কাজী জহিরুল ইসলাম
ভক্ত পরিবেষ্টিত নজরুলকে এক নজর দেখার জন্য ভিড়ের একজন হয়ে জীবনানন্দ দাশকেও উঁকি দিতে হয়েছিল। কী দেখেছিলেন তিনি? কী পেয়েছিলেন কবিদর্শনে? পেয়েছিলেন হীরকখণ্ডের মতো একগুচ্ছ শব্দ, যা দিয়ে নির্মাণ করেন নিজের কবিজীবন। প্রিয় কবির অনুকরণে তিনিও লিখে ফেলেন, “নব নবীনের লাগি/ প্রদীপ ধরিয়া আঁধারের বুকে আমরা রয়েছি জাগি” তিনি নজরুলের প্রতিধ্বনি করে লিখতে থাকেন, “গাহি মানবের জয়!/ কোটি কোটি বুকে কোটি ভগবান আঁখি মেলে জেগে রয়!/ সবার প্রাণের অশ্রু বেদনা মোদের বক্ষে লাগে,/ কোটি বুকে কোটি দেউটি জ্বলিছে – কোটি কোটি শিখা জাগে,/ প্রদীপ নিভায়ে মানবদেবের দেউল যাহারা ভাঙে,/ আমরা তাদের শস্ত্র, শাসন, আসন করিব ক্ষয়!/ জয় মানবের জয়!” [কবিতা: নব নবীনের লাগি]
নজরুল প্রেমে তিনি এতোই মুগ্ধ ছিলেন যে শুধু বিষয় নয়, শব্দও উঠে আসছিল সমবয়সী হয়েও কবি হিসেবে অগ্রজ নজরুলের কবিতা থেকেই। একজন নিভৃতচারী, চুপচাপ, ঘরকুনো মানুষ হয়েও নজরুলের প্রভাবে তিনি কবিতায় হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী, বিপ্লবী, উচ্চকণ্ঠ। “কিশোরের প্রতি” কবিতায় তিনি পরাধীন দেশের কিশোরের প্রতি ভর্ৎসনা করে বলছেন, “দ্বাদশ সূর্যের বহ্নি ওঠেনিকো জ্বলি/ কক্ষচ্যুত উল্কাসম পড়েনিকো স্খলি,/ কুজঝটিকা-আবর্তের মাঝে/ অনির্বান স্ফুলিঙ্গের সাজে!
সব বিঘ্ন সকল আগল/ ভাঙিয়া জাগোনি তুমি স্পন্দন-পাগল”। এখানেই থেমে যাননি, নজরুলের কবিতা তার হৃদয়ে যে দ্রোহের আগুন জ্বেলে দেয় তা আরো তীব্র, আরো প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে যখন তিনি “জীবন-মরণ দুয়ারে আমার” কবিতায় লেখেন, “ঘরদোর ভাঙা তুমুল প্রলয়ধ্বনি/ নিত্য গগনে এই যে উঠেছে রণি/ যুবানবীনের নটনর্তন তালে,/ ভাঙনের গান এই যে বাজিছে দেশে দেশে কালে কালে/ এই যে তৃষ্ণা দৈন্য দুরাশা জয় সংগ্রাম ভুল/ সফেন সুরার ঝাঁঝের মতন করে দেয় মশগুল/ দিওয়ানা প্রাণের নেশা/ ভগবান, ভগবান, তুমি যুগ যুগ থেকে ধরেছ শুঁড়ির পেশা!/ লাখো জীবনের শূন্য পেয়ালা ভরি দিয়া বারবার/ জীবন পান্থশালার দেয়ালে তুলিতেছ ঝঙ্কার”।
ভক্তের হৃদয়ে নজরুলের প্রেমও কি উপেক্ষিত হয়েছে? দূর দ্বীপবাসিনীর কথা কী করে জীবনানন্দকে স্পর্শ না করে। লিখে ফেলেন এক দীর্ঘ কবিতা “নাবিক”, আর এই কবিতায় ছড়িয়ে দেন নজরুল-মানিক্য এভাবে – ” উদয়াস্ত আকাশের রত্নচূড় ময়ূখের টিপ,/ কোন দূর দারুচিনি লবঙ্গের সুবাসিত দ্বীপ/…সহস্র নয়ন মেলি হেরিয়াছ কবে!/ কোথা দূরে মায়াবনে পরীদল মেতেছে উৎসবে,-/ স্তম্ভিত নয়নে/ নীল বাতায়নে/…”
