spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েনিজস্ব খেয়ালের কবি তালাশ তালুকদার

লিখেছেন : মাহমুদ নোমান

নিজস্ব খেয়ালের কবি তালাশ তালুকদার


| মাহমুদ নোমান |

সাদা কবিতা লেখার জন্য
কবিতা চিপে চিপে বের করার দরকার নেই –
যদি থাকে
ও এমনিতে এসেই
মালের মতো আউট হয়ে যাবে!

  • কবিতা ও মাল একই জিনিস’ কবিতাংশ)
    উপরোক্ত কবিতার অংশ কার লেখা তালাশ করুন! এখন কবিতা নিয়ে যেরকম টানাহেঁচড়া জবরদস্তি চলে পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে, একরকম মতের অমিলে চাপিয়ে দেওয়ার মোচ্ছব চলছে সেইসময়ে কবিতা কীভাবে হয়ে যায় ব্যাখ্যার এমন ত্বরিত ও স্বতস্ফূর্ত জবাব দিতে পারা কবিতা অংশের কবির নাম তালাশ তালুকদার। নিজস্ব ভাবনা জগতে অনর্গল নান্দনিক চেতনা চর্চার উর্বর মস্তিষ্কজাত উপরোক্ত কবিতা; যেন জেমস অ্যান্ডারসনের বোলিং- দিনকে দিন স্বাগত জানিয়ে একই উৎসাহে টগবগে কৌতূহলে বিবিধ সুইং-কারিকুরিতে উৎফুল্লে উদ্বেলিত করে দিচ্ছে পিচের পরিবেশ, কোনও কোষ্ঠকাঠিন্যের উচ্চারণ নেই…

০২.
তালাশ তালুকদার এর ‘টোপার বাইরে পৃথিবী কেমন’ কবিতার বইটি পাড়া শেষে কয়েকটি উপলব্ধি আরও অর্থবহ উত্তর হয়ে এসেছে; এখনকার একজন কবিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়েই ঐ কবিকে সবটুকু জেনে গেছি হাবভাব সেটি সম্পূর্ণ ভুল এবং আমাদের কবি সমাজে চরম অস্থিরতা ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে কিছু বলতে চাই- কবির একটা বই পড়লে কবির যাপনের যাত্রা বুঝতে পারা যায় শুধু নয় কবি সমাজে একজন কবির কাছে দায়িত্ব মনে করি আরেকজন কবির বই নিয়ে নিয়মিত পঠন ও আলোচনা করা; এখানে অস্থিরতা ও অসন্তোষের কারণ হিসেবে মনে করি ইদানীংকালে লেখক সমাজ নিজেদেরকে কবি হিসেবে মনে করে না, যা-একটু শখে লিখতে আসে; অপরজন শুধু উনার লেখা নিয়ে বলুক, তিনি বলবেন না, তিনি বললে নিজেই ছোট হয়ে যায় এমন ভাবনাও প্রোজ্জ্বলিত- এটার কারণটা হলো নিজেদের লেখা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী নন, ছিন্নমূল কবির সংখ্যা বেশিরভাগ, অপরের লেখা নিয়ে বলতে বুক কাঁপে… এজন্যই কবি সমাজে আমরা লেখা নিয়ে না- বলে ব্যক্তির দোষ নিয়ে পড়ে থাকি, গীবত করেই আড্ডা জমায়; এটি যেমন বিচ্ছিন্ন করে কবি থেকে কবি’তে তেমনি সাধারণ পাঠক থেকে বিচ্ছিন্ন হই শুধু নয় ভুল মেসেজ বয়ে যায়….
‘টোপার বাইরে পৃথিবী কেমন’ পড়ে আত্মতৃপ্তের মধ্যে জিজ্ঞাসাও উঁকি দিয়েছে এতোদিন তালাশ তালুকদারের কবিতার বই পড়িনি কেন! হতে পারে আর্থিক অসঙ্গতি নতুবা নিরন্তর কবি’কে পড়ার মধ্যে এই সময়টি নির্ধারিত ছিল; আমি মনে করি কবির লেখার মধ্যে একটা তেজ থাকতে হয়, কাউকে পরোয়া না- করে নিজের বোধ বিশ্বাস বলতে পারার সাহস থাকতে হয়, এটাই কবিত্ব- এই তেজের জন্য তালাশ তালুকদারের কবিতা ভালো লাগার শুধু নয় একটা ঘোর লাগা পথের দিকে নিয়ে গেল…

