spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যগোলাপ গোলাপ

লিখেছেন : ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

গোলাপ গোলাপ

ঝুমা চট্টোপাধ্যায় 

পৃথিবীর কোনো প্রবন্ধ নিবন্ধ কবিতা কিংবা শব্দের কোনো ভান্ডার গোলাপ না। কোনো সাময়িক পত্র, মাসিক পত্রিকা কিংবা লিটিল ম্যগাজিন, আমি লিটিল ম্যগাজিনেরই লোক ,বরাবর লিটিল ম্যগাজিনেই লিখেছি, লিখেছি এর আন্তরিকতা এবং কালের পরিসর দেখে। সারাজীবন শুধু লিটিল ম্যগাজিনকেই সম্বল করে থেকেও আজ স্বীকারক্তির মত বলতে বাধ্য হচ্ছি – এখানে কোনো শব্দই আজ অবধি গোলাপ হয়ে উঠতে পারেনি। গত শতাব্দীর প্রথমার্ধের তুলনাই টানি যদি তো পৃথিবীর কাছে ফুটে উঠবে মাত্র দুটো জিনিষই পড়ে আছে  এ যাবৎ, এক নম্বর– গোলাপ, দুই নম্বর– গোলাপ নয়। সাহিত্যে গভীর আগ্রহ দেখে বাংলাবাজারের বই ব্যবসায়ী বিক্রমপুরের অধিবাসী গঙ্গাচরণ দাস, বুদ্ধদেব বসুর বই স্বখরচায় প্রকাশ করেছিলেন, ‘মর্ম্মবাণী’। সেই ১৯২৪ সালে কি ছিল সেই ক্ষুদ্রকায়া কাব্যে? ছিল বছর পনেরোর সদ্য কৈশোর উর্ত্তীর্ণ কবির গুচ্ছ কবিতা। কিন্তু খ্যাতিমান ও প্রতিষ্ঠিত লেখক হওয়ার পর বুদ্ধদেব, গঙ্গাচরণকে বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছিলেন। সাহিত্যের পাতায় এরকম ভুরি ভুরি উদারণ ছড়িয়ে, সেজন্য আমি শব্দ না, গোলাপের কথাই ভাবি। যখন যেমন দরকার ফুটন্ত অথবা অর্ধপরিস্ফুট তুলে এনে আধো-অন্ধকার অথবা আলোয় ভেঙেচুরে আবার তৈরী করা। যদি কতিপয় কিছু অভিশপ্ত অথবা সুভগ মানুষ সেই অদৃশ্য স্তরে বিচরণ করতে পারে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে ৫ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ মরেছিল। স্ট্যালিন আমলে পার্টি শুদ্ধিকরণের নামে রাশিয়াতে পুরো ১ কোটি খুন হয়েছিল। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে মারা গেছে ৩০ লক্ষ। ’৭৫ এ ভিয়েতনাম যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ১৩৩৫৬০০০। সব মিলিয়ে কত কে জানে কিন্তু সেই  বিপুলতার মধ্যেও নাচিয়ে গাইয়ে কবিতা লিখিয়ে গল্প বলিয়ে কিংবা অলস ভাবুকরা ছিলেন লিখতে চেয়েও হয়ত প্রবন্ধ উপন্যাস গল্প কি নিবন্ধ শেষ অব্দি  লিখে উঠতে পারেইনি। হলই না।  তেমন কিছু না, ছাঁট কাগজের ছেঁড়া টুকরোয় হোক, কি ক্যাশমেমোর উল্টোপিঠ, লেখা তার মর্জিমত জায়গা খুঁজে নেয়, কিন্তু সেটুকুও হয়নি, তাই বলছি কোনো প্রবন্ধ কি অন্য কিছু যতই প্রকাশ্যে –গোপনে, জ্ঞানে-অজ্ঞানে কি সত্য-মিথ্যায় লেখা হোক না কেন কিছুতেই তা গোলাপ হয়ে উঠতে পারেনা।

প্রবন্ধ একটা লিখেছিলাম বহুদিন আগে, মনের মত করে তথ্য সাজিয়ে গুজিয়ে, কথার ঢেউ খেলিয়ে, নিজের পুরনো খাতায় এবং এই যে পুরনো খাতা এরও একটা গল্প আছে সেটা আর যাইই হোক গোলাপ নয় কিছুতেই। প্রতিটা পাতায় নিয়মমাফিক ডেট তিথি লেখা এবং মিহি ধুলোর আস্তরন, হঢ়হড় করে লেখা এগিয়েছে, জানি কেউ চ্যলেঞ্জ করতে আসবেনা, শুধোবেও না অমুক তথ্যটা কোথায় পেয়েছি … কিংবা অজস্র কাটাকুটি লেখা পাতা ছিঁড়ে আবার নতুন করে লেখা শুরু এবং তারপর হাটে বাজারে অফিসে ইমিগ্রেশনের লাইনে যখন যেখানে , লেখা তার নিজের মত করে এগিয়েছে… কারণ জানি এটা শুধুই একটা প্রবন্ধ, তার বেশি কিছু না।

তো যাইহোক এখন ঐ অনেক দূরে জারবেরা বোগেনভলিয়া মেরীগোল্ড লিলির সঙ্গে অজস্র লাল হলুদ গোলাপ ফুটে আছে সম্পূর্ণ শান্ত। কয়েকটা ঘন্টারই ব্যপার তারপর নিঃশব্দে ঝরে যাবে ও ফের ঘুরে গিয়ে স্টার্টিং পয়ন্টে। আমরা রূপ দেখতে দেখতে রূপে এমন বিশ্বাস করে ফেলেছি, রূপান্তরকে আর গ্রাহ্যই করিনা। মরে গিয়ে গোলাপ আবার গোলাপ জন্মই নেয়। এক স্তব্ধতা থেকে আর এক স্তব্ধতায় যাত্রা। রক্ত জমাট বাঁধা নেই হাড় জুড়ে জুড়ে স্কেলিটন তৈরী হওয়া নেই, এপিডারমিস বা ত্বকের উপরিভাগ যতক্ষণ না সম্পূর্ণ হচ্ছে ততক্ষণ তাকে মানব শরীর বলা যাবে না হওয়া নেই। সরলতার সুদূর থেকে উড়ন্ত গোলাপ কাছে এসে নির্জন সরলতায় গিয়ে শেষ করে তার যাত্রা। আর যে ত্রিভূজের বাহুগুলি পরস্পর সমান কিন্তু একটি কোণও সমকোণ নয় সেই বিষমকোণী ত্রিভূজের মত আমরা ও আমাদের বাকি গল্প-উপন্যাসগুলো শেষ হয় দুর্ঘটনাগ্রস্ত মৃত্যুতে অথবা যার যার ফ্রি-স্টাইল অসুখে।

গতকাল প্রবন্ধটা লিখে শেষ করেছি শুনে তুমি একটা লাল গোলাপ এনে দিয়েছিলে।

জিজ্ঞাসা করেছিলাম – এটা কি?

তুমি বলেছিলে, এটা গোলাপ না।

………….

নতুন দিল্লী, ভারত

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. সম্পাদক মহাশয়কে ধন্যবাদ। পত্রিকার সম্পাদকীয় টি পড়তে চাই কোথায় ক্লিক করতে হবে বুঝতে পারছি না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