নৈঃশব্দ্যের স্বর
……..
কত দূর উড়ে যাবে;পাখি কি তা জানে?
খাঁচা ছেড়ে উড়ে গেলে পাখি,খাঁচা জানে
শূন্যতা কত গভীরে বিস্মৃত!
ডাল থেকে খসে গেলে পাতা ,বিচ্ছেদের
ব্যথা বোঝে গাছ,কুঠার আঘাতে ভূলুণ্ঠীত
হলে বৃক্ষ,মরমে মরে যায় শিকড়।
তুমিও বোঝ,আমিও বুঝি
অনন্ত কালের আড়াল হলে দুজনের
সুখ -দুঃখগুলি কীভাবে হয়ে যায়
নৈবেদ্যের স্বর।
দীর্ঘতর পথে জীবনের কতটুকু হয় যাওয়া
চলবার পথের মাঝেই একদিন সীমারেখা হয় শেষ
ধূলার ধুলো মুখে
জীবন থমকে দাঁড়ায় জীবনের কাছে
স্তব্ধতার পাথর সরিয়ে হয় না কোথাও যাওয়া।
শূন্যে ডানা মেলে; নির্দিষ্ট সীমা ভেঙ্গে
অনন্তের কোথায় বিলীন হবে
পাখি তার কতটুকু জানে?
দেখি,তোমার নৈঃশব্দ্য যাত্রা
………..
তোমাকে কুরে খাচ্ছে কর্কট রোগের কীট!
তুমি কী অবিশ্বাস্য রকমের শান্ত হয়ে আছ
তোমার স্থীর চোখের গভীরে ছায়া-ছবির মতো ঘুরে
যাচ্ছে ভাঙা সংসার,সন্তান -সন্ততি,ঘর গেরস্থালি।
আত্মজনের মুখ,এত সব কিছুর ভিতরে তুমি
থেকেও থাকবে না চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে,
তুমি দেখছ পশ্চিম আটানে বাঁশ ঝাড়ের
মাথার উপর হলুদ বর্ণের রোদ
গোধূলির রঙে সম্মোহিত সূর্য দিগন্ত ছোঁয়ার অপেক্ষায়
তোমাকে ডুবে আছো বিষাদীয় ভাবনায়,
মৃত্যু অনিবার্য জেনেও তুমি দেখছ
তুমি নিবু নিবু প্রদীপ শিখা!চাঁদ
তুমি দেখেছ প্রাণ ভরে এতদিন যা হয়নি দেখা।
কর্কট রোদ ছুঁয়েছে তোমাকে।
তুমি বুঝে গেছ এই পৃথিবী থেকে মুছে যাচ্ছে
তোমার যা কিছু আলো
সময়ের মুখে তুমি গভীরতর অন্ধকার তবুও
টাটকা রোদ্দুর ছুঁতে চাওয়া মনকে শাসনে বেঁধে
এক নিঃশ্বাসে মৃত্যুকে মাছির মতো তাড়িয়ে দিচ্ছ
স্বপ্ন ভুবনে রোপন করে যাচ্ছ বিশ্বাসের নীলয়।
আর এইভাবে
ধীর কণ্ঠে সম্বোধন করছ নৈঃশব্দ্যের জীবন!
যা পেয়েছ, যা পাওনি ,যা পাওয়া উচিত ছিল
তার সব টুকু ভবিষ্যতের হাতে জিম্মায় রেখে
শাশ্বতের অন্ধকার হয়ে উঠছ!
আমি দেখি তোমার নৈঃশব্দ্যে
আর প্রতিটি আশ্রু ফোঁটায় ধুয়ে দিই তোমার অন্তিম
যত্রা পথ।
ভাস্কর্য
……….
স্পর্শ করলাম তোমার রক্তবর্ণ ঠোঁট
তুমি অস্তগামী সূর্যের মত ম্লান
সেই উত্তাপে দু জনের মাঝে আড়াল দেখা দিয়েছিল
তা জানলাম না কেউই!
