প্রবীর বিকাশ সরকার
কবি, গদ্যকার, সম্পাদক, সংগঠক এবং সাংবাদিক আবু হাসান শাহরিয়ার কি আমার বন্ধু? আমি জানি না। বন্ধুত্ব ঘনত্ব হওয়ার মতো ঘটনা আমাদের মধ্যে কোনোকালে ছিল না। পাশাপাশি বসে গল্প করা, আড্ডা দেয়ার সুযোগ আমাদের কোনোদিন হয়নি।
যদিও বা তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল কুমিল্লায় ছড়ালেখার ছলে, দুজনেই তখন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের আইএর ছাত্র। দুজনেই ছড়া লিখি। আমার ছড়ালেখার হাতেখড়ি হানিফ সংকেতের কাছে। তখন তিনি তুখোড় একজন ছড়াকার এবং জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন চাঁদের হাট, প্রফেসরপাড়া শাখা কুমিল্লার আহবায়ক। তার আহবানে ধর্মসাগর (পশ্চিম) পাড় চাঁদের হাটের সাহিত্য সম্পাদক পদে মনোনীত হই। আমি আজও জানি না আমার জন্মদাতা পিতা-মাতার বংশে কেউ কোনোদিন সাহিত্যচর্চা করেছিলেন কিনা! তবে এক মামা ছিলেন সংস্কৃতভাষায় পণ্ডিত কিন্তু লেখালেখি করতেন না। জানি না কোন্ আছরের গুণে বা দোষে আমি কবি বা সাহিত্যিক হতে গেলাম! তবে আমি যে তৃতীয় শ্রেণীর এক বিলাসী সাহিত্যিক এটা সবাই জানে এতে আমি নিশ্চিন্ত বলে বেশ মুক্ত নিঃশ্বাস নিয়ে দিন গুজরান করে যাচ্ছি।
অনেকেই বলেন, আপনি এত ভালো লেখেন আপনার পুরস্কার পাওয়া উচিত! তখনই আমার গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, কারণ ওই সস্তা স্বীকৃতির কারণে বহু মানুষ পক্ষান্তরে প্রতিভাধর তরকারির হলুদে পরিণত হয়েছে! কেউ কেউ হয়েছে গরুর গাড়ি সমাজে এরা কোনো গতি আনতে পারেনি পুরস্কৃত হওয়ার পর। রবীন্দ্রনাথের দিকে যদি তাকাই কী দেখতে পাই: এশিয়া মহাদেশে প্রথম তিনি পৃথিবীর সবচে বড় পুরস্কার নোবেল পদক পেয়েছেন কিন্তু প্রভাব কি পড়েছে বাঙালি জনজীবনে? বাঙালির চরিত্র কি এতটুকু উন্নত হয়েছে? তাই আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, পুরস্কৃত কীর্তিমান হওয়ার চেয়ে তিরস্কৃত নেতা হওয়া অনেক ভালো কারণ, অসৎ লোকেরাই পৃথিবীতে বরাবরই প্রভাবশালী থাকে মৃত্যুর শতবর্ষ পরেও। তথাপি পুরস্কারপ্রাপ্তি একটি স্বীকৃতি এবং অনুপ্রেরণাবিশেষ।
অনেকেই বলতেন কবি আবু হাসান শাহরিয়ার তার প্রতিভার গুণে অবশ্যই বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য–এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ-দ্বিধাদ্বন্দ্ব আমারও ছিল না। ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে প্রিয় শাহরিয়ার। অন্যান্যদের মতো আমিও অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। অভিনন্দিত করেছি। আনন্দিত হয়েছি তার প্রতিভার মূল্যায়নে এবং আমাদের প্রজন্মের অন্যতম প্রধান কবির জাতীয় স্বীকৃতির কারণে। তবে পুরস্কার পেয়ে শাহরিয়ার একেবারেই নীরব হয়ে গেছে। শুনছি তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। নিবিড় বিশ্রামে আছে রাজশাহীতে প্রাণাধিক প্রিয় সহধর্মিণী প্রতিভাময়ী গল্পকার মনিরা কায়েসের সযত্ন তত্ত্বাবধানে। তার আশু সুস্থতা প্রার্থনা করছি।
