spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধইসলাম প্রশ্নে ঔপনিবেশিক পাণ্ডিত্যের রাজনৈতিক চেহারা : তৃতীয় পর্ব

ধারাবাহিক আলোচনা। লিখেছেন : মুসা আল হাফিজ

ইসলাম প্রশ্নে ঔপনিবেশিক পাণ্ডিত্যের রাজনৈতিক চেহারা : তৃতীয় পর্ব

মুসা আল হাফিজ 

পাঁচ

 খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে রচিত একটি Glossarium Latino-Ara-bicum  আরবী ও ল্যাতিন অধ্যয়নের জনপ্রিয়তার জানান দেয়। এটি ছিলো আনুমানিক  ১১ হাজার মৌল ল্যাটিন শব্দসমৃদ্ধ, যার মধ‌্যে এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ অনুবাদ করা হয়নি।   খ্রিস্টীয় তেরো শতাব্দীতে প্রণীত  Vocabulista in Arabica ছিলো অপেক্ষাকৃত অগ্রসর ।  এতে ছিলো প্রায় ৪০০০ মৌলিক ল্যাটিন শব্দ এবং প্রায় ৮০০০ আরবি নির্দেশক শব্দ । এগুলো ব্যবহৃত হয় ল্যাতিন ভাষা থেকে আরবী অনুবাদে এবং আরবী ভাষা থেকে ল্যাতিন অনুবাদে।  পশ্চিমা দুনিয়ায় ইসলাম ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বিষয়ক লিখিত গ্রন্থের  আদিরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় Moses Sefardi (১০৬৫-১১২১) এর কিছু রচনাকে। সেফার্ডি ছিলেন স্পেনিশ ইহুদী। ১১০৬ সালে খ্রিস্টধর্ম্ গ্রহণ করেন এবং petrus alphonsi নাম গ্রহণ করেন। ইতিহাসে তিনি Pedro De Alfonso নামে বিখ্যাত। মুসলিম স্পেনে তিনি উন্নত শিক্ষা লাভ করেন, আরবীয় চিকিrসা ও জ্যোতির্বিদ্যায় হন পারদর্শী। অনুবাদ করেন এরাবিয়ান নাইটস এর। কিংডম অব এরাগন এর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। ফ্রান্সে অবস্থান করেন লম্বা সময়। তারপর চলে যান ইংল্যান্ডে। সেখানে রাজা হেনরি-১ (মেয়াদ-১১০০-১১৩৫)  এর চিকিrসক   নিযুক্ত হন । সেখানে আরববিজ্ঞান ও জ্ঞানকলার বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি বরিত হতে থাকেন। তার  De Dracone, in which he calculates movements of the stars কিংবা অধিকতর প্রসিদ্ধ de Astronomia , contains an astronomical grid according to the arab ছিলো এ সময়ের গুরুত্ববহ রচনা। ইসলামবিষয়ক তার রচনার স্বাক্ষর রয়েছে তার প্রণীত Dialogi in quibus impiac Judaesrum Confutantur গ্রন্থের পঞ্চম খণ্ডে।