সময়ের কাছে কেউই স্পষ্ট নয় আর
নীরবতার দিন রাত যায় উদ্বেগহীন,মন্থর।
শুধু সূর্যাস্তের রঙে প্লাবিত হলে পৃথিবী
দুজনার নিঃস্তরঙ্গ হৃদয়ে কী পবিত্র আলোড়ন
একটি ছায়ার সঙ্গে আরেকটি ছায়া
নক্ষত্রের মতো নীল আলোর উত্তরীয় উড়িয়ে
শাশ্বতের জ্বরে পুড়ে যায়।
তোমার অবনত চোখের পরাগ যেখানে পড়ে
সেখানে কীএক অপূর্ব সম্মোহনে জড়ায় পৃথিবী।
মা
……..
দু-পা ভাঁজ করে শুয়ে আছেন অসুস্থ মা
তাঁর মুখের উপর ঘন হয়ে আছে মৃত্যুর ছায়া
আমরা চার ভাই বোন তাঁর চারপাশে বসে আছি
আর এক বিপণ্ন মুহূর্তে জন্য পাথর হয়ে আছি।
একটা ঘোরের ভিতর রয়েছেন আমাদের মা
তাঁর মৃত্যু যাতনা কমাতে
আমরা কেউ পড়ছি কোরআন
কেউ করছি আল্লার শতনাম।
এক গভীর আচ্ছনতার ভিতর চলে গেছেন
আমাদের মা।
তিনি মাঝে মাঝে প্রলাপের মতো বলছেন-
আমি ঘরে যাব,ঘর,,,
তাঁর অস্পষ্ট কথায় কাঁপন আসে বুকে
যে ঘরে তিনি জীবন কাটালেন
সন্তান সন্ততিদের অনন্য স্বপ্ন দেখালেন
নিজেকে বিলিয়ে সবার সুন্দর আকাশ গড়ে দিলেন
এই ঘর ছাড়া কোথাও আছে কোন ঘর!তার কি
আছে আর কোনো অনন্য প্রিয় পৃথিবী!
সহসা উজ্জ্বল আলোর আভা তাঁর ঘুম ঘুম মুখে
সেই আলোর গভীরে
মা যে কখন দূর শুন্যে আলোর পাখি।
অস্তমান সূর্যের দিকে মুখ রেখে শুনতে পাচ্ছি
শূন্যের ওপারে কোথাও ভারী দরজা খোলার শব্দ।
আর বিবশ হাত থেকে খসে পড়ল চাবি
শব্দ হলো ঝন ঝন….।
চমকে দেখি মায়ের মুখের উপর ছায়া ফেলছে
কয়েক ঝাঁক বেহেস্তের পাখি।
সেলাই কল
……….
রাত পাখির ডাকে মধুর ভোর জেগে উঠলে
ঝুলে বারান্দায় আবর্জনার ভিতর থেকে
কাশতে কাশতে জেগে ওঠে সেলাই কল
জেগে ওঠে এক সাদা নারী!
মুখ গুঁজে সেলাই করে ভোর,সেলাই করে সাদা জীবন যাপন
সেলাই করে ছেঁড়া ফাটা কাপড়,ছেঁড়া ছেঁড়া
স্মৃতি, ভাঙা সম্পর্ক ,জীবন ।
মলিন সংসারের জোড়া দিতে দিতে
দিনানিপাতের ঘাম রক্ত মুছে দিতে দিতে
আগামী দিনের স্বপ্ন সেলাই করতে
নতুন ভোরের সম্মোহনে
নতুন সূর্যের প্রতিরক্ষায় থাকে ।
সূর্য গেছে দেশান্তরের ডাকে
সাদা নারীর কবর ভরে আছে দূর্বা ঘাসে
ভাঙা সংসারের খুঁটি ধরে জেগে থাকি আমি
চাঁদ উঠলে অন্ধকার সরিয়ে
মায়ের বিষাদ সেলাই করে দেবেন আমার অন্তর্যামী ।
সময়
…..
