পারদের পৃথিবী
……….
বাজপাখির ডিমে পারদ ভরে মুখে রাখলে
মানুষ উড়তে পারে
মানুষ পাখির প্রতিদ্বন্দ্বী
তার চোখের মধ্যে দুটো বিমান
কানের ভেতর ক্ষেপণাস্ত্র
মুখের গর্ভে বারুদের বস্তা
মানুষের পছন্দ মাছের কঙ্কাল
নীলকন্ঠ পাখির পালক
মৃত বাঘের চোখ
আর অনাথ ক্ষুদিরামের ফাঁসি
ধনীদের যুদ্ধ খুব অপছন্দ
ভোগের মাত্রা কমে যায়
গরীব যুদ্ধ ভালোবাসে
যুদ্ধ ভুলিয়ে দেয় ক্ষুধা
ভবিষ্যতে বারগুলোতে মদের সাথে
পানি বিক্রি হবে পেগে
পাহাড় গলিয়ে ডিমের মামলেট হবে
গাছের রোস্ট হবে উপাদেয়
মাটির নিচের পৃথিবীতে যারা বাস করে
তাদের প্রিয় খাবার মানুষের মাংস
মানুষ পছন্দ করে পুরাতন
অপেক্ষা করে নতুনের
সুন্দরীরা বসে আছে যিশু পুনরুত্থিত
হলে তাকে বিয়ে করবে
পৃথিবীর সেটাই সবচে সুন্দর শহর
যে শহর কেউ কখনো যায়নি
সবচে সুন্দর নারীকে কেউ কখনো
দেখেনি
সবচে সুন্দর কবিতা যা পড়া হয়নি
মানুষ উড়তে শিখলে আর পৃথিবীতে
ফিরবে না
সমীকরণ
………
দৌঁড়ায় সে
এগোয় না একচুলও
পৌঁছায় না
লাগে না পায়ে ধুলো
পদচিহ্ন থাকে না তার পথে
জিহ্বা বুলায় শূন্যের উপর ক্ষতে
দেখা যায় না পদক্ষেপ
দাগ থাকে না – করে না ভ্রুক্ষেপ
তার আত্মবিসর্জন
রক্তনিমজ্জন
বেগের সূত্রতো স্থাণু
জড়িয়ে ধরে জানু
গোলক ধাঁধাঁর সংখ্যাটা কি আছে
তাকে খুঁজতে সে দৌড়ায়
তাকে ডাকতে সে দৌড়ায়
কিন্তু এগোয় না এক পা ও
সে পৌঁছে না কোত্থাও
তাকে শুষে নিচ্ছে ঘর
সে অন্যতে নির্ভর
সে এগোয় না এক চুলও
আংরাখা সব তুলো
সে হাঁটতে থাকে হাঁটে
ভাবে দৌড়াবে তল্লাটে
সে ছুটতে থাকে ছোটে
চোখে বিশ্বভূবন ফোটে
তার আটকে থাকে পা
সে কোত্থাও যায় না
রাতের কালো কোকিল
……….
রাতের কালো কোকিল
মুখর করে তোলে বসন্তের গান
মাতাল সব মানুষের ঘুম
লরিতে চড়ে নির্বাসনে যায় ভোর
চেকপোস্ট খতিয়ে দেখে শ্বাস প্রশ্বাস
দেয়াল আর তার সাঙ্গপাঙ্গ পাথর
আরো উঁচু হয়ে ওঠে-
সূর্যের মাথা ছাড়িয়ে
রাষ্ট্র বাড়িয়ে দেয় ট্যাক্স
বিদ্যুতের বাহাদুরি
গ্যাসের গর্জন
অকটেনের খিঁচুনি
ক্ষিপ্রতা আর ঋষভ স্বর
রাতের কালো কোকিল
কাঁধে তার গিটারের মহীসোপান
যুবক যুবতী মেতে ওঠে অচেনা দীর্ঘ চুম্বনে
ঢেউ তোলে অজানা আতঙ্ক
মেঘেরা নেমে আসে মুখের কাছে
কানফাটা বজ্রের করতালি
সংবাদে সবকিছু স্বাভাবিক
সংকীর্তণ আর মহিমাকীর্তন
মৃত্যু ক্ষুধা যন্ত্রণা অনিবার্য নিয়তি
সব গ্রন্থাগারের চোখ বাঁধা
সব কারাগারের কণ্ঠ স্তব্ধ
রাতের কালো কোকিল গান গায় পৃথিবীর সব আইল্যান্ডে