০৩.
বিষয় আশয় নিয়ে সরাসরি বক্তব্য ঠেস্ বুনন প্রক্রিয়ার মধ্যেও স্বচ্ছ আলো ছড়িয়ে মূল কথাকে ভাবাবেগে তাড়িত সত্যি আরও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিফলিত করতে পারে তালাশ তালুকদারের কবিতা। কঠিন কথা এতো সহজে বলে আরও সহজ উপমায় সরলতার সুযোগে কবিতা এমন প্রাণবন্ত হতে পারে তালাশ তালুকদারের কবিতা পড়লে বুঝতে পারা যায় –

ক.
আমারে নিয়া যার ফিলিংস নাই
তারে নিয়াও আমার ফিলিংস নাই

নাই ফিলিংস নিয়া কী করব
ফিলিংস ফিলিংস খেলা
এবার বন্ধ করে দেব

তোমার ফিলিংস পাইলে
আমার ফিলিংস আবার জাগাব
আমার ফিলিংস জাগলেও
দরজা বন্ধ করে রাখব

তোমার শোতানো ফিলিংটারে
আমি কেন বারবার
নাড়া দিতে যাইব

তোমার ফিলি তুমি
কোলের মধ্যে করে রাখো
আমার ফিলিংস অনেক ভালো
তার সাথেই আমি পথ হাঁটব
-ফিলিং;২৮ পৃ.)

খ.
আমাদের ভেজে বড়া করে খাওয়ার জন্য
আমাদের কড়া করে ভাজার জন্য
আমরা সিস্টেম হয়ে গেছি

  • হ্যালো মাফিয়া ব্রাদার;২১পৃ.)

গ.
বিভিন্নভাবে মেঘের ঢল দেখা শুরু করলে
বাজারফেরতা লোক হিসেবে
একজন দোকানদারকে তো দেখেই ফেললে
একটা জ্যান্ত আনারসকে ঘাড় ধরে ব্যাগে ঢোকাতে!

কিছু যুবককে দেখলে পাহাড়ের গা থেকে
মাংস ছাঁটাতে ছাঁটাতে
সমতল ভূমিতে বিছিয়ে দিল পাহাড়কে!

চারদিকে ফাঁকা আওয়াজ হচ্ছে
হাওয়া তার গলায় দড়ি দিচ্ছে
পেটের ভেতর খাই খাই করছে কৃমিগুলো
কাঁধে টিউমারের মতো ফলগুলো নিয়ে
ঘোরাফেরা করছে বৃদ্ধরা
আমরা যাই কই?

আমরা মিছেমিছিই ভাই ভাই হৈচৈ রই!

  • টানাপোড়েন;২০পৃ.)

ঘ.
তোমার স্তন দুটোতে কাঠের রুল দিয়ে টোকা মারার মতো
অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে নিলাম আজ-
গ্রামের বউ ঝি’দের কাঁথাতে ফুল তোলার কাজ দেখে এলাম
পেটকাটা গাছেদের রক্ত চুঁয়ে পড়া দেখলাম
রক্ততৃষ্ণায় বড় হতে থাকা পাড়ার মাস্তানদেরও দেখা গেল
রামদায়ে কুপিয়ে কুপিয়ে ভাগ করছে একটা বাচ্চা পেয়ারাকে!

  • আমার কাজ;১১পৃ.)

আপনার আশপাশের কথা, আপনার চেনাজানা শব্দ দিয়ে সৌন্দর্য সাধনে ভাষার সুষম বণ্টন যেন তালাশ তালুকদারের কবিতা; দৃশ্য থেকে দৃশ্যের মুহূর্মুহূ টিউনিং টোপার ভেতরে টেনে নিয়ে যায় ক্ষত ও অসঙ্গতি দেখাতে। টোপার ভেতর থেকে দেখা বাইরের পৃথিবীটাকে যেমন কামনা এসবের বলন- ‘টোপার বাইরে পৃথিবী কেমন’ কবিতার বইটি; একজন কবির কবিতার মেজাজ,ধরন যদি ভালো লেগে যায়, তাহলে সে কবির কবিতা নিয়ে ঘ্যানরঘ্যানর করা যায় না; আমি চাইতে পারি- তালাশ তালুকদারের কবিতা ছড়িয়ে পড়ুক, মননের মাধুর্য ছড়িয়ে দিতে দিতে, বন্ধুর কথা বলতে কবি তালাশ তালুকদার যেমন লিখেছেন-

তোমাকে পান্তাভাত মনে করি
তাই সমুদ্রের প্রবল ঘূর্ণির ভেতরেও
নিজেকে ছেড়ে দিয়ে হাসি

  • বন্ধু; ০৯পৃ.)

|||
টোপার বাইরে পৃথিবী কেমন
তালাশ তালুকদার
প্রকাশনা: বৈতরণী
প্রচ্ছদ: দেওয়ান আতিকুর রহমান
মূল্য: ২৫০ টাকা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