spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েআত্মপীড়নের অনন্ত পথের কথন

লিখেছেন : মাহমুদ নোমান

আত্মপীড়নের অনন্ত পথের কথন


| মাহমুদ নোমান |

কিছু কবিতাকে নিয়ে লিখতে নিজেকে বাধ্য করেছি যেমন সত্য, আবার কিছু কবিতা আমাকে দিয়ে লিখিয়েও নিয়েছে। অতঃপর কবিতা কী এবং কীভাবে লেখা হয় সেটা যখন জাগতিক জীবনের মাঝে অনুভবে বাহিত হতে থাকে,তখন কতজনের কত মত। লাল – নীল নানা রঙের মতামতে আমার মতকে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি না। যখন কবিতা নিজেই সেটা কামনা করে না। কবিতা মেলা মজলিসের বিষয় নয়,কবিতা নিসঙ্গতায়,কবিতাকে নিয়ে একাকী হতে হয়। এসবকিছু আমার মধ্যে জোর প্রচারণা চালাচ্ছে কয়েকদিনে,যখন নাজমুন নাহারের দ্বিতীয় কবিতার বই ‘জলজ দ্রাঘিমা‘ বইটি পড়ছি…

নাজমুন নাহারের কবিতাকে একেবারে একঘরে নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। সে দাবিও করে না। তবে বেশিরভাগ নারীদের বিচ্ছিন্ন হবার যে ব্যাপার লক্ষণীয় এবং একসময় নিজেরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন কবিকে তাঁদের কবিতাই বঞ্চনা করে…এক্ষেত্রে নাজমুন নাহারের বিষয় আঙ্গিক চমকপ্রদ। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে কবির জোরজুলুম চলে না,সেটা নাজমুন নাহার বেশ জানে…. তাঁর কবিতা এই জাগতিক জীবনের অতিবাহিত সময়ের ভ্রমণে কিংবা একাকী যাপনে বেশ মজে; একটা কথা বলা যায়- নাজমুন নাহরের কবিতা ছালেকি মজজুবের আত্মপীড়নের অনন্ত পথের কথন। সহজ করে বললে,জাগতিকতার অন্তঃরঙ্গে মশগুল থাকা ব্যক্তির নিজেকে উন্মোচন; হৃদয়ে ধুলাবালি নিয়ে এসব পর্যবেক্ষণে সক্ষম হবেন না,অথচ শরীরে যতই ধুলাবালি থাকুক,এসব কবিতার রসে উন্মাতাল হবেনই,এখানেই নাজমুন নাহারের বিশিষ্টতা। নয়তো কবিতা বইয়ের নাম কীভাবে রাখা হয় ‘জলজ দ্রাঘিমা’, সেটা কিছুক্ষণ ভাবুন তারপর নিচের কথাগুলো পড়তে থাকুন…

আমি যদি বলি,এসব জনসমক্ষে বলা উচিত নয়,তখন আমাকে অবিশ্বাস করবেন আবার বললে খেপে যাবেন; এই যখন কবিতার আবেদন শক্তি, তখন নাজমুন নাহারের আধ্যাত্মিকতার বলয়ে কিছু মধুর চিত্রকল্পিত জ্ঞান কিংবা ভাষার মাধুর্যতায় এই দেশের চেনা সেই মেঠোপথের ঘ্রাণ বড়ই মনোহর;উপরোক্ত ‘আধ্যাত্মিকতা’ শব্দটি ইতোমধ্যে অনেকে পড়ে ভ্রু কুঁচকালেন,কেননা আধ্যাত্মিকতা কী বুঝেন না মানে যে কেউ মায়ের সন্তান হয়ে ওঠতে পারেনা। কবিতা হচ্ছে সেটাই মায়ের পথকে ( মারেফত) স্বীকার করা,অথচ দেখলেন না, তবে মায়ের ঘ্রাণ,উপলব্ধি,অন্তরাত্মার টানে বুঝে এই সেই মা,এই সেই কবিতা….

