spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যকবি-প্রাবন্ধিক মুহম্মদ মতিউল্লাহ : তাঁর চেতনার জগৎ

লিখেছেন : অন্বেষা ইসলাম

কবি-প্রাবন্ধিক মুহম্মদ মতিউল্লাহ : তাঁর চেতনার জগৎ

অন্বেষা ইসলাম

আ ত্ম প্র কা শ

মুহম্মদ মতিউল্লাহ্ এই সময়ের এক উল্লেখযোগ্য কবি-প্রবন্ধকার, চিন্তাবিদ। কবিতার সৃজনশীল জগতের পাশাপাশি তাঁর প্রবন্ধ এবং গবেষণার জগৎ গত দু-তিন দশক জুড়ে পাঠকের নজর কেড়েছে। কবি হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ নব্বইয়ের দশকে। যদিও ১৯৮৭ সালে কলেজে পড়ার সময় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অন্নজলে ভালোবাসায়’ প্রকাশিত হয় কুড়ি বছর বয়সে। বই প্রকাশের খরচ দিয়েছিলেন বাবা এবং কিছুটা তাঁর স্কলারশিপের টাকা থেকে। সেই বয়স থেকেই দীর্ঘদিন ‘ঋতু’ নামের একটি কবিতা ও কবিতাবিষয়ক প্রবন্ধের কাগজ সম্পাদনা করেছেন মতিউল্লাহ্। নব্বইয়ের দশকে শক্তিশালী যে ক-জন কবি তাঁদের পথ চলা শুরু করেন মুহম্মদ মতিউল্লাহ্ তাঁদের অন্যতম। তবু মতি বৃহত্তর পাঠকের বাইরে থেকে গেলেন কেন? এর কারণ হয়তো কলকাতা থেকে দূরে এক মফস্সল শহরে বাস, এবং অন্য কারণ আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁর ব্যক্তিগত তৎপরতার অভাব,

স্বভাবআলস্যে। কিন্তু যখনই তাঁর কোনো গদ্য বা

কবিতার কিংবা গবেষণার বই বেরিয়েছে, আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অবশ্যই আলোড়ন ফেলেছে। হতে পারে তা, স্বল্পসংখ্যক ভাবুক মহলে, বিদগ্ধ পাঠক মহলে।

ঐ তি হ্যে র বি স্তা র

একটি সংস্কৃতিবান পরিবারে মুহম্মদ মতিউল্লাহ্-র জন্ম ১৯৬৭ সালের ৯ জুলাই। বাবা মুহম্মদ ইসমাইল ষাট-সত্তর দশকের বিশিষ্ট লেখক ও প্রবন্ধকার। ভারতীয়, অ-ভারতীয় মিলে চোদ্দোটি ভাষার সুপণ্ডিত, বহুভাষাবিদ। মামা মুহম্মদ আয়ুব হোসেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও লোকসংস্কৃতির গবেষক। এঁদের সঙ্গে নানা সূত্রে বাঙালি মনীষী চিন্তাবিদদের যোগাযোগ ছিল এই পরিবারের সঙ্গে। কাজী নজরুল ইসলাম, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায়, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সুকুমার সেন, বিনয় ঘোষ, ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার প্রমুখ খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতির বাবা এবং মামার পরিবারের যোগযুক্ততা ছিল। এইসব মনীষীর চিঠিপত্রও মতিউল্লাহ্ সংরক্ষণ করে আসছেন। মতি এই পারিবারিক ঐতিহ্য ও মননশীলতায় বেড়ে উঠেছেন। ফলে সৃজনশীল সাহিত্যযাপনার পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক জীবনেও তাঁর সাফল্য কম নয়। ছাত্রজীবনে একাধিকবার স্কলারশিপ লাভ করেছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. এম.ফিল.। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল পঞ্চাশের দশক ও তার পরবর্তী বাংলা কবিতা ও কবিতা পত্রিকার গতিপ্রকৃতি।

