১.
সন্ধ্যাবন্দনা
…….
বোতল উপুড় করে অবশিষ্ট
দিনের আলো
ক্রমশ গলায় ঢালছিল অন্ধকার
আমরা তখন সন্ধ্যাকে বানিয়ে নিই
একটা বিনোদনমূলক সম্প্রচার টুল
তমসাঘন স্ক্রিনে আশার ইন্দ্রজাল
ডিসপ্লে করি ড্রোন উড়িয়ে
বিস্মিত বিহ্বল অগণিত চোখে সমীহার কুঁড়ি ফুটতে দেখে
পেশীর তাকদ দেখাতে
নীরবে বসিয়েছি এনিমেটেড ডাম্বেল পুলিং
সেইসাথে,
আশির্বাদের পুরিয়া থেকে পেট ঠান্ডা করা দৈ
অঙ্গীকার ও আশ্বাসের অজস্রতা থেকে পুষ্টিকর পথ্যসকল,
ছোলা দুধ ডিম ফলমূল
পয়দা করে প্রতিদিন জোগান দিয়েছি
মনের ভাইটামিন।
মন তো অস্পৃশ্য, সর্বংসহা মশায়ের গায়ে
সবল প্রোটিন লাগিয়ে
গড়েছি ইনক্রেডিবল বায়ুযান
সবটাই এলইডি লাইটের বহুবর্ণ
আলোর প্রক্ষেপণে।
এখন অনঢ় কোনও সাহসী সহিস
সমীহ জাগানো ঘোড়া নিয়ে
রেসকোর্সে আসে না
সুহৃদ বাতাস আমাদের তন্ত্রসজ্জার ঘ্রাণ
অকৃপণ ঔদার্যে ছড়িয়েছে দিগন্ত পেরিয়ে
খুরে ভূমিকম্প তোলা তেজী অশ্বগুলি
এতটাই হকচকিয়েছে যে, মায়ের ভাষায়
চি হি বলতেও ভুলে গেছে।
তা যাক, স্কাই শো চলছে, রেসলিং রিংজুড়ে তুমি দেখ
মোহাম্মদ আলীর পায়ে বর্ণাঢ্য নৃত্যছন্দ
হয়তো পাবে মুন ওয়াকের ব্যাজার্থবোধক ব্যঞ্জনা
কবিতার মেলোট্রাজিক স্বাদও।
ঘনীভূত অন্ধকার ও চিত্তরঞ্জক রঙিন সন্ধ্যা
দীর্ঘজীবী হোক।
০৭.০৫.২০২৪ মঙ্গলবার।
২.
হ্যাঁ বলতে বলতে
……..
রেসের ঘোড়া না, গ্রীবা টান রেখে
প্রাণপণ ছুটতে পারি না
ঋষভের রোখ নেই, উদ্ধত শিং নেড়ে
না বলা শিখিনি
কম্ম নয় বেড়া ভেঙে দৌড়ে বাজি জেতা
জন্মাবধি জি হুজুর বলতে বলতে দেখি
বিনত কপাল ঠেকে দুপায়ের ফাঁকে
উটের পিঠের ধাঁচে বেঁকেছে শিরদাঁড়া।
২৯.০৪.২০২৪ সোমবার।
৩.
সূর্যাস্ত দেখার স্পট
……..
সূর্যাস্ত দেখবো বলে অপেক্ষা করছি
এসে গেছি খানিকটা আগেই
এত আগে কেউ তো আসে না!
ঠিক ধরেছেন, পর্যটনে এরকম হয়
স্পটে যেতে একদম ত্বর সয় না
জায়গাটা এতো মনোরম!
বসলেই মন শিকড় চাড়িয়ে দেয়–
ডানদিকে দুরূহ পাহাড়
বামে বহুদূর গেছে সবুজ প্রান্তর
পেছনে প্রাচীন বন
যে যেমন বাহনে আসুন মানা নেই
বন ফেলে এক দুপা এগুলে সৈকত
তারপর তা তা থৈ রূপার তরল, আকাশের রঙ গুলে নীল
কদ্দূর যে গেছে সীমাহীন!
ডুবে যেতে যেতে সুরুজের শেষ রঙ খেলা
দেখতে হলে এর চেয়ে যুৎসই স্পট
ভূ-ভারতে একটাও নেই।
২১.০৫.২০২৪ মঙ্গলবার।
৪.
