spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতানির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান

নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান

কিছু জানা নেই
………

একটা কথার কথা আসল আদলে বলা
আমি তার কিছুই জানিনা কোথায় কখন
এমনটা হবে, শেষ হয়ে যাবে সব কিছু
মাঝে মাঝে দিনের আলো এতটা অন্ধকার
হয়ে আসে বুঝে ওঠা ভীষণ কঠিন
সময় কত এখন,কিংবা আলো হলে…

কেমন দেখাতো সব কিছু ঝলমলে প্রাণবন্ত —
এক খণ্ড জমি সেটা কেমন হবে শোবার জন্য
আদ্র না কি রুক্ষ কোথায় নির্ধারিত হয়েছে
কারো কারো আছে এমন নির্দিষ্ট এইটুকু ভূমি
সেখানে তারা পছন্দ মতো ফুল গাছ বুনে দেয়
কিন্তু কিছুই জানেনা কবে আসবে এখানে…

নতুন কাপড়ে আগ্রহ হামেশা খুব কেমন দেখাবে-
আমাকে,অথচ জানা নেই কোন বিপণী বিতানে
কোন রেকাবে উঠেছে সফেদ তিনটি পিরান
আরো যা যা কিছু প্রয়োজন প্রসাধনে এ-ই ক্ষণে
এক খণ্ড জমি আদ্র কি বা শুষ্ক কিছু জানা নেই…

১০ ই জুন ২০২৪
হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা

প্রেমকাহিনী
………

প্রয়োজনে কিছু মিথ্যে গল্প সাজিয়ে তুলবো আমি
এই সব গল্প তৈরি করা বেশ জরুরি হয়ে পড়েছে
চলমান ফোনালাপে আমার কণ্ঠস্বর শুনে বলে উঠবে তুমি
কি- ব্যাপার তোমার কী শরীরটা খারাপ করেছে?
আমি আরো ভীষণ কাতর স্বরে তোমার স্পর্শের আকাঙ্ক্ষায়
খুব যত্ন করে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে করেই বলবো
গত রাত থেকে প্রচণ্ড রকম ঠান্ডা জ্বর মাথা ব্যথা…

আসলে আমার তেমন কিছুই না বেশ ঝরঝরে আছি
শুধু তোমার স্নেহ মায়া ভালোবাসার প্রত্যাশায়
আরো মিথ্যে গল্প বুনে তুলে, গতরাতে ছিলাম না বাসায়…
তুমি খুব আশ্চর্য হয়ে বলবে ক্যানো, ছিলে কোথায়?
তোমার কথা মনে পড়ছিলো দারুন আলোছায়া মায়ায়…

কবে কোথায় যেনো দার্শনিক এক বলেছে
ভালোবাসা পেতে হলে অসুস্থ হও
আমি সেই কৌশলটি কাজে লাগাচ্ছি এখন।
– কী করেছো সারা রাত্রিতে শুনি
রাতের শহরে একা একা রাস্তায় ফিরেছি
আর তোমার কথা ভেবেছি শুধু…
তুমি চমকে গিয়ে, কী বলছো এইসব !
মানুষ দিন দুপুরে বেমালুম গুম খুন হয়ে যাচ্ছে
– তুমি একা একা রাস্তায় রাস্তায়!

এইসব অলীক গল্প সাজিয়ে তুলে তুলে
তোমার মায়ার স্পর্শের ইচ্ছায় আরো অসুস্থ হয়ে উঠবো আমি…

হাতিরঝিল, রামপুরা, ঢাকা

প্রেস নোট
……..

সভা মঞ্চের নিচে সাদা কাফনে মোড়ানো
শুধু চারটি লাশ পাওয়া গ্যাছে
এর বেশি কিছু জানা নেই পুলিশ বড় কর্তার
রাতের গভীরে অন্ধকারে যারা ছিলো
অকৃপণ গুলি বর্ষণের মধ্যে রাজপথে
তাদের রক্তের দাগ ধুয়ে নিয়েছে বৈশাখের বৃষ্টি…

কোথাও কোনো রক্ত চিহ্ন নেই, হত্যা যজ্ঞে
আলামত অবশিষ্ট নেই আর ভোরের আলোয়
শতবার মিথ্যা উচ্চারণে, মিথ্যা হয়ে গেছে সত্যি –
বাতাসের তরঙ্গে যে আর্তনাদ
রক্ত স্নাত এভিনিউ
ক্ষত বিক্ষত সহস্র শরীর

– না না এইসব গুজবে কান দেবেন না
আমরা যা বলছি তাই মন দিয়ে শুনুন
কিছু হত্যা হয়েছে তবে তেমন বেশী নয়
ভোরের আলোয় পাওয়া যাওয়া কাফনে মোড়ানো
মাত্র চার চারটি গুলির ক্ষত লাশ