     মুহম্মদ মতিউল্লাহ্-র গবেষণা এবং সম্পাদনা কর্মগুলি অনেক নতুন তথ্য সামনে নিয়ে আসে। মুসলিম সমাজের প্রগতিপন্থী নতুন আধুনিকতার ঐতিহ্য তাঁর অন্যতম চর্চার বিষয়। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল ফজল, আবুল হোসেন, আবদুল কাদিরদের মতো মুক্তবুদ্ধির ভাবুকদের নিয়ে তিনি অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। বিশেষত মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তার বিনিময় নিয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন মতি। অচিরেই প্রকাশিত হবে তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন মুসলিম বিদ্বৎসমাজ’ প্রবন্ধ সংকলন। সমকালীন  পঁয়তাল্লিশজন মুসলিম বুদ্ধিজীবীকে লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের অগ্রন্থিত পত্রাবলি’ তাঁর আর একটি মূল্যবান কাজ। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ কাজী আবদুল ওদুদের বই এ-বাংলায় দুষ্প্রাপ্য। সেই দুষ্প্রাপ্য প্রবন্ধসম্ভার নিয়ে ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ সম্পাদনা করে তিনি আমাদের সামনে মনীষী আবদুল ওদুদের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়েছেন একালের পাঠকের কাছে। বিশ্লেষণধর্মী ভূমিকায় ওদুদের মনীষা ও প্রজ্ঞাপারমিতাকে মতি তুলে ধরেছেন।

ম ন নে র  দি গ্ দি গ ন্ত

বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকার পরে বাংলা কবিতার নতুন যে ধারা-প্রকৃতি, তাকে ধারণ করেছিল পঞ্চাশের দশকের ‘শতভিষা’ এবং ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকা দুটি। ‘কৃত্তিবাস’ জনপ্রিয়তা অর্জন করে, কিন্তু লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায় ‘শতভিষা’ পত্রিকাটি। বিলুপ্তপ্রায় সেই পত্রিকার পুরোনো সংখ্যার খোঁজ করে মুহম্মদ মতিউল্লাহ্ এক খণ্ডে পুনঃসংকলন করেন ‘শতভিষা সংকলন’ নামে। আমাদের দেশের সবকটি দৈনিক এবং পাক্ষিক সে বই নিয়ে উচ্চ প্রশংসা করেন। সাম্প্রতিক বাংলা কবিতার আত্মনিবেশী ধারা নিয়ে তিনি যে কয়টি প্রবন্ধগ্রন্থ লিখেছেন তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় ‘চিরায়ত পুনরাবিষ্কার’ এবং ‘কবির ব্যক্তিনিভৃতি, কবির সামাজিকতা’ বই দুটি। জীবনানন্দ দাশ ও বুদ্ধদেব বসু এবং তিরিশের দশকের বাংলা কবিতার আধুনিকতার নানা অভিক্ষেপ ধরা আছে তাঁর ‘মেধাবী বন্ধুত্ব: জীবনানন্দ-বন্ধুদের’ বইটিতে। এই বইয়ে তিনি সমকালীন বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ, আবু সয়ীদ আইয়ুব-কে তুলে ধরেছেন। যার কেন্দ্রীয় ভাবনায় আছে বুদ্ধদেব বসু ও জীবনানন্দ দাশের মেধাবী বন্ধুত্বের নানা বিবৃতি। এই বইটির প্রসঙ্গ তুললে মতি জানালেন বইটির তৃতীয় মুদ্রণ খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে। এখান থেকে মুহম্মদ মতিউল্লাহ্-র বইগুলির পাঠপ্রিয়তা ও সমাদর আঁচ করা যায়। ‘কবির ব্যক্তি নিভৃতি, কবির সামাজিকতা’ বইটির নামই বলে দেয় কবিতার অন্তর্জগত নিয়ে মননশীল আলোচনা এর বিষয়বস্তু। লেখকের অনুশীলিত মেধা ও মননের স্ফূরণ ঘটেছে এর বিশ্লেষণী মন্ময়তায়। বাংলা কবিতার আধুনিকতার উজ্জীবন কতটা মর্জি মাফিক এবং কতটা সময় নির্ভর তারই অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এই বই। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’, জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাশের দিনলিপি, পঞ্চাশ দশকের প্রকাশিত ফরাসি কবিতার প্রথম অনুবাদের সংকলন ‘ভিনদেশী ফুল’, বাংলা অনুবাদ কবিতার পরিসর প্রসঙ্গগুলি আলোচনায় এসেছে পঞ্চাশের ও ষাটের দশকের কবি আলোক সরকার, সুব্রত চক্রবর্তী, কবিরুল ইসলাম এদের কবিতার জগত এখানে আলোচিত হয়েছে আর এই সঙ্গেই সমগ্রত কবিদের ব্যক্তি নিভৃতি এবং তাদের নিজস্ব সামাজিকতার সারাৎসার প্রবন্ধ গুলিকে ছুঁয়ে আছে।