নদীটির সম্মোহিত গানে ভেসে যাই দূরদেশে
বড় বেশি দহনের কথা বলে নদী
ভুব দিয়ে তুলে আনি শুদ্ধতা
তোমার বুক ভর দিই পবিত্রতা
তুমি নদী হয়ে যাও ভেসে দূরদেশে।
বিকেলের মরা রোদ্দুরে মুখ ভুবিয়ে যে যায়
নদীটির দিকে, সন্ধার আধারে লুট হয় তার
যৌবন,কারা কারা তার গর্ভ ঢেলে দিয়েছে
জারজ বীজ,কারা নষ্ট শরীর ধুয়েছে জলে
কারা ভাসিয়েছে কলার মন্দাস
জানে,ওই নদী সব জানে !
তুমি বিষণ্ণ হৃদয় খুলে ডুবিয়ে দাও জলে
নদী তোমাকে ঢেকে নেবে গহীন বল্কলে।
ঘুমালে ফুল,ঘুমাও
………
ঘুমালে ফুল?ঘুমাও।আমি জেগে আছি সারারাত।
যদি কুয়াশা পীড়িত করে,লাঞ্ছিত করে অস্থির হাওয়া
যদি স্বধর্মে স্বকিয়তায় ধরে না রাখে ডাল
যদি বৃন্ত চ্যুত হও ,কীট দ্রষ্ট হও
বুক পেতে দেব
তবুও মাটিতে লুটাতে দেব না।
ঘমালে শিশির প্লাবিত ভোরের ফুল?ঘুমাও
আমি আছি চিরদিনের পাহারায়।তোমার জন্য
ক্ষত -বিক্ষত,রক্তাক্ত,আহত হবো,তবুও
আততায়ীর কামার্ত নিঃশ্বাসে পুড়ে ছাই হতে দেব না।
যত্নে,শুশ্রুষায় শৌভিক মৃত্যুর হাত থেকে কেড়ে
বুকের পাথরে রাখবো পাথর করে গভীর কামনায়,
তবুও কীটের দাঁতে নষ্ট হতে দেবো না।
ঘুমালে তুমি শত শত শতাব্দীর ঘুমে গভীর স্তব্ধতায়
আমা থাকি অপেক্ষায়,কী কঠিন নিঃসঙ্গতায়
তোমার মৃত্যু দিন আসে,মৃত্যু দিন যায়
আমি অন্ধকারে খুঁড়ে চলি নিজের কবর
বুক ভরা ফুল রেখে,ফুলের গন্ধ মেখে ঘুমাই।
রূপকথার গল্প
……..
শুন্য থালায় গরম সাদাভাত উপছে পড়লে
আমাদের উপোসী মুখ কী উজ্জ্বল হয়ে উঠে
এই সময় মায়ের জ্যোৎস্নাময় মুখ
আকাশে চমকায়।নক্ষত্র তীর্থ থেকে তাঁর
হাসি আমাদের বিপন্নতা মুছে আনে গভীর সুখ।
আজও ক্ষুধার্ত হলে পৃথিবী
স্তন্যদায়ী জননী আমার পরীর মতো ডানা মেলে দেন।
বিশ্বচরাচরে নবান্নের গন্ধ ছড়িয়ে গান গেয়ে উঠেন।
শাবক পাখির মতো চিৎকার করে ওঠে
ক্ষুধার্ত মানুষ আর
আশ্চর্য হয়ে দেখি শূন্য থালা ভরে যাচ্ছে
গরম ভাতে।
পরমানান্নের স্বাদ নিয়ে ঘুমালে পৃথিবী
আশ্চর্য রূপকথার গল্পে সংকলিত হয়
আমাদের উপোসী জীবন ।
আমরা সেই আনন্দ মেখে বেঁচে থাকি
আরও বহু জীবন।
জন্মান্তর
………
জলের উপর ঝুঁকে আছে নারকেলগাছের ছায়া
পাশ দিয়ে সরু রাস্তা এঁকে বেঁকে চলে গেছে বহুদূর
তার মাঝে ছায়া রেখে তোমার উদাসীন চলে যাওয়া
চোখের কোনে শুকিয়ে ওঠা জল প্রশ্ন করে-
সে কি ফিরে আসবে আর ? নাকি তার যাওয়া
অন্য রকম চলে যাতয়া!স্মৃতি রেখে অনন্তের যাওয়া
যেভাবে প্রিয় হাত ছেড়ে তুমি চলে গেছ আঁধারে
অন্ধকারে ধুসর জগতে!