অন্ধকার থেকে লাশ গায়েবের কোনো ঘটনা ঘটেনি
আর এত লাশ পড়ে গেলে শহরের কাক জেগে যেতো
বেড়ে উঠতো বেওয়ারিশ কুকুর গুলোর অস্থিরতা

সন্দেহ দানা বাঁধলে, দূর করা শ্রেয়
সন্দেহ হলে সব কিছু পরীক্ষা করে দেখুন
কোথাও কোনো রক্তের দাগ মগজের ছিন্ন অংশ
কিংবা কোথাও জমাট বাঁধা রক্ত !

পিচ ঢালা পথ,ম্যানহোল সরু ড্রেন
সুয়ারেজ লাইন সব কিছুই পরীক্ষা করে দেখুন
কোথাও কোনো বর্জ নেই সামান্য জট পাকিয়ে
দেখবেন সবকিছু ধোয়া মোছা ঝকঝকে পরিষ্কার…

১২ মে ২০১৩

বহুদিন পর দেখা
………..

বহুদিন পর আবার চলার পথে হলো দেখা
কতদিন পদচিহ্ন নেই বেঁকে গ্যাছে পথো রেখা
পরিপাটি লন বিজলী বাতির ফ্যারোমন আলো
উজ্জ্বল হয়েছে আরো, দূর করে অন্ধকার কালো
সবকিছু পাল্টে গ্যাছে আরো আধুনিক যেনো
ভাবি এটা কবে হলো,প্রিয় কিছু গাছ নেই কেনো।

দুটি যুগ চলে গিয়ে সেই স্মৃতিময় দিনগুলো-
খুঁজে ফিরি একা এই পথে, দেখি উড়ে শুধু ধূলো
অপেক্ষায় থাকি পরিচিত মুখ যদি পেয়ে যাই
হাতে হাত রেখে বলি অবয়ব বুঝি মনে নাই?
শৈশব কৈশোরে পাশে বয়ে চলা থির জলরাশি
সরোবরে জলখেলা করে কত বেলা গেছে ভাসি।

জলাধার পাড়ে সেই ছোট্ট জীর্ণ প্রার্থনার ঘর
একচালা তর্জা বেড়া মোম আলো রোদ বৃষ্টি ঝড়
কত ভোর, সন্ধ্যা সেজদায় স্মরণ করেছি তাঁরে
যেনো তাঁর ডাকে আরো মিশে থাকি অশ্রুধারা ভারে।
সেই মসজিদ দেখি আজ শ্বেত শুভ্র পাথরের
দীর্ঘ দিবস রজনী পরে দেখা হলো আমাদের।

২২ অক্টোবর ২০২৩
হাতিরঝিল, রামপুরা, ঢাকা

লোকটি
………

পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মধ্য রাতে বিদায় নিলো লোকটি
কেউ ছিলো না তো তার পাশে, না -কোনো আত্বীয় –
না কোনো সন্তান,পাড়া প্রতিবেশী কেউ না।
একা, খুব একা জীবন যাপন ছিলো তার
বিছানায় পড়ে আছে কিছু ক্ষুদ্র দ্রব্য সামগ্রীর
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগোছালো কতগুলো বই
কলম , ঔষধ একটা চিরুনি অসমাপ্ত লেখার খসড়া –

যারা তার পরিচিত, কিংবা তাকে সামান্য জানতো
কেউ ভাবেনি লোকটি নেই নিঃশ্বাসে – প্রশ্বাসে
খুব ভোরে যার জেগে উঠবার কথা প্রাত্যহিক
আজ সজ্জা ছেড়ে উঠে কোনো কাজ সেরে নিয়ে-
ল্যাম্প জ্বেলে বসে কাগজের সাদা পৃষ্ঠা ভরিয়ে তোলেনি
চিত্রকল্প ,অনুপ্রাস তুলনা উপমা ছন্দ মেল বন্ধে।

একে একে এসে জড়ো হয়ে কিছু চেনাজানা জন
তার বিছানার চারপাশে ভালো মন্দ গুণ গুঞ্জুরণে
অশ্রুপাতে রুমালে,আঁচলে মুছে নিয়ে আঁখি কোণ
যাপিত জীবনের কথাশিল্প করে যায় স্মরণ
আরো ব্যথাভারে আহত আনত হলো কেউ কেউ।

