৃষ্ণার্ত তটের দহলী’ প্রভৃতি।
কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ প্রভৃতি সমস্ত বিষয়েই তিনি কলম ধরেছেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত ‘হঠাৎ এখানে রামধনু’ কাব্যটি পাঠক মহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কবি চেতনার মূল বিভাবটি এই কাব্যেই লক্ষ করা যায়।
তমালিকা পণ্ডাশেঠ ছিলেন একনিষ্ঠ, একাগ্র অবিচল জীবন শিকারি। সর্বদা লক্ষ্য স্থির রেখেই তিনি তাঁর বোধের টংকারে শব্দযোজনা করেছেন। কবিতায় লিখেছেন সেকথা:
“তোমার জন্য আমি অর্জুন—লক্ষ্যে স্থির—”
শুধু মাছের চোখেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন। সমূহ জগৎ সংসারের ভাসমান বস্তুতান্ত্রিক বিবৃতির ভেতর কবি যেতে চাননি। প্রেমের মৌলিক ও পৌরাণিক মিথেই প্রেমের রাজ্যে প্রবেশ করেছেন। যদিও প্রেমের রাজ্যে কঠিন পাড়ি দেওয়া, কবিও তা জানেন। তবু পরম ও চরম কৃচ্ছ্র সাধনায় এই একাগ্রতা:
“পৃথিবীর সব স্রোত একদিকে
অন্যদিকে আমি
বিপরীত স্রোত ঠেলে
কেবলই তোমার দিকে এগিয়ে চলেছি।”
যদিও দূরত্ব কিছুতেই কমেনি। প্রেমের পথ তো অসীম ও অনন্ত। জীবনানন্দ দাশ হাজার বছর ধরে হেঁটেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বারবার পেয়েও হারিয়েছেন। এই যাওয়া তো যাওয়া নয়, পাওয়া তো পাওয়া নয়—সবই অধরা, সবই শূন্যতার এক অভিনব কষ্ট যাপন করা। এই কষ্টকেই বরণ করেছেন কবি। তাঁর সমগ্র কাব্যচেতনা জুড়ে অমোঘ এই কষ্টের পরিচিতি মানবীয় উৎসারে আর্ত ও বিপন্ন করে তোলে। কবিতা যে হৃদয় থেকে নির্গত হয়েছে তা বুঝতে পারি। অবশ্য তমালিকার প্রেম বলতে ইন্দ্রিয় নয়, দেহ নয়, এক অনন্ত আত্মারই মোক্ষম বিস্ময়। শূন্যতা সেখানে থাকেই, কিন্তু কিসের শূন্যতা তা পরিমাপ করা যায় না। এই ভাবনা থেকেই জর্জ গর্ডন বায়রন উপলব্ধি করেছিলেন ‘And thus the heart will break, yet brokenly live on.’ হৃদয়ের আর্তি বা শূন্যতাতেই প্রেমের অনুজ্ঞাটি বিরাজ করে। মানুষ জানে সব, কবিও জানেন, ‘তবু যুগে যুগে সেই বিষই গলাধঃকরণ করেছে’; আর একটি কবিতায় অকপটভাবে সে-কথা লিখল়ন:
“আমার বুকভরা সেই অমৃতস্বাাদী গরল
আমাকে—আমার চেতনাকে বিবশ করে রেখেছে”
পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যবান মানুষের হৃদয়,তাই হৃদয়ের কাছেই বারবার ফিরে এসেছেন তিনি। ‘অপেক্ষা’ শব্দটিও সন্ন্যাসিনীর একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর হয়ে উঠেছে।সমস্ত জীবনভর কবির ঘোষণা: ‘বসে আছি নিঃশেষে উজাড় হব বলে’। এর চেয়ে বড় কথা,বড় সমর্পণ আর কী হতে পারে!Ralp Waldo Emerson নামে বিখ্যাত আমেরিকান কবি ও প্রাবন্ধিক বলেছেন:
“Dream delivers us to dream, and there is no end to illusion. Life is like a train of moods like a string of beads, and, as we pass through them, they prove to be many-colored lenses which paint the world their own hue. . . .”(Experience)
অর্থাৎ স্বপ্ন আমাদেরকে স্বপ্ন দেখায়, এবং মায়ার কোনো শেষ নেই। জীবন একটি পুঁতির স্ট্রিংয়ের মতো মেজাজের ট্রেনের মতো, এবং আমরা যখন তাদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তারা প্রমাণিত হয়েছে বহু রঙের লেন্স যা বিশ্বকে তাদের নিজস্ব রঙে আঁকছে। প্রেমের রূপের তো শেষ নেই।অপেক্ষার যেমন শেষ নেই,তেমনি স্বপ্নেরও শেষ নেই।মোহ যেমন অশান্ত ,প্রেমিকের অন্তরও তেমনি বর্ণময় পৃথিবীর স্বপ্নে বিভোর।উদ্বেগ,উৎকণ্ঠা আর দায়বদ্ধতা নিয়ে ভালোবাসার স্রোতে কবি তাড়িত হয়েছেন।কোনো বাধাকেই বাধা বলে মানতে চাননি।জীবনের বেগ সবকিছুকে চুরমার করে এগিয়ে যেতে চেয়েছে। কবিমাত্রেই দার্শনিক,শুধু প্রেমই নয়,তাঁর মধ্যে আত্ম-অন্বেষণ থাকবে না তা কি হয়? সত্যকে সবসময়ই তিনি খুঁজে পেতে চান। রবীন্দ্রনাথও প্রশ্ন করেছিলেন ‘কে আমি?’ তমালিকাও প্রশ্ন করেছেন:
“আমি কে?
কে আমাকে আনল ডেকে
এই অবেলায়?
আমি কি ভূমিষ্ঠ হইনি?
মাটি কি কোল দেয়নি আমাকে?
আমার শিরায় কি রক্তের নীল রঙ্!”
‘আমি’র উত্তর খুঁজতে গিয়ে সমূহ প্রাণের উৎসেই ফিরে গেছেন।কিছুটা প্রকাশ হলেও নিজের মধ্যে অনেকটাই অপ্রকাশ থেকে গেছে।মাটিতে জন্ম নিয়েছেন, অথবা শরীরে নীল রক্ত নিয়ে নয় তা বলতে চেয়েছেন।নিজের আদিসত্তা বা প্রাগৈতিহাসিক সত্তাকেই অবলোকন করেছেন।’আমি’র রহস্য ভেদ করা সহজ নয়।রবীন্দ্রনাথও শাশ্বত ব্রহ্মকেই নিজের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন।তমালিকাও তা-ই পেয়েছেন। এই চেতনা তো রাইনার মারিয়া রিলকের মধ্যেও ছিল: “It is part of the nature of every definitive love that sooner or later it can reach the beloved only in infinity.”
অর্থাৎ এটি প্রতিটি নির্দিষ্ট ভালোবাসার প্রকৃতির অংশ যে শীঘ্রই বা পরে এটি কেবলমাত্র অসীমতায় প্রিয়জনের কাছে পৌঁছাতে পারে। Love song এর চিরন্তন আবেদন তো অনন্তে গিয়েই মিলিত হয়। তা তো কোনো ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। প্রিয়জন তো সেই অন্তরেই কোনো নির্ধারক ধারণা যা প্রকৃতির মধ্যেই বিরাজ করে। কবি নিজের অস্তিত্ব নিরীক্ষণ করেন অনন্ত প্রেমের আধারেই বলে প্রশ্নও জেগে ওঠে ‘মাটি কি কোল দেয়নি?’, ‘শিরায় কি রক্তের নীল রঙ্’ ইত্যাদি।মানসিক বিস্তারের ভেতর কবির স্বয়ংক্রিয়তা বা অবচেতন মনের ক্রিয়ার চলাচল শুরু হওয়া—কবির মধ্যেও বারবার ঘটেছে।কবিতায় লিখেছেনও সেসব:
“অর্ধেক চেতনা—অর্ধেক আচ্ছন্ন অবস্থায় মনে হয়
বিছানায় নয়—
তোমার সঙ্গে বসে আছি
নাটশালে নদীতীরে সবুজ মাদুরে
অবচেতন মন জুড়ে তুমুল বৃষ্টি
মনে হয় এক ছাতায় জড়সড়
তোমার সঙ্গে গড়ের মাঠ পার হচ্ছি”
অবচেতন মন জুড়ে তুমুল বৃষ্টির ভেতর কবিকে বারবার হারিয়ে যেতে দেখেছি। বৃষ্টির সঙ্গে মিশে হেসে ওঠা,কিংবা গঙ্গার ছলছল কন্ঠে নিজেরই কন্ঠস্বর উপলব্ধি করা অনন্তেরই বিস্ময় নিয়ে সৃষ্টিক্ষেত্রে আত্ম-অন্বেষণের নিবিড় আশ্লেষ উপলব্ধি করা কবিতাকে ব্যাপ্তি ও অনন্তের চিরন্তন বোধে পৌঁছে দিয়েছে।
শেষ পর্যায়ের কবিতাগুলিতে বারবার দার্শনিক চেতনা ফিরে এসেছে।নিজেরই ছায়াবৃত্তে জীবনলিপির অমোঘ সূত্র রচনা করেছেন। ‘জীবন গাথা’ নামের একগুচ্ছ দীর্ঘ কবিতায় নিজের দুটি সত্তাকে মুখোমুখি বসিয়েছেন।একটি সত্তা ‘নাস্তিক’ হলেও আরেকটি সত্তা ‘ঠাকুর ভক্ত’। আড়ালে ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়েছেন।একটি সত্তা অন্য সত্তাকে বলেছে:
“আমি জানি নানাবিধ ভয়ে তুমি ঈশ্বরগামী”
এই ঈশ্বরবোধ কবির একান্ত ব্যক্তিগত, বাইরে তার কোনো আড়ম্বর দেখা যায়নি। জীবনের অনিশ্চয় গতিবিধি,মৃত্যুচেতনার নান্দনিক উত্থান কবিকেও ভাবিয়েছে:
“যত দূরে চলে যাও,তত অনিশ্চয়, তত ভয়,
লাউডগার মতো,পুঁইলতার মতো পেঁচিয়ে ধরে অস্তিত্ব।”
আঁকড়ে ধরে থাকা অস্তিত্বের অভিক্ষেপ সংকীর্ণ অহমিকার আবহ ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চেয়েছে। বাস্তবের জৌলুস,ঐশ্বর্যময় জীবনের কৃত্রিম অভিরূপ নিজস্বতাকে ঢেকে ফেলতে চায়।তাই কবি বিদ্রোহিনীর মতো সব চুরমার করে দিয়ে শুধু নিজেরই মুখোমুখি বসতে চেয়েছেন। অমাত্য-স্তাবক,অর্থী-প্রার্থীদের ভিড় ঠেলে নিজেরই অনুরক্ত অপাঙ্গে নিত্য নিবেদন জমে উঠেছে। ভুল মায়া-মরীচিকা,ভুল জীবন-মরণ ছাপিয়েএই অন্বেষণের ধারাটি তাঁর কবিতায় আত্মপ্রবাহের steam of myself-কেই উদ্বোধিত করেছে।কবিতায় লিখেছেন:
“ইচ্ছেনদী বাড়তে বাড়তে
শতধা খরস্রোতা”
সেই ‘ইচ্ছেনদী’ জীবনগান The song of life যে গানে সামিল হয়েছে ছোটবেলার গল্প.খেলাধুলা,ভয় ও স্বপ্নের ধারণা, চরিত্র গঠনে নানা ক্রিয়াকলাপ,নতুন বউ হয়ে আসার স্মৃতি এবং একান্ত নির্জনতা। কখনও পায়রার জীবনধারাও কবির নিরীক্ষণে মিশে গেছে। জীবনের বহুধা বিস্তারকেও গ্রহণ করেছেন কবি—কখনও ‘উদ্ভিদ জীবন’, কখনও ‘পাখি জীবন’। উদ্ভিদ জীবনের প্রজ্ঞায় লিখেছেন:
“তবু সেই পুষ্পও দেবতার দান,
পরমাত্মার ম্লান মুখ,মানুষের অজ্ঞান।”
পাখি জীবনের প্রজ্ঞায় লিখেছেন:
“প্রতিদিন তোর এত ডাকাডাকি
সর্বদা জোড়া,সর্বদা অনুসারী,কেবল মানুষ একাকী।”
মানুষের অজ্ঞানতা থেকে একাকিত্ব কবির, প্রকৃত অর্থেই সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো এক দার্শনিক অভিজ্ঞতাই এনে দেয়। এক বাস্তব জীবনের আত্মদগ্ধ চেতনার কবি বলেই কখনও তাঁর কবিতায় অলীক ফ্যান্টাসি স্থান পায়নি।জীবনের নানা বাঁকে উপলব্ধির চরম ক্ষেত্রগুলি কবিতায় তুলে এনেছেন। সময়ের ধুলোবালি তাঁর বোধকে ম্লান করতে পারেনি। যদিও ‘আলো’ ও ‘কালো’র দুই প্রেক্ষাপটই সমানভাবে স্থান পেয়েছে।
কবি তো জীবনকেই লিখতে জানেন,সময়ের তরঙ্গকে আত্মস্থ করেই তাঁকে এগিয়ে যেতে হয়।তমালিকাকেও তাই করতে হয়েছে।রাজনীতির ক্ষমতায় থেকেও কবিতা স্লোগান বা বিবৃতি হয়ে ওঠেনি। উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য তিনি কবিতাও লেখেননি। অন্তরের শূন্যতা ও আবেগ থেকেই কবিতায় আত্মার কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত করে তুলেছেন। নিজেকে বলতে চেয়েছেন:
“আয়নার সামনে দাঁড়াও সকাল সন্ধ্যায়
প্রতিদিন বারবার নিজের প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা অত্যন্ত জরুরি।”
আয়নার সামনে দাঁড়ানো কবি ছাড়া আর কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। নিজেকে দেখার, নিজের হৃদয়ের কথা বলার ক্ষমতা কবিরই আছে। তমালিকা সুচারুভাবে এই কাজটি করে যেতে পেরেছেন। কবিতা নির্মাণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অবকাশ তাঁর ছিল না, কিন্তু self-mirror হিসেবে নিজেকে দেখার দৃষ্টিটির কখনও ব্যত্যয় ঘটেনি। নায়িকা Rebecca Loss একবার বলেছিলেন “I am not trying to give an image of fairytale, perfect, everything else,I am just being myself.”
অর্থাৎ আমি রূপকথার একটি চিত্র দেওয়ার চেষ্টা করছি না, একেবারে নিখুঁত, অন্য সবকিছুই, আমি কেবল নিজেরই হয়ে যাচ্ছি। জন্মে স্প্যানিশ ,অ্যাংলো-ডাচ গ্ল্যামার মডেলের এই কথাটি মেনে নিলে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও নিজস্বতাকেই আমরা চোখের সামনে ফুটে উঠতে দেখি। তমালিকা পণ্ডাশেঠ সম্পর্কেও কথাটি একশো ভাগ সমর্থনযোগ্য।তিনি নিজে যা নন,তা কখনও দাবি করেননি।সমগ্র শিল্পীসত্তা জুড়ে তাঁর একটাই নিবেদন ‘I am just being myself’. তাঁর কবিতা সহজিয়া সেই জীবনের অনবদ্য বিস্ময়,যাকে আমরা খুব কাছ থেকে স্পর্শ করতে পারি,ভালবাসতে পারি এবং প্রাণের ঐশ্বর্যে আত্মস্থ করে নিতে পারি।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