যেখান ফেরা যায় না সহজে
কাল গেছে স্মৃতিলীন ছায়ার ভিতর ছায়া রেখে
অনিবার্য সত্যের দিকে।
যুগ যুগান্ত পরে একটি পাখি জলের উপর ছায়া রেখে
নেমে এসে খোঁজে তার বিলীন ছায়া:
পায় কি? নাকি উদিয়মান সূর্যের পথ ধরে ভেসে যায়
একটি নবীন শিশু ভাসমান ডানা দেখে
অমলিন হাসি ছড়িয়ে দেয় রোদ্দুরে।
ধুলো
……..
তোমার চলার পথ থেকে কুড়িয়ে নিয়েছি ধুলো
যত্ন করে রেখেছি গোপনে
যদি মনখারাপের অসুখ গৃহ বন্দী করে কখনও
তবে,একান্তে বুকে তুলে নেব ওই স্তব
ভিজে যাব তোমার স্নেহাশিস করুনায়।
কাছে নাই থাকো তাতে কিছু যায় আসবে না
তোমার চরণ ধুলো আমাকে আরোগ্যের পথে নিয়ে যাবে,
তোমার ছায়া হবে আমার মুক্তির অনন্ত ভাবনা
রোগ শয্যায় শূয়ে তোমার দর্শন
হবে আমার চির সুন্দরে চলে যাওয়া
এক জীবনে আশ্চর্য কিছু পাই না পাই
সেই খেদ পুরণ করে শান্ত হবে চির কালিন পাওয়া।
এই অর্ন্তলীন খেলার সাক্ষী কেউ থাকবে না
তুমিই হবে আমার কাছে থাকার গভীর মন্ত্রণা।
সময়ের স্বর
……….
সময়ে ফিরে যেতে হবে এ-সত্য জানি,
যেভাবে ঋতুমতী মেঘ ফিরে যায়
বৃষ্টি ঢেলে গাছের শিকড়ে,জানি
পাখিও ফেরে সুন্দর আকাশ ছেড়ে ছোট্ট নীড়ে ।
জীবন অসমাপ্ত রেখে মানুষ ও যায় নির্জনতার দেশে
বিভব-বৈভব,মান-মর্যাদা,রূপ-মোহ,অহংবোধ
সব খুলে রেখে শূন্য হয়ে যায়
প্রজন্মের কাছে দীর্ঘশ্বাস ফেলে
ঘুমায় কবরে, চির ঘুমে চির সুন্দরে।
এই নিয়মের বাইরে কেউ কোন ভাবে যেতে পারব না
এসো যতক্ষণ আছি কাছকাছি ততক্ষণ হাতে হাত রেখে
মিটিয়ে দিই হৃদয়ের সব দেনা।
এসো এই মিথ্যের জীবনকে সময়ের কাছে যোগ্য
করে তুলি ,জানি না কখন যে কাকে
সময়ের স্বরে স্বর মিলিয়ে উড়ে যেতে হবে।
এসো জীবন
সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে নিজেকে সুন্দরের যোগ্য করে
শাশ্বত কে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই ।
রূপকথা
……….
