spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতানির্বাচিত ৫ কবিতা : শাহীন রেজা

নির্বাচিত ৫ কবিতা : শাহীন রেজা


ভুল হয়ে যায়
………

||কবি ফররুখ আহমদ ; অনন্ত শ্রদ্ধা ||

ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় সব
বর্ষা নেমেছে তবু নাই কেনো ডাহুকের কলরব
ফররুখ নাই ভোঁতা বুঝি তাই হাতিমের তলোয়ার
সিন্দাবাদের জাহাজের পালে ঈশাণের বায়ুভার

ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় শুধু
এতো খুঁজি তবু প্রনয়পাষাণে ঈগলের ছোঁয়া ধুধু
আসমানে নাই আদমসুরাত ফোরাতের বুকে পানি
সীমারের ছোরা হননের পথে ক্রমাগত সেতো জানি

ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় কাজে
জমেছে অগ্নি জেগেছে দহন ধূসরের ভাঁজে ভাঁজে
ঈমানের জোর নিয়মের বাণী শুধুই একলা কাঁদে
ব্যাকুল কবিতা অকরুণ আঁকা জীবনের পাতা ফাঁদে।

নদীপ্রজাপতি
………

না দেবো না
ঊর্বশী মেনকা কিংবা রম্ভা যেই হোক
ওষ্ঠমুকুলে জানালে তৃষা, পাঠালে তীব্র আমন্ত্রণ
কিছুতেই দেব না খুলে চুম্বনের নিভৃত অর্গল

ভালোবাসা যদি বলো
এটা হলো তাই
আস্থা ও বিশ্বাসে পূর্ণ ছায়াস্বরলিপি
জ্বলে জ্বলে খাঁটি এক আগুন করোটি

মেনকার ডাক শুনে ভাঙ্গে না তন্দ্রা নদীর
রম্ভা স্পর্শেও জাগে না কম্পন অনন্ত পৌরুষে
ঊর্বশী নাচলেও ফোটে না কামজজবা ময়ুর পেখম

ভালোবাসা এরকমই
তুমি চাইলেই সব চাঁদে আলোর গ্রহণ
তুমি হাসলেই সব পাখি নদীপ্রজাপতি
তুমি ডাকলেই হাতেমেরা হেরেমের দাস
তুমি ভালোবাসলেই দেহজুড়ে কবিতার চাষ।

স্বপ্নঅশোক
……….

|কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিনে|

না তোমাকে প্রেমাংশু ভাবি না
আমার বিশ্বাসের ধারাপাতে যে যোগ
কিংবা ভাগের হিসাব
আমি তাতে আঁকতে চাই না বিহারের
বাসন্তী বিলাপ

হুলিয়ার বোঝা হাতে
কাদামাটির আল ধরে বাড়ি ফেরার অদম্য আশায় আমিও উড়তে চাই; দুপুরচাতক–
রোদের টিকিট লিখে নেমে পড়ে নামহীন
জংশনে; রফিজের মৌন মায়ায়
হাতে তুলে নিতে চাই ধূমল গ্লাস

কার্ল মার্কসে জমেছে ধুলো আর স্ক্রপ স্কায়ায়
তেল ময়লার ছাপ–
শ্যাওলার গন্ধ মাখা প্রাচীন প্রহরে
তবুও দাঁড়াতে চাই অচঞ্চল স্বপ্নঅশোক
বাষট্টির ঝড়ে ভেঙে যাওয়া দেহ;
কুড়াতে রাতের স্মৃতি ফনীমনসায়

না সেনবাড়ি থেকে বৌদি নয়
যশোর থেকে নয় ন্যাপ কর্মী ইয়াসিনও
শুধু মায়ের চোখে চোখ রেখে জগতের
সবচেয়ে অবুঝ শিশুটি হয়ে আমি তোমার আদলে ডুবে থাকতে চাই একটি প্রহর

নয় কোনো মানবজন্ম
কবিজন্মের বার্তা নিয়ে হাতে
আমিও পৌঁছতে চাই নীলের ওপারে;
হয়ে কোনো নগররাখাল অথবা ধ্রুপদির
রাজহাঁস কালের কপোলে।

আব্বা
………

মা’কে সরিয়ে দিয়ে যেদিন পাশে বসে আপনি কপালে হাত রাখলেন, সেদিনই আমার শরীরের সমস্ত জ্বর নেমে গিয়েছিল।
আমি গভীরভাবে বুঝেছিলাম, মমতার হাতের পাশাপাশি একটি নির্ভেজাল নির্ভরতার হাতেরও খুব বেশি প্রয়োজন, অন্তত সেই সকল সন্তানের জন্য, যারা বাবার চোখ দিয়ে একটি সুনন্দ ও সমৃদ্ধ আগামীর ছবি এঁকে রেখে যেতে চায়।
সে থেকেই আপনার প্রিয় তর্জনী আমারও প্রিয় হয়ে উঠল এবং আমি তাকে ধরে হাঁটতে শুরু করলাম।
জন্মদানের কৃতজ্ঞতা থেকে নয়, একটি মসৃণ ভবিষ্যতের জন্য আমি আপনাকে আঁকড়ে ধরলাম।
আপনি শেখালেন, কিভাবে ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে হয়, অপরের জন্য ভালোবাসাগুলোকে কিভাবে হৃদ-আলমিরায় থরে থরে সাজিয়ে রাখতে হয়।
আজ আপনি নেই। আপনার দেয়া সকল শিক্ষা শিথানে রেখে, দুই চোখে আলোর সুরমা এঁকে, আজও আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাই। আর ঘুমের মধ্যে আপনার সৌম্য ও স্নিগ্ধ সুরত দেখে, আব্বা আব্বা বলে চিৎকার করে উঠি।

কুটুম্বপুর
……….

বৃষ্টির চুমু লাগা পীচে
নির্বিঘ্ন আরামে শুয়েছিল সে
অশ্বত্থের হলুদ পাতা
ঝরাপাতা
রাস্তার ভেজা চোখে
যেন একটুকরো হলুদ কাজল

আমি তাকে তুলে এনে
গুঁজে দিলাম মেঘের খোঁপায়

ধূসরে হলুদ খাম
চিঠি আঁকে শ্রাবণঘুঙুর

গন্তব্য কতোটা দূর
কুটুম্বপুর কুটুম্বপুর।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