শহীদ আবু সাঈদ
কাজী জহিরুল ইসলাম
…………
তার প্রসারিত দুই বাহু ছিল একটি উড়ন্ত পায়রার মত,
বুকে তার অসীম সাহস,
ভালোবাসার বারুদে ঠাসা ছিল সেই বুক,
কী বন্ধু কী অচেনা নিন্দুক
সকলের জন্যে ছিল অবারিত ভালোবাসা,
সে ছিল একটি উজ্জ্বল প্রত্যাশা,
একটি নতুন সকালের স্বপ্ন।
তার ডান হাতে ছিল একটি প্রতীকী লাঠি,
এই অন্ধ সমাজের হাতে
উদ্দিপ্ত যুবক তুলে দিতে চেয়েছিল ছোট্ট এক ন্যায়দণ্ড।
তেইশ বসন্তে বেড়ে ওঠা ওর দীর্ঘ ঋজু দেহ
পুলিশের গুলিতে তখনও লুটিয়ে পড়েনি,
অনড় দাঁড়িয়ে আছে ভূমি থেকে বর্ষার আকাশ অব্দি ব্যাপ্তি নিয়ে
নতুন প্রজন্মের এক বাংলাদেশ
উদ্বেল দু’হাত প্রসারিত জল্লাদের প্রতি, একটি নতুন সকালের যাত্রী হতে ডেকেছিল তাকে,
যে অনিন্দ্য ভোরের রক্তিম সূর্য আর কিছুক্ষণ পর
তারই বক্ষ ফুঁড়ে উঠে আসবে আকাশে,
জল্লাদ পুলিশ তখনও বোঝেনি
ক্রমাগত গুলি ছুঁড়ছে সে বাংলাদেশের বুক লক্ষ্য করে,
রংপুরের মাটিতে, কংক্রিটের ফুটপাতে
ধীরে ধীরে শুয়ে পড়লো নতুন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ,
আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ আবু সাঈদ।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৯ জুলাই ২০২৪
তৈমুর খান
বিশ্বাস
………..
আমরা বিশ্বাস পুষে রাখি
বিশ্বাস এসে আলো জ্বালে
আলোকিত ঘরে
আমাদের শিশুরা চাঁদ দ্যাখে।
চাঁদ কি টিপ দিয়ে যায়
তাদের কপালে?
দুধ নেই, দুধ খাওয়ার বাটি নেই
তবুও বিশ্বাস আছে আমাদের।
তারপর
………..
একটা বাঁশি বেজে উঠলো
আমরা এখন কোন দিকে যাব?
বহু রাস্তা,রাস্তায় ষাঁড় দাঁড়িয়ে আছে
বহু অরণ্য,অরণ্যে সিংহ গর্জন করছে
বহু পাহাড়,পাহাড়ে পাহাড়ে আগুন
আমরা সমুদ্র ও নদী খুঁজে খুঁজে
বিকেল গড়িয়ে দিচ্ছি এখন…
এক একটা লাশের মতো তীব্র দুর্গন্ধ
এক একটা কাপুরুষের মতো দুর্বোধ সন্ত্রস্ত
অন্ধকার সাম্রাজ্যের কাছে
আমাদের এই আত্মসমর্পণ
তারপর আর কোনো ইতিহাস নেই
আর কোনো গৌরব নেই
আর কোনো বেঁচে থাকা নেই
খবর
………
খবর এসে পৌঁছালো
আমরা কিছুক্ষণ নীরব হয়ে গেলাম
আকাশে চেয়ে দেখলাম:
অলৌকিক কোনও আকাশযানে
চেপে চলে যাচ্ছেন তিনি…
যেতে যেতে জানালা দিয়ে হাত দেখাচ্ছেন
এক-একবার মুখ বের করে কী বলতে চাইছেন
সে ভাষা মোটেও বুঝতে পারছি না!
তারপর নিচে মাটির দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেছি
ইচ্ছেগুলি পিঁপড়ের মতো ধুলো মাখছে মাটিতে
উপলব্ধিগুলি পোড়া ছাই হয়ে বাতাসে উড়ে যাচ্ছে
আমার মধ্যে আর কোনও আমি নেই
আমার মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া একটি অশ্রুনদী
অস্তিত্বের ভাঙা তরী ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছে
তিনি চলে যাচ্ছেন শুকনো ফুলের মতো হালকা
তিনি চলে যাচ্ছেন বালিকার ঘুমের মতো সুন্দর
তিনি চলে যাচ্ছেন এক টাকার কয়েনের মতো
আমরা তার আকাশযানের নিকটে গিয়ে
আজ আর কেউ চেঁচামেচি করতে পারছি না!
সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক
শিমুল আজাদ
………….
আর কখনোই ফেরা হবেনা আমার
আমার কয়েকজন সহযাত্রীরও ফেরা হবেনা তাদের নিজ নিজ গৃহকোনে;
আপনজনের উষ্ণ সান্নিধ্যের জন্য আমাদের হা হুতাস
কেউ শুনতে পাবেনা কখনো।
যখন আমরা আমাদের ন্যায্যতার জন্য সংগ্রাম বেছে নিয়েছিলাম-
তখন আমরা অকস্মাৎ বর্বরদের হিংস্রতার কবলে
তাদের নগ্ন অস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন পড়েছিলাম
ছুটেছিলাম আমাদেরই প্রিয় জন্মভূমির শরীরে।
যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা আর কলুষতা মাড়িয়ে
এক স্বচ্ছল, সুন্দর জীবন প্রত্যাশায়
ধৈর্য্য আর কষ্টের দুর্গম পথ মাড়িয়ে
যদিও আমরা পৌঁছেছিলাম লক্ষ্যের কাছাকাছি।
কিন্তু না! আমাদের চিন্তা আর বাস্তবতার মাঝে
বেশ কিছু বৈপরীত্য ছিলো।
আমরা অসংখ্য গ্রন্থের পঠন- পাঠন, আর আমাদের মহান শিক্ষকদের কাছ থেকে যা কিছু জেনেছিলাম তা সব ভুল প্রমাণিত হলো মুহূর্তেই।
রাষ্ট্র ব্যবস্থা, রাজনীতি – ক্ষমতার মোহে ডুবে থাকা কাঙালের দল আমাদের সামান্য ইচ্ছেটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিল।
নিষ্ঠুরতার নিদর্শনে ঝলসে দিল বোধ, উপলব্ধির সবুজ স্তরকে ধূসরতায় আচ্ছাদন করলো মুহূর্তেই। বুঝতে চাইলো না জীবনের জন্য এই সামান্য অক্সিজেনটুকু প্রত্যেকের দরকার।
ইতিমধ্যে আমরা চলে এসেছি বেশ কিছু পথ
এ পথে অন্ধকার ভেঙে রোজ সূর্য উঠবে
বিশ্বসংসার তার নিজস্ব রূপ ছড়িয়ে
আরো ক্লান্ত আর বিপর্যস্ত হবে দিনকে দিন।
কিন্তু অন্যায়কারী তার ভুল কোনদিন বুঝতে চাইবেনা!
মানতে পারবেনা যে, অধিকার আদায়ের জন্য কেবল সৎ মানুষেরাই, বিপ্লব-বিদ্রোহ তথা আন্দোলন করে থাকে।
১৭ জুলাই, ২০২৪।
এই মুহূর্তকে ছুঁয়ে গেল কবিতাগুলিতে।