ক বি তা র  সৃ জ ন  নি র্মা ণে

কবি হিসেবে মুহম্মদ মতিউল্লাহ্ নব্বইয়ের দশকের একজন অগ্রগণ্য কবি। অবশ্যই তা জনপ্রিয়তার নিরিখে নয়। মতি বলেন, ‘কবি হিসেবে জনপ্রিয়তা আমার লক্ষ্য নয়, বরং সংবেদী পাঠকের

আত্মজনতা অর্জনই কবির লক্ষ্য হওয়া উচিত।’

এ পর্যন্ত মুহম্মদ মতিউল্লাহ্-র প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৩ টি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল: ‘শোনো জন্মান্ধ যুবক’ (১৯৯০), ‘আপাতত হস্টেলে আছি’ (তৃতীয়  সংস্করণ ২০২৩), ‘নক্ষত্রের কুকুর’ (১৯৯২), ‘আকাশ বলছে, না’ (১৯৯৮), ‘হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ’ (২০১৬),  ‘নৈশপ্রহরীদের খেলাধুলা’( ২০২০), ২০১৯ এ প্রকাশিত তাঁর ‘নির্বাচিত কবিতা’-র ভূমিকায় কবি লিখেছেন, ‘আমার জীবনযাপন, স্বপ্ন- স্মৃতি- ব্যর্থতা, একটি অনুপম শৈশব, অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির একাকিত্ব নিয়ে আমার কবিতা। জীবনযাপনের অতিরিক্ততা, প্রেম -বিষাদ, কিংবা নারীর প্রতি মুগ্ধতা, অধরা শূন্যতার ভিতর যাওয়া-আসার স্বগতোক্তি এইসব। আমার জীবনে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা নেই, জীবনের যাবতীয় ঘটনাহীনতার নিস্তব্ধতা আমার কবিতার বিষয় হয়ে উঠেছে। আমার কবিতা সব সময়েই নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথন। পাঠকের কথা একেবারেই ভাবিনি, এমন নয়। একটি কবিতা লেখার সময় কবিতাটিকে ঘিরেই সবটুকু স্বপ্নাচ্ছন্নতা, তারপর মনে পড়েছে পাঠকের কথা। গুটিকয় পাঠকের মুখও ভেসে উঠেছে। কেমনভাবে নেবে তারা, ভয়ে ভয়ে ভেবেছি।’ কবির এই বক্তব্য থেকে আমরা তাঁর কাব্যভুবনের খোঁজ পেয়ে যাই। জীবনযাপনের কলরোল তাঁর কবিতায় থাকে না। বরং এক আত্মনিবেশী উচ্চারণ তাঁর পাঠককে আপ্লুত করে রাখে। আলোক সরকার, কালীকৃষ্ণ গুহ তাঁর পূর্বজ কবির যে নিমগ্ন কণ্ঠস্বর, মতিকে আমরা সেই ধারার কবি হিসেবে চিনে নিতে পারি। কবিতাকে জনপ্রিয় করার সস্তা চমক, যৌনতার ব্যবহারে কবিতাকে ক্লিশে করে তোলার মতো প্রয়াস মতির কবিতায় থাকে না। নব্বইয়ের দশকের কবিতার জগতে তাঁর কবিতা একেবারে আলাদা।

