সোনালু ফুলের রেণু
০১.
কোথাও অসুখ নেই। নৃত্যের মহড়া…
ছায়া, তুমি নৃত্য করো ফসলের ক্ষেতে।
এ গাঁয়ে জোছনা নেই, আঁধার রয়েছে।
তপ্ত দুপুরের পর বিকালের শান্ত
রোদে সরিষাফুলের হলুদাভ ছোঁয়া।
সন্ধ্যায় মেঘের উপরে রক্তিম দৃশ্য।
কিছুক্ষণ পর চন্দ্রালোকে জোছনার
জলে ভেসে যাবে আলো-আঁধারের ঢেউ।
শিশিরের জলে স্নান করে সাদা ভোর।
রাত্রি নেমেছে মাঠের শেষে, ফসলের
ক্ষেতে। অদূরে সবুজ, শস্যের সন্তান।
ক্ষেতের ভেতরে সকাল। দুপুর নামে
রোদ্দুরের তপ্ত দেহে। বিকালের ক্ষেতে
কোথাও কিরণ নেই। বাতাসে আঁধার।
০২.
প্রিয় নারী, বাড়ি, গাড়ি, টাকা-কড়ি নেই।
সব সত্য। সময় অভাবে ভালোবাসা
দেখানো হয়নি কখনো। সংসার নেই।
একা একটি বাড়িতে বসবাস করি।
ঘরভর্তি বইয়ের স্তূপ। কবিতার
প্রজাপতি মধ্যরাতে টেবিলে ঘুমায়।
আমার কোনা পুকুর নেই। জলাশয়ে
নামতে নারাজ। স্নানে রাজি নই আমি।
পাখি এলে তার সঙ্গে কথা বলি রোজ।
ভাত দিই। পাখিতে-পাখিতে ভরে যায়
মাটিগ্রাম। গ্রামের সীমানা-শেষে নদী।
জলের উপরে ভেলা, স্রোতে ভেসে যায়।
তবু বেশ ভালো আছি। একাকী, নিঃসঙ্গ।
সিথানে গোলাপ ফুল, পাপড়িতে জল।
০৩.
আহত আকাশ দেখে মর্মাহত চাঁদ।
মায়াবী মেঘের চোখে শিশিরের জল।
কালো মেঘের পতন হলে সাদা মেঘ
বাড়ি ফেরে। যেমন, পাখিরা নিজগৃহে…
এ বড়ো আশ্চর্য কথা! সূর্যের উত্তাপে
পুড়ে যাচ্ছে মাটি ও মানুষ। নদ-নদী
শুকিয়ে মৃত্যুকে বরণ করেছে কাল।
মৃতদের লোকালয়ে জ্বলে ভেজা চাঁদ।
আসবে, অথবা আসবে না কেউ। সূর্য
পশ্চিমে একটু হেলে গেলে সরে যায়
ছায়া। এবড় মজার খেলা। খেলাচ্ছলে
পুড়ে যায় বর্ষা, কথিত মেয়ের দেহ।
আহত আকাশ মৃত্যুমুখী। মেঘচরে
পুড়ছে বসতি। কোথাও মানুষ নেই।
০৪.
প্রাচীন আগুনে পোড়াবো তোমাকে। মানুষ ও ছায়া
একসঙ্গে হাঁটে। বাতাস ফিরেছে। এলামেলো হয়ে
যাচ্ছে গোলাপের ডাল। ভালোবাসা, আজকাল মিথ্যা
মনে হয়। বসন্তের প্রজাপতি আলোর উঠোনে। প্রেমিক
আসেনি। প্রেমিকার চোখে জল। এতো মৃত্যু, এতো
অবিশ্বাস! মৃত্যুভয় দেবালয়ে থাকে। সফেদ কাগজে
জলছাপ দিয়ে ফিরে যায় সহজ কোকিল। প্রত্যাশা
অনেক। স্বপ্নতত্ত্বে ঘুমিয়ে পড়েছে বিহারের দিব্যজ্ঞানী।
মন নেই। সম্মোহন আছে। আগন্তুক এলে, জলপাখি
নিয়ে যাবে জলের বাড়িতে। সেখানে থাকবে, খাবে,
অঘোরে ঘুমাবে…
০৫.
মিথ্যার কুহকে দেখি কেশবতী মেয়ে। তার বুকের
ভেতরে বিছানা পেতেছি। ভালোবাসি যমুনার কূল।
অনেক কথার ভাঁজে প্রেমপূর্ণ চিঠি। চিঠিতে লিখিত
আছে মিলনের কথা। ঠিকানা হারিয়ে গেছে। অগণিত
অন্ধকার থেকে খুঁজে নেব তার শিহরিত মুখ।
মায়াজলে মিশে গেছে স্বপ্নের শিশির। অনেক
খুঁজেছি। পাইনি কোথাও…
০৬.
আলোর চিবুক থেকে ঝরে পড়ে জল। জলের যৌবন
দেখে কুমারী নদীর চোখ। চোখভর্তি জল। আপ্লুত
স্বক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার কেতকী। জলবতী
মেঘের দু’পায়ে জলের নূপুর। বেজে ওঠে আকাশের
বিজন বাড়িতে। রক্ষিত সম্পদ থেকে একমুঠো ফুল
নিয়ে খুশি হয় নীলাঞ্জনা। প্রেমের মৌসুম নয়। তবুও
প্রেমিক আসে। প্রেমিকার আগমনে খুশি হয় কল্পিত
রোদ্দুর। ছায়ার মমতা মেখে উড়ে যায় কতিপয়
পাখির পালক। জলের উপরে মেঘ। জলীয় মেঘের
মায়া বৃষ্টি হয়ো ঝরে…