spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাবাবা বিষয়ক কবিতাগুচ্ছ : সেলিম মণ্ডল

বাবা বিষয়ক কবিতাগুচ্ছ : সেলিম মণ্ডল


সেলিম মণ্ডল

।।গা ছ ও বা বা।।

প্রত্যেকটা দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে একটা গাছ থাকে,
অশ্বত্থ গাছ। বাবার মতো…

অথচ বাবা চোলাই কাঠের খদ্দের হয়ে—
একটু একটু করে কুড়িয়ে নেয় শুকনো ডালপালা।

সময় নিজেই ভুলে যায়— গাছ বড়ো হলে
কীভাবে ভালোবেসে ফেলে একটা আধভাঙা উনুন!

।।প লা য় ন।।

সংসারে একমাত্র খরিদ্দার আমি
বাবা দোকানী

ধারে কেনাবেচা চলে
মাসের শেষে জমে ফর্মা ফর্মা বিল…

নোটের বদলে বাবার হাতে গুঁজে দিই
কিছু আধুলি
বাবা তার থেকে একটি নিয়ে হেড-টেল করে
আমি জিতে যাই
বাবা হালখাতায় ডাকে
আমি মিষ্টিমুখে অর্ধেক পরিশোধ করি
আর অর্ধেক দিন পালিয়ে বেড়াই সংসার থেকে…

।।শ য় তা ন।।

বাবার ইচ্ছে একবার আরবে যাবার
হজ করবে
শত্রুকে ঢিল ছুঁড়ে মারবে

বাবার অল্পসঞ্চয় আছে
একবার আরব যেতেই পারে
কিন্তু ঘরে আছে কবিপুত্র
সঞ্চয় ফুরালে চরম দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে পারে সংসারে

আমি সবই বুঝতে পারি
শুধু, মুখ ফুটে বাবাকে বলতে পারি না—
এই নাও পাথর
শয়তান তোমার সামনে দাঁড়িয়ে
মারো, জোরসে মারো

।।ডা য়ে রি।।

একই ডায়রিতে লিখি আমি আর বাবা
বাবা প্রথমদিক থেকে লেখে সংসারের হিসেব
আমি উলটোদিক থেকে লিখি কবিতা
খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায় পাতা
কিন্তু কিছুতেই আসতে চায় না নতুন বছর

।।ত্যা গী।।

রাত জাগতে বাবা বারণ করে
বলে— ‘দেরি করে ঘুমানো ভালো না, শরীর খারাপ করবে’

তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাই আমি

সকালে দেখি, বিছানার চারিপাশে কফ ও রক্ত
কালও ঘুমায়নি বাবা
কাশি উঠছে তীব্র, দলা বাঁধা

বাবা জানে, না ঘুমালে শরীরে কী হয়
বাবা জানে, ছেলেকে একা ফেলে ঘুমানো যায় না

।।স ল্লু ভা ই।।

সানগ্লাস পরে বাবাকে মনে হচ্ছে সালমান খান
ছোটবেলায় নিজেকে বহুবার সালমান খান করে তোলার চেষ্টা করেছি…
খুব ইচ্ছে করছে বাবাকে আজ ‘সল্লুভাই’ বলে ডাকতে
কিন্তু বাবাকে কি ‘ভাই’ ডাকা যায়?

বাবা চোখে বসিয়েছে ডি এস এল আর ক্যামেরা
একচোখে এখন মেঘ মেঘ আলো
ক-দিন পর থেকে এইচ ডি ছবির মতো স্পষ্ট দেখবে
সংসারের সার্কাস, ছেলের সার্কাস

বাবাকে আজ ‘সল্লুভাই’-ই বলব
মাসল উঁচিয়ে তাড়া করবে না, লুকোচুরিও খেলবে না
শুধু বলবে, ‘চোখের ড্রপটা নিয়ে আয়’

।।সা দা পা য় রা ও বা বা রা।।


প্রত্যেক বাবা কাঁধের উপর একটা সাদা পায়রা রাখেন। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন— যা, উড়ে যা। কোনো কোনো পায়রা আবার ফিরে আসে। কোনো পায়রা আর ফেরে না। তবুও বাবারা সাদা পায়রার জন্য কাঁধ প্রশস্ত করেন!


প্রত্যেক বাবা জানেন, পায়রার জন্য খোপ সঠিক নয়। ঝড়-বৃষ্টিতে আহত ডানার দিকে তাকিয়েও বাবারা ভুলে যান, খোপই একমাত্র আশ্রয় হতে পারত।


সাদা পায়রারা কালো মেঘে ঢোকার সময় কি ভাবে
ফেলে আসা খোপের ভিতর বাবারা জলপানি চান না!

।।পে রে ক।।

রাতের গা থেকে খুলে পড়ছে নতুন পেরেক
মশারির মধ্যে থেকে এই দৃশ্য দেখছেন বাবা
মা সেই পেরেক তুলে রাখে যত্নে
একে একে সমস্ত পেরেক খুলে গেলে ভোর হয়ে আসে
সকালে দাঁড়িয়ে থাকি আমি—

একহাতে আরও কিছু জং পেরেক
ও একটা মোটা হাতুড়ি নিয়ে

।।বা বা র জ ন্ম দি নে।।

বাবার জন্মদিনে শহরজুড়ে বৃষ্টি হয়। বাবা, জানালা দিয়ে দেখে— কত কী ভেসে যাচ্ছে। বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দিন পেরিয়ে যায়। বাবা, আরেকটু ঝুঁকে পড়ে। ততক্ষণে মেঘ কেটে যায়। আকাশে তারা ওঠে। মিটমিট করে জ্বলে। বাবা, সেই তারাদের পিঠে হাত বোলায়। তারারা তবু খসে পড়ে। বাবা, সাদা ক্রিমের কেকের মতো বৃষ্টিধোয়া আকাশে ছড়িয়ে দেয় তার পেলবতা…

।।জা য়ে জ।।

বাবার স্বপ্নে আমি আর আমার স্বপ্নে বাবা ঢুকে যায়। এভাবেই গতকয়েক বছর আমাদের কেটে যাচ্ছে। আমি স্বপ্নে বিরাট একটা মালগাড়ি টানি আর বাবা স্বপ্নে ওই মালগাড়ি ঠেলে।

দু-জনেই যখন ক্লান্ত হই, একে অপরের মাথায় হাত বোলাই। গায়ের ঘাম একে অপরের মুছে দিই। আবার চলি।

আমাদের কোনো গন্তব্যস্থান নেই। আমরা একই মেঝেতে ঘুমিয়ে এই স্বপ্নটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আকাশে অজস্র তারা। একটি তারা খসে যাওয়ার আগে এই স্বপ্ন দেখাটা জায়েজ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on দু’টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on পাখিমানুষ