কখন নিভে গ্যাছে প্রদীপ একা শূন্য ঘরে চুপিসারে
শেষ কথা ছিলো কিছু,বলে যেতে চেয়েছিল মন !
পাশে পড়ে থাকা বই কলম জঞ্জাল সরিয়ে –
নিয়ে উঠে এলো তার ব্যবহার করা অতি প্রিয়
বুক পকেটে রাখার আনকোরা ঘড়িটি যখন …

সচল ,জীবন্ত! ঝকমকে ঘড়ি ঘন্টা মিনিট কাঁটায়
টিকটিক শব্দের সময় দিচ্ছে ভারি সঠিক তখন
আর এক মুহূর্ত কালের দেরি নয় অভ্যাগত সুধি বন্ধুগণ
বেলা দ্বিপ্রহর , নতুন কাপড়ে আতর লোবানে –
সাজিয়ে গুছিয়ে অন্তিম শোভাযাত্রার শুরু হবে এখনই।

১৪ ই অক্টোবর ২০২৩
হাতিরঝিল, রামপুরা, ঢাকা

নীল শাড়ি
……..

সহসাই মধ্য রাতে নীল শাড়ি শরীরে জড়িয়ে
নীল টিপ মাশকারা আই লাইনের রেখা টেনে
কাছে আরো কাছে এসে কেনো বল্লে তুমি
দেখতো কেমন নীল নীল হয়ে আছি প্রিয়
হতবুদ্ধি হয়ে গেছি কি বলবো তোমাকে তখন …

নীল রঙ বেদনার কথা বলে জানি শুধু আমি
মনের গভীরে লুকিয়ে রেখেছি, রেখেছি আড়াল-
করে রঙের ব্যথিত ভাবার্থ গোপনে
যতবার বলেছি ভীষণ! দারুন সুন্দর
ভেতরে হৃদয়ে ততবার হলো যে রক্ত ক্ষরণ

কেনো আচানক এতো রাতে নীল হলে তুমি
ইচ্ছে করে বলিনি রঙের প্রতীক যেনো !
হয়তো তুমিও জানো, কিংবা ভুলে আছো এই ক্ষণে
চেয়েছি আমিও ভুলে থাকো দুঃখ কাল ব্যথার স্মরণ
চলো বাইরে গিয়ে দেখি পূর্ণিমায় নীল আলোর ধরণ।

১২ ই অক্টোবর ২০২৩
হাতিরঝিল, রামপুরা, ঢাকা

হৃদয় বিতানে
……..

সর্ন্তপনে খুলে নিয়ে অলক কীলক কেশগুচ্ছ মেলে দিয়ে
জ্যোতিষ্মান জ্যোৎস্না প্লাবি স্বচ্ছ স্রোত্বস্বিনী জলে
রাত্রি আরো নিঝুম গভীর হবে অলকদাম আঁধারে
খড়খড়ি দিয়ে আসা অগনন আলোক বিন্দুর –
প্রসাধনে গৌড় মুখোশ্রী দেখাবে আরো শান্ত স্নিগ্ধ।

কেশারণ্যে থেকে এসে ললাটের মিহি স্বেদ বিন্দু
ছুঁয়ে ছুঁয়ে মুছে নেবো কোমল অধর ওষ্ঠ স্পর্শে
ভ্রুভঙ্গির সৌকর্য থেকে উড়ে যাবে অজস্র জলচর
নিঃশ্চুপ – নিঃশব্দে শুধু সৃষ্টির রূপকল্প অবলোকন।

মসৃণ গ্রীবার হালকা গোলাপি আভা এনেদেবে
রক্তের শ্বেত লোহিত উষ্ণ কণিকায় কামার্ত শিহরণ
পূর্ণ চাঁদে আলোর প্রসাধনে জ্যোতির বিভা নিয়ে
থাকবে তুমি অনন্তকাল হৃদয় বিতানে…

১১ই অক্টোবর ২০২৩
হাতিরঝিল, রামপুরা, ঢাকা

হট কফি কাপ
……..

সারাদিন রুমঝুম বৃষ্টি আর বৃষ্টি ক্ষণে ক্ষণে
মেট্রো রেলে শেষ সীমা দিয়াবাড়ি স্পর্শ করে
বসে আছি একা ক্ষুদ্র এক ফুডকোর্টে –
ধোঁয়া ওঠা দুই কাপ হট কফি নিয়ে
মৃদু শব্দ তুলে একা একা টোস্ট করি ভাগ্যবতী নামে
স্মিত হেসে ওয়েটার কাছে এসে ! আরো কিছু
প্রয়োজন হবে কি – না জেনে যায়
তুমিহীনা এই মেঘলা বিকেলে

রিমঝিম একটানা ঝরে যায় বৃষ্টি,কেউ নেই কাছে পাশে
দূর থেকে সোঁদা মাটি মন পোড়া গন্ধ ভেসে আসে
ঠোঁট ছুঁয়ে তপ্ত রঙিন তৈজস কাপে ভাবি কতদিন
কাছাকাছি মুখোমুখি চোখে চোখ রেখে –
কোনো কথা হয়নি তো বলা উষ্ণ অনুভবে…

বৃষ্টি ভেজা এইদিনে এঁকেছো কি কাজল কালো নয়নে
আনমনে কোনো প্রিয় গান গাও একা নিপুণ চয়ণে
সুখোদয় কামনার লজ্জালীলা অঙ্গে ফোঁটে ধ্রুপদী মুদ্রায় ?