Peter The Venerable (১০৯৪-১১৫৪) ছিলেন Cluny এর বেনেডিকটাইন গির্জার প্রধান। টলেডো নগরে তিনি গেলেন, ইসলামের পাঠলাভ করলেন এবং জ্ঞান ও নবচিন্তা তাকে আলোড়িত করলো। স্পেনের টলেডো মুসলিমদের কাছ থেকে তখন দখল করে নিয়েছে খ্রিস্টশক্তি। ১০৮৫ সালের এ ঘটনার পরে শহরটি হয়ে উঠে রোমান চার্চের প্রধান এক কেন্দ্র। এ শহর ছিলো একটি চ্যানেল, যেখান থেকে আরব জ্ঞান ইউরোপে পাচার করা হতো। শত শত আরবগ্রন্থ ল্যাতিনে অনূদিত হয় এখানে। আর্চবিশপ ডন রেমেুনদো (কার্যকাল :১১২৫-১১৫১) এ প্রক্রিয়াকে করেন ত্বরান্বিত। আরবী গ্রন্থ অনুবাদের কাজে আরোপ করেন ধর্মীয় ও জাতিগত মহিমা। ধীরে ধীরে টলেডোকে অনুসরণ করে কার্তেজ, টোলাইজড, রেইমস, টুরস, এবং প্যারিস। অগণিত আরবী গ্রন্থ এসব শহরে জড়ো হয় এবং ল্যাতিন অবয়ব পেতে থাকে। ট্টাবজোনের গ্রীক অনুবাদ স্কুল হতে থাকে মুসলিমদের গ্রন্থে একাকার। বার্সেলোনার লেপিটাস অগণিত গ্রন্থ সংগ্রহ করেন ঘুরে ঘুরে। দশম শতক থেকে এটি এক ধারাবাহিক উদ্যমে পরিণত হয়। দ্বাদশ শতকে দেখি, এক গেরহার্ড ভন ক্রিমোনা অনুবাদ করেন ইবনে সিনা, রাজি, ফারাবি,কিন্দিসহ সেরাদের বিশালাকার নব্বইটি গ্রন্থ।প্লেটো ভন টিতোলি ১১২০ সালে সম্পন্ন করেন আল বাত্তানি অনুবাদ। যার নাম তিনি দেন Handbook of Astronomy , এক পর্যায়ে তা ইউরোপে জনপ্রিয় হয় এবং টলেমির জ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত হয়। বাত্তানির নাম গ্রন্থ থেকে উধাও হয়ে যায়। অনুবাদক ও অগ্রসর যাজকদের কাছে এটা ছিলো নতুন ধরণের এক যুদ্ধ। পিটার দ্য ভেনারেবল এ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ এক নাম। আরবী ভাষায় পণ্ডিত কিছু সহযোগির প্রয়োজন তিনি অনুভব করেন। যারা মুসলিম জামেয়াসমূহে শিক্ষালাভ করবেন এবং মুসলিম জ্ঞানকলায় হবেন প্রাজ্ঞ। এমন সহযোগি লাভ করতে তার বিলম্ব হলো না। পিটার সিদ্ধান্ত নিলেন, শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞানের গ্রন্থ অনুবাদে চলবে না। ইসলামের শাস্ত্রীয় গ্রন্থাবলী তাদের ভাষায় যাওয়া প্রয়োজন। আল কুরআন,আল হাদিস, ফিকহসহ মৌলিক ও প্রধান বিষয়সমূহ তাদের চর্চায় থাকুক। অতএব কুরআন মজিদ ও আরো চারখানা গ্রন্থ অনুবাদের এক পর্ষদ গঠনে তিনি সক্ষম হলেন। এ পর্ষদে ছিলেন Robart of ketton এবং Harmanan Of Delmatia . বিশাল কর্মযজ্ঞ। ১১৩৪ সালে সমাপ্ত হলো অনুবাদ। পিটার নিজে এসব অনুবাদের টীকা সংযোজন করলেন এবং ব্যাখ্যা দুটি রচনা করলেন । যার একটি হলো, Summa Totius Haeresis Saracenorum আরেকটি হচ্ছে, বিতর্কপ্রবণ ও বিস্তৃত গ্রন্থ liber Contra Sive Haeresim Saracenorum । এগুলো পশ্চিমা ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে Cluniac Corpus নামে।

পিটার তার সহযোগিদের নিয়ে সম্পন্ন করেন ইসলামী আইনের ল্যাতিন সঙ্কলনপ্রণয়ন। যার নাম ছিলো Lex Mahumet pseudoprophete যার ইংরেজি দাঁড়ায় Law of Muhammad the pseudo-prophet/false prophet. মানে ভণ্ডনবী মুহাম্মদ এর বিধান। পিটারের অন্যতম সহযোগী ছিলেন টলেডোর আরবী অনুবাদকেন্দ্রের প্রধান ও ধর্মগুরু pedro Alvarez De Toledo । উভয়ের প্রচেষ্টায় বিচিত্রসব গ্রন্থ ও ভাষ্য রচিত হচ্ছিলো। যা ইউরোপীয় মেধাকে নতুন এক পথের পথিক বানায়। তাদের

তত্ত্বাবধানে অনূদিত প্রচারিত হয় Apology of al-Kindi . ইউরোপের পরবর্তী জ্ঞানেতিহাসে যার প্রভাব অবর্ণনীয়।

