spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : হাসান আলীম

গুচ্ছ কবিতা : হাসান আলীম

একদিন শুক্রবার ভোরে
……….

একদিন শুক্রবার ভোরে আমার মমতাময়ী মায়ের উদর থেকে
ভোরের আলো ছড়িয়ে, আঁধার তাড়িয়ে চমকিত হয়েছিলাম
মাতুলালয়ের আনন্দ জোছনায় যেন,
মায়ের কোলে আকাশ থেকে চাঁদ নেমে এসেছিলো —
আমি কি চাঁদ মা, বলো তুমি তাই চাঁদ নামে ডেকেছো পরম সোহাগে!

শুক্রবার ভোরের কুসুম মেখে, আতরের ঘ্রাণ নিয়ে আমি প্রত্যেক জুম্মায় মসজিদে ছুটে যাই,
মেহরাবের সন্নিকটে পূন্যের উট বাঁধা থাকে–
আমি খোতবার জোছনায় আলোকিত হয়ে উঠি,
আমি চার খলিফার পাগড়ির উষ্ণীষ দেখতে পাই,
মা ফাতিমার দোয়ার শিউলি বকুল ঝরে আমার জায়নামাজে!

আমার শরীর থেকে, আমার জীব কোষের প্রাণ পঙ্ক থেকে খসে পড়ে পাপের পুরীষ,
ওজুর পানির মতো ধুয়ে ধবধবে রুমাল কিংবা বোরাক বাহনের তীর্যক সুন্দর হয়ে যাই!

ও প্রভু আমি তোমার পবিত্র সুন্দর,
তুমি আমাকে আগুনে দগ্ধ করোনা,
তুমি আমাকে তেত্রিশ বছর পর্যন্ত
পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাদ হীন সোনা করছো কী!
আল হামদুলিল্লাহ,
তোমার ফয়সালা অতি উত্তম আমার জন্য,
এই শুক্রবার, এই পবিত্র দিনের কোন এক ভোরে আবার তোমার কাছে যেতে চাই,
পূর্ণতার সৌরভে আমাকে তুমি সাদরে গ্রহণ করো!
আমার সকল এবাদত, আমার সকল ভালোবাসা কেবল তোমার জন্য!
হে জুম্মা, হে শুক্রবার তুমি আমার আঙিনা রঙিন উত্সবে মুখরিত করো!

অপার দুখের নদী
অনিন্দ্য কষ্টের ফুল

………

আমি সুখ সম্পদের মধ্যে জন্মেও আরও এক অনিন্দ্য কষ্টের মধ্যে, আর এক অপার সমুদ্র দুখের ভেতর আজীবন চলে যাচ্ছি —
কী এক অপূর্ব বেদনার কষ্টজলে জ্বলে যাচ্ছি না বলা সে কথা
ভীষণ অন্ধকারের জোছনায় আমাকে বিভূষিত করছেন সেই পরম প্রভু অনন্ত অসীমা!

আমি এখনো সচল, সৃষ্টি -বেদনার সমুদ্র মন্থনে হয়তোবা এমন দুঃখ কষ্টের হয় প্রয়োজন!
হে পরম প্রিয় অলোকার সুগন্ধি পরশে আমাকে এ ভাবে মাঝে মধ্যে সান্নিধ্যে উন্মুখ করে দিও,
আমাকে অনিন্দ্য পরশ দিও।

খারদিয়া মিয়াবাড়ি
……….

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মিয়া ভাই,
আমি কিন্তুক খারদিয়া পশ্চিম মিয়াপাড়ার মিয়াবাড়ির বড়ো পোলা, কারো মিয়া ভাই!

কবতে লিখি অফিস করি আটটা-পাচটা
ওষুধ বানাই, টেস্ট করি,
আবার যখন কাজ থাকেনা
তখন বসে কবতে লিখি, ছড়া লিখে গড়াগড়ি দেই,
আবার কখনও বাবার কথার মতো ঘোড়ার ঘাসও কাটি।

বনজঙ্গলে বাধলা ঘাসে উঠান ছাইয়া গেছে
বিচ্ছু সাপে ওত পেতে থাকে তাতে,
মারবে ছোবল যখন তখন যাকে ।
তাইতো আমার ঘাস কাটার এমন আয়োজন।

মঞ্জু মিয়া ভাই,
বাংলাদেশে এখন ঘাসের উপদ্রব —
কে করবে ছাপ-ছুতরো?