কবি
……
তিনিই তো সেই কবি
ধানের খোসার মধ্যে ভরে দেন গাঢ় সাদা মদালস দুধ
কার্তিকের বেগানা বাতাসে
অচিরে যা ফুরফুরে চাল হয়ে ওঠে।
কিশোরীর বুকে কাঁচা সিঁদুরে গুটির রীতি মেনে
গাভিন ধানের থোড়ে শিউরে ওঠে ঝিমানন্দ ঢেউ।
তিনিই তো সেই কবি
জাদুকাঠি কাতরে ওঠে ধ্যান ভাঙা প্রেমে
সূফীর গিলাফে নাচে রাতভর রঙিন পেখম
আকাশের আশির্বাদ উপচে পড়ে মুক্ত জলাধারে
মা-পাখি গলায় তোলে জল জলা জঙ্গলের
সুচয়িত অজীর্ণ আধার
সূচিসূক্ষ্ম মননের স্বাদু অন্নদানা
গুঁজে দেবে বলে আর্ত শাবকের অধৈর্য হায়ে।
তিনিই তো সেই কবি
যখন শ্রান্ত চাষী পিঁড়ি পেতে পট কাটে অলস দাওয়ায়
গানের তীক্ষ্ম মীড়ে দেশী লোকাচার, দেশী বুলি
পাখি ও কাকলী
তুলে দেন হাল বাওয়া গাতকের ঠোঁটে।
সে সুর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে
দোতারার রজঃঋদ্ধ দেহাতী শরীরে
আয়নিত মেঘের নিয়মে
চোখ রাঙে ঝড়ের বাতাস
বজ্রচেরা রূপকের মনোজ্ঞ বুটিকে।
মলিন পঙ্কে ফোটে বিশ্বজোড়া রক্তকমল।
২৩.০৫.২০২৪ বৃহস্পতিবার।
৫.
আঁধার, জোছনা মাখামাখি
………
কতটা আঁধার ছেনে তার সাথে কতটুকু মেশালে জোছনা
নীল বেদনার মতো আবছায়া রঙ ফোটে তোমার শরীরে?
কত অভিমান আর বিরহের কতটুকু মেশালে যাতনা
গগনরেখায় ফোটে ঊর্ধ্বমুখি তোমার চিবুক, গ্রীবা ধীরে?
বুঝি না চোখের ভাষা, প্রশ্রয়ের, নাকি চাপা নিছক বিদ্রুপ,
কোন তুলাদণ্ডে মাপি হাসি আর অধরের বাঁকানো স্বরূপ!
দেখেছি রূপের জাদু সন্ধ্যার আলো আর আঁধারির ধ্যানে,
প্রতীমা গড়েছি খাঁটি কনকদানার সাথে বিজুরি-ছটার গূঢ় পানে।
ভরা পূর্ণিমার চাঁদ দিকে দিকে পেতেছে রূপের চোরা ফাঁদ
পৃথিবীর সব রূপ, সব মায়া, ছায়াবাণী মনে হয় তোমার প্রসাদ।
মদির তনুর ঘ্রাণ নিঝুম রাতের ঘুম চুপি চুপি নিয়ে গেছে কেড়ে,
হুতাশী নয়ন ধীরে জলে ভরে আরক্তিম স্মৃতির দুয়ারে কড়া নেড়ে।
সোনায়-সোহাগা যদি চায় লোকে, আমি চাই ছায়া শ্যামলিমা
বাঙলার গৃহলক্ষ্মী পটে আঁকা অপরূপ নিসর্গ নীলিমা।
২২.০৫.২০১৯ বুধবার।
৬.
খেলার ছলে
…….
যাচ্ছো কোথায় তিড়িং বিড়িং
কোন প্রেমিকের ঘর
এইতো আছি তোমার প্রেমিক
তোমার ঐশী বর।
বর নেবে তো একটু দাঁড়াও
চোখ নামিয়ে ধীর
আঁচল বেঁধে নেবে কি বর
করো মনস্থির।
পড়শী তুমি বাল্যকালের
বন্ধু জেনেছি
কত না দিন সন্ধ্যা সকাল
বৌছি খেলেছি।
খেলবো বলে সেদিন সাঁঝে
যখন ডেকেছি
বৌছি খেলার ছলে তোমার
কপাল ছুঁয়েছি।
আজকে আবার বলছি ডেকে
মোল্লা বাড়ির ঝি
খেলতে খেলতে প্রেম যদি হয়
কোন হুজুরের কী?
