spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাফরহাদ মজহার এর কবিতা : আলহামদুলিল্লাহ

ফরহাদ মজহার এর কবিতা : আলহামদুলিল্লাহ

আ ল হা ম দু লি ল্লা হ

আম্মা বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, তাঁর কন্ঠ সদা সর্বদা কৃতজ্ঞতায় ভেজা থাকত
কিন্তু বিজয়ীর বেশে অস্ত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে বজ্রনির্ঘোষে আমরা বললাম ‘জয়বাংলা’
মা সন্তান ফিরে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ !
নয় মাস মায়ের চোখে পানি ছিল না, ফলে আরবি অক্ষর গুলো নদীর স্রোত হোল
অতঃপর চলল মেঘনায়, বাংলার সব জল বঙ্গোপসাগরেই ফিরে যায়।
তারপর চোখের জল মেঘ হয়, হিমালয় ভ্রমণ শেষে বর্ষা হয়ে ঝরতে থাকে।

অথচ আমাদের অহংকারগুলোকে আমরা কালো কোট বানিয়েছিলাম
আমাদের লোভ আর লালসাকে বানিয়েছিলাম মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট
যেসব সন্তান যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফেরে নি, আম্মা গোপনে প্রতিদিন সন্ধ্যায়
আরবিতে তাদের নাম ধরে ডাকতেন, সব নক্ষত্র তাঁর মুখস্থ, আলহামদুলিল্লাহ।
কেউই কোনদিন আকাশ থেকে খসে পড়ল না, আশ্চর্য! তিনি সকলকে চিনতেন
আলহামদুলিল্লাহ, ফজরে তসবিদানা হয়ে মায়ের গর্ভেই তারা ফের লুকিয়ে যেত।

আমরা আমাদের সব দেয়ালগুলিতে ‘জয়বাংলা’ লিখে দিয়েছি
আমাদের সব টাওয়ার গুলোতে পত পত পত পত উড়ছে ‘জয়বাংলা’
আমাদের জাতীয় সংসদ ‘জয়বাংলা’, ক্যান্টনমেন্টের নাম ‘জয়বাংলা’,
কিন্ডারগার্ডেনের নাম ‘জয়বাংলা’, এমনকি মাদ্রাসার নামও ‘জয়বাংলা’
আমাদের কলেজগুলি ‘জয়বাংলা’ ইঁট দিয়ে শক্ত থাম্বায় গাঁথা
হাতুড়ি ও হ্যামলেটধারী ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় –
তার নামও আমরা দিয়েছি ‘জয়বাংলা ইউনিভার্সিটি’।

ইতিমধ্যে আমরা আমাদের ব্যাংকগুলো বদলে বানিয়েছি ‘জয়বাংলা ব্যাংক’
টাকা-ডলার টাকা কিচ্ছু নাই, কিন্তু আছে মাল্টি বিলিয়ন অনন্ত ‘জয়বাংলা’
আমাদের অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা বাসস্থানের সমস্যা নাই, আহা ‘জয়বাংলা’
কিন্তু আমাদের আছে জয়বাংলা স্বাস্থ্য ও জয়বাংলা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
আছে জয়বাংলা মেট্রোরেল, জয়বাংলা কুইক রেন্টাল, এমনকি আছে
সুন্দরবনে কয়লা এবং রূপপুরে পারমাণবিক জয়বাংলা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।

এই পরিস্থিতিতে মাকেও ‘জয়বাংলা জননী ‘ডাকা সঠিক, আমরা মুক্তিযোদ্ধা
বজ্রনির্ঘোষে যা খুশি জননীকে ডাকতেই পারি, ‘আলহামদুলিল্লাহ’!
সকল প্রশংসা তাঁর যিনি যুগপৎ ফ্যাসিস্ট ও মোমিন পয়দা করেন
এবং তাদেরও, যাদের মুখ সেলাই করে দিলেও শুধু তাঁরই প্রশংসা করে

আমাকে ধৈর্যহারা হিতাহিতশূন্য কোর না, আমি তো তোমারই দাস
যেন ফাঁসির দড়ি পরাবার সময়ও বলতে পারি ‘আলহামদুলিল্লাহ!

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. একটা দেশের সৃষ্টিলগ্ন থেকে বর্তমান সময়ের চালচিত্র তুলে ধরেছেন কবিতায়।কবিতায় চিত্রিত করেছেন রূঢ় বাস্তবতা। সবকিছুতে রাজনৈতিক একক আধিপত্য বিস্তারের ভয়াবহ চিত্রকল্প চিত্রায়িত এই কবিতা।কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে এই কবিতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