কফিন বাহক আয়না
………
আগামীকাল যোগ দেবো রাষ্ট্রহীন মানুষের অপরূপ মিছিলে
তার আগে আজ গভীররাতে স্বপ্ন দেখবো মহাকাশ
আয়ত্ত করে নেবো ধ্রুবতারা
আয়নার পাল
নৌকার সমস্ত পাতাল
গুছিয়ে নেবো নদীর ধারে ঘুমন্ত শিশুদের স্বপ্নাবলী
বরদাস্ত করবো না কোনো ধর্ম
একটি উপন্যাস কিংবা মহাকাব্যের শিরোনাম হবে আয়োজন
এমন যাওয়ার সময় ছায়াপথের আমের গাছগুলো
নুয়ে পড়বে আমাদের গায়ে
একটি সবুজ কমেডি
সেই অপরূপ মিছিলে থাকবে যারা
একটা মানুষের কিছুই নেই শহীদদের তকমা ছাড়া
একটা মানুষ খিদের জ্বালায় আস্ত একটা শহর গিলতে গিয়ে গলায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছে থাকবে তার আত্মা
একটা মানুষের মুখ নেই যার মুখ খোয়া গেছে কোনো গৃহযুদ্ধে
ঘুড়ি আর সাইকেল মধ্য যখন আমরা যাবো
আমাদের সামনে একঝাঁক পাখি উড়বে খোলা বইয়ের পাতার মতো যেটা হবে আকাশে সংগ্রামরত জাতিগুলোর ইতিহাস
নক্ষত্রের জল আকাশের মণিকাঞ্চন ছাপিয়ে গড়িয়ে পড়বে
পুনরায় ফিরে আসবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নক্ষত্রদের গর্তে
আক্রমণ প্রতিহত করবো সেই ঢাল গুলো দিয়ে
যে নরমুণ্ড গুলো গাড়ির চাকার মতো ব্যবহার করতে করতে একসময় ফেলে দিয়েছিল
প্রতিরোধের সামনের সারিতে থাকবে কবর থেকে বেরিয়ে আসা বাহু আর আঙুলগুলো
তাও যখন আমরা দেখবো কফিন বাহক আয়নাগুলো
বন্ধু বাতাস হয়ে উঠবে পিপীলিকার মুখ
সমুদ্র ছুঁড়বে কাঁকড়ার দাঁড়া
গোলাপী মিছিল ঢালবে কৃষ্ণরক্ত অন্তরীক্ষে
নিঃসঙ্গ বাঁক
……….
তুমি আমার খবর জানতে চেয়েছ
কিন্তু আমি এখনও মরেনি
আমি আমার কঙ্কালের হরিলুট অবধি বেঁচে আছি
পোকারা খেয়ে ফেললেও আমার সংবেদনশীলতা বেঁচে থাকবে বায়ুমণ্ডলে
সবুজ স্বপ্নের সারিতে গিয়ে লাইনে দাঁড়াবে আমার আত্মা
তারপর আমি একটি আয়নাকে ব্যাখ্যা করবো
আমার ক্ষতস্থান হবে অলৌকিক
আর গৌরবান্বিত হবেএমন যেন অপার নিঃসঙ্গতায় ভেসে চলেছে এক পিয়ানো
সময়টা
যখন আমি পৃথিবী চত্বরে পড়ে থাকতে দেখছি একটি মৃত্যুদণ্ড
কাউকে খবর দেওয়ার মতো কেউ নেই
কবর দেওয়ার লোক নেই
মাটি নেই
কোদাল নেই
সূর্যের সঙ্গে পালিয়ে গেছে সবকটা রং
রাত্রি এক গুহা
ক্ষুধা গিলে ফেলেছে অর্ধেকের বেশি চাঁদের ভুত
আর তারারা কাঠের মতো পুড়ে হয়ে গেছে ছাই
তখন আমি একটি আয়নাকে ডানাসহ উড়িয়ে দিচ্ছি
দেখো
নিঃশব্দ মাস্তুলের গায় ছেঁড়া ন্যাকড়ার ভেতর দিয়ে গলে যাচ্ছে বরফের মাছ
আর কাঁটার প্রহর বিদ্ধ করছে তাদের
তাকিয়ে রয়েছে শুধু একটা নিঃসঙ্গ বাঁক
পরিচয়
………
এখানে আমরা কি খুঁজছি
বলতে পারবো না
যেন তোমার অক্ষি বলয়ে বাস করছে ঝিনুক
মুলতুবি রাখো তোমার পরিচয় পত্র
তুমি মুখ করে দাঁড়াও সূর্যের দিকে
চাঁদের দিকে
একটি কবরের ঘড়ির দিকে
আমি তোমাকে তুলনা করে দেখতে চাই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট রহস্যটির সাথে
আর রহস্যটা যখন পালিয়ে যাবে জলের সাথে
পাথরের সাথে
তারারা কৌতুহল দেখাবে
যখন তারারা কৌতুহল দেখাবে
