spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল

গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল

আমি তার নাম কখনো বলবো না
……….

আমি ঢুকেছিলাম আয়নার ভেতর দিয়ে

আমি চাঁদের হলুদ নদী সাঁতরে এখানে এসেছি
আমি নক্ষত্রদের ছেঁকা খেতে খেতে এখানে এসেছি

এখন আমি একটি ইলেক্ট্রিক লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে
নদীভাঙা বন্যার জল দেখছি

আমার বাস্তবতা চুরি করে নিয়েছে আমার মানব জীবন

আমার স্বপ্ন খুন হয়েছে যে বড়ো শহরে তার নাম আমি বলবো না

আমার মৃত স্বপ্নের কোনো কবর নেই এই শহরে

রাত্রি নামে
দিন হয়
একটি ছিদ্রে

দেখো অনেক দূরে একটি ঘণ্টার মতো দুলছে আমার স্বাধীনতা

আমার জন্মভূমি আকাশে উড়া এক রুগ্ন পাখির দেহ

আজ সকালে যখন ঘুম থেকে উঠেছিলাম
আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমাকে

আয়নার সামনে গেলাম
আর দেখতে পেলাম আমাকে

আয়না আমার রক্ত মাংস হাড় সব খেয়ে নিয়েছিল

এখন দেখো আয়নার ভেতরে কি চমৎকার লাগছে আমাকে
——————————–

পাহারায় নিযুত নক্ষত্র আর চাঁদ
………..

শোনো
আমার বাবার কবর আমি বিক্রি করবো না
নিযুত নক্ষত্র আর চাঁদকে করে রাখবো পাহারাদার

মৃত্যুর পরও আমি স্থাপত্য ফেরি করে যাবো
আমার বাবা আর আমি গরুর গাড়ি করে নিয়ে যাবো হাড়গোড় গুলো
মহাশূন্যে গিয়ে যখন পৌঁছুবো
আর সেটা হবে একটা কমেডি

তুমি কি মনে করতে পারছো
যখন আমাদের দেশ ভাগ হয়েছিল তখন কবরগুলোর স্থানান্তর নিয়ে একটি প্রস্তাব পঠিত হয়েছিল

কিছুটা হাত সাফাই হলো
আর বেরিয়ে গেলো আকাশ পুষ্প মেঘদল

এখন আমাদের শৈশবের কিছু অভিজ্ঞ চাষির দল
তাদের ঘরবাড়ি খড়কুটো হাঁস মুরগি
নগ্নদেহে রঙ মাখছে

আমাদের দেখা আদিম নৃবাসীগণ
তাদের লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানছে অটোমোবাইল

দেখো আমরা তো সময়ের শহীদ ক্রীতদাস
মুহূর্তের পরমাণু

আমি ভাবছি মানুষের কথা
মানুষ যেন ভাগ না হয়
আমি পাহারায় রেখেছি নিযুত নক্ষত্র আর চাঁদকে
————————————

বিষন্নতার বাদশা
………..

আমি একটা উপনিবেশ নিয়ে এসেছি

লিকলিকে এক ছিদ্র দিয়ে যখন আমি আমাকে দেখি

এটা পৃথিবীর একটি ঠিকানা
যেটা আমি

হতে পারতাম আমি পারদর্শী
না হয়ে হয়েছি এক পাপের পাত্র
বিষণ্ণতার বাদশা
আমার কঙ্কালের পেরেক গুলো নষ্ট করোনা
আমি পেরেকে গেঁথে দেবো তারাগুলোকে

ভবিষ্যৎ বাণী যত
আর একুশ শতক আয়নায় মুখ দেখছে

আলমারির ভর্তি নারীপুরুষ
একটা থলিতে দেবদূতদের বাসা
আর নরকের সূচীপত্র ঝোলানো প্রকাণ্ড দেয়াল

একটি বালক কবরখানায় গেছে তার বাবাকে খুঁজতে

একটা মেয়ে কবে কোন কোথায় চলে গিয়েছিল তা কেউই জানত না
এখন সে চাঁদের মাটিতে ব্যবসা করছে

কটা শহর কুয়োর মধ্যে পড়ে গেছে
কটা গ্রাম বাদুড়ের বাসা হয়ে গেছে

খাবার বলতে লোহার মাংস
জলের হাড় চিবুচ্ছে

সেখানে কোনো স্বদেশ নেই
কবরখানার দিকে যাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই
সেখানে মাঠের এক নলকূপ থেকে বেরিয়ে আসছে শান্তি বর্ষিত হোক

নিজেই নিজের লাশ চোরাচালান করার মতো বোবা কালা অন্ধ এক ব্যক্তি

দেখো সূর্যাস্ত
ঘড়ির লাল ঘোড়াগুলোকে হত্যা করা হয়েছে সবেমাত্র

কিংবদন্তিগুলোতে ফাটল ধরেছে পাগলা পতঙ্গ গুলো গিলে নিচ্ছে
কালঘাম ছুটছে মিনারের

বেলা দ্বিপ্রহর
সৌর লোক
বিষণ্ণ সাইনবোর্ড
একটা নির্জন রক্তের দোকান আমি
———————-

বৈতরণীর নোনা জল
……….