আমার সঙ্গে এহেন শাহরিয়ার তথা লাভলুর (লাভলুই তো ছিল ডাকনাম যতখানি মনে পড়ে, ভুলও হতে পারে) কবে কখন কোথায় প্রথম দেখা হয়েছিল আজ আর বলতে পারব না। ১৯৭৬-১৯৭৮ পর্যন্ত শাহরিয়ারকে চেনে না এমন কোনো সংস্কৃতিজীবী কুমিল্লা শহরে ছিলেন না। কারণ তার বাবা ছিলেন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ এবং কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান। তার মাও ছিলেন সাহিত্যিক। ফলে এই সুবাদে শাহরিয়ার খুব পরিচিত ছিল শহরে। বোর্ড অফিসের চত্ত্বরেই ছিল তাদের বাসভবন। তার প্রতিবেশী ছিল সমবয়সী আবু তাহের নামে একটি ছেলে সে আমারও পরিচিত ছিল। শাহরিয়ার শাপলা শালুকের আসর করত। জানি না কী কারণে হানিফ সংকেতের সঙ্গে শাহরিয়ারের সম্পর্ক শীতল ছিল। একবার হানিফভাই “ঘোড়ার ডিম” নামে একটি ছড়াসংকলন প্রকাশ করেছিলেন হালকা-পাতলা হলদে কাগজে ডিমের আকারে। তাতে শাহরিয়ারের ছড়া না থাকার কারণ হানিফভাইকে জিজ্ঞেস করায় কোনো হা-হুঁ শব্দই করেননি তিনি। বুঝলাম ডাল মে কুচ কালা হ্যায়, রথি-মহারথিদের না চটানোই উত্তম।
অথবা দেখেছি শহরে কোনো কবিতা বা ছড়াপাঠের আসর বসলে শাহরিয়ার উপস্থিত থাকত না, বরং সে নিজেই বোর্ড প্রাঙ্গণে আলাদা সাহিত্যপাঠের আয়োজন করত। যতখানি জানি ছড়াকার নীতিশ সাহা এবং জাকির হোসেন বাবুর সঙ্গে তার খুব তরল বন্ধুত্ব ছিল। তাছাড়া তাজুল ইসলাম মজুমদার, সৈয়দ ফয়েজ আহমদ, কবি মমীম শাহাগীর এবং নাঈমুল ইসলাম খান এনায়েতের সঙ্গেও তার গভীর সম্পর্ক ছিল। এনায়েত (দৈনিক আমাদের সময়.কমের সম্পাদক) আমারও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার ইতিহাস দীর্ঘ এবং চমকপ্রদ। বাংলাদেশের আধুনিক সংবাদপত্র জগতের পথিকৃৎ নাঈমুল ইসলাম খান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার একাধিক দৈনিক যেমন আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ এবং আমাদের সময় পত্রিকার সঙ্গে আবু হাসান শাহরিয়ার ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সম্পাদক হয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। নাঈম-শাহরিয়ার সম্পর্ক সমকালীন কিংবদন্তি।
শাহরিয়ার ছড়া লিখত এবং ছন্দময় চমৎকার সব ছড়া তার। ছন্দ, তাল, লয় সম্পর্কে তার নিখুঁত ধারণা। আমার তা নেই আমি কান দিয়ে ছন্দবিচার করি ফলে কান যখন গণ্ডগোল করে তখন ছন্দে গলদ দেখা দেয়। দুজনেই একাধিক পত্রিকায় ছড়া লিখেছি। বিশেষ করে, দৈনিক বাংলার “সাত ভাই চম্পা”র পাতায়। সেখানে ছড়া প্রকাশিত না হলে জাতে ওঠা যেত না তখন। মাঝে মাঝে দেখা হলে কলেজ চত্ত্বরে তার মুখে আমার লেখালেখির প্রশংসা শুনতাম। এটা তার খুব ভালো গুণ। বাঙালি সহসা মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করে না। সম্ভবত তখন আমরা যারা ছড়া লিখি গদ্য লেখাটা কঠিন ছিল সাধু-চলতি রীতির জটিলতার কারণে। সেইসময় আমি প্রথম গল্প লিখি “মিঠুর আজকাল” নামে রাজশাহীর দৈনিক বার্তা পত্রিকার ছোটদের পাতায়। প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালের ৩ মার্চ, শুক্রবার। যথারীতি সেটা প্রকাশিত হলে পরে শাহরিয়ারের নজরেও পড়ে। একদিন কলেজের প্রবেশপথে তার সঙ্গে দেখা। তার একটি আকর্ষণীয় বাইসাইকেল ছিল সেটা চড়ে সে শহর চষে বেড়াত। সাইকেল থেকে নেমে করমর্দন করে হেসে বলল, “কনগ্রেচুলেশনস্ গল্পকার প্রবীর বিকাশ সরকার! গল্পলেখার জগতে প্রবেশ করেছ দেখে ভালো লাগল। এগিয়ে যাও।” আমি সলজ্জ হেসে তাকে ধন্যবাদ জানালাম। শাহরিয়ার একবার একটি সংকলন প্রকাশ করেছিল বলে মনে হয় তাতে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল তার চশমা হারিয়ে যাওয়ার। জানি না সেটা আর খুঁজে পেয়েছিল কি না?
তারপর একদিন তাহেরের কাছে শুনলাম শাহরিয়ার কুমিল্লা ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছে। আমিও চলে গেলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি ছড়াতেই মজে রইলাম আর শাহরিয়ার চলে গেল কাব্যদেবীর আরাধনায়। গিয়ে ভালো করেছে কারণ ছড়ার সীমাবদ্ধতা আছে কবিতার নেই।
শাহরিয়ারের অনেক কবিতা পড়েছি বাংলাদেশে থাকাকালীন। ঢাকায় গিয়েই সে তুমুল ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল সাহিত্যচর্চা নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল কিন্তু মাঝপথে ছেড়ে দিয়েছে। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিল বলে তার এক সহপাঠীর কাছ থেকে জানা যায়। ১৯৮৪ সালে আমি জাপানে চলে আসি। আর কোনো প্রকার যোগাযোগই হয়নি তার সঙ্গে। জাপানে তো ব্যস্ততা ছিলই ১৯৯১-২০০২ পর্যন্ত ‘মানচিত্র’ কাগজ প্রকাশ করার কারণে আরও ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, ফলে চেনা-জানা অনেক লেখকের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। জনাকয়েকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। শাহরিয়ার ততদিনে নানা অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ, কবি হিসেবে আলাদা বেদি তৈরি করে নিয়েছে, সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠা অর্জন করেছে। একাধিক কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও সংস্কৃতির রাজধানী কলকাতায়ও তার ব্যাপক নামডাক। পত্রপত্রিকায় মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে তার ছবি দেখেছি। কলকাতার বিখ্যাত “দেশ” সাহিত্য কাগজে তার কবিতা পড়েছি। সাহিত্য সম্পাদনার ক্ষেত্রে অসামান্য কাজ সে করেছে। তার একটি সুবোধ-সাবালক পাঠকগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, অবশ্য এর পেছনে তার একনিষ্ঠতা, লবনাক্ত পরিশ্রম কাজ করেছে। খুব যত্নশীল, পরিশ্রমী ও জ্ঞানানুসারী কবি ও লেখক আবু হাসান শাহরিয়ার তাতে বিন্দুমাত্র অতিশয়োক্তি নেই। যদিও তার সবগুলো কাব্যগ্রন্থ পড়ার সৌভাগ্য এখনো হয়নি, যতখানি পড়েছি খুবই প্রেমোজ্জ্বল, বুদ্ধিদীপ্ত, সুচিন্তিত ও রসালো কবিতা তো আছেই, জীবনের গভীরবোধ থেকে উঠে আসা দুঃখ, বেদনা, হতাশা, আক্ষেপ নিপুণভাবে চিত্রিত হয়েছে তার কবিতায়। এখন সে কবিতা লেখে না বললেই চলে। সম্পাদনার বৈঠা হাতে বিরূপ সময়ের মাঝি হয়ে স্রোত ঠেলে এগিয়ে চলার পর অকস্মাৎ থেমে গেছে। তার মননশীল কবিতা বা লেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।
শাহরিয়ার যখন পঞ্চাশ পেরিয়ে গেল একদিন ঢাকায় বন্ধুবর ছড়াকার আসলাম সানীর সঙ্গে দেখা। তবে সানীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। ও আমার ‘মানচিত্র’ কাগজে ছড়াও লিখেছিল। সে জানাল শাহরিয়ারের খবরাখবর। কোথাও স্থির হতে পারেনি সে। আজ এই পত্রিকায় তো কাল ওই পত্রিকায়। শুনে মনে হলো যেন ভবঘুরে হয়ে গেছে সে। একটা রঙিন এক পাতার কাগজ দিল সানী আমাকে সেটা শাহরিয়ারের ৫০তম জন্মদিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা। আমাদের প্রজন্মের অনেক ছড়াকার, কবি ও সাহিত্যিক সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছাবাণী লিখেছে। এই অভিনব বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে।