মস্কো থেকে তেহরান
চিন থেকে ভারতবর্ষ
আমেরিকা থেকে ইউক্রেন
জুরিখ থেকে জেরুজালেম
ঠোঁটে তুলে নেয় বাঁশি
নদী এসে মেশে তার সাথে
বৃক্ষ মাথা দুলিয়ে সমর্থন দেয়
আগুন নাচে শিখা ছড়িয়ে
খুলে যায় সব দেয়াল
গলে যায় পাথরঘন্টা
বাতাস অপেক্ষা করে বসন্তের
রাতের কালো কোকিল
কপালে তার নক্ষত্র
কণ্ঠে আদিম আকাশ
দিগ দিগন্ত ঝলকায় তার গানে
রাতের কালো কোকিল
জনক
………
প্রাতঃস্নান সারলো সূর্য
এরপর কর্মব্যস্ত অনেকেই
একজন নদীকে প্রণাম করে জলে নামলো
একজন স্রষ্টাকে স্মরণ করে পানিতে
মুণ্ডিত মস্তক নিমীলিত চোখ আরেকজন
একটু দূরে এলোমেলো নির্ঘুম চুল
থেঁতলে যাওয়া বিষণ্ন সিঁদুর
ঝাঁপ দিলো সূর্যের বুক চিরে জলে
রক্তাভায় ভরে উঠলো বুদ্বুদ
বিরতি চিহ্ন হাত উঁচু করে বোঝালো-
কেউ হারিয়ে যাচ্ছে মৎস্যকণ্যা
তাকে অসহ্য অঙ্গার থেকে টেনে তুলতে হবে
স্রষ্টা সহায় ভেবে যুবক ডুব দিলো হেডিসের পাতালরাজ্যে
যমুনার স্রোত অগ্রাহ্য করে ফিরিয়ে আনতে চায় তাকে
প্রতিরোধ ভেদ করে
তুলে আনলো হোরাসের নৈঃশব্দ্য
মেয়েটির ঠোঁটের দরজা দিয়ে
ছু্ঁড়ে দিলো অম্লজান
যতক্ষণ না ফিরে আসে বায়ু দেব
ততক্ষণে শোরগোলের শিখা উঠলো
আকাশে
যুবককে অভিযুক্ত করলো
জনতা ধর্ষনের দায়ে
গণরোষে ছিন্নভিন্ন সকাল
তাকে বাঁচাতে এলো মুন্ডিত মস্তক বৌদ্ধভিক্ষু
এলো প্রজাপতি ব্রহ্মার সাধক
ততক্ষণে আক্রোশের কহরদরিয়া
সহস্র ফণায় গর্জে উঠেছে
যুবকের নাক থেকে
বুক থেকে
পাঁজরের প্রতিটি গ্রন্থি থেকে
বেরুতে থাকলো কুরুক্ষেত্র
মৃত্যুর আগে গর্ভনাড়ির
প্রতিরক্ষা ভেঙে
এফোঁড় ওফোঁড় হওয়া যুবকের আর্তস্বর-
ও আমার জননীর মতো
আমি ঠিক তার জনকের মতো
দাঁড়াবার জায়গা নেই
……….
দাঁড়াবার জায়গা নেই
প্রত্যেকের পা আকাশের দিকে
আতঙ্কে নক্ষত্রের চোখ বন্ধ
শিশিরের পিংপং বল- থিতু হতে পারছে না ঘাসে
দিগন্তে প্লাবনের অথৈ আক্রোশ
ডাইনিরা কাঁটা দিয়েছে পথে পথে
দশমুখ ভুজঙ্গের ফণা দুলছে বাতাসে
প্রজাপতি আগুনের বদলে
ঝাঁপ দিচ্ছে অশ্রুজলে
অগনিত স্বেচ্ছাসেবক দাহ করছে
বৃক্ষশিশুদের
ক্ষুধা বিবশ করেছে বীরবাহু
তৃষ্ণা তীরন্দাজের আজ্ঞাবহ
কষ্ট ছাড়া পদাবলি নেই
দুঃখ ছাড়া ভাটিয়ালি
নগরের বিপনি বিতানে
গঞ্জের হাটে বানরের আধিপত্য
সাইরেন কণ্যাদের হুঙ্কারে স্তব্ধ
নাবিকের কান
বিজ্ঞান বন্ধ্যা আর দর্শন আত্মকেন্দ্রিক
জ্ঞানরাজ্য দখল নিয়েছে পিপিলিকা
মাৎস্যন্যায় -সংবাদপত্র বলছে রেখে ঢেকে
যিশু ও আকাশ থেকে নামতে পারছে না
আপেক্ষিক তত্ত্ব
……….
মাথা এক প্রতিশ্রুতি
সেখানে বাস করে মহাকাশযান
এবং শূন্যতার এক জাদুঘর করোটি নির্মিত
প্রদর্শিত হয় প্রাগৈতিহাসিক হাড়গোড় আর হিম শিখাময় প্রস্তরযুগ
আগ্নেয় শিলায় খোদিত নক্ষত্র
পাথরের আকাশ – গাছপালা
সমুদ্রের ঢেউ-যার চূড়ায় কার্থেজ
মানুষের প্রতিমূর্তি চেনা যায়
রক্তের শিখায়
আরশোলার পায়ে আঁকা প্রতিপাদ্যে প্রমাণিত
-মৃত্যু আপেক্ষিক
প্রতিটি মহাযুদ্ধের পর
তৈরি হয় বিখ্যাত জাদুঘর
উদ্বোধন করেন- হের আইনস্টাইন
মৌমাছির শোকগাথা
………
বসন্তে মৌরাণী বিজ্ঞাপন দিয়ে- সংগ্রহ করেন সৈনিক
প্রজাপতিদের পরাগায়ন মুছে দিয়ে
ভোমরার হুলবিষ পার হয়ে
সরিষার শঙ্খ
আমের মঞ্জুরি
লিচুর লোধ্র থেকে
দিন রাত আনতে হবে টন টন মধু
শর্ত -বিশুদ্ধ মধু আনতে ব্যর্থদের
মেনে নিতে হবে শিরচ্ছেদ
শোধনাগারে প্রতিদিন বুক থেকে
মন-মন মধু নিঙড়ে নিচ্ছে আর আত্মত্যাগকারী মৌমাছিদের কান্নায় কেঁপে উঠছে পৃথিবী
মধুখেকোরা কি জানে মৌমাছির
রক্ত ছাড়া বসন্ত আসে না
রেজাউদ্দিন স্টালিন। জন্ম-১৯৬২সাল ২২ নভেম্বর। পিতা-শেখ বোরহানউদ্দিন আহমেদ।মাতা-রেবেকা সুলতানা।জন্মস্হান-বৃহত্তর যশোর।গ্রাম-নলভাঙা।অর্থনীতিতে স্নাতক সম্মান।রাষ্টবিজ্ঞানে এম এ। নজরুল ইন্সটিটিউটের সাবেক উপ পরিচালক। কৈশোরেই লেখালেখি শুরু।১৯৭০সালে যশোর থেকে প্রকাশিত শতদল পত্রিকায় প্রথম ‘শপথ’ নামে কবিতা প্রকাশ।মোট গ্রন্হ১০১।
কাব্যগ্রন্হ ৬৫।উল্লেখ্যোগ্য-ফিরিনি অবাধ্য আমি।ভেঙে আনো ভেতরে অন্তরে।সেইসব ছদ্মবেশ। আঙুলের জন্য দ্বৈরথ। হিংস্র নৈশভোজ। ভাঙা দালানের স্বরলিপি।সবজন্মে শত্রু ছিলো যে।জ্যামিতি বাক্সের গল্প।তদন্তরিপোর্ট। অবুঝ যাদুঘর।প্রতিবিদ্যা।অস্ত্র ভাঙার মুহূর্ত।
ছড়াগ্রন্থ -হাঁটতে থাকো।শৈশব। চিরশিশু।
প্রবন্ধ-নজরুলের আত্ম-নৈরাত্ম।
গদ্য বই-রবীন্দ্রনাথ আরোগ্য।নির্বাসিত তারুণ্য। কাঠ কয়লায় লেখা।
কবিতা অনূদিত হয়েছে-ইংরেজি।উর্দু।হিন্দী। উড়িয়া।স্প্যানিশ।গ্রিক। রোমানিয়ান।ফরাসী। জাপানি।নাইজেরিয়ান, নেপালি। সুইডিশ।জার্মান। চিনা।আজারবাইজানী, ভিয়েতনামী,পর্তুগিজ,সার্বিয়ান,রুশ,কাজাক,কোরিয়ান,তাইওয়ানীয়, ইন্দোনেশিয়ান,আলবেনীয় , বুলগেরিয়ান, পোল,ইতালীয়,
আরবি, আফ্রিকান, তার্কিশ,ফার্সি,সহ ৪১টি ভাষায়।
ভিডিও সিডি১০টা।আবৃত্তিএ্যালবাম-৬টা।প্রদীপ ঘোষের কন্ঠে আবৃত্তি এ্যালবাম-আবার একদিন বৃষ্টি হবে।
পুরস্কার-বাংলাএকাডেমি।মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার। দার্জিলিং নাট্যচক্র পুরস্কার। ভারতের সব্যসাচী পুরস্কার। পশ্চিমবঙ্গের সেন্টার ফর স্টেজ সম্মাননা।সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার।খুলনা রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার।ধারা সাহিত্য আসর পুরস্কার। তরঙ্গ অফ ক্যালিফোর্নিয়া সম্মাননা।লসএন্জ্ঞেলস বাদাম সম্মাননা।লসএন্জেলস রাইটার্স ক্লাব সম্মাননা। ইংল্যান্ড জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সম্মাননা। গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ভারত।নিকোলাই গোগোল ট্রায়াম্ফ আন্তরিক পুরস্কার সহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।
সম্পাদিত পত্রিকা– রৌদ্রদিনখ।পদাবলি।
মঞ্চ ও টিভি উপস্হাপক।
ভ্রমণ -ভারত।নেপাল।দুবাই।আমেরিকা।ইংল্যান্ড। চীন।
জন্ম.১৯৬২,২২ নভেম্বর।গ্রাম নলভাঙা। থানা – কালিগঞ্জ। জেলা- যশোর।
2.স্নাতক অর্থনীতি সম্মান,এম এ-
রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
3.নজরুল ইন্সটিটিউটের সাবেক
উপ পরিচালক।টিভি উপস্থাপনা।
- মোট কাব্যগ্রন্থ -৬০ টি।
ক)ফিরিনি অবাধ্য আমি- ১৯৮৬।
খ) ভেঙে আনো ভেতরে অন্তরে-১৯৮৭।
গ)সেইসব ছদ্মবেশ -১৯৮৮।
ঘ)আশ্চর্য আয়নাগুলো- ১৯৮৯।
ঙ)আঙুলের জন্য দ্বৈরথ -১৯৯০।
চ)ওরা আমাকে খুঁজছিলো
সম্ভাবনার নিচে-১৯৯১।
ছ)পৃথিবীতে ভোর হতে দেখিনি কখনো-১৯৯৭।
জ)পদশব্দ শোনো আমার কণ্ঠস্বর -২০০৩।
ঝ)পুনরুত্থান পর্ব-২০০৪।
ঞ)অভিশ্রুত বর্তমান-২০০৫।
ট)ভাঙা দালানের স্বরলিপি-২০০৬।
ঠ)চেয়েছি আলাদা হতে-২০১০।
ড)সব জন্মে শত্রু ছিলো যে-২০১১।
ঢ)স্তব্ধতার শোকবহি-২০১৩।
ঢ়)বায়োডাটা-২০১৪।
ণ) ও প্রভু ওঁম শান্তি নেই-২০১৫।
ত)জ্যামিতি বাক্সের গল্প-২০১৬।
থ)তদন্ত রিপোর্ট -২০১৭।
দ)অবুঝ জদুঘর-২০১৮।
ধ) সরলার সংক্ষিপ্ত জীবনী -২০১৯।
ন)প্রতিবিদ্যা-২০২০।
প)অস্ত্র ভাঙার মুহূর্ত -২০২১।
ফ)ডায়োজিনিসের লণ্ঠন-২০২২।
5)হাঁটতে থাকো (ছড়াগ্রন্থ) -২০০৮।
ক)শৈশব (ছড়াগ্রন্থ)-২০১৪।
খ)জলচাষী(ছড়াগ্রন্থ) -২০১৭।
গ)রবীন্দ্রনাথ আরোগ্য(প্রবন্ধ) -২০১২।
ঘ)নজরুলের আত্ম-নৈরাত্ম-২০০৯।
ঙ)নির্বাসিত তারুণ্য -১৯৯৬।
চ)কাঠকয়লায় লেখা- ২০১৭।
ছ)দিব্যচোখে দেখছি-২০১৭।
জ)একুশ প্রশ্ন এক উত্তর (সাক্ষাৎকার)-২০১৩।
ঝ)প্রশ্নের পুরাণ(সাক্ষাৎকার)-২০১৪।
ঞ)দু:সময়ের ইউলিসিস-২০১৭।
6)রৌদ্রদিন।স্বরবর্ণ। পদাবলী।
7)বাংলা একাডেমি-২০০৫।মাইকেল মধুসূদন দত্ত-২০০৯।সিটি আনন্দ আলো-২০১৩।দার্জিলিং নাট্যচক্র-১৯৮৫।সব্যসাচী পুরস্কার -২০০১২।তরঙ্গ অব ক্যালিফোর্নিয়া -২০১২। গোগল ইন্টারন্যাশনাল ট্রায়াম্ফ পুরস্কার -২০২১।কলোম্বিয়া আন্তর্জাতিক সাহিত্য একাডেমি মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার -২০২৩।