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি এক গোরস্থান
আমি তার সৌন্দর্য টেনে বের করে আনি
মেহেদি রঙের মাটির কবর

ওই যে উত্তর দক্ষিণ ওর কোনো মানে হয় না

জীবন এবং মৃত্যু ওই দুই শব্দের কোন অর্থ আমি করি না

আমি শব্দের মাংসগুলো খেয়ে নিয়ে বলবো
আর কোনো কথাও হবে না

হাড় জিরজিরে ফ্যাকাসে পৃথিবী
সেবকের মতো হাতের পুঁটলিতে চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা
কোনদিকে চলেছে কেউ জানে না

পেছন থেকে এখনও কয়েকটি লাশ ফরিয়াদ জানাচ্ছে

একটি আঁকার মধ্যে দশজন ভাড়াটিয়া
কিলবিলি রাস্তা
আর পাপী নর্দমাগুলো প্রত্যাশা করছে রামধনু রঙের নদীর মুখ

কয়েকটা সুড়সুড়ি আকাশ ক্রশ করছে
আশা
হারিয়ে যাওয়া সারসের মতো বাতাস কেটে কেটে যাচ্ছে

মনে হয় আমি এক প্রেত
আমি বেঁচে আছি আমার মাথার ভেতরে
আমার কবরের আলমারিতে আমি পুতুল আর খেলনার মতো পরিপাটি হয়ে আছি

আমার সাথে এক বিছানায় শুয়ে আছে একুশ শতকের গোরস্থান
একটা পাইপ থেকে বেরিয়ে আসছে বিষণ্ণতা

বুড়ো শহর হাঁসফাঁস করছে
ভোরবেলার লেপের ভেতর থেকে শব্দ আসছে
কপালের একটা লালচে তিলে জমে যাচ্ছে জীবন

সবকিছু ফাঁপা
আর দীর্ঘশ্বাসে ভরা এক হোটেল
দূর খড়ির মতো আধুনিক মানুষজন

বিষাদের এক বাদশা
সেও মরা

সুফি অবলম্বী কিছু গাছ
পাথরে প্রাচীন নাগরিকদের মতো

সাদা পোশাকে নৈঃশব্দ্য

ঝিনুক কুচি ভর্তি একাকিত্ব কষে বাঁধা হিমবাহের সাথে

যেন কোনো বৈতরণীর নোনা জল চুঁয়ে পড়ছে
বিক্ষত থেকে

———————————

হলরেখা

………..

আমার প্রথম পরিচয় জগতের মিথ্যার সাথে
আর এগুলো লেখা শুধুমাত্র ময়ুরপঙ্খী

আমি কুটিকুটি করেছি স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ

একটা ছুরিকাঘাত
জগৎ আর দেবতার রৈখিক নৈঃশব্দ্যে

যেন এক অবশ শিশু হলরেখার পাশে শুয়ে রয়েছে
আর তার পিতা মাতারা ঘুরে বেড়াচ্ছে

এক মা কৃষ্ণরক্ত দিয়ে আহ্বান করছে সূর্যকে

আমরা সন্ধ্যার প্রার্থনায়
আমাদের প্রার্থনা হয়ে উঠবে একটা পাগলা পতঙ্গের মতো
জাল বিস্তার করবে
ঝুঁকে থাকবে
অনুমতি দেবে আমাদের মাথাগুলো নবানয় করতে

কিছু রক্তাক্ত ফোঁটা
একটা এনডরয়েড ফোন
আঙুল গুনে গুনে এগিয়ে যাবো
যখন আমরা একটি মাঠে স্বর্গকে নগরায়ন করবো তখন চাঁদ হয়ে উঠবে নরকের সমতুল্য
যেন কালরাতে আমি মস্তক হাতে নিয়ে নরকের স্বপ্ন দেখছি
আর যখন আমি স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসছিলাম
হাত থেকে মস্তকটা পড়ে গেল স্বপ্নের মধ্যে

ছায়ার মধ্যে গোঙাচ্ছে ছায়া
যেমন দেখতে হয় রাত্রির বিকৃত মুখ
লেজ মোটা করে শুয়ে আছে আকাশ
যেন রাগি একটা জানোয়ারের প্রবেশ ঘটছে

দিনের গন্ধ পচছে একটি পাত্রে

নক্ষত্রের তাঁবু গুলোর সারল্য
পৃথিবীর হিত বিপরীতে আমি কোনদিন কারুর জন্মানোর কান্না নিয়ে কথা বলবো না
আর তুমি চোখ দিয়ে জড়ো করো ভয়বিহবল দিগন্তগুলো
পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে এসো কবরের মতো দেখতে মহাশূন্যকে
তুমি দেখবে একটি হলরেখার মধ্যে কিভাবে ভরে রয়েছে পিপীলিকারা
——————————————–

আরও পড়তে পারেন

2 COMMENTS

  1. গোলাম স্যারের কবিতা বারবার পড়ার মতো ।

  2. গোলাম রসুলের কবিতা যতবারই পাঠক পাঠ করবেন, ততবারই তার কাছে একটা ভিন্ন জগতের আবিষ্কার মনে হবে। আর্তুর র‌্যাবোর মতোই কবিতায় এক মহাজাগতিক মুক্তি উপলব্ধি হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on দু’টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on পাখিমানুষ