সিন্ধু কবিতায় লেখেন, “উল্লঙ্ঘি তুলিছ তাই শিরোপা তোমার/ উচ্ছৃঙ্খল অট্টহাসি তরঙ্গের বাঁকা তলোয়ার!/…তুমি শিখায়েছ বন্ধু দুর্মদ দুরাশা/ আমাদের বুকে তুমি জাগালে পিপাসা/…নিত্য তব বাসনার হলাহলে রাঙি/ পারীয়ার প্রাণে লয়ে আছি মোরা জাগি/ বসুধার বাঞ্ছাকূপে, উঞ্ছের অঙ্গনে/ নিমেষের খেদ হর্ষ বিষাদের সনে/ বীভৎস খঞ্জের মতো করি মাতামাতি!/ চুরমার হয়ে যায় বেলোয়ারি বাতি/”
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় অসাম্প্রদায়িকতার যে অনির্বাণ উচ্চারণ আমরা শুনতে পাই, জীবনানন্দ দাশ ঠিক তারই প্রতিধ্বনি করেন তার “হিন্দু-মুসলমান” কবিতায়। তিনি লেখেন, “আহ্নিক হেথা শুরু হয়ে যায় আজান বেলার মাঝে/ মুয়াজ্জিনের উদাস ধ্বনিটি গগনে গগনে বাজে/…কে বলে হিন্দু বসিয়া রয়েছে একাকী ভারত জাঁকি?/
মুসলমানের হস্তে হিন্দু বেঁধেছে মিলন রাখী”।
দীর্ঘ এই কবিতাটিতে তিনি আরো লেখেন, ” জেগেছে হেথায় আকবরী আইন, কালের নিকষ কোলে/ বারবার যার উজল সোনার পরশ উঠিছে জ্বলে!/ সেলিম, শাজাহাঁ চোখের জলেতে একশা করিয়া তারা/ গড়েছে মিনার মহলা স্তম্ভ কবর শাহদারা!/ ছড়ায়ে রয়েছে মোগল ভারত, কোটি সমাধির স্তূপ/ তাকায়ে রয়েছে তন্দ্রাবিহীন, অপলক অপরূপ/ যেন মায়াবীর তুড়ি/ স্বপনের ঘোরে স্তব্ধ করিয়া রেখেছে কনকপুরী!/…এসেছিল যারা উষর ধুসর মরুগিরিপথ বেয়ে/ একদা যাদের শিবিরে-সৈন্যে ভারত গেছিল ছেয়ে,/ আজিকে তাহারা পড়শি মোদের, মোদের বহিন ভাই;/ আমাদের বুকে বক্ষ তাদের, আমাদের কোলে ঠাঁই।/ কাফের যবন টুটিয়া গিয়াছে, ছুটিয়া গিয়াছে ঘৃণা/ মুসলিম বিনা ভারত বিফল, বিফল হিন্দু বিনা;/ মহামৈত্রীর গান/ বাজিছে আকাশে নব ভারতের গরিমায় গরীয়ান।”
জীবনানন্দ দাশের প্রথম কবিতার বই “ঝরা পালক” গ্রন্থে এমনি আরো অনেক কবিতা আছে যেগুলো পড়লে আমরা নজরুলের ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাই না। এই গ্রন্থটি বের হয় ১৯৩৪ সালে যখন নজরুল বাংলা কবিতার আকাশে এক অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র। তার ভাষায় কবিতা লিখে তাকে ছাপিয়ে পাঠকপ্রিয় হওয়া অসম্ভব ব্যাপার ছিল। দু’বছরের মাথায়ই, ১৯৩৬ সালে যখন জীবনানন্দ দাশের দ্বিতীয় কবিতার বই “ধুসর পাণ্ডুলিপি” বের হয় তখনই প্রকৃত জীবনানন্দ দাশ আবিস্কৃত হন, যদিও এই ম্রিয়মান কাব্যভাষা দিয়ে নজরুল জ্বরে আক্রান্ত বাংলা কবিতার পাঠকাকাশে কোনো ঠাঁই তিনি করতে পারেননি। একমাত্র বুদ্ধদেব বসু ছাড়া কোনো কাব্যবোদ্ধাই তাকে স্বীকৃতি দেননি। ১৯৩৫ সালে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় “মৃত্যুর আগে” কবিতাটি ছাপা হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘জীবনানন্দ দাশের চিত্ররূপময় কবিতাটি আমাকে আনন্দ দিয়েছে’। এই একটি মাত্র বাক্যই ছিল তার তখনও পর্যন্ত পাওয়া সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। সমালোচনা এবং নিন্দা তিনি পেয়েছেন বিস্তর। এমন কী তার নামেও ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ হত।
তা যাই হোক ধুসর পাণ্ডুলিপি থেকে জীবনানন্দ দাশ একজন মৌলিক কবি হয়ে ওঠেন, যদিও বিষয়বস্তু নির্বাচনের দিক থেকে তিনি যে জসীম উদদীনের কাছে ঋণী একথাও আমাদের স্বীকার করতে হবে। এই সব কিছুকে ছাপিয়েই জীবনানন্দ দাশ ত্রিশোত্তর বাংলা কবিতার প্রাধান কবি হয়ে উঠেছেন। গত নব্বুই বছর ধরে বাঙালি কবিরা তার কবিতাই লিখছেন। চিত্রকল্পের কিছু বৈচিত্র ছাড়া জীবনানন্দ-উত্তর কবিরা বাংলা কবিতায় বড়ো ধরণের কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেননি।
জীবনানন্দের শুরুটা নজরুলকে আশ্রয় করেই গড়ে ওঠে, তিনি রবীন্দ্রনাথকে পরিহার করেছিলেন, নজরুলকেই আদর্শ মনে করেছিলেন। নজরুলের ভাষা, ছন্দ, কাঠামো, সাম্যবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, প্রেম এবং দ্রোহ সবই তাকে আকৃষ্ট করেছিল। সেই যে জীবনানন্দের কালে ‘রবীন্দ্রনাথ না নজরুল’ কবিদের, পাঠকদের মনে প্রশ্ন উঠেছিল, আজও সেই প্রশ্নই বহাল আছে। এই দুই মহীরুহের পাশে, সমান্তরাল আর কাউকে দাঁড় করানো সম্ভবই হয়নি।
আমার আজকের আলোচনার বিষয় এটিই। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য-শাসকেরা এইটি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। তারা মনে করেন রবীন্দ্রনাথের অবস্থান আকাশে, নজরুলও বড়ো কবি তবে কিছুতেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হতে পারে না। নজরুল মুসলমানের ঘরে জন্মেছেন, গজল লিখেছেন, এগুলো একটা বড়ো কারণ তো বটেই। দেশ পত্রিকা তাদের সম্পাদকীয়তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বাঙালি হিসেবে দ্বিধার সঙ্গে স্বীকৃতি দেন। পশ্চিম বাংলার এক দৈনিক পত্রিকার একজন সহকারী সম্পাদক কবি ফজল শাহাবুদ্দীনকে বলেন, সৈন্য সামন্ত পাঠিয়ে তো দেশ স্বাধীন করে দিলাম, এবার কি লোক পাঠিয়ে ভাষাটাও শিখিয়ে দিয়ে আসতে হবে?’ এই হচ্ছে তাদের উন্নাসিকতার দৃষ্টান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় এখন আলোচনায় উঠে এসেছে দেশ পত্রিকার একটি প্রচ্ছদ। সেখানে নজরুল এবং জীবনানন্দ দাশের ছবি ছাপা হয়েছে, ওপরে জীবনানন্দ দাশ, নিচে নজরুল। বাংলাদেশের কবি, সাহিত্যিক, পাঠক, সুশীল সমাজ এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, ঘৃণা জানাচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে আমি একটি পোস্ট দিয়ে বলেছিলাম, “নজরুলের কবিতা পড়ে, তাকে অনুকরণ করে জীবনানন্দ দাশের লেখালাখির শুরু। সেই দিক থেকে নজরুল জীবনানন্দ দাশের গুরু।” আমার অনেক বন্ধু এতে আহত হয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের অধিকাংশই যে এই দুই কবির সকল রচনা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করেননি, আর করেননি বলে আমার স্ট্যাটাসের সত্যতা অনুধাবন করতে পারেননি, সেটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু যখন আমার বন্ধু ড. অমিতাভ কাঞ্জিলাল এবং বাংলাদেশের একজন অভিনয় শিল্পী বন্যা মির্জা সন্দেহ প্রকাশ করেন তখন আমি এই রচনাটি লেখার তাগিদ অনুভব করি। কিন্তু সন্ধ্যা হতে না হতেই দেখি আমার অনেক বন্ধু জীবনানন্দ দাশের বেশ কিছু কবিতার উদ্ধৃতি মন্তব্য আকারে পোস্ট করে জানিয়ে দেন কীভাবে জীবনানন্দ দাশ নজরুলকে অনুকরণ বা অনুসরণ করেছিলেন। এইসব মন্তব্য দেখে আমার আত্মতাগিদ কিছুটা প্রশমিত হয়, আমি রাতে লেখাটি নিয়ে না বসে নেটফ্লিক্সে স্ত্রীর সঙ্গে সিনেমা দেখাই শ্রেয়: বলে বিবেচনা করি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হলো লেখাটি না লিখলে একটা খচখচানি থেকেই যাবে। তাই বসে পড়ি।
এখন আসুন একটু ভাবি দেশ পত্রিকা কেন এই রকম একটা প্রচ্ছদ করলো? এর সম্ভাব্য কারণগুলো হতে পারে: ১. শিল্পী ইনোসেন্টলি কাজটি করেছেন, অত আগ-পিছ ভাবেননি ২. জীবনানন্দ দাশ বয়সে ২/৩ মাসের বড়ো ৩. নজরুলের কবিতাকে আশ্রয় করেই জীবনানন্দ দাশের জন্ম, নজরুল হচ্ছে ভিত্তি, তাই নজরুল নিচে, ওখান থেকে প্রস্ফুটিত হয়েছে জীবনানন্দ দাশ ৪. কারণটা সাম্প্রদায়িক ৫. বাঙালি মুসলমানেরা এবং প্রগতিশীল হিন্দুরা রবীন্দ্রনাথের পাশে নজরুলের নাম উচ্চারণ করে, দিলাম তাকে জীবনানন্দের নিচে নামিয়ে, এখন থেকে আর রবীন্দ্রনাথের পাশে উচ্চারণ করবে না, বরং যুদ্ধ করবে জীবনানন্দের চেয়ে নজরুলকে বড়ো বানাতে।
এইগুলোই হতে পারে সম্ভাব্য কারণ। দেশ বা আনন্দবাজার গ্রুপের চরিত্র সম্পর্কে যাদের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ আছে তারা নিশ্চয় প্রথম তিনটা কারণ কোনো প্রশ্ন ছাড়াই বাতিল করে দেবেন। চতুর্থ কারণটি ওদের চরিত্রের সঙ্গে যায়, যখন আমরা দেখি বারবার বলা সত্বেও মুসলমানদের নামের বানান ওরা বিকৃত করে লেখেন। একবার দেখলাম ইমদাদুল হক মিলনের নাম বইয়ের বিজ্ঞাপনে লিখেছে মিলন বাদ দিয়ে। কথাটা মিলনকে জানিয়েছিলেন কবি জাহিদ হায়দার, কিন্তু নতজানু মিলন প্রতিবাদ তো দূরের কথা বরং পারলে জাহিদ হায়দারেরই কণ্ঠ চেপে ধরেন।
পঞ্চম কারণটি খুবই সঙ্গত এবং এটিও ওদের সাহিত্য-রাজনীতির সঙ্গে যায়। আমাদের প্রিয় কথাসাহিত্যিক ও বহুমাত্রিক লেখক হাসনাত আবদুল হাইও মনে করেন, কারণটি সাম্প্রদায়িক নয়, সাহিত্যিক রাজনীতি।
এবার বলি কেন নজরুলের নিচে জীবনানন্দ দাশের ছবি বা নাম ছাপা হওয়া উচিত। দুজনই বিখ্যাত কবি, তবে নজরুল জীবনানন্দের চেয়ে আগে বিখ্যাত হয়েছেন এবং পরবর্তীতেও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে নজরুলের খ্যাতি পড়ে গেছে কিংবা জীবনানন্দ দাশ নজরুলকে ছাপিয়ে তার ওপরে উঠে গেছেন। আক্ষরিক অর্থে গুরু-শিষ্য না হলেও যেহেতু নজরুলকে আশ্রয় করেই জীবনানন্দ দাশের কবি হয়ে ওঠা তাই এক অর্থে নজরুল জীবনানন্দ দাশের গুরুস্থানীয় কবি। বয়সে ৩ মাসের বড়ো কোনো ধর্তব্যের বিষয় নয়। তাই যদি হতো তাহলে বিহারী লালের ছবি রবীন্দ্রনাথের ওপরে ছাপানোর প্রয়োজন হত। রবীন্দ্রনাথের প্রিয় বৌদি কাদম্বরী দেবীই রবীন্দ্রনাথকে বিহারী লালের মতো কবিতা লিখতে বলেছিলেন, এতে তার ক্ষোভ এবং অভিমান হয়েছিল। কাজেই বোঝা যায় একটা সময়ে বিহারী লাল রবীন্দ্রনাথের চেয়ে জনপ্রিয় এবং বড়ো কবি ছিলেন কিন্তু কালক্রমে রবীন্দ্রনাথ সকলকে ছাপিয়ে আকাশে উঠে যান। আরো একটি বড়ো কারণ হলো কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ বাংলাদেশের জাতীয় কবি। একজন জাতীয় কবিকে অবশ্যই সম্মান দেখানো উচিত।
পশ্চিম বঙ্গই প্রমিত বাংলা ভাষার শেকড়, কিন্তু আজ বাংলা একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রভাষা। প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক ভাষা চর্চার অন্তরায়গুলো আমরা বুঝি, আমি পশ্চিম বাংলার মানুষদের দোষ দিচ্ছি না, তাদেরকে প্রতিনিয়ত ইংরেজি এবং হিন্দির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলা ভাষার চর্চা করতে হয়, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের সেই প্রতিবন্ধকতা নেই, ঢাকাই আজ বাংলা ভাষার রাজধানী, এটা আমাদের পশ্চিম বাংলার বন্ধুদের মেনে নিতে হবে। আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বাংলার চর্চাটা করতে পারছি, যা তারা করতে পারছেন না। কাজেই বাংলা ভাষার দাদাগিরিটা এখন ঢাকার কাছে ছেড়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৫ জুলাই ২০২৪