সবাই জানে শাহরিয়ারের মেজাজ গরম আবার বদমেজাজী বলেও শুনে থাকি। এর কারণটা বুঝতে কষ্ট হয় না, শাহরিয়ার খুব সূক্ষ্ম অনুভূতির মানুষ। কাজ যথার্থভাবে না হলে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। এটা বড় মানুষের লক্ষণ। সাহিত্য তো বটেই সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে তার একাধিক রচনা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে, সেখানে তার রাগ দুঃখ হতাশার কথা বর্ণনা করেছে। আমি দেখলাম আমার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তার অদ্ভুত মিল রয়েছে। ছোট্ট কাজটিও যদি সঠিকভাবে না হয় মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বাঙালি খুব খেয়ালী জাতি, তার চিন্তা অগভীর, তার দৃষ্টিশক্তি অদূরদর্শী এসব শাহরিয়ার খুব মনোযোগসহকারে ধরতে পারে বলেই তার সঙ্গে মানিয়ে চলা এককথায় কঠিন। তাকে বুঝেওঠা সহজ নয়। মানুষের খুঁত তখনই ধরা পড়ে যখন প্রতিপক্ষের সীমাবদ্ধতাটা উলঙ্গ হয়ে যায়। শাহরিয়ারের সে চোখ আছে এবং সে দেখতে পায়।
অনেক প্রতিষ্ঠিত কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক এবং সংস্কৃতিজীবীর সঙ্গে তার সম্ভাব নেই। দু-একটি দৈনিক পত্রিকা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সে সরব সমালোচক। এই সমালোচনা যে কতখানি সঙ্গত ও যৌক্তিক তা না বোঝার কথা নয়। কবি মাত্রই রাজনীতি সচেতন, একে এড়িয়ে চলা মুশকিল। শাহরিয়ারের ক্ষেত্রেও তাই। বেশ কয়েক বছর আগে এনায়েতের পত্রিকা দৈনিক আমাদের সময়ে সে যখন সম্পাদনার দায়িত্বে ছিল তখন আওয়ামী রাজনীতি নিয়ে বেশ ক’টি সমালোচনামূলক ভাষ্য লিখেছিল। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বিস্মৃত শামসুল হককে নিয়ে তার লেখাটি পড়ে আমি এত বেদনার্দ্র হয়েছিলাম যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি শাহরিয়ারের ইমেইলে দু-একটি মতামত লিখে পাঠিয়েছিলাম। সে একটি মতামত ছেপেই দিয়েছিল!
শাহরিয়ারের দিকে যখন তাকাই আমার কবি শামসুর রাহমানকে মনে পড়ে যায়। তার সঙ্গে শাহরিয়ারের খুব গভীর সম্পর্ক ছিল। তাকে শাহরিয়ার যেভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে অন্য আর কেউ করেছেন বলে আমার মনে হয় না। শামসুর রাহমান আমার ‘মানচিত্র’ কাগজের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
সম্ভবত ২০১৩-১৪ সাল হবে। দেশে ফিরেইছিলাম। একদিন কী মনে করে মনিরা কায়েসকে ফোন করলাম। একসময় কী অসামান্য গল্পই না সে লিখেছে! এখন একদম নীরবই বলা চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় তার অধিকাংশ সময় চলে যায়। এক ঘণ্টার মতো কথা হলো তার পরিবার, স্বামী শাহরিয়ার এবং লেখালেখি নিয়ে। তারপর চট্টগ্রামে শাহরিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল ৩০ বছরেরও বেশি পরে। বন্ধুবর ছড়াকার রাশেদ রউফ শিশুসাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করেছিল সেখানে আমরা অতিথি ছিলাম। ব্যস্ততার মধ্যেও টুকটুক করে কথা হয়েছে আমাদের। ‘বিশ্বনাগরিক’ বলে অভিহিত করেছে সে আমায় তার জন্য আমি নিজেকে সম্মানিতবোধ করেছি। তার অনুধাবন একেবারেই সত্যি, কারণ জাপানেই বিশ্বকে আমি দেখতে পেয়েছি দুচোখ ভরে।
আবু হাসান শাহরিয়ারের যে প্রতিভা তথা সৃষ্টিশীল গুণাগুণ এবং স্বদেশভূমি ও স্বদেশসংস্কৃতির প্রতি গভীরতম সংবেদনশীলতা আমাকে যুগপৎ আন্দোলিত ও আনন্দিত করে। এতে আমি সাহসী হই যে, বাংলাদেশের বর্তমান নীতিহীনতার ক্লেদাক্ত মাঠে একজন সুন্দর মনের অকুতোভয় মানুষ হাঁটে। যার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে যেতে পারে। তার মূল্যায়ন করার মতো শক্তি আমার নেই তথাপি মনে করি এমন চৌকস স্পষ্টভাষী দিকনির্দেশক মানুষের পুরোমাত্রায় আরও মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। জীবিতকালেই মানুষের কর্মের স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত, অবশ্যই মৃত্যুর পর নয়।
কবিচিন্ময় আবু হাসান শাহরিয়ার ভালো থেকো নিরন্তর।