রক্তের জলে ধোবো অনিয়ম
সালেম সুলেরী
………..
০১.
তোমার-আমার মৃত্যুুর চেয়ে
‘বীরের মৃত্যু’ সেই–
অধিকার আর প্রতিকার চেয়ে
আমরণ লড়বেই।
০২.
চাবিটা না পেয়ে তালাটা ভেঙেছি
জ্বালাটি খুলেছি দরোজার,
মিছিলে চলেছি, শ্লোগান বলেছি
হয় হবে হোক– ঘর-উজাড়।
০৩.
মৃত্যু আমার একবারই হবে
রেখে যাবো মায়াচিত্র,
রক্তের জলে অনিয়ম ধোবো,
পৃথিবী আমার মিত্র।
০৪.
রক্তের শেষ বিন্দু বলেছে
সিন্দুকে ‘কোটা’ বন্দি,
মেধায় মুক্ত করার লড়াই
জীবন-মরণ সন্ধি।
জুলাই ২০২৪
………
কোন উপমায় তোমাকে চিত্রিত করব, আবু সাঈদ
নূরুল হক
………
প্রথম গুলিটি বুকে লাগার পরও
যে তুমি দ্বিতীয় গুলির প্রতীক্ষায়
বুক চিতিয়ে দিলে,
পূর্ণলোহু যৌবনের মধ্যাহ্নে প্রোজ্বল
হে অসম সাহসী বীর,
কি নামে ডাকবো তোমায়
কিংবা কোন উপমায় তোমাকে
চিত্রিত করব
যুথসই কোন শব্দ খুঁজে না পাওয়ার ব্যর্থতায়
নিজেই কেবল রক্তাক্ত হচ্ছি।
তোমার উন্মোচিত বুকটা শুধু
একটা বুক ছিলো না
সেটা ছিল দিগন্ত প্রসারিত
সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত
সমগ্র বাংলার প্রতিবাদী জমিন
যেখানে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে তুমি
উর্বর করে গেছো
আমাদের অস্তিত্ব
আর আমাদের দেখিয়ে দিলে
জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে
কিভাবে সাথীদের অধিকার রক্ষা করতে হয়।
হে বীর, উনসত্তরে —
আসাদের রক্তমাখা শার্ট হাতে নিয়ে
প্রতিবাদে মুখর হয়ে
আমরাও নেমে পড়েছিলাম রাস্তায় রাস্তায়
পাক জান্তার বিরুদ্ধে
তখন আমরা বৈষম্যের কিম্ভূতকিমাকার
দানব দ্বারা বেষ্টিত ছিলাম
আমাদের ভাষা, কৃষ্টির যথেষ্ট ফারাক ছিল।
আজ আমরা কার বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়াবো
যেখানে আমাদের ভাষা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য এক।
কার সাথে তোমাকে তুলনা করি হে বীর
চে গুয়েভারা নামের এক মহাবিপ্লবী বীরের
জীবন কাহিনী আমরা জানি
আমরা এটাও জানি যে
আমাদের এ দেশ
গুয়েতেমালা, বলিভিয়া কিংবা কিউবা নয়।
অধিকার আদায়ের আনন্দে
আমাদের হৃদয়ের দুকূল প্লাবিত হলো
সুগভীর সমারোহে
আজ তুমি আমাদের পাশে নেই…
অথচ তোমাকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে
রচিত হবে মহাকাব্য
…………
যারা রুয়ে দিলে রক্ত-বীজ
মুজতাহিদ ফারুকী
………….
গোধূলিধূসর এই অধীকৃত ভুঁইয়ে
দুঃসাহসী যারা আজ রুয়ে দিলে
সূর্যের মত লাল টকটকে তাজা রক্ত-বীজ
তাদের সালাম।
তোমাদের রক্ত-বীজে
আর্সেনিক কবলিত ঊষর মাটিতে
জন্ম নেবে লক্ষ মহা নিম
পাতার শোধন গুণে শুদ্ধ হবে
কোটা শহীদের খুনে সিক্ত তাজা ভূমি
স্বৈরাচার বিষদুষ্ট
নিপীড়িত প্রিয় বাংলাদেশ।
নমিত পতাকা ফের পতপত
উড়বে আকাশে।
ওই দেখ দিকে দিকে লাঞ্ছিত মানবতা
নির্বাক, তবু শূন্যে দুহাত তুলেছে।
১৭.০৭.২০২৪ বুধবার।
…………
রক্তজবা
মাসুদুল হক
…………
শত সহস্র কণ্ঠ; মেয়েটা নেমে পড়ে
কোটামুক্ত রাস্তায়
বিদ্যাপীঠ এতো তাজা রক্ত দেখেনি;
মেয়েটা
কাঁদতে
কাঁদতে
একটা রক্ত জবা হয়ে ওঠে!
…………
নতুন ইকারুস আবু সাইদ
শান্তা মারিয়া
…………
আবু সাইদ ডেকে বলে ‘জাগো বাহে’
আর রংপুরের মাটি রঞ্জিত হয় তার রক্তে।
আবু সাইদ উড়তে চেয়েছিল
ডানা মেলে সুনীল আকাশে
শুধু মাত্র ওড়ার উল্লাসে সে ছড়িয়ে দিল বাহু
সূর্যের তাপে পুড়ে যাচ্ছে আবু সাইদ
বিন্দু বিন্দু হয়ে ঝড়ে পড়ছে পলল ভূমিতে
যে ভূমির বুকে একদিন জন্মেছিল সেই কৃষক সন্তান।
আবু সাইদ বাঁচতে চেয়েছিল কেঁচো হয়ে নয়
মেরুদণ্ডসহ মানুষের অধিকার নিয়ে।
সাহসের আরেক নাম, প্রতিবাদের আরেক নাম শহীদ আবু সাইদ
সে প্রমাণ করেছে ভূমিপুত্ররা আজও অমর।