একেবারে আলাদা এক নিজস্ব কাব্যভাষার নির্মাণ। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত মতির কবিতার ‘পরিমিতি’ ও ‘স্নিগ্ধ স্নায়বিকতার জগৎ’-কে অভিনন্দিত করেছেন। আলোক সরকার তাঁর কবিতা সম্পর্কে লেখেন, ‘মতির সব কবিতাই একটা পুরো কবিতা। এটা ভাবা যেতে পারে তার কবিতার নিমগ্নতার আগ্রহ সম্পূর্ণতাকে পাবার আগ্রহ। মেদহীন আতিশয্যহীন এক ঋজু উদ্ভাস। তা নিজেকে দেখাতে চায় না, তা আস্তে আস্তে পাঠকের অনুধাবনের বিষয় হয়ে ওঠে।’

     মতি আঙ্গিক সচেতন কবি। স্বতঃস্ফূর্ত স্বভাবকবিত্বে তাঁর আস্থা নেই। সচেতন শব্দ প্রয়োগের দ্বারা কবিতাকে তিনি ‘নির্মাণ’ করেন। মতির কবিতার আঙ্গিক ছন্দ প্রকৃতি প্রসঙ্গে কবিরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘…মতির ছন্দ নির্বাচন বিষয়ের নিরিখে যথাযথ, যা একজন কবির পক্ষে কম অর্জন নয়। যা একজন শিল্পীর অভিজ্ঞানও। বস্তুত এই কবি একজন নিপুণ শিল্পী। কবিতার বিষয়বস্তুতে একটি সহজ সচেতন অথচ স্বতঃস্ফূর্ত দূরান্বয় স্পষ্ট হতে না হতেই পাঠকের সঙ্গী হয়ে ওঠে, তার উড়ান অভিযাত্রা শুরু হয়ে যায়, যা নতুন বাংলা কবিতার বৈজয়ন্তী।’ মতির কবিতায় ভাষার নিজস্বতা এবং তাঁর কবিতাভুবনের পরিচয় প্রসঙ্গে ‘কবিসম্মেলন’ পত্রিকায় বাসুদেব দেব লিখেছিলেন,

‘মুহম্মদ মতিউল্লাহ নব্বইয়ের দশকের কবি, অথচ ইতিমধ্যে আবিষ্কার করতে পেরেছেন নিজস্ব কাব্যভাষা-ভঙ্গি। এক ধরনের বুদ্ধিদীপ্তি তাঁর অনেক কবিতায় অতৃপ্তিতে বিকীর্যমান হতে দেখি। অবাক হই। জীবনের প্রতিযোগিতা ও  অতৃপ্ততার মধ্য দিয়ে তাঁর কবিতা ‘দূরের রিকশা’-র মতো চলেছে আমাদের চেনার সীমান্ত ছাড়িয়ে দূরের দিকে। ‘এক শূন্যতা আর দৈব বিভাস’-এর দিকে তাঁর কবিতার আকর্ষণ আমাদের বিমূঢ়তাকে আশ্রয় করে।’

       কবি প্রাবন্ধিক মতিউল্লাহ-এর সাহিত্য জীবনকে তাঁর গুণমুগ্ধরা সম্মান জানাতে ভুল করেননি। ২০০৪ সালে তাঁর সম্মানে ‘মাল্যবান’ পত্রিকা প্রকাশ করেছিল একটি বিশেষ সংখ্যা। সাহিত্যজগতের বিদগ্ধজনেরা তাঁর সাহিত্যকীর্তি নিয়ে লিখেছিলেন, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, আলোক সরকার, দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, কবিরুল ইসলাম, প্রভাত চৌধুরী, অংশুমান কর। রুদ্র কিংশুক সহ তাঁর গুণমুগ্ধরা। মতি ইতিমধ্যেই বহু সাহিত্য সম্মানে ও পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য ‘কবিতা পাক্ষিক সম্মাননা’, ‘তুষার চট্টোপাধ্যায় স্মারক সম্মান’, রাঢ় বাংলা সাহিত্য আকাদেমি পদক’, ‘বার্ণি ক পুরস্কার’, ‘ইসক্রা সাহিত্য সম্মান’, ‘রূপকথা সাহিত্য সম্মান’, ‘আলোপৃথিবী সম্মাননা’। পুরস্কার বা সাহিত্য সম্মান একজন কবির পক্ষে কতটা কাজের— এ প্রশ্ন করা হলে মতি বলেন, একজন কবি নিশ্চয়ই পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা ভেবে লিখবেন না, লেখাটা তার আবশ্যিক কাজ—এই ভেবে লিখে যান। কিন্তু তার গুণগ্রাহিতা পেলে কবির ভালোলাগা থাকবে নিশ্চয়ই। কিন্তু কোনো পুরস্কার তাকে তৃপ্ত করলে, প্রত্যাশিত করলে, সে কবি নিজের আত্মহনন ডেকে আনবেন।

স ঙ্গ-নিঃ স ঙ্গ তা র  ব্য ক্তি নি ভৃ তি

 মতি লিখেছিলেন, ‘কীভাবে ভাত ফোটে আমার তেমন দেখা হয়নি। খাবার টেবিলে খেতে বসে দেখি হাতাটির ব্যবহার।’ বস্তুত এই কবিতা অনেকটা যেন মতির ব্যক্তিপরিচয় আমাদের জানিয়ে দেয়। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর সঙ্গে যাঁরা মিশেছেন তাঁরা জানেন মৃদুভাষী আত্মনিমগ্ন মতির জীবনযাপন সব সময় যেন অন্যের ওপর নির্ভরতায় ভরা। বস্তুত পড়াশোনার জগতের বাইরে সংসারে তাঁকে যেন খুব অচেনাই ঠেকবে। যেন বাস্তবের মাটির অনেক ওপরে স্পর্শহীন তাঁর পথ। একাকী হেঁটে চলেছেন তিনি। চারপাশের পরিচিত কলরব, ভিড়ের জগৎ থেকে অনেক দূরে স্বনির্বাচিত একটি জগতে তাঁর বসবাস। ফলে ওষুধ খাওয়ার সময় কখন কিংবা চশমার পাওয়ার কত কেউ জিজ্ঞেস করলে একটাই উত্তর শোনা যাবে ‘রত্না (তাঁর স্ত্রী) জানে।’ গোষ্ঠীবদ্ধ যৌথযাত্রায় তাঁকে প্রায় দেখা যায় না। বরং বলা যায়, তাঁর পথচলা একাকী নিঃসঙ্গ মানুষের পথচলা। সামাজিক সৌজন্য, বিনয় অবশ্যই কোথাও তাঁকে শিথিল হতে দেয় না, বন্ধুত্বের স্পর্শ তাঁকে আলোকিত করে। সুসামাজিকতা মেধাবী বন্ধুত্ব তাঁকে সম্পন্ন করে যেমন, একইসঙ্গে নিঃসঙ্গ করেছে।  তাই বোধহয়  তাঁর কবিতায় শোনা যায়—

 ‘ভিড়ের ভিতরে নিঃসঙ্গতা তুমি থেকো আমি আশ্বস্ত হই।’

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