লোক শূন্য ছোট্ট ঘরে ধোঁয়া ওঠা হট কফি কাপে
মিষ্টি শব্দ করে টোস্ট করি, তুমি আছো এতো কাছে অনুধ্যানে ।

৫ ই অক্টোবর ২০২৩
দিয়াবাড়ি মেট্রো রেলে।

ভাগ্যবতী চরে
………

মধুমতি জলযানে অপ্রশস্ত ছোট্ট ইস্পাতের করিডোরে
ছিলেনা তুমি তারুণ্যের অবাধ্য কলহাস্য কলরোলে
কবিতা পাঠের সভা মঞ্চে, শ্রোতা দর্শক সারিতে
কোথাও ছিলেনা তুমি, তবু কেনো ভেবেছি এমন
দূরের ধাতব কার্ণিশে আধখানা চাঁদের বিভাতে
কিছুটা গভীর রাতে ঝলমলে রূপালী আলোয়
মেঘনার মোহনায় সহসাই এলে যেনো তুমি …

পূর্ণিমা জোয়ারে কৃষ্ণপক্ষ ভাটায় পলি জমে জমে ভাগ্যবতী চরে
সবুজের সমারোহ লতাগুল্ম বুনোফুলে
প্রকৃতির ছায়াবীথি তোমারই হাসি মায়া হয়ে ঝরে
একটি ঝিনুক বাঁচবে বলে নেমেছে জলের বিথারে
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় খরোস্রোতা স্রোত্বস্বিনী নীলের গহীনে …

কতবার ভুলে যেতে যেতে তবু জেগে থাকা অপ্সরীর
কোমল কপোল,ছলছল ব্যথা ভরা দুটি চোখে
যেনো শত কথা বলে যেতে চায় হৃদয় গহনে…

৫ই অক্টোবর ২০২৩
হাতিরঝিল, রামপুরা, ঢাকা।

কবিতার বাতায়নে
……….

( কবি মনসুর আজিজ এর পঞ্চাশ তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা )

শহরের প্রান্ত সীমায় তৈরি হচ্ছে মনসুরের বাসগৃহ
পোড়া মাটির রঙ বাহারি টাইল্সে সাজিয়ে তুলছে
রাজে-রা বৈঠকখানা, শোবার ঘর, রসুই,হাম্মামখানা।
এই পশ্চিমের আলো, এটা আমার কবিতার বাতায়ন-
দূরে সবুজ নিটোল ক’টি গ্রাম শীর্ণ এক শাখা নদী
এত ছোট খিড়কি দিয়ে নিসর্গকে যাবেনা বুঝা
চলো ছাদে গিয়ে দেখি নদীটির জন্মের রেখা
কোথায় মিশে আছে যায় কি – না দেখা…

পড়ন্ত বেলায় সূর্য ছড়িয়েছে কী অদ্ভুত আভা
দূর গ্রাম থেকে পাখিদের কলকাকলি এই তক ভেসে আসে
দেখেন ধুঁয়ার মতো গাছের সাথে কেমন কুয়াশা জমেছে।
এইতো আসছে পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নায় ভিজে যাবে সব
আলোর অক্ষরে সাজিয়ে নেবো সারারাত কবিতা।

ইয়াসমীনও ভালোবাসে সুন্দরের আরাধনা
নির্মাণে – বিনির্মাণে পাশাপাশি থাকে আমারই অর্ধেক।
কোনো দূর্যোগ এলে সুন্দরের কাছে কবিতার আশ্রয়ে
সাহসের ভরে থেকে যাবে ঠিক চৌকাঠ ধরে –
মনসুরের কবিতার বাতায়নে ছবির হয়ে ক’টি গ্রাম শীর্ণ এক নদী
সন্ধ্যার পাখির কলকাকলি, সবুজ কত দিন থাকবে সবুজ?
কোনো অন্ধকারে ক্ষীয়মান প্রিয় নদীটি যদি যায় মরে…

হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা।

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. সহজে সরল কথা বলা পড়িয়ে নেয় ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