spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : উম্মে হাবীবা

গুচ্ছ কবিতা : উম্মে হাবীবা

বিশ মে

অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে
ধুয়ে যাচ্ছে বিশ মে
উদযাপন ভুলে গেরস্থালী শিখছি
ওষুধ খরচ বেড়ে যাবার আশংকায়
বাড়িয়ে নিচ্ছি পানি পানের অভ্যাস
জীবনকে যাপন করা শেখা হলে
আমরা অতীত ফিরিয়ে আনবো

এখন জংশন থেকে মালবাহী ট্রেন
বিনা হুইসেলে ছেড়ে যাক
লাইন ম্যানের ফ্লাগ ছুঁয়ে দৌড়ে
পালিয়ে যাক জনৈক পাগল
বিস্বাদ চায়ের কাপে উড়ে আসুক
মাছিদের দলনেতা

মোটা চালের ভাতে হামলে পড়ুক
ক্ষুধার্ত নীলফামারী কুড়িগ্রাম
তথা সমগ্র উত্তরবঙ্গ।

ঘুড়ি

দ্রষ্টব্য এড়িয়ে
চিঠির চরিত্র নিরূপণ করতে পারো
বলতে পারো আমের মুকুলের গন্ধে
তোমার বমি পায় সাথে যৌনতা

মধ্য পুকুরে বসে থাকা দুপুর
মাছের ঘাই খেয়ে ঈষৎ সরে গেলে
কুচকাওয়াজ তোলে পোনা রুই
চঞ্চল চঞ্চুতে কেঁচো তুলে
শূন্যে উড়ে যায় ধবল বক
চিঠির চরিত্র তার জানার কথা
কাদার আদরে গেঁথে যাওয়া পা
নির্মিত যৌন বোধ খিদের তাড়না
ডিম ফুটলে ছানা এক চোখ কানা

দ্রষ্টব্য পড়ে ভাঁজ করা চিঠিতে
যেসব প্রেমিক আজও চুমু খায়
তারা নির্বোধ চরিত্রহীন নয়
আমের মুকুল প্রেমের বার্তাবাহক
গোলাপি হাওয়া মিঠাই
কিশোরীর হাতে লাল কাঁচের চুড়ি
কারো নাটাই কারো শুধুই ঘুড়ি।

ঘুম বাড়ি

আমিও ঘুমের দিকে মুখ ফেরাই
সেদিকে খোলা কবাটের বুক নিয়ে
আমার দিকে ফেরানো তোমার মুখ

পরিণত চুম্বনে রাতের পৃষ্ঠা ভরে গেলে
আমাদের দুইজোড়া হাত পরস্পরকে কাছে টেনে নেবে

প্রথম বন্ধনী দ্বিতীয় বন্ধনী তৃতীয় বন্ধনী
এরপর চতুর্থ বন্ধনীর দেয়াল টপকে

আমরা এক নির্জন ঘুমবাড়িতে পৌঁছে যাবো।

আমিরাবাদ

কাঁধ শুঁকে দেখো
সাগরের নুন মেখে এসেছি
কালোজামের মতো আঙুলে
পাহাড়ি রোদের বাহার
কোমর থেকে পায়ের পাতা
রতিকান্ত সময়ের ছাপ
দুটো হ্রদের মুখোমুখি সংঘর্ষে
কি-ই বা করার থাকে
উৎসুক জনতার

উৎসবকালীন ভাতার জন্য
সবাই বোতাম খুলতে জানে না
জর্দা সেমাইয়ের কুচানো বাদাম
দুধে ফোলা কিসমিসের জন্য
অর্থের টানাটানি নিত্যকার
অনাড়ম্বর সংসারে একটা ঘর
কোথায় যে ফেলে এলাম
আমিরাবাদ নাকি শান্তির হাটে
পরিমিত ঘুম হলে হয়তো
ঠিকঠাক মনে পড়বে।

শুশ্রূষা

আমি বাঁ হাতে মদের গ্লাস ধরি
ডান হাতে সূর্য উঠলে জ্বর মাপতে হয়
লেবুগাছের সমান পুণ্য জমা করে
খোদার কাছে বলি
তোমার সকল পাপের জন্মদাতা আমি
সুতরাং প্রায়শ্চিত্ত যা সব আমার
আলোয় তোমার ঘর ধুয়ে দেয়া হোক
চোখে জুঁইফুল ফুটে ঝরে যাক

প্রতিরাতে যাদের সন্তান মরে যায়
তারা কেউ অভিশপ্ত নয়
থার্মোমিটারের অভাবে
তারা সন্তানের জ্বর মাপতে পারেনি
হসপিটালে এখনো জলপট্টি বিক্রি হয়
চলো তোমাকে নিয়ে যাই
যেহেতু আমি বাঁ হাতে মদের গ্লাস ধরি
আর ডান হাতে সূর্য উদিত হয়
শুশ্রূষার উপযুক্ত হাত আমার নেই।

আরও পড়তে পারেন

2 COMMENTS

  1. উম্মে হাবীবার কবিতা আমি এই প্রথম পড়লাম। প্রথম কথা হলো, তার কবিতা ভালো লেগেছে। ভাবনার গভীরতাকে প্রকাশ করেছেন শৈল্পিক সাবলীলতায় । প্রয়োজন মাফিক পরিহাস/ স্যাটায়ার গুঁজে দিয়েছেন কবিতার ভাঁজে ভাঁজে। চিত্রকল্প রচনায় সাহসী তিনি। তার কবিতায় রস আছে, প্রাণ আছে। এই পঙক্তিগুলো ভালো না লাগার কারণ নেই: “ মোটা চালের ভাতে হামলে পড়ুক / ক্ষুধার্ত নীলফামারী কুড়িগ্রাম / তথা সমগ্র উত্তরবঙ্গ। “ কিংবা “উৎসবকালীন ভাতার জন্য / সবাই বোতাম খুলতে জানে না ” অথবা “ প্রতিরাতে যাদের সন্তান মরে যায় / তারা কেউ অভিশপ্ত নয় / থার্মোমিটারের অভাবে /তারা সন্তানের জ্বর মাপতে পারেনি /হসপিটালে এখনো জলপট্টি বিক্রি হয় ” ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি