তৈমুর খান
বাবাকে হারালাম। দেশ স্বাধীনের আট বছর আগে বাবা পৃথিবীতে এসেছিলেন(১৯৩৯-২০২৩)। তারপর বাংলা ভাগের বহু কাহিনি শুনেছিলেন। কত মারামারির কথা, কত কষ্টের দিনের কথা বাবা জানতেন। চার বছর বয়সে বীরভূম জেলায় রামপুরহাটের গান্ধীপার্কে মহাত্মা গান্ধী আসার খবরও বাবা শুনেছিলেন। তাও আমাদের বলতেন। বাবাকে আমি একটা জ্যান্ত ইতিহাস হিসেবেই মনে করতাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, তখন কিভাবে সব খবর পেতেন? বাবা বলেছিলেন, রেডিও শুনতাম। কারো কারো রেডিওতে খবর হত, তা শুনতে যেতাম। বাবার মুখে শুনে শুনেই দেশ সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মায়। ভারতবর্ষের আসল পরিচয় ছোটবেলাতেই জানতে পারি।
আমারও বয়স তখন প্রায় চার বছর। বাবার ঘাড়ে চেপে এ গ্রাম সে গ্রাম চলে যাচ্ছি কবিগানের আসরে। তখন চারণ কবি গুমানি দেওয়ান বিখ্যাত কবিয়াল। বেশ কয়েকবার বাবার কোলে বসে তাঁর গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। আর শুধু কবিগানই নয়, সত্যপীর, মনসার পালাগান, যাত্রাপালা, লেটো দলের গানও শুনেছি। শিশুবেলাটা সেই ভাবেই কেটেছে।
বাবা কৃষি সমবায় ব্যাংকের সামান্য পিয়ন ছিলেন। প্রথমদিকে মাসিক ভাতা ছিল দশ টাকা। তারপর হয় ৫০ টাকা। তারপর শেষ পর্যন্ত বেড়ে হয়েছিল ২০০০ টাকা। মাঝে মাঝে বাড়তি কিছু অনুদানও পাওয়া যেত। কিন্তু তাতেও সংসার চলত না। একবেলা ব্যাংকের কাজ করেও বাবাকে ঠিকাকর্মী হিসেবে পরের বাড়িতে কাজ করতে হত। কখনো ধানের বীজ তোলা, কখনো আখের পাতা ভেঙে চারাগুলিকে সোজা করে বাঁধা। আবার কখনো কখনো ঘাস কেটে বিক্রি করা। খুদকুঁড়ো জোগাড় করে সন্তানদের মুখে তুলে দেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। তবে আশ্বিন-কার্তিক দুই মাসে অভাবের তাড়না বীভৎসরূপ ধারণ করত। তখন উৎসব উপলক্ষে ছাগলের পাঁঠা বা খাসি কেটে মাংস বিক্রি করলে সেই গেরস্থ বাড়ি থেকে তার চামড়াটা বাবা আনতেন কিছু টাকার বিনিময়ে। সেইটি বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতেন। তার ফলে কখনো কখনো দুই থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত লাভ হত। এতেও আহারের সংস্থান হত। এভাবেই সংসারের লোনা স্বাদ পেতে পেতে আমরা বড় হচ্ছিলাম।
কিন্তু আর পাঁচটা মানুষের মতো দারিদ্র্যগ্রস্ত হলেও বাবা দিশেহারা হয়ে পড়তেন না। বাবার একটা অন্য জগৎ ছিল। যতই অভাব থাকুক, উনুন না জ্বলুক, সন্ধেবেলা একটা কুপি জ্বেলে বাবা বই নিয়ে বসতেন। পয়ারে লেখা প্রাচীন সাহিত্যগুলি বাবা কোথা থেকে জোগাড় করে এনেছিলেন তা জানি না। যেমন হাতেমতাই, বড় মওতনামা, জঙ্গেখয়বর, আলিফ-লায়লা, কস্সুল আম্বিয়া ইত্যাদি আরো বহু বই। বাবার বেতন যখন ৫০ টাকা হল, সেই সময় বেশ কিছু টাকা অনুদানও পেয়েছিলেন। কিন্তু বাড়িতে সেই টাকা দেননি। সেই টাকা দিয়ে প্রায় হাজার তিনেক টাকার রামায়ণ-মহাভারত, বেদান্ত, তারাশঙ্কর-বঙ্কিম-বিভূতি রচনাবলী কিনেছিলেন। এইসব বইপত্র রাখার তেমন জায়গাও বাড়িতে ছিল না। এত বই দেখে মা বাবার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করেছিলেন। সারা বছরে একখানা ভালো শাড়ি কেনার পয়সা জোটে না যার, তার এমন বই কেনার শখ কেন? বই পড়লে কি খাবার পাওয়া যাবে? কিন্তু শুধু ঝগড়াই নয়, মা কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। নিরক্ষরা মা বইয়ে কী লেখা থাকে তা জানতেন না। সুতরাং তাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টাও বৃথা। তাই বাবাও কিছু বলেননি।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীনই বই পড়ার নেশা চেপে যায়। ৮ টাকা সংগ্রহ করে বাবাকে দিয়েছিলাম একটা গল্পের বই কিনতে। প্রথম বাবা সেই ‘দেশ-বিদেশে রূপকথা’ বইটি কিনে এনেছিলেন। ছোটবেলায় এই বইটিই আমার সঙ্গী ছিল। কতবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়তাম তার কোনো ঠিক ছিল না। আরেকটু বড় হলে দেখেছিলাম ঘরে রাখা ছিল একটি ছোট্ট পুরনো টিনের বাক্স। সেইটি খুলে তন্ন তন্ন করে খুঁজে পেয়েছিলাম বাবার ছবি আঁকা একটি খাতা। বাবা হাতি-ঘোড়া, গরু-মহিষ, মাছ ও পাখির ছবি এঁকে তাতে হাত মকসো করেছিলেন। আর পেয়েছিলাম বাবার ছোটবেলার কড়া-গণ্ডা,বুড়ি-চোখ লেখা একটি গণিতের বই। ইংরেজির একটি গল্প বইও পেয়েছিলাম যাতে রঙিন রঙিন অনেক ছবি ছিল। বাঁদর হাতি শেয়াল কাক ও কুমিরের কত রকম গল্প ছিল তাতে। আরেকটি সাহিত্য সংকলনে পেয়েছিলাম বেশ কিছু কবিতা।সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, জসীমউদ্দীন, নজরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় প্রমুখ বহু কবির কবিতা। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ এবং বিভূতিভূষণের গল্পও। এইসব বইয়ের সঙ্গেই আরেকটি বই পেয়েছিলাম মৌলানা কোরবান আলীর ‘মনোয়ারা’ উপন্যাস। এই বইটি বাবার বিয়েতে কোনো শুভার্থী উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। আমার স্কুল পাঠ্যের সঙ্গে এই বইগুলিও একসঙ্গে মিশে গেছিল। ক্লাসের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলেই এগুলি খুলে পড়তাম আর বাবার ছোটবেলাকে অনুভব করতাম। হ্যাঁ ভুলে গেছি, সেই যুগে বাবা ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছিলেন। তখন বিদ্যালয়ে বেতন দিতে হত বলে টাকার অভাবে আর পড়া হয়নি।
তবে প্রতিদিন উঠোনে তালাই পেতে বাবা সুর করে যখন প্রাচীন পুঁথিগুলি পড়তেন তখন মন স্বাভাবিকভাবেই একটা কল্পনার রাজ্যে পাড়ি দিত। অচেনা জগৎ আর যুদ্ধবিগ্রহের নানা রকম বর্ণনা কৌতূহলী করে তুলত। শ্রোতা হিসেবে শুধু আমিই মুগ্ধ হতাম না, গ্রামের অনেক বয়স্ক মানুষও মুগ্ধ হয়ে মুখে একপ্রকার চুকচুক শব্দ করত।পয়ারের সুর-মাধুর্যে সেদিন খিদেকেও উপেক্ষা করতে পারতাম। হতে পারে কোনো শ্রমিকের বাড়ি, হতে পারে নিরন্ন উপোস দেওয়া ঘর, হতে পারে কুপির আলো, তবুও সেই বাড়িতে বাড়ির মানুষ বই পড়ে। সুরে সুরে মাতিয়ে রাখে মন। এমনকি সব অভাব তাচ্ছিল্য ভ্রূকুটিকেও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারে। ‘বিষাদসিন্ধু’র কারবালা প্রান্তরের গল্প পড়ার গুণে মানুষকে কাঁদিয়ে দেয়। আবার হাতেমতাই এর অসামান্য সাফল্য মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। আলিফ-লায়লার অলৌকিক ঘটনায় মন সিক্ত হয়ে ওঠে। আল্লাহকে যেন আমরা চোখের সামনে উপলব্ধি করতে পারি। এভাবেই বড় হচ্ছিলাম। সেই বড় হওয়া আজও থেমে নেই।
মৃত্যুর মুহূর্তে বাবা শুনতে চাইলেন কয়েকটি কবিতার আবৃত্তি। বাবার প্রিয় কবিতা ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’, ‘পুরাতন ভৃত্য’, ‘পরশমণি’ সেসব শুনতে শুনতেই নিজেই আবৃত্তি করলেন ‘কৃপণ’ নামের একটি কবিতা:
“দোকান করে রামু দামু মিলে দুটি ভাই
দুই জনেতে বেজায় কৃপণ বাজে খরচ নাই।
একজন দেয় জিনিস মেপে, আর একজনা বসে
পয়সাগুলি বাক্সে তোলে হিসাব করে কষে।
বড় ভাই যায় দু ক্রোশ দূরে যেথায় তাদের বাড়ি
ছোট ভাইটি নিবিয়ে আলো ঘুমায় তাড়াতাড়ি।
রোজই যাবার সময় দামু ভাইকে যায় যে বলে
নিবিয়ে দিবি আলো যেন সারারাত না জ্বলে।
একদিন রামু বাড়ির দিকে ক্রোশ খানেক পথ গিয়ে
হঠাৎ তাহার মনে এল, আলোটি নিবিয়ে
দেবার কথা ভাইকে আসিনি তো বলে!
কী সর্বনাশ আলো যদি সারারাতই জ্বলে!
দু পয়সার তেল হবে ক্ষতি নাই কো কোনো ভুল
সেখান থেকে ফিরল রামু মন বড় ব্যাকুল।
দোকান ঘরের সামনে এসে করতে ডাকাডাকি
দামু উঠে দরজা খুলে শুধায়, দাদা নাকি?
বাড়ি যেতে ফিরে এলে খবর তো সব ভালো?
রামু বলে দেখে যেতে নিবল কিনা আলো।
দামু বলে আলোটা তো নিবিয়েছি তক্ষুনি
কিন্তু দাদা, একটি কথা বলো দেখি শুনি!
তুমি যেখান থেকে ফিরে এলে তোমার দু-ক্রোশ হবে চলা
ক্ষয় কি এতে হল না ওই জুতোর দুটি তলা?
রামু বলে, ভাইরে, আমি যে তোর দাদা
তবে আমায় ভাবিস কেন এত বড় হাঁদা!
যেখান থেকেই ফিরেছি ঠিক সেখানটাতে গিয়ে
জুতো দু-পাট প’রব পায়ে এই দ্যাখ্ না চেয়ে!
বগলদাবায় জুতো আমার হিসাব কি মোর নাই?
দামু বলে, সাবাস দাদা, চরণধূলি চাই ॥”
কবিতাটি কার লেখা, কোন বইয়ে ছিল তা আজও জানতে পারিনি। অথচ হামেশাই এই কবিতাটি বাবা শোনাতেন। আরেকটি কবিতা ছিল ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর’। এটি অবশ্য আমরা সবাই জানি কালীপ্রসন্ন ঘোষ (১৮৪৩-১৯১০)-এর লেখা। ছোটবেলার নানা স্মৃতি, নানা গল্প বাবার মুখে অসাধারণ মনে হত। সেসব শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়তাম। পরোক্ষে বাবা-ই যে আমাকে কবিতার প্রতি আসক্ত করে তুলতেন তা বলাই বাহুল্য।
সাংসারিক জীবনে বাবা একেবারেই বিষয়ী ছিলেন না। যেটুকু জমি-জমা ছিল অভাবের তাড়নায় তা স্বল্পমূল্যেই বিক্রি হয়ে যায়, কিন্তু তাতেও বাবার আফসোস ছিল না। বলতেন, এসব অনিত্য বস্তু, চিরদিন একজনের থাকে না। কোনো গেরস্থ বাড়িতে চাল ধান আটা গম ধার নিতে নিতে এক সময় বাবাকে শুনতে হত “এবার তোমার জমিটা লিখে দিতে হবে, টাকা পরিশোধ হয়ে গেল।” তখন না লিখে দিয়ে আর উপায় ছিল না। এভাবেই একে একে প্রায় সব জমি-জমা নিঃশেষ হয়ে যায়। তখন বাবা ‘দুই বিঘা জমি’র উপেনের মতোই হয়ে যেতেন। কতবার ওই কবিতাটি আবৃত্তি করতেন। সারাদিনে বাবা খুব সামান্য কিছু খাবার খেতেন। না পেলে তাও খেতেন না। খেজুর গাছ অথবা তাল গাছে তাড়ি পাততেন। মাটির বড় বড় ভাঁড়ে সেই রস নামাতেন। সুমিষ্ট রস কিছুটা লালচে রং হত। কিন্তু নিজে কখনো খেতেন না। দশ পয়সা অথবা কুড়ি পয়সা গ্লাস বিক্রি করতেন। এই পয়সা দিয়েই কিনতেন চাল ও আনাজপাতি। কখনো সেই সুমিষ্ট রসও পেকে গিয়ে তাড়িতে পরিণত হত। গাঁ-ঘরের খুচরো মাতালেরা সেই রস পান করে যেত। সামান্য যে জমিটুকু থাকত তাতেই চাষবাস করতেন। কিছুটা মসূুরি, তিসি, আখ এবং পেঁয়াজ ও আলু চাষ হত। অর্থ উপার্জনের এসব ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। একবেলা খেয়ে, অন্যবেলা উপোস দিয়ে আমরা বড় হচ্ছিলাম। অলৌকিক কোনো শক্তির অপেক্ষা করছিলাম। হয়তো সে এসে আমাদের উদ্ধার করবে।
মৃত্যুর আগের মুহূর্তে বাবার শেষ কথাটি ছিল: “অনেক বই রেখে গেলাম, বইয়ের কখনো অনাদর করো না। মাঝে মাঝে পড়বে। পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আমি দাগ দিয়ে রেখেছি। মূল্যবান কথাগুলি সহজেই বুঝতে পারবে।” বইয়ের আলমারিতে উইপোঁকা ধরেছিল। বহু বই নষ্ট করে দিয়েছে। বাবা শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহাভারতটা নষ্ট করেনি তো? সে-বাজারে পাঁচশো টাকা দিয়ে ওই বইটি কিনেছিলাম!” বাবাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলাম, না, ওই বইটি ঠিক আছে।
বাবা শুনে পাশ ফিরে ছিলেন । অনেক মানুষ দেখতে এলে, বাবা তাদের বলেছিলেন, “তোমাদের কি কোনো কবিতা মনে নেই? আমাকে একটা শোনাও না!” মৃত্যু শয্যায় শায়িত থেকে কে কবিতা শুনতে চেয়েছিল? এই নিয়ে আমি বহু ইতিহাস খুঁজেছিলাম, কিন্তু আজও পাইনি। যে লোকটি মাত্র ছয়টি শ্রেণিতে পৌঁছেও তা সম্পূর্ণ করেনি, সেই লোকটি কবিতাকে এত ভালবেসে ছিল? স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম কথাটি শুনে। তাহলে বাবার সত্তাটি কি আমারই সত্তা? বাবার মহাভারতের সামনে দাঁড়িয়ে আজও স্মরণ করি। গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ বইটি আমার কাছে আজও এক দর্শনের তাত্ত্বিক বই বলে মনে হয়। অথচ বাবা এই বইটি পড়েও দাগ দিয়েছিলেন। ‘বিষাদসিন্ধুর’ সাধুভাষার দীর্ঘ বিশেষণগুলির নিচেও বাবা দাগ দিয়ে রেখেছেন। তাহলে এগুলোও কি বাবা বুঝতে পেরেছিলেন? না কোনো সন্দেহ নেই। বাংলা ব্যাকরণ আর পাটিগণিত আমি বাবার কাছেই শিখেছিলাম। বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ার আগ্রহ তখন থেকে জন্মেছিল। নিজের মুখটিও আয়নার সামনে দেখি আর নিজেকেও বাবার মতোই অনুভব করি।
সারাজীবন বাবাকে দেখেছি কম আহার করতেন, খুব কম পোশাক-পরিচ্ছদও ব্যবহার করতেন। এমনকি ব্যবহৃত জলও খুব কম খরচ করতেন। মনে মনে সারাদিন তসবিহ তেলাওয়াত করাই ছিল বাবার একটা অভ্যাস। কোনো সময় দীর্ঘ সেজদায় লুকিয়ে পড়তেন। পার্থিব কোনো বিষয়েই তেমন আসক্তি ছিল না। তাই দুঃখ-যন্ত্রণা বাবাকে কাঁদাতে পারেনি। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে তবু তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরত, কেন ঝরত তার কারণ কখনো বলেননি। আজও বাবাকে চোখের সামনে দেখতে পাই না, কিন্তু মনের ভেতর তিনি বেঁচে রয়েছেন। আজও তিনি নির্দেশ দেন, “লোভ থেকে দূরে থেকো। সত্য ছাড়া কখনো মিথ্যে বলবে না।” এ কথা কি সত্যি সত্যি আমরা পালন করতে পারছি? বারবার সেই পরীক্ষার সামনেই উপস্থিত হচ্ছি।
বাবা : জিকির খান (১৯৩৯—২০২৩)