একটা মরচে ধরা কাস্তে পড়ে আছে আলপথে
পাশে শুকনো রক্তের দাগ
ওই রক্ত আমার হ-ভাতে কৃষক বাপের।
মাঠ ভর্তি পাকা ধান আজও কি জানি কেন
ওই কাস্তে সেলাম জানিয়ে জেগে ওঠার কথা বলে
তাতায়,বলে-জেগে ওঠ হে প্রাণ ,জেগে ওঠ
যে শীল্পের লড়াই করে থেঁতলে গেছে জীবন
সেই শীল্পকে আবার সমৃদ্ধ করে,জাগো-জেগে ওঠ
তোমার উজ্জীবিত উজ্জ্বল দাঁতের দিকে চেয়ে আছে
সমগ্র স্বদেশ।
চেয়ে দ্যাখো
রক্তবর্ণ সূর্য কেমন সব বিপন্নতা মুছে নিয়ে মুঠো মুঠো
রোদ্দুর ছড়ায়,জেগে থাকার কথা বলে, জাগায়
জীবনের উজ্জীবন মন্ত্র ঢেলে দেয় জীবনের কাছে
তুমি তোমার অধিকারের হাত বাড়াও
যারা ধানের গন্ধ ছাড়া অন্য কো উত্তরণ জানে না
তাদের প্রাণে সবুজ বিপ্লব এনে দাও।
ভাত ছাড়া ক্ষুধা মেটেকি কখনো
বুবুক্ষু পৃথিবীর কাছে থালা ভর্তি ভাত-ই তার ঈশ্বর
তার স্বপ্নের পৃথিবী, যাও
ভোঁতা কাস্ত কুড়িয়ে ,শান দিতে দিতে রোদ্দুরের দিকে যাও।
পাখি জানে না
……
পাখি জানে
একদিন তার শিস মাধুর্য
বিকেলের মতো ফুরিয়ে যাবে চরাচরে
সন্ধ্যার পৃথিবীতে
অন্ধকারের মতো জমাট বাধবে ডানার শব্দ
একদিন,কোনও একদিন
এই পৃথিবীর কোথাও শূণ্য হবে তার পয’টন।
পাখি শুধু জানে না
আমাদের হৃদয়ে তাদের অসীম ঋণ
কীভাব জোৎস্না হযে আছে।
আমাদের হৃদয়ে তাদের অসীম ঋণ
কীভাব জোৎস্না হযে আছে।
অনন্তের ফেরিঘাটে
……….
প্রবাসী মানুষ আমরা বেড়াতে এসেছি এই ভুবনে
কয়েক বছর কিংবা কয়েক মাস অথবা কয়েক দিন,
বা কয়েক মুহূর্ত থেকে চলে যাবো
প্রত্যাবর্তনকালে রেখে যাব কিছু স্মৃতি,কিছু গান,
অন্তর্হিত কলরব,কিছু পরিশ্রমের ফসল, ভালোবাসা-
প্রেম,নারীর সুধারসে জেগে ওঠা কিছু অভিমান
যাবার সময় সন্তানের মুখে চুম্বনের দাগ
ধুলোর মতন মুছে চলে যাবো ,
যখন যাবো তখন সঙ্গে কিছুই নেব না,
শুধু সাদা থানে শরীর মুড়ে
অনন্ত ঘুমের দেশে চলে যাবো।
এই পৃথিবীর কোথাও পড়বে না আমার ছায়া
তবুও পাখির কণ্ঠে উচ্চারিত হবে ঘন মায়া
ধুলো হয়ে যাওয়া ভুবনে কারও কথা থাকবে না মনে
শুধু নবজাতকের কান্নার শব্দে
রক্ত ক্ষরণ হবে প্রতিক্ষণে।
এসেছি দৈবের বশে,ক্ষণিকের পথিক হয়ে।
এই মায়ার ভুবন থেকে
অনিবার্য মৃত্যুর হাতে সমর্পণ করে চলে যেতে হবে
ওই দ্যাখো স্বর্ণময় কাঠের জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে
অনন্তের ফেরি ঘাটে।
আবদুস শুকুর খান
কবি ও কথা-সাহিত্যিক আব্দুস শুকুর খানের জন্ম ১৯৫৪ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কুকড়াহাটি কাছে হুগলি নদীর পাড়ে মোহনপুর গ্রামে। যদি ও বর্তমানে তিনি হাওড়া ক্যারি রোড সংলগ্ন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ছাত্রাবস্থায় তাঁর লেখালেখির হাতে খড়ি। লেখক জীবনের শুরুতে তিনি গল্প লিখতেন। গ্রামে নিজের চারপাশে দেখা মানুষজনকে নিয়ে মাটির গন্ধমাখা বেশ কয়েকটি গল্প নিয়ে ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় “পল্লী প্রেমের কাহিনী” নামে একটি গল্প সংকলন। মাঝে একটা সময় তিনি জীবন-জীবিকার টানাপোড়েনে বেশ কিছুদিন লেখা বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু কবিতা লেখার প্রতি অমোঘ টান তাঁকে আবার লেখালেখির জগতে টেনে নিয়ে আসে। তারপর থেকে একনাগাড়ে বিরামহীন লিখে চলা।