আমি কেবল কবতে লিখি,
কবতে শুনে ঘাসেরা শোনেনা কথা,
দেন না, একটা ঘাস কাটার সে যন্ত্র!

খিচুড়ি খাওয়াবে?
(অনুজ প্রতিম কোন এক কবির একটি অনন্য কবিতা পড়ে)
………..

আমার খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করে,
ও মেয়ে তুমি খিচুড়ি রান্না করো,
আমি খাবো
আকণ্ঠ আশিশ্ন খাবো–
চালডাল নুন তেল পিয়াজ মরিচ
হলুদ আর কিছুটা হৃদয়ের ঘাম
শরীরের দারুচিনি, লবঙ্গ এলাচ
ওখানে মিশিয়ে দাও
স্বাদ হবে!
ও মেয়ে আমাকে রেঁধে খাওয়াবে?
আমি আসছি, তুমি ডেকেই দেখো
আমি কুমারের স্রোত থেকে খরস্রোতা গড়াই নদীতে
গড়াগড়ি দেবো।
আজ বৃষ্টির সকাল, ঝুম বৃষ্টি..
আমি ভিজছি, তুমিও কি ভিজছো?
শাড়িটা গায়ের সাথে মিশে গেছে
অপেক্ষার উষ্ণতায় শরীরে শুঁকিয়ে গেছে?

বৃষ্টি হলে আমার ক্ষুধাটা বেড়ে যায়, ঘি-খিচুড়ি,
ভোনা ইলিশের গন্ধ
আমাকে কেমন উন্মাতাল করে দেয়,
আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার জ্বালায় ককিয়ে উঠি,
ও মেয়ে আমাকে ডাকো,
বাইরে জৈষ্ঠ্যমাস আষাঢ়, বৃষ্টির তুমুল উচ্ছ্বাস!

কচুরি ধাপের ‘পর
…………

কচুরি ধাপের পর আমরা কতিপয়
হাস মুরগী, ছাগলছানা বসবাস করছি।
খাই দাই, ঘুরি ফিরি, খেলাধুলা করি
মাঝে মধ্যে কাইজা ফাসাদ মারামারি করি,
চুরি-ডাকাতি লুণ্ঠন, কেউ কেউ গনহত্যা করি,
কেউ কেউ গনধর্ষেনের সেঞ্চুরি উতসব করি,
ভাইয়ে ভাইয়ে জমিজমা নিয়ে ঠেলাঠেলি,
লাঠালাঠি করি —
মামলা মোকদ্দমা, গুম খুনে কি ভাবে যেন জড়িয়ে পড়ি!
অথচ কচুরি ধাপের নিকট তলে আছে ফুটন্ত পানির ঝর্ণা, শীতল পানির গাঢ়ো অন্ধকার!

আমাদের পৃথিবীর তলদেশে প্লেটগুলো মাঝেমধ্যে ঠোকাঠুকি করে,
কেঁপে ওঠে তুমুল ঝগড়ায়, ভূমিকম্পে–
পৃথিবীর কেন্দ্রে আছে টগবগে গলিত লোহা
আর নিকেল সমুদ্র তোলপাড়,
না জনি কখন এই প্লেটগুলো ফেটে যায়,
সমুদ্র চৌচির হয়ে প্রচণ্ড আগুনে দাউদাউ করে ওঠে!

অথচ এই কচুরি ধাপের বজ্জাৎ গুলোর
শয়তানি, লীলা লাম্পট্য কমে না, শালারা
জারজ পুলার মতো হারামখুরীতে মেতে আছে!

একটা প্রচণ্ড ঝাঁকি, ঝাঁকির ওপর ঝাঁকি
যখন আরম্ভ হবে —
তখন দেখবো শ্যালোকের পুতেরা কি কর্ম করে!

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি