মশগুল হৃদয়
একটা বিমূর্ত কিছু—এই বুঝি এই নেই
ভেতর নাড়িয়ে দিয়ে চঞ্চল চড়ুই
ডাক তুলে কিচিরমিচির…
বিপুলা ভোরের সূর্য এনে দিলে
এ আমি কী জানি বা না জানি
বিবশ ক্ষনিকা চোখে হাসির আলোয়
দিনকে সাজালে…
চন্দ্রাহত সব ভুলে শুধু বুঝি এই—
আমি কি সেই সে আমি…;
প্রহর চপল ছন্দে মুগ্ধতা ছড়ালে
বড় মশগুল হৃদয় আনত হলো
সময় যাপনে মৌন বন্দনায়…
মুঠোভরা বিপ্রতীপ
বিপুল মুগ্ধতা নেই
মুগ্ধতাও খেই হারিয়ে খেপাটে;
খেপাত মুগ্ধতা নিয়ে কথা ও কথার কথা…
বিপুলে বিশেষ হলে
মাহুয়া ঘ্রাণের বনে জোছনা খেলিয়ে
ধূসর মাঠের দিকে আলোকালো জোনাক জোনাক
পথের দাবিতে পথ
এটাসেটা বোঝাতে বোঝার ভার নিয়ে
কিছু সময় মঙ্গলপুর, হুইসেল বাজিয়ে মন্দাকিনী এদিক ওদিক…
পথের বিবাদ হাসে
কারও ইচ্ছেটি নেই, যতদূর মিলে সম্ভব এগুলে পথে পথ ;
পথে মিলে অমিলের ভোরের কোমল ইচ্ছেফুল আপ্রাণ আঘ্রাণ…
ধমনি সূত্র
কী এক গতির ঘোড় দৌড়
টগবগিয়ে ছুটছে দূরান্তের পাণে
থামা নেই, মানা নেই, নেই ঘুম ঘুম…
কলাবাদী মনের মানুষ বোঝে প্রাণের যাপন
উত্থানের সঙ্গ নিতে ইশারায় খলবল;
মোছন কালের ধ্বনি ঈশান নৈঋত হয়ে
বোশেখের ঝড়ো ঝুটিপনা ধীরে ধীরে
কামনার দুদোল দোলায় শিরশির…
আশেপাশে আনন্দ আনন্দ
চৈতালি পৌঁছলে বোশেখের মনমোহনের
ফলবতী ধামে সব সার অসারের
ঝিমনী তলায় নামে ঘুম…
ঘোড় দৌড় দূরান্তের পাণে… !
ঠারভাষ্য
অভিভূত অন্ধকার ভিজে ভিজে কদম্ব আষাঢ়
কবিতার ঠারভাষ্যে
বৈদ্যুতিক পল্কা—চোখের ধাঁধায়…
সবুজের করতালি ভোরের সভায়
সূর্য, সভার আলস্য দরবারি
আমন্ত্রিত ছায়ায় ছায়ায় ঋতুর উদযাপন…
সাধনে কাঁদনে মন—আকাশ গুড়ুম;
স্মৃতিধোয়া চকচকে শতকুঁড়ি ফোটে
চারিদিকে ঋণ শোধে
সতেজ প্রাণ ও প্রেমের সরল উদগম…
তুমি ও সে
……
সামাজিক বয়ান ও বিন্যাস মেনে বা টেনে
যুতসই ও টেকসই একটা সম্পর্কের জন্য
স্বাধীন শব্দের ফোঁস নামিয়ে এগুতে হয়।
সম্ভব হবেতো বন্ধনের চক্কর বা
তওয়াফ ঠিক রেখে ক্রমেই এগিয়ে যাওয়া?
‘তুমি ও সে’ মানে
নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের ইলেকট্রন…;
ঠিক মহাবিশ্বের
প্রতিটি নক্ষত্র-গ্রহ-উপগ্রহের মতো।
সম্পর্ক তো ঐশ্বর্য ও বিপর্যয়—
কী আশ্চর্য, বন্ধন—বাঁন্ধন ছাড়া
আমি কোনো কিছুই দেখি না…
সম্পর্কের তুমি ও সে জয়ী হোক।
ভেনাস হার্ট
………
ছুঁয়ে যাচ্ছে এলেবেলে কিছু!
ঠোঁটের কোণায় টিপ্পনী ঝুলিয়ে রাখ
কীসবের বেপরোয়া ঝুমঝুম
শিরা কেটেকুটে বাজিয়ে যাবার শখে
ছুট স্বভাবের পরিব্রাজক, যে
কালপত্রে লিখেছ স্বপন
রেখেছ ভোরের আলোছায়া খামে
উদয়ের সংলাপে কিচ্ছুটি না পেয়ে
চোখ ডেকে নিচ্ছে ঘুমের সিন্ধুক!
সীমাবদ্ধ সংজ্ঞাপণে হীরের পলিশ মেখে
জয় ও জয়িতা হলে বিষয়-আশয়
মনোমত্ত শালুক ফোটাবো রক্তজলে
আঘ্রাত ভেনাসে জ্বলে হৃদয়ে হৃদয়… !
ভেসে যাবো জোছনার ঢলে
……..
দূরাগত বাতাসের ফোঁসফাঁসে
কিছুটা বিব্রত হলেম না হয়…
জেগে আছে, জেগে থাক
ভালোবাসার কলঙ্ক চাঁদ
আমরা তো ভেসে যাবো জোছনার ঢলে… !
চেনে গেছ কে সুজন—মনের আপন
হাতের আঙুলে বাজাও আনন্দ তুড়ি
চোখের আদরে পারো সময় সাজাও
সমকালে অনিবার্য নায়ক দাঁড়িয়ে
হৃদয়ের খোলা দখিনায়… !
অবগাহনের সুর সপ্তমিতে মনখুলে
গাও পাশাপাশি
জগত যন্ত্রণার বিপরীতে
অবারিত খোলা আকাশ এখানে
ভরপুর আনন্দ আহ্লাদে
আমাদের একই অন্তর… ।
অন্ধ কলি
…..
কিছুতেই মনোরোগ ভালো হবে না, এ বুঝে—
সকালের ফোটা গন্ধরাজে তরতাজা
গন্ধফোটা শিশিরের…
বুলবুলির সুকন্ঠ সুরের দুনিয়া জাগে
দুপুরের গল্প হয়ে;
কিচ্ছুটি না বোঝা চোখের অসুখে
ধানিমাঠে আলো ও হাওয়ার লুটোপুটি
অকথ্যকথন দোলাদোল শির শির…
বুঝলে তো বুঝ, না বুঝলে বাঙ্গি তরমুজ
কীযে মনোরোগ ছড়ায় জীবন
কালপত্রের নিষ্ঠুর শোরগোলে
ইচ্ছের বণিক বেচে কেনে যতসব
আড়িপাতা যথা অযথায় দরকারি…
কীসের প্রসঙ্গ ভুলে
আসলে সমূলে ধূরধার মিশিয়ে বিষের
গন্ধে ভারি সবকিছু বেশ বেশ…
মনোমুগ্ধ চোখ; মনোরোগ
অন্ধকলি চমৎকার !
হরিণাক্ষীর কাছে
……
একবার চোখ তুলে এ চোখে তাকাও
পেয়ে যাবে বিদ্যুৎ তর্কিত সত্যমূল
বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ ফুলসজ্জা ভালোবেসে
আনত হবেই শোন হে দিলবাহার
কওমের রোশনাই খেলে যাবে ভাবনায়
বিভঙ্গ উছিলা করে কিছু হোক
আবোলতাবোল খণ্ডে
খণ্ডত পাবে না পাবে, পাবে উষ্ণ আদরে আদর
হরিণাক্ষী শুধু টিপটিপিয়ে রাগমোচনে
তুমুল অস্থির হবে
একবারই তকাও, বুঝে যাবে
চেয়ে দেখো, হেরে যাবে….
রঙিন সে অলক্ষুণে
……..
জিজ্ঞাসার উত্তর পেতেই মুখপানে
যেমনি তাকাই, আশ্চর্য সুন্দর ভঙ্গিমায়
ছড়ায় বিচিত্র রঙ
কীসব স্থুলতা এসে
হেসে দু’পাড় ছাপিয়ে
বানে ভাসায় সহায় ও সম্বল
নদী মাতৃকার সন্তানের চোখে
অথৈই আন্ধার নামে;
তলিয়ে যাবার আনন্দাশ্রু মানে
বানের জলেই সম্পূরক প্রশ্নের প্রান্তর…
কাল কালান্তর ও ইতিহাসের সব মোড়
ডুবিয়ে চুবিয়ে দিলে
যেটুকুন থাকে আর বাকি, তাতে
ভাঙাচোরা স্বপনের তরজমা হয়
সর্বগ্রাসী রঙিন সে অলক্ষুণে… !
শ্রুতিপাঠ
……..
চাঁদমুখীটির বেলকনিতে দাঁড়িয়ে
আকাশ উদাস মনে;
হাই তুলে কে আড়ালে যায়…!
ঝুল লতানো ফুলের সাথে সূর্য হাসে;
চাঁদমুখীটির অনন্ত যৌবন—
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সে কী চায়?
ফুল ফুটিয়ে ফুলের সাথে দিন
জোছনা কলায় মুগ্ধতার রাত
প্রাণ জাগানোর সুরের লিখন…
প্রাণ সুজনার দূর ঘুচানোর
শ্রুতি পাঠে পাঠক এ মন !
প্রযত্নে যে ডাক, পৌঁছয়নি
……..
কীসের ভেতর কেটে যায়, অনাহুত
জিজ্ঞেসের ভারিক্কি কথাও হইহট্টগোল
জিভ সর্বনাশী…
মানুষের ইতিহাস—কাল কালান্তরে
প্রশ্নের অবাধ রূপে কোথায় ছুঁয়েছে?
ছোঁয়াছুঁয়ি কানামাছি
চোখবাঁধা খেলে
যে জিতেছে ছুঁয়ে
সব প্রশ্নউত্তীর্ণ সে-ই সবের সেরা…!
দুঃখ বারোমাস ছুঁই ছুঁই খেলে যায়
প্রজন্মের যে ডাক প্রযত্নে ঠিকঠাক
আজও পৌছয়নি
কী লিখিত, রক্ত ও সংগ্রাম—মানুষের ইতিহাস?
অতবড় প্রশ্নের প্রযত্ন হতে কবির কী দায়
অপযজ্ঞের সমূহ বিপরীতে অপেক্ষায়…।
সুক্ষ্ম অস্বীকার
…….
দিনান্তের জিজ্ঞাসায় নীরব দক্ষিণ
পশ্চিম হেসেকেঁদে জানায় বিদায়
উত্তরের আলস্য ভাঙাতে
মেঘেরা পায় কি পায় কদাচিত আমন্ত্রণ
পূর্ব স্বভাব চরিত সুখে
আর কেউ পায় নাকি দিবসের উদ্বোধন…
এক নবান্নের দেশে হেমন্তের মাঠে জীবন আনন্দ
কবি বনে জীবনানন্দ দাশেরে
প্রতিটি নদীতে তাই কুয়াশায় গোসল সেরেই
হাঁসের ডানায় সূর্য কম্পমান…
নিশিথের মুখচোর জমাট শিশির
তলে ও অতলে ছলে ঘুঙুর বাজায়
মনোমঞ্চ ভেঙে যায়—যাবে যায় যায়
সরল বাঁকাতে বাঁকাতে আশ্চর্য বৃত্ত
বৃত্ত ভাঙার সবক নিলে বিন্দু—অশ্রু বিন্দু
বিন্দু মেয়েটির চোখে তির
ছেদ করে চমৎকার পাষাণ নিশান…
রূপশ্রীর কোথাও কোথাও বেজায় বিরক্তি তবু
লেগে থাকে সুক্ষ্ম অস্বীকার!
বসন্ত বোধন
……..
শিমুলের ডাল ফুলে ফোটা রক্তলাল
প্রান্তরে প্রেমের খোঁজে দুরন্ত রাখাল
পাশে নদী নিরবধি বয়ে কুলকুল
কোকিলের সুরে সুরে মন যে ব্যাকুল
কৃষকের ধানিমাঠে সবুজের প্রাণ
গ্রামের মানস পটে সহজিয়া ঘ্রাণ
কিশোরী, চপলা পায়ে খুঁজো কি দামান
বসন্ত দোলালো বুঝি নতুন জামান
আহা হা আহা হা আহা! হৃদয়ে স্বাগত
কী আর চাইতে পারি প্রকৃতিতে নত
আমোন বরোর মতো পাবোতো জাগ্রত;
প্রসূতি সম্ভবা সুখে কিছুটা বিব্রত… !
বরণ কুলায় সাজি লক্ষ্মীর সাধন
আসো আসো প্রাণে বাঁধি বোধন বাঁধন।
আলোর নির্মোহ সংগীতি
………
ঘরকুনো অন্ধকারে আলো চোখে ছানি
হাঁস-মুরগের ডাকে ভোরের কুশল
মাঠেঘাটে মাতামাতি বাতাস উছল
প্রতারিত সময়ের কতো কানাকানি…
মাঠের সবুজ ছুঁয়ে আ’লে আ’লে হেঁটে
শিশিরের কুঁচি শুষে দিন যে দুপুর
গৃহস্থালি অঙ্কগুলো মিলে না দুখুর
শ্রমের ঘামের প্রাপ্য কিছুতে না মেটে
পক্ষপাত ভালোবাসা—বিবেকে বিরোধ
ক্ষতিগ্রস্ত চোখে দেখে—লোভের বিজয়
প্রশ্নসত্য গুম করে কীভাবে কী হয়
বিদগ্ধ জনতা গড়ে কাম্য প্রতিরোধ…
নির্মোহ ঐক্যেই আসে ন্যায় ও সম্প্রীতি
আলোর আলোরা গায় সাহসের গীতি।
কাশফুল মন
………
মেঘ আজ হাঁটু গেঁড়ে বসেছে আমার আঙিনায়
সূর্যের চরিত দোষ নিয়ে থইথই আলোচনা
জানালার কপাটে ঠপাস চড় লাগিয়ে বাতাসে বরাঙ্গ সে
নুহের নৌকোয় উঠতে বলে সবাইকে;
দুনিয়ার যত অনাচার থেকে উছিলায় পার…!
আকাশ নীলের বিভ্রমেই খুঁজি আশালতা
তালবাজিতে সুঘ্রাণ খুঁজে ভুল বৈঠকে সাম্যের দাবী তুলি
ইহকাল পরকাল একবিন্দুতে মিশেল করে
মুনাজাত ধরি, ইয়া মাবুদ—
মিথ নয় মিথ্যার জঞ্জাল ভার আর সইতে পারি না
নীলা তার ঘুড্ডি উড়াবে, উড়াক দলশাদা মেঘে
আমাকে ফুরফুরে কাশফুল দাও…!
একটি বিন্দু রেখার নিমন্ত্রণে
……….
বিন্দুটি স্বপ্নের তরজমা হয়ে এগোয় রেখার নিমন্ত্রণে
কালের প্রতীতি কতদূর আরও এগুবে দূর
সরল, বাঁকে এসে বদলায় বাতর হালট
রোদে গলে গলে হেঁটে যায় একান্ত দুপুর
বিকাল মানেই ঢালুপথে সোনালি আলোর নিবেদন
সন্ধ্যায় সেঁজুতি দেখাচিত্রে উদ্দীপক
মোল্লাবাড়ির ডাবগাছের ডালে
চিরল পাতার ফাঁকে চাঁদ ঝুলে থাকে
হাওয়ায় হাওয়ায়
চিরল সরল পাতায় পাতায় কাটাপড়া বিন্দুর বৈভব বৃত্তচাঁদ
দুদোল দুলনি দোলে শ্বাস-প্রশ্বাসে আপ্রাণ
খানখান কবির জীবন !
ছাপছায়াহীন
………
না, কোথাও বয়সের ছাপছায়া নেই
কৈশোরের কাঁনামাছি খেলে যায়
সমূদয় চেয়ারায়…
কাশফুল ফোটা চুল, কারচুপি কাজ
সময় নিয়েছে মেনে
বয়সের প্রাজ্ঞধ্যানে
যতনে লুকিয়ে ক্ষত তুমি যুবরাজ…
হয়তো অসহ্য সয়ে
ক্রুদ্ধ সময়ের প্রতিটি বিষাক্ত পল;
হাঁড়ে ও মজ্জায় তুমি
সুর তুলো এখনও দারুণ উজ্জ্বল… !
প্রথম ছবক
……..
দুনিয়ায় যাপন সফর শেষে
ফিরে যায় মুসাফির
ধর্মশালা শেখালো আমারে
আল্লাহু আকবার—নারায়ে তাকবির
যেতে যেতে পথে পথকলি ফোটে
স্মৃতি মধুময় কথা কয়
যেতে যেতে কতপথ
বিষাদবেদনা সম—কে বা কার হয়
দিনের হিসেবে আসে সূর্যের উদয়…
রাত আসে, অন্ধকার
কালের কালোর কোষে কোষে
চাঁদের ভাষায় জাগতিক অপার বিষ্ময়…
অনন্ত পথের প্রকৃতিতে পথিকের
মান ও হুশের শত গল্প ও কবিতা
মানুষ পাঠের ব্যর্থ সফরে পাঠক
দিগন্তের নীলিমায় খুঁজে ফেরে মুক্তির আরক…
যেতে যেতে পথে মনে কি পড়ে
ও মুসাফির, কী সেই প্রথম ছবক… ?
ইকরা বিস্মে রাব্বিকাল্লাজি খালাক… !
হেরার আলোয় আলো আল-আমিন
……..
অন্ধকার; ভীষণ গভীর কালো
বিপণ্ণ’র বিলাপে না ফোটে আলো;
মানুষ, মানুষ শুধু—নয় কৃতদাস
কে শেখালো, কে ছড়ালো মুক্তির আভাস ?
অন্ধকার দূরীভূত, আলোকিত হয়েছে সেখানে
নিরাকার যিনি, অদৃশ্য আছেন প্রভূ শুধু এক
তিনি ছাড়া নেই কেউ, জাগালো বিবেক
কৃষ্ণকায় কৃতদাস বেল্লালের ভীতিহীন আদর্শ আজানে!
উদ্ভট কৌলিন্যে সমাজকে মেনে
মেয়েকে জীবন্ত পুঁতে পিতা যখন নিজেকে চেনে
তীব্র অনুশোচনায় সে সমাজ বদলাতে সর্বহারার গরিমা
দাহিয়াতুল কালবি পড়েছেন পবিত্র কালিমা
যুদ্ধমোহ ও দেহলাস্যের রোমাঞ্চকর কত-শত
কবি ইমরুল কায়েসের জয়জয়কার;
সেখানে কে শোনালো মানবিক হতে
কাব্যের মাধুর্য মাখা
আর-রাহমান। আল্লামাল কুরআন। খালাকাল ইনসান। আল্লামাহুল বাইয়ান…।
গোত্রপ্রীতি থেকে কাল থেকে কাল
রক্তের বহতাচিত্রে বিভীষিকাময় আরব জাহান—
কতিপয় বনেদী কথিত প্রভূর প্রতিমা হাতে
মানবিক সব কেটে মেরে তৃপ্ত ঘাত-সংঘাতে;
ক্ষয় অবক্ষয়—কিছুতেই তা ঘোচে না
স্বার্থের জটিল চালে চেনাও অচেনা…;
বিদ্বেষ ও ঘৃণা সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্রে
অর্থ, অস্ত্র চক্রে ধূর্ত শিয়াল নেপথ্যে…
আসে নাতো কোনো ভালো
প্রতিশোধ থেকে প্রতিশোধে, শুধু রক্তে আগুন ধরার গান… !
মুক্তির মানসলোকে পরিলক্ষিত দেবতা হুবাল বেজায় অর্থহীন;
মেষের চারণভূমি ছেড়ে ওইতো দূরের
হেরাগুহা থেকে অলৌকিক নূরে কে চমকালো—আল-আমিন আল-আমিন!
যখন বিদ্যুৎ আর আসছেই না
…….
যেমাত্রই বৈদ্যুতিক পাখার ঘূর্ণন থেমে গেছে
ঘামফোটা কপালে ও গলে, চিকচিকে কিছুটি সোহাগ
চৈতজ্বলা দিনগুলো বোশেখের প্রারম্ভিকা
পাঠ করছে লাল মরিচের ঝাল ছড়িয়ে
মর্নিং সান…
একাকীত্ব পাওয়ার ফিল পেয়ে অসহ্য সাধুটি
শরমের ঝুরঝুরে তালমিশ্রি চুষে
পিয়ে ডালিম দানার বর্ধিত হিমগ্লোবিন…
ওটিপি-র কোর্ড নম্বর টিপে মনারণ্যে ঢুকে কেউ কেউ আশেক-মাসুক
কেউ আবার জিগিরে দোস্ত…
কীসবে কীসব থেকে এসবে সেসব হয়ে
যাচ্ছে সময়ও গলে যাচ্ছে
বিদ্যুৎ? না!
এখন সে আসছে না
ঘেমে নেয়ে এসব কল্পনা জল পোনা
ঘামে ঘামে নোনা জল পোনা
স্নায়ুর সাঁতারে আর ভালো লাগছে না।
এই ইতিহাস মায়ের
……..
খোকা আমার, মূক হতে নেই
কীসের হতাশা ?
গলা ছেড়ে তুমিও গাও—
‘ আ’ মরি
বাংলা
ভাষা…। ‘
এই কথা তো তোমার জানা
ভাষার পাখি ডাক তুলেছে
আজ কেউ নেই নেই
করতে পারে মানা।
অ, আ, ক, খ…
অক্ষরগুলো রক্তমুখো
হয় ফাগুনে লাল—
এই ইতিহাস বাংলামায়ের
পুত্র হারার কাল !
খ্রীষ্ট অব্দের ঊনবিংশতির
বায়ান্নততে
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
আট ফাগুনের দিন;
ভাষার জন্য পুত্রহারা
বাংলা মায়ের কাছে
ভাষাবিশ্বের ঋণ… ।
সেদিন বনহরিণী কেঁদেছিলো
পাখ-পাখালী কেঁদেছিলো
বাঘ-বাঘিনী কেঁদেছিলো
উড়ন্ত চিল কেঁদেছিলো;
মাঠে মাঠে ঝির বাতাসে
শীত ফসলি
আর
রবিশস্য কেঁপে ছিলো !
বুঝতে পেরে রক্তনদে
পাল উড়ালে নৌকার
কষ্ট-কাঁন্না বয়ে নেয়ার
হাওয়ার
প্রবল গতিবেগ… !
সেই গতিবেগ বুকের আবেগ ;
বিরুদ্ধ ঢেউ ঠেলেঠুলে
রক্তনদী পাড়ি দিয়ে
৭১ এ ভিড়লো এসে
বট-হিজলের মূলে ;
হক, সোহরাওয়ার্দী,
সুফী ভাসানীর বৈঠা হাতে
মাঝি ছিলেন টঙ্গীপাড়ার শেখ।
ভীষণ খরার রোদ ঝাঁঝাঁ
পথ মাড়িয়ে
ভয় দেখানোর চোখ তাড়িয়ে
উড়লো যখন রক্তমাখা
সবুজ নিশান—
এইতো আমার দেশ !
ফুল কমলের হাসি থেকে
জাগলো বাংলাদেশ ।
আলোর ডাইনামো ও নবায়িত চে’
………
চে’র পাশে বসে প্রয়োজনে
হাভানা চুরুয়ে দিতে পারি ধূমায়িত টান
মুক্তির নেশায়…
জীবন কতটা মূল্যবান
প্রশ্নের অক্ষরগুলো ফুটিয়ে চলেছি
নিত্য দিনরাত…
প্রকল্প সুন্দর ছবি এঁকে
বস্তুগত হতে হবে ভুলভাল দূর পথে যেতে
কখনো চাই নি…
বিশ্বাসের বিন্দু থেকে বৃত্ত
জিভের আস্বাদে লিপ্ত দ্বন্দ্বে মন্দে গভীর আন্ধারে
হারামের রোগ…
আজাব গজব হলো অনেক কামাই:
ঘুটঘুটে রাত পার হতে
এসো চে’র সাইকেলে শাশ্বত আলোর
ডাইনামো লাগাই…।
উকিল নোটিশ
……..
আমাকে সাজাতে চাও মকদ্দমাবাজ
আহারে নিষ্ঠুরতমা, ফাঁফর বাজির সময়ও বুঝলে না !
সমকোণ সূচিত হবেই বাহু দ্বয় ধরে;
বিভঙ্গ বাসনা কালে তুমি কেন অবিচারী হলে ?
আমার অস্তিত্বটুকু শেষ করে দেবে—
অন্যায়-সংঘাতে যদি রক্তবিন্দু ঝরে
জেনো জেনো তা থেকেই রক্তজবা ফোটে…
সমূহ সত্যের বিপরীতে দত্যিদানো
তুমি হাসিতে জমের কালো;
আলোর প্রার্থনা থেকে কাঙ্ক্ষিতটুকুন নিশ্চিত ফুটিয়ে নেব।
তুমি হাপরে কয়লা পোড়া আগুনের গনগনে লাল—
হাওয়ায় হাওয়ায় পেছনে চেইন টানে যে পুরুষ
তাকেই মেনেছ তুমি সুদক্ষ কামার;
হিসেবের সৌন্দর্যে গড়াপেটার সম্যক ধারণা নেই তার।
তুমি হলে না সেই মালিক, যে বোঝে ভূমির শস্য দানার যাতনাকাল—
অপেক্ষা প্রহরগুলো কীভাবে কীভাবে
ফেটে পরিতৃপ্ত হয় অঙ্কুরিত ভ্রুণে…
নতুন অঙ্কুরে আমি হবো অনিবার্য সত্য—
আমার মৃত্যুর জন্য তোমরাই দায়ী;
মৃতের ফসিল থেকে জেগে উঠবই অটুট সাহসে আমি আলোর ফুলক…।
বাহ দারুণ আয়োজন। সহজে কবিকে পাঠ করার সুবর্ণ সুযোগ
।খুব ভালো লাগল কবিতাগুলো
।
শুকরিয়া। ধন্যবাদ কবি। ❤️