সত্তরের দশকজুড়ে বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা নিয়ে কবি আব্দুস শুকুর খানের ১৯৮৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জীবনের অসমাপ্ত কবিতা’। তারপর থেকে প্রায় প্রতি বছর একটি করে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।১৯৯৫ সালে ‘নবজন্মে ফিরি মৃত্যুর বিষাদে’,১৯৯৬ সালে ‘উপেক্ষায় ফিরালে মুখ’, ১৯৯৭ সালে ‘আত্মার পাখি’, ১৯৯৮ সালে ‘নৈ:শব্দের স্বর’, ১৯৯৯ সালে ‘কেউ একজন’, এবং ‘ছায়ার শরীর’, ২০০২ সালে ‘অনৃতভাষণ’, ২০০৪ সালে ‘সম্পর্ক হীনতায় দাঁড়িয়ে’, ২০০৭ সালে ‘কবির ঘরে কেউ আসে না’, ২০১০ সালে ‘সুন্দর আছে চিরসুন্দরে’, ২০১১ সালে ‘প্রেম পদাবলী’, ২০১২ সালে ‘সময়ের যতিচিহ্ন ভেঙে’, ২০১৬ সালে ‘এখন তোমার খেলা’, ২০১৭ সালে ‘ভাবো, হে হন্তারক ভাবো’, ২০১৮ সালে ‘বেজে ওঠে মায়াবী গিটার’,‘যা বলা হল না’, ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ এবং ২০১৯ সালে ‘তোমার শুভেচ্ছার হাত’।অন্য ভাষাভাষীর কবিতাপ্রেমী মানুষজনের কাছে তাঁর কবিতা পৌঁছে দিতে তাঁর বেশ কিছু কবিতার অনুবাদ হিন্দিতে ও ইংরেজিতে হয়েছে।২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘Songs of the Soul’।কবি গৌরশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন দুই বাংলার প্রেমের কবিতা সংকলন ‘প্রিয়তমাসু’ (২০০৬)।আব্দুস শুকুর খানের এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা পাঁচ শতাধিক এবং অপ্রকাশিত কবিতার সংখ্যা কয়েকশো।
আব্দুস শুকুর খান কথা সাহিত্যিক হিসেবেও খুব জনপ্রিয়। এখনো পর্যন্ত ৫০ টির বেশি উপন্যাস এবং ২০০ টির মতো ছোটগল্প লিখে ফেলেছেন। পুস্তকাকারে দুই বাংলা থেকে প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস গুলি হল- শিকড়ের ঘ্রাণ (২০০১), অচেনা সম্পর্ক(২০০২),ভালোবাসার ঘরবাড়ি((২০১২),মানুষ রতন (২০১৫),জাতক (২০১৬), আত্মজা(২০১৪,বাংলাদেশ),জলপরি( ২০১৫, বাংলাদেশ), কোকিলের ডাক(২০১৫, বাংলাদেশ),রাত বারোটার ঘণ্টা(২০১৬, বাংলাদেশ), মানুষের ঈশ্বর(২০১৭ বাংলাদেশ),ঝিলের জলে বাঁকা চাঁদ (২০১৮, বাংলাদেশ), দূরের স্বজন(২০১৯ বাংলাদেশ),কাচের পৃথিবী(২০১৯, বাংলাদেশ) অবগুণ্ঠিতা(২০১৯ বাংলাদেশ) প্রভৃতি।তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ গুলি হল- পল্লী প্রেমের কাহিনী(১৯৭৬), দেবশিশু(২০০১) এবং জীবনের গন্ধ(২০১৯ বাংলাদেশ)।