আমি এবং তুমি শোধ করে দেবো ঈশ্বরের ঋণ
আমাদের বেঁচে থাকার গৌরব আর ভোগান্তি হবে ভূমিহীন শূন্য
আমাদের দেখতে লাগবে আঁকা
সামনে থাকবে একটি জীবনের সাইনবোর্ড
বিকেলের সৌরলোক
হ্যাঙারে টাঙানো আকাশ
শীতল এক ওষুধের দোকানের আলো
কোথাও যেন অনন্তকাল ধরে মেঘের নেশার মতো মানুষ
কারা যেন রামধনুর পাইপের ভেতর দিয়ে পাড়ি দিচ্ছে
যে ভাবে সংরক্ষিত হয় অনন্ত জীবন
…………
বড়জোর তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারো
না হলে তুমি অন্ধকারের পেছন থেকে এনকাউন্টার করতে থাকো
কারণ ধূর্ত লোকেরা তোমার জন্য তৈরি করেছে খেলনা আর বেলুন
তুমি অভিযান শুরু করো
যেতে যেতে তুমি দ্রাঘিমা রেখাটি ছিঁড়ে ঝুলে থাকতে দেখবে
দেখবে কয়েকটি মুমুর্ষ নক্ষত্র মিনতি জানাচ্ছে তোমার জন্য
দেখবে আমাদের স্বাধীনতা মেঘের মতো
একটি শুকনো জলাধারের মতো আমাদের দেশ
তার ফাঁপা শব্দগুলো ছুটে চলেছে মেঘের টং ঘরের দিকে
আশ্চর্য তুমি দেখবে পৃথিবীর গতিপথকে থামিয়ে দিয়ে নীল মোটর গাড়ি গুলো কিভাবে ছুটছে
তুমি ওখানেই নিজের জন্য স্থাপন করো একটি বিষণ্ণ মহাশূন্য
আরএকটি রুগ্ন পর্যবেক্ষণ
জীবন যেন চিরায়ত তারাদের অসীম প্রহেলিকা
যেটুকু আলো জ্বলছে
যেন সূর্যের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছে জলবিন্দু
আর দেখো
আমি আকাশকে
অন্যান্য জগতসমূহকে
মহাশূন্যকে
নিজের বাড়ি বলে শিখে নিয়েছি
আমি আমার দেশের কখনোই ভাড়াটে নই
আমি আমার দেশের কিছু বই নেবো
ভালোবাসার মানুষদের কিছু ছবি নিয়ে কবরে যাবো
যে ভাবে সংরক্ষিত হয় অনন্ত জীবন
কোরাস
……….
আমার শিরায় কি প্রচন্ড ঝড় আমি ব্যাথা বলবো না
আমার ব্যাথায় চাঁদ ভষ্মিভূত হয়
আমি আবার আমার হলুদ অশ্রুতে চাঁদ আঁকবো
আমার অশ্রুতে থাকবে ছয়টি ঋতুর বৈশিষ্ট্য
আর একটি সম্পূর্ণ বর্ষাকাল থাকবে
সীমিত ক্ষমতার মধ্যে ঈশ্বরকে উপহার পাঠাবো একটি নৌকা
ঈশ্বর আর আমি আমার শরীরের দ্বীপাঞ্চলে যখন পৌঁছবো তখন আমার স্বদেশের আনন্দ অনুভব করবো
আমরা দেখবো কোন এক ভবিষ্যৎ
তারার মতো চলাচল করছে রাত্রির আকাশে
যেন আমার মাতৃভূমির একটি বাড়িতে সাদা রঙের কাজ হচ্ছে
আর দেখবো একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস টাঙানো রয়েছে
আমাদের নিখোঁজ গ্রামের কোনো এক মহিলার কাপড় শুকাচ্ছে
আমার অশ্রুতে এক নজর তাকাও
দেখো একটা হতভম্ব কোরাস
সেখানে কি নেই
আঠারো বছর বয়সে যখন আমি চোখ খুলেছিলাম
দেখছিমাল একটি গানের চাকায় ভেসে উঠলো বাস্তব পৃথিবী
সব আলো যেন কিম্ভুতকিমাকার
সব জল যেন অনুশোচনার
জমি গাছ পশুপাখি হাওয়া চাঁদ সূর্য গ্রহ নক্ষত্র আর যাকিছু ছিল ধারণা থেকে পাওয়া ঈশ্বর শয়তান ভুত প্রেত সবকিছু মিলে এক কোরাস হয়ে উঠেছিল
আমি পরমাণু হলাম ব্যাথার
আমার আত্মা থর থর কম্পনের ওপর
আমার আত্মায় বিস্ময়কর মহাজীবনের শীতলতা
যেন একটি ক্ষত শুষে নিচ্ছে ইথার
পৃথিবীহীন তুমুল ঝড়
কোনো এক অন্ধকার ঢালে বিধ্বস্ত জাহাজ ডুবির মানুষ আমি