২৮.০৫.২০২৪ মঙ্গলবার।
৭.
বন পোড়ে
…….
গাছ কি পাখিকে ডাকে
পাখিও কি বসে সব গাছে
তবু পল্লবিত শাখা মেলে চেয়ে থাকে
আমিও পাশে আসন রেখেছি
মন যদি না চায় বোসো না
ভিড় ঠেলে, ক্লান্ত, এলে কোনদিন, পাবে
না এলে নাচার!
আর্ত পাখি বন্ধ করে পাখা
দক্ষিণের উষ্ণ জল ছুঁয়ে
রণে ও রতিতে দ্বিধামাত্রে লিখিত গো হারা
চুলচেরা দেখে নেওয়া ভালো।
বাম বুকে ছেড়ে যাওয়া খাঁ খাঁ টুকুজুড়ে
হা হা করে মনখারাপেরা
বন পোড়ে!
১৬.০৫.২০২৪ বৃহস্পতিবার।
৮.
স্প্রিন্টার
…….
ট্র্যাকে নামিয়ে দিয়ে বললে, দৌড়াও
একশো মিটারের রেস
ক্রীড়াবিদ নই, ত্বরিত সাড়া দিতে পারিনি
শুরুতেই এক সেকেন্ড দেরি হয়ে গেল
পলক ফেলার আগে ক্ষিপ্র প্রতিদ্বন্দ্বীরা
পায়ে তুলে নিলো ছুঁড়ে দেয়া বুলেটের গতি
রেস ফুরিয়ে এলো মুহূর্তে
আজন্মের ঢেরু আমি, শুরুতে সেই
এক সেকেন্ডের ব্যবধান
শেষ পর্যন্ত আর ঘুচাতে পারিনি
তিনজন মেডেল গলায় ছবি তুলছে
আঙুলে ভি আকৃতির গৌরব আঁকছে
শ্রান্ত আমি ট্র্যাকে বসে কপালের ঘাম মুছি।
১১.০৫.২০২৪ শনিবার।
৯.
হতভাগা
……..
পৃথিবী কপালপোড়া, হতভাগা হয়েছে এতিম
বহুকাল অবসরে নাটগুরু জয়িফ জিউস
কে নেবে এ হৃৎপিণ্ড রক্ত বিষ ফুকো ফুসফুস
নবজাতকের মুখে ছুটা ন্যানি ঘষে দেয় নিম
রোজ পিয়ে নির্দ্বিধায় তেতো পানি ঝিমের লাটিম
মানুষ ফানুস ভেবে লীলা রঙ্গে বেহেড বেহুঁশ।
অপেক্ষার ক্ষণ গোনে মহাকাল; ও প্রমিথিউস
জ্বালাবে কি হিম রাতে আজ ফের অগ্নি মাধুরিম!
ভক্তিহীন কবিকুল দেবতার চিনেছে প্রতিমা
বেলফুল দুর্বা তৃণে স্তুতিগাথা করেছে রচনা
নেতিতে প্রতীতি নাকি, ভাঁজে সুর ভাবের বেণুতে
কালো গন্ধরাজ ফোটে কবিতার অহল্যা তনুতে
ক্যাশ গুঁজে দিয়ে জেবে শ্যামকাকা ছকে প্ররোচনা
বিপ্লব গণিকা হলে ক্যাপিটলে, কার কী ক্ষতি মা!
২৭ ০৪.২০২১ মঙ্গলবার।
১০.
বিশ্বাসের বণিক
………
শেষ বিলয়ের কাল এসে গেছে নাকি!
প্রশ্ন করে বিশ্বাসের নিরীহ বণিক
সূর্যের তপ্ত গোলক থেকে ডানা মেলে তামাটে সারস
সহসা লাফিয়ে নামে, শিহরিত চুলের গোড়ায়
কালের অমোঘ গতি বিড়াল ছানার মতো দুপায়ে জড়ায়
শূন্য আর একের রহস্যভেদ করে দুঁদে পদার্থ বিজ্ঞানী
সেনিটাইজারে খুব ভালো করে ধুয়ে নেয় খর্বকায় হাত
পরমাণু বোমা আর করোনার চেয়ে
ভালো কোনও আবিষ্কার তার হাতে নেই আর
আত্মঘাতী তিনি পুরোহিত।
হাল্লাজের রুহের জোনাক ঘুরে ঘুরে অনন্তের পথে নির্বিকার
আকাশের স্তরে স্তরে অন্ধকারে জ্বালায় আলোক।
২৭.০৪.২০২০ সোমবার।
১১.
নিশিথের বাঁশি
………
যত নদী মরু পথে ঘুরে ঘুরে তরঙ্গ তুলেছে
যত পাখি ডালে বসে গান গেয়ে ফিরে ফিরে গেছে
তাদের গানের কলি কিছু কিছু আজও মনে আছে
মরমের তারে তারা মরমিয়া পূরবী গেয়েছে।
যারা সরে গেছে দূরে ডানা ঝেড়ে রাতের অমায়
তারা মুছে নিয়ে গেছে অকারণ হাসি রাশি রাশি
রঙিন পালক ফেলে গেছে মৌন ঘাটের সীমায়
ভালবাসি বিনির্জন সে গহীন নিশিথের বাঁশি।
২৬.০৪.২০২০ রবিবার।
১২.
বাঁশির দংশনে
………
আমাকে শিকার করে যে বাঁশির মর্মভেদী সুর
সে আমার বন্ধু রাখালিয়া, ঘুম কাড়া ফাগুন দুপুর।
ইশকুলে আসেনি সে, আমিও যাইনি গোচারণে
শুধু তার বাঁশির ছোবলে কূলহারা দু’ডানা মেলেছি
বসেছি মোষের শিঙে, দোয়েল ফিঙে ভাদাহরা
বাবুইয়ের ঘরে বসে কত রাত আকাশ ছুঁয়েছি
সে অলীক লিপির সুরভি জানে ক্লান্ত ধূসর ডায়েরি!
বালকের গুলতিতে কাঁখের কলসি ফুটো হলে
হলুদিয়া বধূটির রাগরাঙা ভ্রুকুটি দেখে হেসে কুটিকুটি
কোচরে গুলতি ভরে দস্যি রাখাল ছিল পাতার আড়ালে।
কত শত পাখির বাসায় সেঁধে দাওয়াত নিয়েছি
ছানাদের অসহিষ্ণু হায়ের ভিতর এক দুটো
পিঁপড়ের ডিম, শুঁয়ো পোকা
ভরে দিয়ে টুপ করে পালিয়ে এসেছি, অনুযোগ করেছে মা-পাখি।
অলিরা কচাল করে কান ভারি করেছে ফুলের
তুমি ছিলে তবু বেখবর।
ঢেউ তোলা কত নদী, কত মগ্ন জলের হাওর
কাঁধে ভর করে হেঁটে গেছে
মুখর বসার ঘরে ছলাৎ জলের মীড়ে ঐকতান তুলে
কত কেউ চা-টা খেয়ে টাটা বলে গেছে!
সবারই একটা করে জোড়কলম কেটে, পেছনের বাগানে পুঁতেছি।
নদীগাছ খরস্রোতা গাছনদী হলে
গুণ টেনে গিয়েছি উজানে
মন দেয়ানেয়াগুলো কী যে বেহিসেবী ছিল আহা!
জানে না রাখাল সখা, নিদারুণ তার পোড়া বাঁশি!
২০.০৪.২০২২ বুধবার।
১৩.
তবুও বিরহ
………
ডুবে গেছে চৈতী একাদশী
ঘুমন্ত পৃথিবীর ছাদ
ভিজে ওঠে নির্ঘুম নক্ষত্র নিয়রে
সরসর পাতার মর্মরে
জান্নাতের নির্জন নূর তিরতির কাঁপে
ছায়া ঝোপে ডানা ঝাড়ে কাতর তিতির
গোপন রক্তপাতে জানফানা হলে
আকাঙ্ক্ষার তেজে ফণা তোলে শঙ্খচূড়
উদ্বাহু মিকেলেঞ্জেলোর রমণী
নেমে আসে বিশ্বাসের সদানন্দপুরে
মধুকূপ থেকে ওড়ে ঊর্ধ্বমুখী জল
মাধুকরী শেষে সাধু একতারার বোলে
কেন তবু ধরফরায় মদির বিচ্ছেদী!
২০.০৪.২০৩৪ শনিবার।
১৪.
আমাকে কাঁদতে দাও
……….
বলেছিলে বুক খুলে জোছনা দেখাবে
তাই তো হেসে বসিয়েছি রাণীর আসনে
মন কেড়ে এ তুমি কী করলে রূপসী
দেখালে ঘেয়ো কুঁচকানো কালো পিঠ!
দুঃখ পেয়েছি, ভীষণ কান্না পাচ্ছে
কারো হাসি পেলে সে হাসুক
আমি কাঁদবো
কাঁদবো ঘটা করে
কাঁদবো হাপুস নয়নে
আছাড়ি পিছাড়ি কাঁদবো
যেমন কাঁদে গুম হওয়া স্বামীর স্ত্রীটি
বিনা ওয়ারেন্টে তুলে নেয়া সন্তানের মা
পৈতৃক জমি বেদখল হলে চাষী
মাটিতে উপুড় হয়ে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদবো
কাঁদবো নয়া ডাণ্ডাবেড়ি ঝনঝন তুমুল ঝাঁকিয়ে
ভব্যতার কেতা শেখাতে এসো না
আমাকে কাঁদতে দাও অনুতপ্ত গুনাগার
বান্দার মত রাতভর অঝোর বৃষ্টিতে।
১৮.০৪.২০২৪ বৃহস্পতিবার।
১৫.
তোর ছোঁয়া জলে
………
ওপাড়ে তুই বসে
পানিতে পা ভিজিয়ে জলপরী
মধ্যে ঝিনাই তিরতিরে ঢেউ ভাঙে
আমি বললাম, যাবো?
তুই নিশ্চুপ, চোখ ফেরালি না তো
আচ্ছা বাতিক, মুদ্রাটি বিখ্যাত
কোন ভরসায় নদীতে সাঁতরাবো?
এইপাড়ে এক কম্পিত বুক কবি
তোর ছোঁয়া জল ছুঁয়েই হিয়া রাঙে
দৈবে যদি
চোখ তোলে অপ্সরী!
এক নাইওরির গয়না চলে গেল
কণ্ঠে মাঝির রহিম-রূপবান
দেখলি না তাও অধর ভাঙে
কলির কালাচান।
০৮.০৪.২০২৪ মঙ্গলবার।
১৬.
শুককীট
……..
বসন্ত হাপিস সেই কবে
বারান্দা পেরিয়ে কার্নিশের ভ্যাদা বাংলা পাঁচে
লটকে আছে ল্যারবেরা রোদ
এতদিনে তেলছাড়া হাঁড়ে
নাহক টাটিয়ে ওঠে পুরনো জখম
আঁতকা টান মারে জান ধরে
মাজুল কলিজা কাঁপে
নিপাট উপাখ্যানে লাগে বুঝি আস্তা ছ্যারাবেরা।
বৈশাখী ঢাকে ঢেউ তুলেছিল নদী
মাতোয়ালা মন তাতে বজরা ছেড়েছিল
আজ সেই রক্তের জ্যান্ত শুককীট
বেবাক পালক কাটে সোনার মুকুটে!
মহাকাল তুঙ্গ রাজাসনে
পাথরের চোখ থির, দোলে পেন্ডুলামে।
০৬.০৪.২০২৪ শনিবার।
১৭.
প্রথম আগুন জ্বেলেছিল নারী
(একটা পরীক্ষামূলক অনুমানতত্ত্ব)
………
পাথর ঘঁষে যে প্রথম আগুন জ্বেলেছে
গবেষক তার লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পেরেছেন
কিনা জানি না
তবু মেঘ করলে বৃষ্টি হতে পারে এটুকু বোঝার
মত সূক্ষ্ম মাথা খাটিয়ে
একটা জটিল অনুমানতত্ত্ব খাড়া করেছি।
তত্ত্বমতে, সে ছিল এক তেঁতে ওঠা
মিশকালো পাথরের নারী এবং নিরেট দ্রাবিড়।
দ্রাবিড়ের ডিএনএতে আদিমতম
মানুষের
ইতিহাস আছে, শুনেছি সে কথা
বিজ্ঞানসম্মত।
তবে কালো পাথরের মেয়েই যে প্রথম
আগুন জ্বেলেছে
এ কিন্তু নিছকই অনুমান নয়
প্রেমাগ্নিযজ্ঞের ঐতিহাসিক নমুনা হিসাবে
হাতের কাছে কৃষ্ণমূর্তি ক্লিওপেট্রা তো আছেনই
আমাদের তেঁতে ওঠা পাথর রমণী।
৩১.০৩.২০২৪ রবিবার।
১৮.
বলুন সকলে মা শা আল্লাহ
………
ঢাকা বেশ দুধেভাতে আছে
ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও দুর্ভাবনা নেই
অয়োময় দুঃখগুলো
দুশো বছরের টানা হামানদিস্তায়
ঠুকে ঠুকে
অনেকটাই জীর্ণ এখন
ঠিক সেই মুহূর্তে
কতিপয় মন্দলোক বিশেষজ্ঞ সেজে
গুজবের গুদাম মেলেছে, লাউড স্পিকারে
নির্বিকার বলে যাচ্ছে, নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভের পানি
নাগরিক বুক থেকে
নেমে যাচ্ছে বিশ্বাসের স্বচ্ছ জলস্তর
কিশোরীরা ভুলে যাচ্ছে ঋতুমতী হতে।
সম্মানীয় কাতিবেরা ছেড়ে যাচ্ছে
কাঁধের আসন
মেধার কোটর থেকে অত্যাবশ্যক স্নেহ।
কত কী যে হাবিজাবি বলে মীরজাফর!
বলে নাকি, চেতনার ঝানু শওদাগর
ঘরে ঘরে বিলিয়েছে নিবীর্যের বড়ি
শিথিল মুঠোর ঘামে পিছলে যাচ্ছে সুবর্তুল
প্রেয়সীর স্তন
রাবারের চুষনি মুখে ঢাকার সন্তান
ভুলে আছে
পুষ্টিকর দুধের সন্ধান–
আচ্ছা বলেন, এইগুলি কোন কথা!
মাইক্রোফোন দিই বলে যা ইচ্ছা চোপা ঝাড়বেন
এর নাম বাক-স্বাধীনতা! রাবিশ! রাবিশ!!
ঢাকা বেশ সুখে আছে নরম গদিতে
ঢাকের বাদ্যি ক্রমে বোশেখের
চারুচক্র থেকে
কেন্দ্রীয় মসজিদের মুক্ত সীমা ছেড়ে
চলে যাচ্ছে টিএসসির দিকে, ওপাশে মা কালীর মন্দির।
আসলে ঢাকার কোনও দুর্ভাবনা নেই
সত্যি তো উড়ছে খুব, আহা মেট্রোরেলে–
শোর তুলে বলুন সকলে, মা শা আল্লাহ!
২৯.০৩.২০২৪ শুক্রবার।
১৯.
একটি টকাস চুমুর সুখটানে
………
এই যে তোমার রিমঝিমেতে সুখ
জানলা পেতে
পোহাও একা জলের সুরধ্বনি
মন ভারি খুব মেঘের মেয়ে
ঢল হয়ে যায় বয়ে
বুকে সবুজ পাহাড় ভেজে চুপে
আমার অসুখ
পিঠ পোড়ানো রোদে
সূর্যটাকে ডানায় বেঁধে রোজ
বাইসিকেলে চরাই আকাশময়
চিলের গলায় চেঁচাই তারস্বরে
বনের বোঁটায় গান হয়ে ফুল ফোটে
নাও যদি এক দুটি, নিতেই পারো,
কিন্তু জানু
তিলের দামে টগর পাবে নাকো
হাফিজ মনের বাণিজ্য শেখেনি
খোঁপার দানি ভরতে পারি দানে
একটি টকাস চুমুর সুখটানে।
২৭.০৩.২০২৪ বুধবার।
২০.
এখনও সচল আছি
………..
দেখেছি তো, কতজন মাঘে মাঘে সোলম পাল্টালো
আমি সেই জন্ম থেকে পুরনো গতরে
ছোবা ও সাবানে ঘঁষে তেলকাষ্টা
ছাতা তুলি রোজ
বিফল কোশেস করি জেল্লা যদি ফেরে
দুই বেলা নারৈলের ত্যাল শৈল্যে ডলি
খুঁতখুঁতে তিনি নাকে ফোঁত তুলে কন
লোলচর্মে ক্রান্তির কহর পড়েছে
উন্নত গ্রীবা রাজহংসী ধ্যান ছেড়ে
রোজা মুখে রাজ্জাকের নামে জপ ধরো
দুয়ায়ে ইনুছ পড়ো খালেছ জবানে
এখনও তো দম ধরে জং পড়া ঘড়ি।
মুজতাহিদ ফারুকীর কবিতা অসাধারণ। কবি ও সম্পাদক উভয়কে ধন্যবাদ।
২০টি কবিতা প্রকাশ করায় সম্পাদককে অনিঃশেষ ভালোবাসা জানাই।