নাজমুন নাহারের কবিতা মিথাশ্রয়ী,তবে কবিতার প্রয়োজনে আসছে আবার ভাষাটাও প্রাঞ্জল,তাই হৃদয়গ্রাহী। অথচ অধ্যাত্মবাদের সেই বেদনাবাহী দৃঢ়চেতা মন্ত্রস্থ কার্যবিধি- হুট করে মায়াবী পর্দা দুলিয়ে দেবে আপনাদের খেয়ালই থাকবেনা,পরাবাস্তবতার বিভ্রম এটাই –

ক.
নশ্বর নগরীতে দিলাম অবিনশ্বরীয় লীলা
তবু হাহাকার-
গেঁথে ফেলো বর্শা দিয়ে ইরাবতী নদী
কোরাল গ্রামে জিয়ল মাছ মরছে
নীল সাপের বিষফণায়
– অবিনশ্বর;৬৪পৃ.)

খ.
শোনো,নিকেশের কিছু ব্যাপার থাকে/
এখন যেমন আমি দুধের দিঘিতে ডুবলে পাবো না/
উল্টানো আঙুরগাছ
আনারের জমি এবং
হংটং বলে ছুটে আসা কিছু রাক্ষুসের পা-
– রোদচশমা;৫৯ পৃ.)

গ.
যদিও টুপি নেমে গেছে হাঁটুতে,খেয়াল অথবা টপ্পায় তিনি/
ততোধিক রসিক।
– অ্যাম্পায়ার;৫৮ পৃ.)

ঘ.
মোটেই তোকে ভাবিনা,বুক জ্বলে গেলে ভাবি/ ভীষণ গ্যাসের ব্যথা- ডাক্তার অথবা/ গত জন্মের বয়স্ক বৃক্ষের ছাল
– আধুলি;৫৭ পৃ.)

ঙ.
বলে দিলেই তো হয় সওদাপাতি শেষ,আনাজ কম/ উড়তে গেলেই পাখার ভাঙচুর/ পম্পেইর শেষ বাতিটাও নিভে গেছে/ ম্যাচের শলাকায় ঝুলে আছে এক সুতোর জীবন।
– এক সুতোর জীবন; ১২ পৃ.)

ভাবছন্দে লিখিত কবিতার বই ‘জলজ দ্রাঘিমা’ পড়ে ভাবনা আসে, ভাবছন্দেই কবিতা ঠিক জায়গায় পৌঁছে; জানি না কার কী মত। নিয়ম করে নিয়মে বেঁধে কবিতা হয় না,কবিতা নিজেই নিয়ম,নিজের মধ্যে ছন্দ প্রোথিত করে রাখে। নাজমুন নাহারের এই যে নিবীড়ে চলা, অব্যাহত থাকুক। হয়তো এই নিবীড়ে দেখা হবে ভাবনা ও ভাবুকের। সর্বোপরি তুমি এবং আমি’এর….যখন ‘মাহতারিমা’ কবিতাটি পড়বেন তখন সব ভাবনা পিষিয়ে একাকার আর ‘এলিজি’ কবিতাটি বসন্ত বকুলের ঘ্রাণিত কাঁপাকাঁপি পাঠকের অনেক কথা বলে দেবে অথচ সবকথার শেষ কথা নাজমুন নাহার বলে দিয়েছে-

অদৃশ্য সেই রুহের মাহফিলে তুমি ছিলে,আমিও ছিলাম
যখন আমার রব ডাকলেন
আমি কি তোমাদের রব নই?
তোমার সাথে একস্বরে বলেছি – আপনিই আমাদের রব
– মাহফিলের সেই তুমি;৪৭ পৃ.)

|||
জলজ দ্রাঘিমা
নাজমুন নাহার
প্রকাশনা : তৃতীয় চোখ
প্রচ্ছদ: রিজোয়ানা হাসান
মূল্য : ১৪০ টাকা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