ভেনারেবলের সময়টি ছিলো ক্রুসেডের ডামাডোলে কম্পমান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্রুসেডে লড়ছে, মরছে। ছয়টি ক্রুসেড ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং এর রক্ত ও জখমে পশ্চিমা মনে ইসলাম মানেই প্রধান প্রতিপক্ষ। যাকে পরাজিত করতে না পারার গ্লানিতে তারা জর্জরিত। এবোট বার্নার্ড অব ক্লেয়ারভক্স (১০৯০-১১৫৩) এর আহবানে ইউরোপ তখন সপ্তম ক্রুসেডের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১১৪৭ থেকে ১১৪৯ অবধি যা জারি থাকবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন সপ্তম লুইস এবং তয় কনরাড। এ ক্রুসেডের প্রধান আহবায়ক ছিলেন ক্লেয়ারভক্স। তিনি অভিহিত ছিলেন সম্মানজনক সেন্ট বার্নার্ড অভিধায়। ছিলেন ফরাসী গির্জার প্রধান। বেনেডিক্টাইন সন্যাসবাদের পূণরোজ্জীবন হয় তার হাত দিয়ে। তার প্রভাব ছিলো প্রশ্নাতীত।

ক্লেয়ারভক্সের ক্রুসেড আহবানের প্রতিবাদ করেন ভেনারেবল। তার কথা ছিলো, এভাবে সফল হওয়া যাবে না।যুদ্ধ শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না। এটা অনেক গভীর, আনেক ব্যাপক।

ইউরোপ ভেনারেবলের কথা শুনেনি। ক্লেয়ারভক্সের ডাকে সাড়া দিলো এবং লক্ষ লক্ষ সৈন্যের আরেকটি অভিযান প্রাচ্যের দিকে প্রেরিত হলো। কিন্তু এ অভিযানের ফলাফল ছিলো চরম হতাশাজনক। পরাজয় ও বিপর্যয় ছাড়া এ থেকে তারা কিছুই লাভ করতে পারেনি।

ভেনারেবলই সঠিক প্রমাণিত হলেন। তিনি ও তার অনুসারিরা আরো জোরে বলতে লাগলেন, সশস্ত্র যুদ্ধ দিয়ে নয়, মুসলিমদের হারাতে হবে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে। তাদের মেরুদণ্ড গুড়া করতে হবে আগে। সেটা সম্ভব কেবল সাংস্কৃতিক যুদ্ধে। তাদেরকে হারাতে হবে আদর্শিক যুদ্ধে। সে আদর্শ খোঁজে নিতে হবে ইসলাম থেকেই। তাদেরকে মোহগ্রস্ত করতে হবে খ্রিস্টিয় ভাবধারায়। জাগতিক প্রতিটি উপকরণে অর্জন করতে হবে সমৃদ্ধি। তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ এতে পশ্চিমারা তাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে সীমাতিরিক্ত পর্যায়ে।তাদের আসল শক্তি ইসলাম। একে করতে হবে নিস্প্রাণ। রোধ করতে হবে ইসলামের প্রচার। সেজন্য হতে হবে ইসলামবিশেষজ্ঞ। তারা যে সাংস্কৃতিক প্রাণরস লাভ করেছে ধর্ম থেকে, সেটা থেকে তাদের করতে হবে বিচ্ছিন্ন। এটা সম্ভব হলে তাদের হারানো কোনো ব্যাপারই নয়।

ছয়

ইউরোপের অসংখ্য মেধাবী ভেনারেবলের চিন্তাকে অবলম্বন করলো। ইসলামচর্চার উদ্যম বেড়ে গেলো। পশ্চিমা স্কুল সমূহ ত্যাগ করে মেধাবীরা ভর্তি হতে থাকলো আরবী স্কুলে। ব্রিটেন থেকে নিয়ে জার্মান-গ্রিস, ফ্রান্স-ইতালি কিংবা নর্মানদের মধ্যেও এ প্রবণতা ছড়ালো। এতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু শাখা-প্রশাখার চর্চা ও বিকাশ ত্বরান্বিত হতে থাকলো। অনেকেই কেবল ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতিবিশেষজ্ঞ হলেন। তাদের হাতে সম্পন্ন হতে থাকলো বহু রচনাকর্ম। Raymond Martin (আনু.১২৩০-১২৮৬) রচিত Pugio Fidei Adveros Mauros et judaaeos পশ্চিমা দুনিয়ার তখনকার অন্যতম জ্ঞানপুরুষ Raymond Hull (আনু. ১২৩১১১-১৩১৫) রচিত Liber De gentili et Tribus sapientibus এবং liber de Taratari et Christiani, এবং Ricoldo de monte crocc (মৃত্যু- ১৩২১) রচিত Dispotatio Contra Sarasenos et Alchoranum ( Improbatio Alchorani) এবং libellus ad Nationes Orientales ইত্যাদি গ্রন্থ ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমা মনে নতুন ভাবধারা তৈরী করে। যা নতুন বিজয়ের আবেগে, ঘৃণার বিস্তারে, হিংস্র চিত্রায়নে এবং আধিপত্যের উদ্দীপনায় উদ্বেলিত।

অল্প ব্যবধানে ইউরোপে ইসলাম সম্পর্কিত রচনার বন্যা বয়ে যায়। সেসব লেখার প্রায় সবই ছিলো উদ্ভট, মিথ্যা ও আজগুবি। কারণ ইসলামকে মূল উত্স থেকে জানার জ্ঞান এসব লেখকদের মধ্যে তখন ছিলো না। তখনকার খ্রিস্টান লেখকদের মধ্যে আরবী ভাষায় সুদক্ষ ছিলেন সর্বোচ্চ বিশজন।

মধ্যযুগের পশ্চিমা দার্শনিক Raymond lull প্রতিষ্ঠা করলেন একটি মাদরাসা। ম্যাজোরকা দ্বীপের মিরামার এলাকায় খ্রিস্টান মিশনারীদের শিক্ষার জন্য সে মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে কুরআন-হাদীসসহ ইসলামী জ্ঞানের বিবিধ বিষয় পঠিত হতো। এ নিয়ে শেখানো হতো সংলাপ ও বিতর্কপদ্ধতি। ১২৭৬ থেকে ১২৯৪ সাল অবধি এ মাদরাসা চালু ছিলো। এ মাদরাসা পরবর্তি ইউরোপকে ইসলামচর্চার নতুন দিশা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ইসলামী অনুষদসমূহে হারিয়ে গেলো। তারই সুপারিশের ফসল অচিরেই ডালপালা বিস্তার করলো। The Council of Vienna প্রাচ্য ভাষার অধ্যয়নকে নিয়মিত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো ১৩১১সালে। প্রাচ্যভাষা বলতে বুঝানো হবে, আরবী, গ্রিক, হিব্রু ও সিরিয়াক ভাষা। ইউরোপের প্রধান পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ক পৃথক শাখা তৈরী হলো। দুইজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এসব শাখার পাঠদান জারি রাখা হবে। রোম, বোলোগানা,প্যারিস, অক্সফোর্ড , স্যালামাঙ্কা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হলো অন্যান্য ভাষার সাথে প্রাতিষ্ঠানিক আরবীচর্চা।

চার্চের তরফে ইসলাম জানার প্রয়াস বাড়ে। ফ্রান্স -ইতালিতে প্রভাবশালী ক্লুনিয়াক মঠের নবীন রূপ  বেনেডিকটাইন এ ব্যাপারে ছিলো বিশেষ উদ্যমী। সম্রাট শার্লেমন এর পৃষ্ঠপোষকতা ছিলো এ ক্ষেত্রে। পশ্চিম ইউরোপে  বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর উন্মেষের এ লগ্নে ইসলাম হয়ে উঠে এমন শত্রুদের জ্ঞান, যাকে জানতে হবে।   ডোমিনিকান ও ফ্রান্সিসক্যান গীর্জাগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে।ইসলাম ও খ্রিস্টবাদের দ্বন্দ্ব চলমান ছিলো। পাদ্রীদের জবানীতে ইসলাম হাজির হচ্ছিলো নিকৃষ্ট অবয়বে। এই অবয়ব তৈরীর পেছনে ছিলো না আদৌ কোনো পাঠ। আলবার্ট্ হুরানি দেখিয়েছেন এ সময়ে পশ্চিমা খ্রিস্টবাদ ইসলাম সম্পর্কে এতো মিথ্যাচারী ও বিদ্বেষবিষাক্ত প্রোপাগাণ্ডা চালাতো, যা দেখলে কোনো মুসলিম তাদেরকে সুস্থ মনে করবে না।

এ পরিস্থিতি তৈরী করলো অধিকতরো পরিশীলিত চাহিদা। ইসলামকে জেনে আক্রমণ করতে হবে এবং দেখাতে হবে, তার তুলনায় খ্রিস্টবাদ কতো ভালো। ইতোমধ্যে দুই জনগোষ্ঠীর নানা অংশে তৈরী হয়ে গেছে পারস্পরিক যোগাযোগ। ফলত পরস্পরের বিশ্বাসের মূল্যায়নও আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। ক্রুসেডের ভয়াবহ পরিস্থিতি মুসলিম জাহানকে তেমন কিছু না দিলেও খ্রিস্টবিশ্ব তা থেকে লাভ করে নবজীবন। ইসলামকে জানা ও উপস্থাপনের  প্রশ্নে এ সময় বিশেষ মাত্রা  পায় প্রাচ্যবিদ্যা। উইলিয়াম মন্টোগোমারী ওয়াট দেখিয়েছেন, তখনকার প্রাচ্যবিদ্যা ইসলামকে দেখাতো চারটি প্রধান অবয়বে। এক ইসলাম এক মিথ্যাচার, সত্য থেকে বিচ্যুতি এবং প্রকৃত সত্যের সাথে সচেতন প্রতারণা।দুই. এ হচ্ছে  ঘৃণা, হিংস্রতা ও আগ্রাসনের এক ঢেউ। অস্ত্র ‍ও সংঘাতকেন্দ্রিক এক ধর্ম। তিন. এর চরিত্র হচ্ছে ভোগপরায়ন। ইহ ও পরকালীন ভোগের  লোভ উস্কে দেয় সে। মানুষের ঋপুকে সকল পথে উত্তেজিত করে এবং সরবরাহ করে প্রবৃত্তির খাবার। চার. হযরত মুহাম্মদ সা. হচ্ছেন যিশুখ্রিস্ট্রের দুর্মর এক দুশমন। যিশুর আদর্শ রাখতে হলে তার আদর্শের উচ্ছেদ জরুরী। কেননা যিশুর আদর্শের প্রতিপক্ষ আদর্শ এটি। এন্টিক্রাইস্টের বৈশিষ্ট সে ধারণ করে। তার অনুসারিদের মধ্যে পাওয়া যায় গগমেগগের মিল।

একাদশ-দ্বাদশ শতকীয় এ ইসলামচিত্রায়ন পরবর্তী ইউরোপ যে পরিহার করতে পারেনি, এর নমুনা দেখায় নরম্যান ডানিয়েল এর ইসলাম এন্ড দি ওয়েস্ট । ১৯৬০ সালে এডিনবরা থেকে প্রকাশিত এ গ্রন্থ ইসলামপ্রশ্নে পশ্চিমা মনের যে ছবি আঁকে, তা কেবল উল্লেখিত চার বৈশিষ্টকে আরো গভীর ও সূক্ষ্ম অর্থে উপস্থাপন করে এবং প্রসারিত করে।ইসলামপ্রশ্নে  এই দীর্ঘ শতক সমূহে পশ্চিমা মন বস্তুনিষ্ঠতার পথে খুব কমই এগিয়েছে। হয়তো ইচ্ছে করেই প্রাচীন ঘৃণার ঐতিহ্যকে সে আকড়ে ধরেছে এবং এই ধারণকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে রোমান চার্চ । ইউরোপে যখন রিফর্মেশন হলো, তখনও এই চার বৈশিষ্টকে ইসলাম আকারে দেখা ও দেখানোর ধারায় ছেদ পড়েনি।রিফর্মেশন এই ভ্রান্তিকে প্রশ্রয় শুধু দেয়নি, নানাভাবে  জোগান দিয়েছে রক্তজল!

[ চলবে…]

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

এ্যাডঃমনিরুল ইসলাম মনু on গুচ্ছ কবিতা : বেনজীন খান
পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা